Mitali Chakraborty

Romance Classics Inspirational

3  

Mitali Chakraborty

Romance Classics Inspirational

পুরোনো জামা:-

পুরোনো জামা:-

3 mins
336


মুখ গোমড়া করে বসে আছে অর্চি আর টিমটিম, তারা দুই ভাই। অর্চি বড়, সে ৮ বছরের আর টিমটিম ছোট, ওর বয়স ৫ ছুঁই ছুঁই। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গোটা দেশে লকডাউন চলছে এখন, সব কিছু বন্ধ। দু ভাইয়ের স্কুলও যথারীতি বন্ধ। বড়ো বড়ো মল, রেস্তোরা, গেম জোন, পার্ক, সব কিছু বন্ধ। দুই ভাই গৃহবন্দী। আশ্চর্য্য জনক ভাবে দুজনের কেউই সারাক্ষণ আর হুটোপুটি করছে না। ঝগড়াও করছে না একে অপরের সঙ্গে। চুপচাপ থাকে দুইভাই জানালার ধারে রাস্তার দিকে তাকিয়ে। রাস্তাও একদম জনমানব শূন্য। কোনো হইচই, কোলাহল কিছু নেই। যে যার বাড়িতে দরজার অপর প্রান্তে বন্দী। বড্ড মন খারাপ হয় অর্চি আর টিমটিমের, নিত্য পুজোর সময় রোজ দিন প্রার্থনা করে এই সব রোগ ব্যাধি যেনো সাত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, তাহলেই বাইরে খেলতে যেতে পারবে তারা। ঘরে বন্দী হয়ে বসে থাকতে যে আর মন চায় না ওদের।

---- কি গো দাদুভাই রা, তোমরা হাত ধুয়েছো?

---- হ্যাঁ ঠাম্মি, হাত ধুয়েছি। ঠাম্মি শোনো না, একটি বার খেলতে যেতে দাও না বাইরে। 

অনুনয়ের সুরে বলে ওঠে ছোট্ট টিমটিম। টিমটিমদের বাড়ির কাছেই একটি ছোট্ট মাঠ, অন্য সময় সেই মাঠে বিকেল বেলা পাড়ার ছেলে মেয়েরা ভিড় করে খেলার জন্য। স্কুল থেকে এসে টিমটিম আর অর্চিও নাকে মুখে করো রকমে একটু খাবার গুঁজে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছুটে চলে যায় খেলার মাঠে। কিন্তু সেই খেলার মাঠ আজ একদম খা খা করছে। কেউ খেলে না, কেউ যায় না মাঠে। বড্ড কান্না পায় টিমটিমের।

------- বাবাসোনা রা, এমনি মনমরা হলে চলে? দেখছো তো করোনা ভাইরাসের কি আতংক চারিদিকে। সবাই কে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। কেউ যেনো বাইরে না যায়, তোমরা এখন এভাবে কান্নাকাটি করলে আমাদের খারাপ লাগবে না বলো? 

------ কিন্তু ঠাম্মা আমরা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি ঘরে বসে বসে। মা বাপি কোথাও আমাদের নিয়ে যায় না। 

কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে কথা টি বললো অর্চি।

------ আচ্ছা, তোরা আমার ঘরে আয় । মজার জিনিষ দেখাবো তোদের। 

----- কি গো সেটি ঠাম্মি? 

----- আয় না, এলেই দেখবি!

ঠাম্মার ঘরে ঢুকে খাটে উঠে বসলো দুই ভাই। ঠাম্মা তাঁর পুরনো কাঠের আলমিরা থেকে বের করলেন একটি পুঁটুলি।

----- এতে কি আছে ঠাম্মা? এটা কিসের পুঁটুলি?

----- খুলে দেখ।

 দুভাই পুঁটুলি খুলে আবিষ্কার করলো বেশ পুরোনো কয়েক জোড়া জামা কাপড়। 

----- এসব কাদের ড্রেস গো ঠাম্মা?

------ তোদের বাবা আর পিসিমনির জমা কাপড় এগুলো।

----- তাই? তুমি এত যত্ন করে রেখেছো? কিন্তু আমাদের কেনো দেখাচ্ছো ঠাম্মা?

---- দেখাচ্ছি এই কারণে যে তোমরা এখন এই জামা গুলো পড়বে। পিসি আর বাবার ছোটবেলার জমা কাপড় গুলো। কেমন মজা হবে বলো? তোমাদের মন খারাপ কাটিয়ে তোলার জন্য এটা একটা অভিনব পন্থা। আমি বাইরে যাচ্ছি, তোমরা দুজন পরে ফেলো কাপড় গুলো। অর্চি তুই তোর বাপির এই শার্ট টা পরবি, আর টিমটিম বাবু তুমি তোমার পিসির এই ফ্রক টা পড়বে আর ঠাম্মার এই লাল টিপটা কপালে লাগবে।

********************

সানন্দে দৌড়াতে দৌড়াতে ড্রইং রুমে ঢুকলো অর্চি আর টিমটিম। অর্চির বাবা সুমন আর মা রিতা দুজনেই দৌড়ে এসে চমকে গেলেন দুই ভাই কে দেখে। বলাই বাহুল্য পিসির ফ্রক পরে টিমটিম কে একদম পুতুলের মতন লাগছিল। আর বাবার শার্ট পরে অর্চির সে কি উল্লাস! সুমন বাবু ভালই বুঝতে পারলেন এটা কার ফন্দি। মায়ের পাশে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরে বললেন, 

----- মা এই শার্ট টা এখনও এত যত্ন করে রেখেছো? ভাগ্যিস রেখে ছিলে আমার আর বোনের কাপড় গুলো। দেখো তো এরা দুই ভাই কি আনন্দ পাচ্ছে।

 ------- হ্যাঁ রে খোকা রেখেছি তো, নাতি দুটোর পাংশু মুখ দেখেই মনে পড়লো তাদের কে এই গুলো দেখাই। দেখ তো কত আনন্দ এদের এখন। গৃহবন্দী হয়ে থাকার সাময়িক মন খারাপ টা কেমন নিমেষে উবে গেল?

------ হ্যাঁ মা! সত্যিই। তুমি সত্যিই অতুলনীয়া।

ওইদিকে টিমটিম আর অর্চি তখন তাদের মায়ের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। এগুলো যে চিরন্তন স্মৃতি হতে থাকবে। ভবিষ্যতে এই ছবি গুলোই তো মনে করাবে লক ডাউনের কারণে সবাই যখন ঘরে বন্দী তখন কিভাবে মন কে উৎফুল্লিত রাখতো এরা....



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance