রাজনীতি ও প্রেম - প্রথম কিস্তি
রাজনীতি ও প্রেম - প্রথম কিস্তি
রাতুল
আজকাল রাতুল এর ব্যস্ততা বেশ বেড়ে গেছে । রাজনীতিতে আসার মাত্র ১ টি বছর এর মধ্যেই সুজয়দার খুব কাছের লোক সে । যেখানেই কোনো বড় সমস্যা হয় সুজয়দা রাতুল কে পাঠিয়ে দেয় ।বরাবর ই ভীষণ ঠান্ডা মাথার ছেলে হিসাবে পরিচিত রাতুল । সবাই কে সুন্দর ভাবে এক সাথে নিয়ে চলতে তার জুড়ি মেলা ভার । সুজয় দার প্রত্যয়ী চোখ সেটা চিনে নিতে কোনো অসুবিধাই পড়েনি ।ইংলিশ অনার্স নিয়ে স্নাতক স্তরে প্রথম শ্রেণীতে পাস করেছে রাতুল । কিন্ত তার পর ও চাকরি বা আরো পড়াশোনার চেষ্টা না করে কেমন করে যেন সক্রিয় রাজনীতিতে চলে এলো সে । অথচ বাড়িতে অনেক সমস্যা রাতুল এর । বাবা লোকাল স্কুল এর নন টিচিং কর্মী ছিলেন । ১ বছর হলো অবসর নিয়েছেন ।মা এর ও বয়স হয়েছে ।ছেলে হিসাবে রাতুল এর উচিৎ বাবা মা দায়িত্ব নেয়া । বাড়িতে সব সময় বলে
চাকরির জন্য । এক বার তো রাতুল এর কোনো এক দূর সম্পর্কের মামা , চাকরির পুরো ব্যবস্থা করে ফেলেছিলো মুম্বাই এ । বারবার যেতে বললেও রাতুল যায়নি ।রাজনীতি আর সুজয়দার মতো নেতার পাশে পাশে থাকার , আর মানুষ কে সেবা করার অনুভূতি কে রাতুল যেন কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারেনা । কলেজ
লাইফ এ সুজয় দার সাথে যখন প্রথম আলাপ হয় রাতুল এর, সবার মতো রাজনীতিকে ভীষণ ঘৃণা করতো রাতুল । সুজয়দা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিলো
রাজনীতির আসল মানে । মহাভারত এর উদাহরণ টেনে যখন শ্রীকৃষ্ণ আর শকুনী মামার রাজনীতির ব্যাখ্যা দিতো মন ভোরে যেত রাতুল এর । সুজয় দার কথা বার্তা , আচার আচরণ ভীষণ এ অন্যরকম লাগতো রাতুল এর । কি ভাবে যেন ধীরে ধীরে সে সুজয়দার আরো কাছাকাছি চলে আসতে লাগলো । আর সুজয়দা ও যত দিন যেতে লাগলো রাতুল কে সব জায়গায় পাঠাতে লাগলো । মাত্র ১ বছর এ সুজয় দার রাজনৈতিক গ্রাফ বেশ উর্ধমুখী , সামনের নির্বাচনে মন্ত্রী পদের জন্য লড়বে সুজয়দা । তাই নিজের একটা ছোট্ট দল তৈরি করছে , যেখানে সবাই পড়াশোনা জানা, আর সমাজের অন্ধকার দিক থেকে মানুষ কে বার করে নিয়ে আসতে , সমাজ ও সরকার এর ভালো কিছু কাজ সহজে পাইয়ে দিতে সাহায্য করে । এরকম এ একটা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে রাতুল । আজ একটা অনাথ আশ্রম এ যাবার কথা ছিল রাতুল দের । সুজয়দার পাঠিয়ে দেয়া কিছু অর্থ সাহায্য করা টাই ছিল আসল উদ্দেশ । এর পর এখানকার মিশনারি স্কুল আছে সেখানে একবার কথা বলার কথা আছেই রাতুল এর । সুজয়দার ভোটের প্রচার করার জন্য ওই মিশনারি স্কুল এর হেডমিস্ট্রেস সাহায্য করবে বলেছে । কি ভাবে করবে সেটা জেনে বুঝে আসা টাই রাতুল এর কাজ । সবে তারা অনাথ আশ্রম এ ঢুকেছে হঠাৎ ফোন সুজয়দার , বেশ ব্যস্ততার সাথেই প্রশ্ন করলো রাতুল তুই কোথায় ? বললাম অনাথ আশ্রম এ । বললো তুই এখুনি আই , দরকার আছে । বললাম আর এখানকার কাজ ? বললো ওটা পল্টু কে বলে দে ও সামলে নেবে । রাতুল পল্টু কে সব কিছু বুঝিয়ে সুবীর
