Eva Misti

Abstract Inspirational Others

3  

Eva Misti

Abstract Inspirational Others

রেপিস্ট

রেপিস্ট

7 mins
239


রাতের অন্ধকার মুড়ে ধোঁয়া হয়ে ছেয়ে রয়েছে আকাশটা জুড়ে ,, তারই মাঝে মাঝে ঝলমল করেছে নক্ষত্রমন্ডল - কালপুরুষ সপ্তর্ষিমন্ডল ,, দূরে আবছায়া একফালি চাঁদ ,, সেদিক তাকিয়ে থেকেই আজকের রাতটাও বেশ উৎরে দিতে পারবে রিক ,, কি আছে তার জীবনে কি পেয়েছে ?? নাকি সব খুইয়ে বসে আছে ,, আসক্ত নিকোটিনে ঠোঁট দুই ধূসর প্রায় ,, তবুও ছাড়তে মন চায়না ,, মাথাটা কেমন ঝিমঝিমিয়ে ওঠে ,, বেশ ভালো লাগে ,, কার্বন মনোক্সাইডের বিষাক্ত ধোঁয়ায় যেন নিজেকে বিশুদ্ধ করে নিতে চায় সে ,, ঘরে বয়স পাঁচের ছেলেটা ঘুমিয়ে রয়েছে নিশ্চিন্তে ,, সে অপরিচিত তার বাবার এই রূপটার সঙ্গে ,, সে জানে তার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বাবা ,, কত ভালোবাসে তার বাবা তাকে বকে না একটুও ,, বরং বোঝায় ,, তাই জেদ করেনা মান ,, বাবার সব কথা শোনে ,, ঐটুকুই তো আছে রিকের জীবনে ,, তাকেও যদি কোনোদিন হারিয়ে ফেলতে হয় সেই ভয়টাই কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাকে ...

এই নিয়ে প্রায় ছয় বছর হয়ে গেলো অভিনয় জগতে অনুপ্রবেশ করেছে ছেলেটা ,, প্রথম দু তিন বছর সেভাবে হাতে কিছু আসত না উপরন্তু যেটুকু আয় হতো ব্যয় হয়ে যেতো তুলনামূলক বেশি ,, তবে এই দুবছর ধরে বেশ ভালোই নাম কামিয়েছে ছেলেটা ,, বর্তমান বাংলা ওয়েব সিরিজের সবচেয়ে সুদক্ষ নেগেটিভ চরিত্র সে ,, ডার্ক এন্ড হ্যান্ডসাম ,, রিকের অভিনয় প্রতিভা বেশ প্রশংসিত ,, নিজের কাজকে ভালোবাসে রিক ,, সে নিজের নিজস্বতাতেই খুশি ,, ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে যায় তার কানের পাশ দিয়ে,, হালকা শীত শীত করে ওঠে ,, আজ সকাল থেকে বড্ড পরিশ্রম গেছে ছেলেটার সাথে কথা বলার অবধি সময় পায়নি ,, দৈনিক দেখাশোনার জন্য একজন মাঝবয়সী মহিলা আছেন ,, রিক বেরিয়ে যাওয়ার আগে কাজে চলে আসেন তিনি আবার রিক ফিরে এলেই ফিরে যান,, নি:সন্তান তাই মানকে ভীষণ ভালোবেসে আগলে রাখেন যত্ন করে সেই মহিলা তাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারে ছেলেটা ,, ঐ যে নীচে ছোট্ট বেড়ার ঘরখানা দেখা যাচ্ছে ঐ বাড়িটাতেই থাকেন তিনি সেজন্য আসতে যেতে অসুবিধা বিশেষ হয় না ,, চব্বিশতলা উপরের ফ্ল্যাটের জানালার বাইরে রাতের শহরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রিক ,, মনে পড়ে বছর কয়েক আগের ঘটনাগুলো ,, জীবনের প্রথম প্রেম অপর্ণা ,, মন প্রাণ ঢেলে তাকে ভালোবেসেছিল রিক ,, ভেবেছিল ছোট বাসা গড়বে ভালোবাসার ,, আজ না হোক কাল যখন সে পরিচয় পাবে সেদিন সে সব সুখ মুঠো ভরে এনে রাখবে মেয়েটার পায়ের কাছে ,, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে ,, স্বপ্ন দেখিয়েছিল অনেক ,, সেই স্বপ্নভরা দিনগুলো ছিল বেশ সুখের মধুর ,, গঙ্গার ধারে ধারে হাত ধরে হাঁটা ,, প্রিন্সেপঘাট হোক কিংবা ভিক্টোরিয়ায় ছোটো খাটো আলাপ ,, তবে বোঝে নাই তখন অজান্তেই সেই আলাপ কখন শরীর ছুঁয়েছিল ,, দিনটা ছিল রিকের জন্মদিন ,, তাকে না জানিয়েই সারপ্রাইজ দিতে হোটেলে রুম বুক করেছিল অপর্ণা ,, আর্জেন্ট কল করে ডেকে পাঠিয়েছিল তাকে , বলেছিল "কথা আছে ইম্পর্ট্যান্ট " ..

