পুনর্ভবা পর্ব :-৫
পুনর্ভবা পর্ব :-৫
হঠাৎ সুলতা বলে ওঠে,
_____আমার একখান কথা জিগানের আছে।
______এ্যাঁ! ঘুমাওনি তুমি? আমি তো ভেবেছিলাম আমার বকবক শুনতে শুনতে বোধহয় ঘুমিয়ে পড়লে। সারাদিনে পরিশ্রম তো আর কম হয়না! বলো কি বলবে ?
জল ঢ্যাপায় বেশি না পুনর্ভবায়?
ঢ্যাপা হলো করতোয়ার শাখানদী। করতোয়া এখনও উত্তরবঙ্গের এক নামকরা নদী। একটা সময়ে হিমালয় থেকে এতো বেশী জল প্রবাহিত হতো এই নদী দিয়ে যে করতোয়া কে কীর্তিনাশা বলা হতো। ঠাকুরগাঁও এর আশে পাশে বর্ষাকালে প্রচন্ড বন্যা হতো। এভাবেই অনেক নদী নালার নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছিল। নাগর নদীরও এভাবেই সৃষ্টি। অত্যন্ত প্রয়োজনেই এখানকার অতিরিক্ত জলকে নাগর নদীতে ফেলার উদ্দেশ্যে কুলিক খনন করা হয়।
খুব সম্ভবত ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে হিমালয়ের খুব বড় এক ধ্বসে জল প্রবাহ অনেক সংকুচিত হয়ে পড়ে। তবুও বর্ষায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তা কুলিক এখনও বয়ে নিয়ে ফেলে নাগরে। তারপর সেই জল মহানন্দা হয়ে গঙ্গায় মেশে। কুলিকের জল খরার দিনে কমে যায় অনেক। কিন্তু পুনর্ভবার উৎস যায় শুকিয়ে। তাই
কোথাও জল থাকে তো কোথাও নেই। কোনও কোনও সময় চরে চাষ আবাদও করা হয়। আবার বর্ষা এলেই নদীটা তার রূপ ফিরে পায়। হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে, তাই তো এর নাম পূনর্ভবা ।
কিন্তু ঢেপার সাথে মিলনের পর পুনর্ভবায় আর জলের অভাব থাকেনা। এবার বুঝলে কার জল বেশি?
_____হ, বুঝছি। তাইলে মিলনের পরে নদীটার নাম ঢ্যাপা না হইয়া পুনর্ভবা হইলো ক্যান?
_____ও এই ব্যাপার!
হেসে ওঠেন নিখিলেশ। বলেন,
_______তোমার বাঁ হাত টা দাও।
______এই যে তোমার অনামিকাতে চুনির আংটিটা রয়েছে। এটাকে সোনার আংটি না বলে চুনির আংটি বলে তাইতো? কিন্তু এই আংটিতে চুনির চেয়ে সোনা অনেক বেশিই আছে।
দিনাজপুরে ঢ্যাপা যখন এসে পুনর্ভবা তে মিশলো তখন এরকমই মণিকাঞ্চন যোগ হলো। তাই মিলন স্হলে কিছুটা যায়গায় নদীটার নাম কাঞ্চন। বুঝলে?
এটা হলো ঢ্যাপাকে সোনার সম্মান দেখানো। ঠিক যেমন আমাকে সোনার মেডেল দিয়েছিল কলেজ থেকে তেমনই। বুঝলে আমার চুনি ! কি এবার খুশি তো ? ঢ্যাপার জন্য চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না! হা হা হা হা।
সুলতা মুখ লুকায় নিখিলের বুকে।