কে নিয়ে রওনা হলো । সুবীর তা কিছুটা রাতুল এর চেলা টাইপ এর । রাতুল যেখানে এ যাই সুবীর ওর পিছু নেয় ।সুজয়দা যে সুবীর কে খুব পছন্দ করে তা নয় ,কিন্ত
রাতুল এর সাথে থাকে বলে বিশেষ কিছু বলে না । সুবীর ছেলে টা একটু পাগলাটে ধরণের । ভীষণ উল্টোপাল্টা কথা বলে ফেলে । রাতুল মাঝে মাঝেই বিপদে পরে যাই ওর কারণ এ । কিন্ত ছেলে তার মন প্রাণ এতটাই ভালো , আর রাতুল কে এতটাই ভালোবাসে , রাতুল চাইলে ও অস্বীকার করতে পারেনা সুবীর কে । রাতুল এক বার বললো সুবীর তুই থাক ওদের সাথে , কিন্ত সুবীর যেন পাত্তা না দেবার ভঙ্গিতেই সবাই কে কি সব জ্ঞান দিয়ে রাতুল এর সাথে বেরিয়ে এলো । ভাবটাই এমন রাতুল কে সুজয়দা ডেকেছে মানে সুবীর কে ও ডেকেছে । যাই হোক ছেলে তাকে খুব বেশি না বলতে পারে না রাতুল । তাদের বাড়ির পাশেই বাড়ি ,ছোটবেলা
থেকে দেখছে , তাই সব কিছু মানিয়ে নেয় । সবাই কে সব কিছু ভালো করে বুঝিয়ে , স্কুটার টা বার করে স্টার্ট দিলো রাতুল , সুবীর পিছনে এসে বসলো । এই স্কুটার টা ও সুজয়দার কিনে দেয়া। বলেছিলো আমার কাজে অনেক দূর যেতে হতে পারে তোকে , এটা খুব কাজে লাগবে , নিজের কাছে রেখে দে । মাসিক তেলের টাকা পার্টি ফান্ড থেকে দিয়ে দেব । খুব লজ্জা করেছিল রাতুল এর স্কুটাৰ টা নিতে, কিন্ত না করতে পারিনি । এমনিতেই বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যাতে এই স্কুটার টা বেশ কাজে আসে ।ফাঁকা রাস্তায় বেশ জোরেই স্কুটার চালাতে শুরু করলো রাতুল , পিছন থেকে সুবীর অনবরত কিছু একটা বলে যাচ্ছিলো , ভালো করে শুনতে বুঝতে পারলো , ও জানতে চাইছে সুজয়দা কেন ডেকেছে ? এটা রাতুল সত্যি এ জানে না । সুজয়দার গলা তে ও বেশ একটা টেনশন এর সুর ছিল । নিশ্চই সেরকম কিছু হয়েছে ,স্কুটার তার গতি আরো একটু বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে চললো রাতুল , পিছনে সুবীর অনবরত কিছু বক বক করেই চলতে লাগলো ।
সুনেত্রা
ভারী মিষ্টি মেয়ে তো তুই সুনেত্রা । কথা টা শোনা মাত্র পিছন ফিরে তাকালো সুনেত্রা । দেখলো সোমা দি । একটু হেঁসে, ধন্যবাদ দিয়ে ,নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো সে । কারখানার ম্যানেজমেন্ট এর কাজে ২ মাস হলো ঢুকেছে সুনেত্রা । ভালো মাহিনা দেয়াই ঘরের কাছে একটা চাকরি ছেড়ে এতো দূরে ছুটে এসেছে সে । এখানে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার পর ও ভালোই টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারে সে । বাবার একটা দোকান ছিল এক কালে , সেটা এখন প্রায় বন্ধ, মা বাড়ি বাড়ি কিছু সেলাই এর কাজ করে অল্প কিছু রোজগার করে । আর শেষ দু বছর সুনেত্রা এ সংসার টা টানছে । এই চাকরি তা পাবার পর প্রথম মাসে যখন প্রায় ১২০০০ টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছে ,খুব মন তা খুশি লাগছিলো সুনেত্রার । এতো টাকা পেয়ে বাবা মা যে কি করবে সেটা দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো তার । কিন্ত উপায় নেই অন্তত ৬টা মাস না কাটালে ছুটি পাবে না সে ।