ভয় পেয়ে ছুটে গিয়েছিল রিক ,, অবাক হয়ে দেখেছিল লাল শাড়ি পরে তার অপেক্ষাতেই বসে আছে তার প্রেয়সী ,, ঘোর লেগে গিয়েছিল তার ,, হয়তবা বয়সের দোষ ,, মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় এগিয়ে এসেছিল সে মেয়েটার কাছে ,, বোঝেনি কি হতে চলেছে ,, বাঁধা দেয়নি সেদিন অপর্ণা নিজেই ,, বরং আস্কারা জুগিয়েছিল বেশি ,, নরম নরম হাত দুটো দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিল ছেলেটাকে .... সোহাগী পরশে একপ্রকার ভুলতে বসেছিল দুজনেই আদৌ কি ঠিক করছে তারা ..!!.

কিন্তু অদ্ভুত মুহূর্ত খানিক বাদে অনুভব করেছিল রিক কেমন যেন হিংস্র হয়ে উঠছে অপর্ণা ,, কোনো বাঁধা বিঘ্ন না মেনে এগিয়ে যাচ্ছে সে একটু একটু করে ,, অন্তিম মুহূর্তে ফিরে আসতে চেয়েছিল রিক কিন্তু পারেনি সে বলা ভালো তাকে ফিরতে দেওয়া হয়নি ...

যখন ঘুম ভেঙেছিল ,, কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল ,, মখমলের নরম বিছানা ছেড়ে উঠতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল তার ,, কাঁধের কাছে সদ্য ফুটে ওঠা দাঁতের দাগ চকচক করছে বেশ সুস্পষ্টভাবে ... দম বন্ধ লাগছিল তার ,, পাশ ফিরতে আরও অবাক হয়ে গিয়েছিল রিক অপর্ণা নেই !! কল করবে বলে তড়িঘড়ি উঠে বসেছিল রিক ,, মোবাইল হাতে নিয়ে লক খুলতে গিয়ে চোখে পড়েছিল অপর্ণার ম্যাসেজ -- "এগুলো মনে রেখোনা রিক ,, জীবনের বড়ো ভুল ..আমি দ্বিতীয়বার মনে করতে চাইনা ,, তোমার সাথে আর কন্টাক্ট রাখতে পারবো না আমি ,, মেডিসিন নিয়ে নেবো এসব নিয়ে ভেবো না একদম কিচ্ছু হবে না..."

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল ছেলেটার ,, ভেবেছিল হয়তো মজা করছে কাল নিশ্চয়ই সব ঠিক হয়ে যাবে....

পরের দিনের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারেনি রিক ,, সেদিনই ছুটে গিয়েছিল সে অপর্ণার বাড়ি কিন্তু হায় মেয়েটা দরজার ওপার থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে বলেছিল আর একবার যদি কন্টাক্ট করে পুলিশে জানাতে বাধ্য হবে সে সঙ্গে এও বলবে রিক তাকে রেপ করেছে ... কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে ছেলেটার ...

