রাত তখন নটা
রাত তখন নটা


রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল বলে একটু ভয়ে ভয়েই ছিল জিনিয়া ওরফে বন্ধুদের জিনি। পার্টিটা থেকে বেরোতে বোধহয় একটু বেশীই রাত হয়ে গিয়েছিল। রাস্তাও যে এতোটা ফাঁকা থাকবে, তাও বোধহয় বুঝে উঠতে পারেনি। একটু শহরের বাইরেই জায়গাটা। ইশিতার বাড়িতেই প্রত্যেকবার পয়লা জ্যান দুপুর থেকে হয় এই পার্টি। প্রায় খান কুড়িজন থাকে। এবারে একটু কমই এসেছিল,তার মধ্যেও বেশীরভাগই একটু আগে আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল। শীতের রাত। জিনি একটু দেরীই করেছিল,অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা, তাই যতোটা পারা যায় আনন্দ করে নিতে চাইছিল!এমনিও সে খুবই ডেয়ারিং মেয়ে, একটু আধটু ক্যারাটেও জানে, তাই খুব একটা কারুর পরোয়া করে না। কিন্তু.. বেরোতে বোধহয় একটু বেশীই দেরী হয়ে গিয়েছিল। আর নটাতেই যে জায়গাটা এমন শুনশান হয়ে যাবে সেটাও বোধহয় সে বুঝতে পারেনি।।
পারলো, যখন বাইরে বেরিয়ে দেখে একটাও ক্যাব নেই। শেষমেশ একটা উবের বুক করে দাঁড়ালো জিনি ওরফে চব্বিশ বছরের জিনিয়া সেন। ক্যাব আসতে এখনো বারো মিনিট। এই সময়টা যে কি করে কাটবে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা জিনি। এই বোরিং জায়গায় ঠান্ডার মধ্যে না:, করার তো কিছু নেই। কেত মারতে গিয়ে আবার ডেনিম শর্ট স্কার্ট আর বেবি পিংক টপ পড়েছে, সাথে অবশ্য জ্যাকেট আর স্কার্ফ আছে,তবু এই শীত তো তাতে মানছেনা!ঠান্ডাটা কম করার জন্য জিনি পায়চারি করতে লাগল আর ইশিতার সাথে ফোনে কথা বলতে লাগল। হঠাৎ একটা বিশ্রী শিষের আওয়াজে প্রথম চমক লাগল জিনির। সে এতোক্ষণ মেইন রোডকে পিছনদিকে রেখে ঘুরতে ঘুরতে কথা বলছিল। খেয়ালই করেনি কখন পিছনে একটা মাহিন্দ্রার গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে! সে তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই গাড়ির থেকে দুজন বেরিয়ে এল। দেখতে ভদ্র বাড়ির মতোন হলেও,অবস্থা খুবই খারাপ!পা টলোমলো আর গন্ধ যা বেরোচ্ছে তাও বলার নয়!জিনি প্রমাদ গুনল.. দুজন নেমেছে, গাড়িতে বসে আরো তিনজন। আর সে যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, পিছনেই দেওয়াল। কিছু অশ্লীল মন্তব্য কানে ভেসে আসার সাথে সাথেই একজনের মধুর কণ্ঠস্বর....