সোমা দি আবার ডাকলো , কিরে কিছু বললি না তো ? আসলে সুনেত্রা চা খেতে খুব এ ভালোবাসে , কিন্ত এখানে এসে দেখলো চা করার বন্দোবস্ত আছেই বটে , কিন্ত কেউ এ বিশেষ উৎসাহ দেখায় না, চা করে খাবার ব্যপারে । সুনেত্রা সকাল সকাল সবার জন্য চা করে প্রত্যেক এর টেবিল রেখে দিয়ে আসে । সোমা দি সেই ব্যাপার টাই বলছে বোধহয় ,তাই ঘুরে সুনেত্রা বললো , আসলে আমি সকাল বেলা এসে খাই তো , তাই তোমাদের সবার জন্য বানিয়ে দিই । সোমা দি হেসে ফেললো । এখানে এই ৪-৫ জন মানুষ গুলো ভীষণ এ ভালো । সোমা দি ২ দিন হলো যোগ দিয়েছে ।এর আগে সুনেত্রা এ ছিল এক মাত্র মেয়ে ।কারখানায় নানা রকম এর কাজ কর্ম হলে ও এই ম্যানেজমেন্ট রুম তাতে বিশেষ সমস্যা এসে পৌঁছোই না । সুনেত্রা শুধু মাত্র একাউন্ট সামলাই , শ্রমিক দের সাথে ডাইরেক্ট কথা বার্তা তাকে কোনো দিন এ বলতে হয়নি ।প্রথম দিন যা সবাই শ্রমিক দের গ্রুপ লিড এর সাথে তার আলাপ করে দিয়েছিলো । সুনেত্রা এই রুম থেকে খুব একটা বেরোয় না । কারখানার পাশেই একটা ঘরে ভাড়া থাকে সে ।যেতে ৫ মিনিট লাগে , সেটুকুই সে আসল কারখানার রূপ তাকে দেখার চেষ্টা করে । বোঝার চেষ্টা করে শ্রমিক দের দুঃখ । কিন্ত সে ম্যানেজমেন্ট এ কাজ করে , তাই ম্যানেজমেন্ট থেকে যা বলবে সেটাই মেনে চলতে হয় তাকে । আজ সকালে সবাই কারখানার কিছু গন্ডগোল নিয়ে কথা বলছিলো । সুনেত্রা এসব কথা সাধারণত এড়িয়ে চলে । তবে আজ ফেরার সময় ,কারখানায় একটা জটলা দেখতে পেলো সে । ভোম্বল দা কে জটলা তে দেখে কি হয়েছে জানতে যাবে , এমন সময় জটলার মধ্যে বান্টি কে দেখতে পেলো সুনেত্রা । এই ছেলেটা এক ধরণের লোকাল গুন্ডা । সুনেত্রা এক দম পছন্দ করে না ছেলে তাকে । দৃষ্টি তা ও খুব খারাপ , চলে যেতে যাচ্ছিলো সে , হঠাৎ পিছন থেকে রমেশ বলে উঠলো , সুনেত্রা
দাড়াও ।এই রমেশ এক ছেলে , সুনেত্রার সাথেই কাজ করে সে , কোনো কারণ ভীষণ ভাবে মেলামেশা করার চেষ্টা করে সুনেত্রার সাথে । যদিও সুনেত্রার ওকে
মোটেই পছন্দ হয়না । বড্ডো গায়ে পড়া ধরণের ছেলে টা । রমেশ এসে বললো , বাড়ি চললে ? সুনেত্রা ছোট্ট উত্তর এ ঘাড় নাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো ।কিন্ত রমেশ তার সঙ্গ নিলো । বলতে লাগলো অনেক কিছু , তার মোদ্দা কথা যেটা বলতে চাইলো , কারখানায় কোনো একটা স্ট্রাইক হতে পারে । সামনের মাস থেকে নাকি মজুর দের মজুরি বন্ধ করে দেবে ম্যানেজমেন্ট । অবাক হয়ে সুনেত্রা জিজ্ঞেস করলো কেন ? রমেশ জানালো জানেন না , ম্যানেজমেন্ট উপর লেভেল এ একটা পরিবর্তন আসছে , তারা এই পুরোনো শ্রমিক দের রাখতে চাই না । তারা বলেছে হয় শ্রমিক দের ট্রেনিং নিতে হবে , না হয় নতুন শ্রমিক আসবে । এদের কে ছেড়ে দেবে । সুনেত্রা বললো তা সেটা তো ভালো উদ্যোগ । রমেশ জানালো , আসলে এরা কোথা থেকে খবর পেয়েছে ম্যানেজমেন্ট এর পছন্দের ১০-১২ জন কেই ট্রেনিং করাবে , আর বাকিদের বার করে দেবে এক কালীন কিছু টাকা দিয়ে ।তাই এই প্রতিবাদ । বুঝলাম , বলে এগিয়ে গেলো সুনেত্রা । ঘরে ঢুকে পরিস্কার হয়ে নিলো সে । তারপর খাবার বানাতে উদ্দত হলো । ঘরে একটা ফোন করে নিলো মা কে । মা , বাবা দু জন এর জন্য কিছু নতুন জামা কাপড় কিনেছে সে । শুনে ভীষণ খুশি হলো তারা । খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাদের , কিন্ত কোনো উপায় নেই সুনেত্রার কাছে । মন খারাপ করে ফোন রেখে রান্না করতে চলে গেলো সে । অল্প কিছু রান্না করতে করতে মজদুর দের দুর্দশার কথা ভাবছিলো সে । কাল অফিস গিয়ে পুরো ঘটনাটা ভালো করে শুনবে সুনেত্রা ।
রাতুল
স্কুটার চালিয়ে সুজয়দার বাড়িতে পৌঁছতে ২০থেকে ২৫ মিনিট লাগলো রাতুল এর । আগে সুজয়দার
ঘরে ঢুকতে গেলে বডি সার্চ করতো , এখন আর কিছু
করে না । সুজয়দা কে ভিতরে দেখতে পেলো রাতুল , খুব
ব্যস্ত হয়ে হাঁটছিলো । রাতুল কে দেখে বললো এসে গেছিস ? ভিতরে
আই । সুবীর কে বাইরে রেখে ভিতরে প্রবেশ করলো রাতুল । সবাই কে বেঘোরে বসতে বলে
ভিতরের ঘরে নিয়ে গেলো রাতুল কে । বললো একটা অসুবিধাই পড়েছিরে রাতুল । ডানলপ এর
কাছে একটা কারখানায় খুব গন্ডগোল হবে এরকম শুনছি । লোকাল কিছু গুন্ডাদের ভালো হাত
আছেই এখানে । পার্টির উপর মহল থেকে ব্যাপার তা আমাকে সামলাতে বলছে ।
কিন্ত আমাকে এখুনি পার্টি মিটিং এ যেতে হবেই , না
হলে লোকাল সব নেতাদের ম্যানেজ করা যাবে না । আমি আর কারোর উপরে ভরসা করতে পারছি না
, তোকে ছাড়া ।তুই ওখানে কাল কের ই চলে
যা , আমার এক জন খুব কাছের ইউনিয়ন নেতা আছেই তনয় বলে । ও তোকে
সব বুঝিয়ে দেবে । তোর কাজ হবে যাতে কোনো ভাবেই আন্দোলন না হয় ,দু
পক্ষ কেই বুঝিয়ে ব্যাপার টা থামিয়ে দিস । কি রে রাতুল চুপ করে আছিস পারবি তো ? রাতুল
বললো তুমি যখন ভরসা করছো নিশ্চই
চেষ্টা করবো । চেষ্টা নয় করতেই হবে । আর যাবার সময় মুকেশ এর সাথে দেখা করে যাস ।
মুকেশ মানে সুজয়দার টাকা পয়সাসামাল দেয় যে । মুকেশ দার কাছে যেতেই হাতে অনেক
গুলো টাকা ধরিয়ে দিলো, বললো ২০০০০ আছে। তোমার বাবার শাড়ির খারাপ জানাও নি তো ? রাতুল
বললো তেমন কিছু নয় ।ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে জানিয়ো কেমন আছেন । সুজয়দার বলে
রেখেছে আরো টাকা লাগলে তোমাকে দিতে । সত্যি মন তা ভোরে গেলো রাতুল এর । সুজয়দার
প্রতি মন তা শ্রদ্ধায় ভোরে গেলো । কত খোঁজ খবর রাখে এতো ব্যস্ততার মধ্যে ও । যে
ভাবেই হোক সুজয়দার কাজ তা করতেই হবে তাকে । বাইরে বেরোতেই সুবীর বললো কি বললো ? কালকের
ই ডানলপ যেতে বললো , সেটা
শোনার পর অদ্ভুত উত্তর সুবীর এর , বা তাহলে
এখন কোনো কাজ নেই । আমি তাহলে একটু বেরিয়ে গেলাম রাতুল , কাল
৬তার সময় চলে আসবো । এরকম এ অদ্ভুত সুবীর । এমন ভাবে বলে গেলো , যেন
রাতুল এর পারমিশন নিয়েএ সে সব জায়গায় যাই , আর
রাতুল কাল তাকে অব্যশই নিয়ে যাবে । যাই হোক বিশেষ কিছু না ভেবে স্কুটার এর দিকে এগিয়ে
যেতে গেলাম , হঠাৎ দেখলাম সুবীর
স্কুটার টা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো , বললো
ভাই এটা একটু নিয়ে গেলাম । অগত্যা
হাঁটতে লাগলো রাতুল । কি কাজ করবে বলে সকাল এ বেরিয়েছিল ,আর
কোথায় যাচ্ছে সে এখন , হয়তো রাজনীতিতে এরকম হয় ,এখন
যা সত্যি পরমুহূর্তেই তা মিথ্যা হতে পারে । কথাটা সুজয়দা কে সে অনেক বার বলতে
শুনেছে । বাড়ি ফিরে বাবা কে ডাক্তার দেখালো সে । বিড়ি খাওয়া ছাড়তে বলা ছাড়া ,বিশেষ
কিছু বলেন না এই ডাক্তার । আর বাবা বিড়ি খাওয়া ছাড়বেও না । এখন তা ও
বেরিয়েএকটু দোকানে বসে । একটা ছোট্ট দোকান করে দিয়েছে
রাতুল । সামান্য কিছু জিনিস এ রাখে তাতে । অল্প যা ইনকাম হয় সেটাই যথেষ্ট অভাব এর সংসারে । রাতুল
সবসময় চাই সুজয়দার দেয়া টাকা যতটা কম সম্ভব খরচ করতে । কিন্ত
অভাব এর সংসার , খরচ হয়ে এ যাই । রাতের খাওয়াশেষ হলে শুতে যাবার সময় ,রাতুল
ভাবতে লাগলো এরকম কাজ সে আগে কখনো করেনি । কারখানার ম্যানেজমেন্ট আবার লোকাল
গুন্ডা , সাথে আবার ইউনিয়ন লিডার সব মিলিয়ে কিরকম একটা ভয় লাগছিলো
রাতুল এর । তবে ইউনিয়ন লিডার টা সুজয়দার চেনা এটাই যা বড়ো ভরসা
।
সুনেত্রা
সকালে
অফিস যাবার সময়ই একটা কুণ্ডল দেখতে পেলো সুনেত্রা । কোথা থেকে রমেশ এসে বলে গেলো আজ
কের ফিরে যান ম্যাডাম , বড়োসরো কিছু হতে পারে , শুনছি
লোকাল গুন্ডা গুলো মিলে গেছে ।
পার্টি র কোনো বড়ো লিডার ও
আসতে পারে শুনেছি । ঘাড়টা নাড়িয়ে
অফিস এ ঢুকে গেলো সুনেত্রা , রমেশ কে
পাত্তা দিতে বিশেষ ইচ্ছা করলো না তার । ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারলো অবস্থা খুব একটা
ভালো নয় ।চা বানিয়ে সবার টেবিল এ দিতে গিয়ে শুনলো, রমেশ
যা বলছে খুব একটা ভুল বলছে না । ভোম্বল দা এসে , আমাকে
আর সোমা দি কে আজ বাইরে বেরোতে বাড়ুন করে গেলো । ভয় সুনেত্রা খুব একটা পাই না ।
গরিব ঘরের মেয়েদের ভয়পেলে খুব একটা চলে না । আজ বিশেষ কাজ ও নেই , সবাই
মিলে গল্প করেই কাটাছিলো তারা । কাজ ছাড়া এতো গল্প করতে খুব একটা ভালো লাগে না
সুনেত্রা । চা বানাচ্ছি বলে উঠে এসে , জানলার
কাছেই চলে এলো সে । নিচে একটা বড়ো জটলা
হয়েছে ।অনেক সাধারণ শ্রমিক দের মধ্যে গুন্ডা
বান্টি তাকে ও দেখতে পেলো সে । ইউনিয়ন লিডার টা ও আছে । সবাই মিলে একটা ফর্সা
