পুন্য
পুন্য


"এই রামু মালপত্রগুলো নিয়ে আয় , বাস এল বলে" তাড়া দিচ্ছেন তপনবাবু
... আজ তার একটা বড় ইচ্ছে পূরন হতে যাচ্ছে,বহুদিনের শখ বুড়ো বয়সে তীর্থ করে পুন্যি লাভ করবেন।
অনেকবার যাব যাব করে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি তাই এবারের সুযোগ আর হাতছাড়া করবেন না তাছাড়া এবছর ট্যুর প্যাকেজে ভালো অফার আছে, বরাবরের কিপটে মানসিকতার তপনবাবুর এবারে তীর্থ করতে যাওয়ার অন্যতম কারন এটাও।
গিন্নি বছরখানেক হল গত হয়েছে না হলে গিন্নির সাথেই যাওয়ার কথা ছিল, তা বলে আপশোষও নেই।ছেলের বিয়ে হয়েছে নাতিপুতিও হয়েছে, মেয়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে দিয়েছেন আর জমানো টাকার সুদ দিয়ে আরামেই দিন গুজরান করছেন তপনবাবু, তাই ভাবলেন এই সুযোগে তীর্থদর্শন করে আসবেন। শুভস্য শীঘ্রম
... বাস চলে এসেছে, হর্নের ঠ্যালায় বাড়িতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে, তপনবাবু এটা আন ওটা আন বলে চেচিঁয়ে যাচ্ছেন...শেষ পর্যন্ত সব মিটমাট করে বাসে উঠে বসলেন তপনবাবু।তারপর
'উফ' বলে শান্তির নিশ্বাস ফেললেন যাক এতক্ষনে শান্তি, এবার ভালোয় ভালোয় সবকিছু হলে বাঁচি।
গাড়ি চলছে, তপনবাবু জানালা দিয়ে বাইরে দেখছেন। চারিদিকে শুধু সবুজ ধান আর ধান,চোখ জুড়িয়ে যায়। কবিত্ব আসেনা তপনবাবুর না হলে, একটা সুন্দর কবিতার প্লট তো ছিলই টুক করে লিখে ফেললেই হয়ে যেত ।
ছোটবেলার কথা মনে পড়ল,কত লুকোচুরি খেলেছেন ধানখেতে,ঘুরি উড়িয়েছেন, ধানের কচি পাতা নিয়ে আকাশে ছুড়েঁছেন। আজ এত বছর পর তপন বাবুর মনে হল কোন ভাবে যদি ছোটবেলায় যাওয়া যেত, বেশ হত।
বাসটা গ্রাম ছেড়ে শহরে প্রবেশ করল, রাস্তায় কিছু ভিখারি ভিক্ষা চাচ্ছে। গাড়িটা গিয়ে থামল একটা হোটেলের সামনে, কন্ডাক্টর চেঁচিয়ে বলছে "কার কি খাওয়ার এখানেই করে নিন,গাড়ি একঘণ্টা পরে রওনা হবে"।
সবাই আস্তে আস্তে নেমে গেল,তপনবাবু নামলেন সবার শেষে। একটা বড় হাই তুলেই যেই হোটেলের পথে পা বাড়িয়েছেন অমনি লক্ষ্য করলেন কে যেন তার জামা ধরে টানছে।
নীচে লক্ষ্য করতেই দেখলেন একটা পাচঁ বছরের ছোট্ট ছেলে, গায়ে ছেঁড়া শার্ট আর হাফ প্যান্ট। চোখদুটো দেখেই অবাক হলেন তপনবাবু, ঠিকঠাক যেন ছোটবেলার নিজেকে খুঁজে পেলেন। সেই কালো ড্যাবডেবে চোখ টিকালো নাক,ফোলাফোলা গাল শুধু পার্থক্য এই যে জামাকাপড় ছেঁড়া আর ধুলোমাটি দিয়ে ভর্তি।
"বাবু,টাকা দিন না খাব"সম্বিৎ ফিরল তপনবাবুর।
-খাবি?আয় বলে কোলে তুলে নিলেন তপনবাবু,তারপর মাছ ভাতের অর্ডার দিয়ে বাচ্চাটাকে খাবার খেতে দেখতে লাগলেন, কেমন গোগ্রাসে গিলে চলেছে, যেন গোটা পৃথিবীটা একাই গিলে ফেলবে।
ছোটবেলায় এমন করেই খেতেন তপনবাবু, একবার তো গলায় মাংসের হাড় আটকে গিয়েছিল।অনেক কষ্টে বার হয়েছিল।
খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির হাসি দিল ছেলেটা সাদা ধবধবে দাতঁ বের করে। আজব তো ছেলেটা হাসেও ওর মত করে..
"তোমার নাম কী" তপনবাবু বললেন
"আমার নাম তপু" বলে হাসল ছেলেটা
আজব তো ছেলেটা কি তার প্রতিলিপি নাকি?ছোটবেলায় তপনবাবুরও ডাক নাম ছিল তপু!!
"আমার সাথে আমার বাড়ি যাবি?খেতে দেব জামাকাপড় দেব" তপনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
-না
-কেন? মা বাবার জন্য?
-আমার মা বাবা নেই?
-তবে কেন যেতে চাচ্ছিস না?
-রঘু,পিকু,পরি আছে
সত্যিই তো,এত বছরে কখনো তপনবাবু নিজের ছাড়া অন্যের কথা ভাবেন নি, আর এই ছোটছেলেটার অন্যের জন্য কত চিন্তা!!
-যদি সবাইকে নিয়ে যাই,যাবি?
অবাক চোখে তাকাল ছেলেটা তারপর বলল"হ্যা"
"চল তাহলে "বলে ছেলেটাকে নিয়ে ফুটপাথ দিয়ে চলছেন তপনবাবু
যা এবারেও তীর্থ করা হল না, আর হবেও না হয়ত হাসলেন তপনবাবু তৃপ্তিতে ।