বিধবস্ত হয়ে ফিরে এসেছিল ছেলেটা ,, ডুবিয়ে দিয়েছিল নিজেকে কাজের মধ্যে ,, তবে ভুল হত প্রায়শই কথা শুনতে হত হাজারো ,, এরই মধ্যে মাস কয়েক পর জানতে পেরেছিল অপর্ণা মা হতে চলেছে তার গর্ভের সন্তান সুরক্ষিত ,, ছুটে গিয়ে রিক বেহায়ার মতো আবারও অনুরোধ জানিয়ে বলেছিল তাকে -- "আমি জানি অপু তুই আমাদের সন্তানকে মেরে ফেলবি প্লিজ মারিস না ,, আমি আর কোনোদিন তোর জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না ,, আমার সন্তানকে প্লিজ আমার হাতে তুলেদিস ..."

অদ্ভুত ভাবে রাজি হয়ে গিয়েছিল অপর্ণা ,, জানিয়েছিল ডেলিভারি হবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ,, প্রিম্যাচিউর বেবির দায় নিতে হবে তাকেই ,, সমস্ত খরচ বহণ করতে হবে রিককেই ,, সে নেই কিছুতে ...

খুশি হয়েছিল রিক তবে বোঝেনি অপর্ণার প্রধান উদ্দেশ্য ,, এবরশন সম্ভব হচ্ছিল না কোনো কারনবশত তাই আরও এই পদক্ষেপ তার ,, বিশ্বাস ছিল রিক পারবেনা অতএব সে সন্তানকে মরতেই হবে ....

কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয়নি ,, নিজের সবটুকু দিয়ে মানকে বুকে আগলে নিয়েছিল রিক ,, সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে চেষ্টা করেছিল মানতে বাঁচিয়ে রাখতে ,, আজ হয়তো সেই কারণেই সে সফল ....


আজ তার জন্মদিন ,, বারোটা বেজে গেছে ,, প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে এইদিনটা আর বারবার মনে চাগাড় দিয়ে ওঠে সেসব স্মৃতি ,, প্রশ্ন করে নিজেকেই "কি পেলো অপর্ণা ?? ভালো আছে সে "!!

দরজায় বেল বাজতে টনক নড়ে তার ,, উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই চমকে ওঠে সে " অপর্ণা !!" হ্যাঁ হ্যাঁ এ তো সেই অপর্ণাই কিন্তু সেই জৌলুস কোথায় !! অবাক হয় রিক প্রায় চার বছর কি তার বেশি সময়ই হবে অপর্ণাকে দেখেনি সে যদিও বলা ভালো দেখতে চায়নিও সে ...

হাতের আধপোড়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে প্রশ্ন করে "তুমি এখানে ??"

-- আমাকে একটু ভিতরে আসতে দেবে ...

দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় রিক , হাতের ইশারায় ভিতরে আসতে অনুমতি দেয় সে মেয়েটাকে ...


দরজায় শিকল তুলে ড্রইং রুমের সোফায় বসে জানতে চায় -- "আজ তুমি এখানে ?? কোন দরকার ??"

কান্নায় ভেঙে পড়ে অপর্ণা ,, ভেজা গলায় বলে -- "প্লিজ ক্ষমা করো আমায় রিক ,, আমার ভুল হয়ে গেছে ,, তখন ভরসা রাখতে পারিনি তোমার উপর ভেবেছিলাম তুমি হয়তো পারবে না আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে তাই ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলাম সম্পর্ক প্লিজ ক্ষমা করে দাও অনেক কষ্টে তোমার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি ফিরিয়ে দিওনা আমাকে ..."

ভ্রু কুচকায় সে -- "মানে !! কিসের ক্ষমা ..."

-- আমি জানি রিক আমি তোমার জীবনের অন্ধকার দিক তাকে ভুলে সুযোগ আর একবার দেওয়া যায় না ...

ম্লান হাসে রিক ,, কঠোর গলায় বলে --" তুমি অন্ধকার নও অপর্ণা তুমি আসলে একজন রেপিস্ট ..."

এমন প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করেনি অপর্ণা ,, স্বপ্রশ্ন দৃষ্টিতে সে চেয়ে থাকে ছেলেটার মুখের পানে কিছুক্ষন ,, অবাক সুরে বলে -- " আমি রেপিস্ট ?? আমি নিজের হাতে নিজের সর্বনাশ করেছি বলছ..."