ছেলে কে কি সব বলে চলেছে । ছেলেটি খুব ঠান্ডা মাথায় শুনছে । ছেলে টিকে বেশ মিষ্টি
দেখতে , আর শান্ত স্বভাব সঙ্গে ভদ্রতা বেশ আকর্ষণ করে । এই ছেলে টি
ই কি রমেশ এর সেই পার্টি এর লিডার ? হতে
পারে হয়তো । সুনেত্রা আর পার্টি এর কোন লিডার কে চেনে । একটু বেশিক্ষন ধরেই ছেলে
টিকে দেখছিলো সে , মনে হলো যেন কথা বলতে বলতে ছেলে টি একটু উপর দিকে চাইলো ।
যদি ও ৩ তোলার ছাদ এ থাকা সুনেত্রা কে দেখা কোনো ভাবেই সম্ভব নয় তার পক্ষে।
ছেলেটি আচরণ বেশ ভালো লাগছিলো সুনেত্রার । হঠাৎ এ সোমা দি পাশে এসে দাঁড়ালো ।
বললো কি দেখছিস এতো মন দিয়ে ? চমকে উঠে
একটু লজ্জা পেয়ে গেলো সুনেত্রা , বললো
কিছু না নিচে দেখছিলাম । এমন সময় খুব জোর একটা ভাংচুর এর আওয়াজ পেলো তারা ।
তাকিয়ে দেখলো কিছু লোক ম্যানেজমেন্ট রুম এর বাতানুকূল যন্ত্র টি খুব জোরে আঘাত
করছে । ভোম্বল দা কিছু বলতে গেলে , ওরা
সরাসরি ভোম্বল দা কে থাপ্পড় মারলো ।সবে এগোতে যাবে সুনেত্রা , রতন
দা এসে বললো আপনারা কিচেন রুম এ থাকুন । কিচেন রুম এ অনেক্ষন থাকার পর , সুনেত্রা
বললো এই ভাবে বসে থাকা যাই না সোমা দি । আমাদের দেখা উচিত কি হচ্ছে, বাইরের
আওয়াজএখন অনেক তাই থেমে এসেছে , দরজা তা
খুলে বাইরে এসে অবাক হয়ে গেলো সুনেত্রা । সব কিছু চুরমার হয়ে গেছে । ভোম্বল দা
বেশ মার খেয়েছে ,তাড়াতাড়ি কিছু ওষুধ নিয়ে এসে লাগিয়ে দিলো সুনেত্রা ।
বললো এভাবে চলতে পারে না ভোম্বল দা , আমাদের
ও সবার সাথে কথা বলা উচিত । যা চলছে সেটা তে যে আমাদের কোনো দোষ নেই সেটা তো ওদের
বুঝতেই হবে । সবাই কে রাজি করিয়ে নিচে এলো সুনেত্রা । জটলা তার কাছেই গিয়ে
ভোম্বল দা বললো একটু শুনবেন দাদা । যে ছেলে টি এগিয়ে এলো তাকেই উপর থেকে দেখছিলো
সুনেত্রা । বললো বলুন , ভোম্বল দা জানালো পুরো ঘটনা টা । শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে
গেলো ছেলে টি । ছেলে টি জানালো এরকম তো হবার কথা নয় ,ইউনিয়ন
লিডার টিকে ডেকে বেশ ধমক দিলো সে । বান্টি কে ডেকে আনতে বললো, বান্টি
এলে ছেলে টিকে রাতুল দা সম্বোধন দিয়ে ডাকলো । বললো বোলো রাতুল দা । ঘটনার কথা
জিজ্ঞাসা করতে অস্বীকার করছিলো সে । তখন এ সুনেত্রা এগিয়ে এসে বললো , যে
ছেলে গুলো এসেছিলো তার মধ্যে এক জন কে সে চেনে এই বান্টির দলের এ লোক সে । বেশ ধমক
খেলো বান্টি ছেলেটির কাছে । বান্টির ক্রর দৃষ্টি এড়িয়ে, রাতুল
বলে ছেলেটির পার্সোনালিটি ভীষণ আকর্ষণ করতে লাগলো সুনেত্রা কে । সব ঝামেলা মিটিয়ে
আজকের মতো যখন কারখানা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সুনেত্রা , দেখলো
ছেলেটি ভীষণ ব্যস্ত সবার সাথে কথা বলতে । নিজেকে খুব ফালতু লাগলো সুনেত্রা র , এরকম
এক জন পার্টি লিডার তাকে পাত্তা দিতে যাবে কেন । এগিয়ে চললো সে নিজের ঘরের দিকে ।
মনের মধ্যে ওঠা একটা ছোট্ট ঝড়কে যেন অকালেই জোর করে মেরে দিলো সে ।