"কোনো হেল্প লাগবে নাকি ম্যাডাম?বলুন,আমরা আছি তো!''বলেই খ্যাঁকখ্যাঁক করে একটা বিশ্রী হাসির আওয়াজ। জিনির মাথা যেন আর কাজ করছেনা। দুজনের পিছনে আরো একজনও নেমে পড়েছে। বাকিরা যেন চুপচাপ মজা দেখছে। এক পা, এক পা করে এগিয়ে আসছে যেন তিনটে ভদ্র পোশাক পরা নরকের কীট,জিনির তাই মনে হয়!সামনের ছেলেটার চোখ যেন মাপছে জিনির শরীর। তার প্রতিটি অণু পরমানু যেন জরীপ করছে তার নোংরা চোখ দিয়ে। জিনির গা ঘিনঘিন করতে লাগল। হাত মুঠো করে মনকে শক্ত করে একটু একটু করে সে পিছোতে শুরু করল, যতোটা জায়গা আছে তার মধ্যেই। ইতিমধ্যে মেইন রোড দিয়ে যে কোনো গাড়ি যাচ্ছেনা তা নয়, কিন্তু কারুরই এখানে কি হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। হঠাৎ অবাকভাবে সকলকেই চমকে দিয়ে মাহিন্দ্রার পাশে আর একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়! অপ্রত্যাশিত ভাবে তা থেকে নেমে আসেন মাঝবয়সী এক মহিলা আর বছর দশেকের একটা বাচ্চা ছেলে। মহিলা ভদ্র পোশাক দেখেই বোধহয় সাহস করে এগিয়ে আসেন৷"এ আপনারা কি করছেন...!'' বলতে বলতেই ছেলেগুলোর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারেন তার ভাবনা কতো ভুল ছিল৷ছেলেগুলোর মধ্যে আবার অশ্লীল শব্দের রব ওঠে। গা গুলিয়ে ওঠে মহিলার, ভাবেন এমন ভাষাতেও মানুষ কথা বলে। বাকি দুজনের অবস্থা বোধহয় ছিল খুব খারাপ, তাদের কেউই নামার ইচ্ছা দেখায় না।
হঠাৎ তৃতীয় প্রবেশ ঘটায় কিছুক্ষণের জন্য বোধহয় ছেলেগুলো একটু থমকে ছিল। হঠাৎ সামনের ছেলেটা এগিয়ে এসে জিনির হাতটা টেনে ধরতেই জিনি বিদ্যুৎচমকের মতোই সেটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়েই ছেলেটার মুখে চালালো একটা মোক্ষম ঘুষি! একে ছিল তারা পুরো লোডেড, টাল সামলাতে না পেরে এবং কিছুটা চমকের চোটেও পাশের রাস্তার ওপর পড়ে যেতেই,পিছনের দুজন খুব রেগেমেগে তেড়ে এল। একজনের হাতে একটা ছুরি! জিনি সবে রেডি হচ্ছে,হঠাৎ, না: এবারে জিনি না,, পাশ থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজের সাথে কেউ একজন প্রায় কয়েক ফুট উপরে উঠে দুজনকে কষালো দুটো লাথি! মোক্ষম! ছিটকে পড়ল দুদিকে দুজন। একটা ওইটুকু বাচ্চার লাথি যে অমন ভয়ানক হতে পারে তা জিনি তো ভাবতেই পারে না, ছেলেদুটোও আর কখনো ভুলতে পারবে বলে মনে হয় না! সাথে সাথেই মহিলার চিৎকার...."ঋক রান টুয়ার্ডস কার৷''
নিমেষের মধ্যে জিনির হাত ধরে ঋক নামক বিস্ময়বস্তুটি গাড়িতে! যতক্ষণে তারা তিনজন আবার উঠে দাঁড়ালো, জিনিরা ততোক্ষণে অর্ধেক পথ পেরিয়ে গেছে। অনেকটা রাস্তা কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। শুধু জিনির বাড়ির রাস্তাটা জেনে নিয়েছিলেন রঞ্জিতা। স্বামী বাইরে থাকায় গাড়িটা খুব ভাল চালাতে শিখেছিলেন বলেই হয়তো আজ আরো অনেক সুবিধা হল। জিনি পরে ঠান্ডা মাথায় হিসাব করে দেখেছিল পুরো ঘটনাটা ঘটতে সময় নিয়েছিল মাত্র দশ মিনিট। পরে উবের অবশ্যই ক্যান্সেল করেছিল সে। আজকের এই ঘটনায় ট্রেন্ডি ডেয়ারিং জিনিরও বোধহয় তখনো বুক কাঁপছিল। রঞ্জিতা তো এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে, বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি। তাদের নিস্তব্ধতা প্রথম ভঙ্গ করল ঋক "মম,এই প্রথম আমার শটদুটো বোধহয় ঠিকঠাক হল;আর একদম ঠিক জায়গায় একটা মুখে আর একটা বুকে৷''
বলেই দাঁত বের করে দুজনের দিকে তাকালো। দুজনেই তার মাথায় হাত বুলিয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে হেসে উঠলেন।।