"সর্বনাশ তাও আবার তোমার সত্যি কিছু হয়েছিল অপর্ণা ?? নিজের সন্তানকে মারতে চেয়েছিল তুমি ,, হ্যাঁ অপর্ণা শুনতে খারাপ লাগলেও তুমি রেপিস্ট ,, যেশুধু নিজের চাহিদা মেটাতে মত্ত ছিল ,, আমি ফিরতে চেয়েছিলাম তুমি ফিরতে দাওনি তাহলে শুধু আমরাই কেন তোমাদের মতো মেয়েরা হতে পারোনা বুঝি ..."

এবার যেন আত্মসম্মানে লাগে তার ,, উঠে দাঁড়িয়ে চড়া গলায় বলে -- "তাহলে ছেলেটাও আমার ভুলে যেওনা ...ও যদি জিজ্ঞেস করে ও মা কোথায় কি বলবে তুমি ..."

-- যখন বুঝতে শিখবে নিজেই বুঝে যাবে ,, এখন তো সে জানেই না সন্তান জন্মের উৎস ,, যাইহোক সময় হলে বুঝিয়ে দেবো সত্যি ঠিক মেনে নেবো আমি সেভাবেই মানুষ করছি আমার ছেলেকে ...

-- তাহলে আমিও ছেড়ে দেবোনা শুনে রাখো বলে দেব সবাইকে আসল সত্যি ..

-- বলতেই পারো তবে সামান্য অনুশোচনা বোধ থাকলে তুমি বুঝতে পারতে এতক্ষনে আমার তোমাকে ঘেন্না করতেও ঘেন্না হয় ,, আমার চোখে তো নেমেই আছো নিজের চোখেও নিশ্চিত আশা করি কিন্তু আর প্লিজ সন্তানের চোখে নিজেকে নামাতে বাধ্য করোনা ...

-- তুমি নেগেটিভ রোলে অভিনয় করতে করতে নিজের কতটা ভিলেন হয়ে গেছো জানো !! চেঁচিয়ে ওঠে অপর্ণা ..

আগের মতোই শান্ত গলায় বলে রিক 

-- আরো আগে হওয়া উচিত ছিল তাহলে হয়তো তুমি এখানে আসার সুযোগ পেতে না ..

-- আমি আইনের কাছে যাবো বলে দিলাম ..

-- যাও তবে মনে রেখো আইন মানকেও সুযোগ দেবে মা বাবার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে আর আমি জানি আমার ছেলে আমার কাছেই থাকবে ,, তবে আমি কিন্তু এখন চাইলে পুলিশে ইনফর্ম করতেই পারি তুমি মাঝরাতে আমার বাড়িতে এসে আমার মানহানির চেষ্টা করছো ,, আমাকে সিডিউস করে নিজের খারাপ উদ্দেশ্য সফল করতে চাইছো সেটা ভালো হবে তো ...??

অপর্ণা দাঁড়ায় না তার নারীত্ববোধে লাগে আজ তার বড্ড ,, ভেবেছিল নাকে কেঁদে আবার গুছিয়ে নেবে সব ঠিকঠাক কিন্তু হলো কই ,, গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায় সে ,, দু ফোটা চোখের জলে গাল ভিজে যায় ছেলেটার ,, ছুটে মানের কাছে আসে সে ,, ঘুমন্ত ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে -- "তুই আমার একার মান তোকে কারো হতে দেব না তাতে যদি আমাকে বাস্তবের ভিলেন হতে হয় রাজি আছি ..."

ঘুমের ঘোরেও ছেলেটা বাবার গায়ের গন্ধ টের পেয়ে আঁকড়ে ধরে তাকে শক্ত করে ,, নিরাপদ আশ্রয়ে আরও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায় সে ....

বড্ড হালকা লাগে নিজেকে ,, মেরুদন্ড আর যাইহোক বাঁকা হতে দেবেনা রিক কিছুতেই ,, সমাজে এমন কিছু নারী এখনো আছে যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সব পারে ,, তাদের মতো রেপিস্টদের জয় কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না ....



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract