sourav dey

Romance Classics Inspirational

4.5  

sourav dey

Romance Classics Inspirational

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি

4 mins
385


আজ আমার বিয়ে, ঠিকই ধরেছেন আজই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের দিন। আজ থেকে তিন বছর আগে যে মানুষটাকে কথা দিয়েছিলাম এখন তার হাতের উপরেই আমার হাত। মামা আমার কন্যাদান করছেন , ছোটবেলা থেকে মামা বাড়িতেই মানুষ আমি, তাই মামা আমার বাবার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আজকের এই দিনে নিজের বাবার গল্প না হয় নাই বললাম। যাইহোক এই দিনটা খুব সহজে আসেনি অনেক কিছু প্রমাণ করে অনেকের অনেক কথা শোনার পর এসেছে। দেখুননা এখনো তো পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে অনেকের অনেক মন্ত্রণাই কানে আসছে। একজন আরেকজনকে বলছে দেখো দেখো সুদীপার বরটা কি সুন্দর হয়েছে না দেখতে, তখন আরেকজন বলছে জানোনা ছেলেটা বোবা। তারপর একজন বলছে সুদীপার বর জানো তো সরকারি চাকরি করে,আরেকজন বলছে ওই লোভে পড়েই এই বোবা ছেলেকে বিয়ে করছে। আমাদের সম্পর্ক শুরু হওয়ার পর থেকে এইসব কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই আজকের দিনে না শুনলে বোধ হয় শুভ হত না।


তা এবার আসি আমাদের ভালোবাসা পরিণতি পাওয়ার গল্পে। তিন বছর আগে যখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম এম এ করবো বলে তখন থেকে শ্রেয়ার সাথে পরিচয়। ও আর আমি এক ডিপার্টমেন্টেই পড়তাম। তো ফেসবুকে দেখি ও আমায় ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে। একসেপ্ট করার পর ওর প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম একটা ছেলের সাথে ওর অনেক ফটো আছে। ভাবলাম ওর হয়তো বয়ফ্রেন্ড হবে। ছেলেটার মুখের মধ্যে একটা সরলতা আছে যেটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। পরেরদিন ক্লাসে গিয়ে শ্রেয়াকে বললাম ছেলেটা কে বয়ফ্রেন্ড নাকি, ও বললো ধুর ও আমার ছোট বেলার বন্ধু দীপ্ত। সবাই নাকি ওদের ফটো দেখে আমার মতোই ভাবে। এবার সেই সময় ওতো ডিটেলসে ছেলেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না নইলে ভাববে আমার এতো ইন্টারেস্ট কেন। তাই নিজেই দীপ্তর প্রোফাইলটা ঘাটলাম। শ্রেয়াকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে ফটো ছিলনা তাই মনে হচ্ছিল হতে পারে সিঙ্গেল।কিছু দিনের মধ্য শ্রেয়ার সাথেও আস্তে আস্তে ভালো বন্ডিং তৈরি হয়ে গেছিল। তো ওকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম দীপ্তর ব্যপারে যে ছেলেটা কেমন, প্রেমটেম করে নাকি। শ্রেয়া তখন সবকিছুই বলেছিল ওর সম্পর্কে। যাতে বুঝেছিলাম নো ডাউট দীপ্ত খুব ভালো ছেলে, কোনো প্রেমও করে না। তো ওকে বললাম দীপ্তর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। সেইসময় শ্রেয়া বলে যে দীপ্ত কথা বলতে পারেনা কানে মেশিন লাগিয়ে শুনতে পায় আকার ইঙ্গিতে সব বোঝায়। আমার কাছে ওই বিষয়টা এমন কোনো বড় ছিলনা যে আমি মানুষটাকে অপছন্দ করবো বা ওর থেকে দূরে যেতে চাইবো। ছোটবেলায় দাদু আমাকে ''আভিদ খান গিয়াসে''র লেখা একটা কথা বলতেন- "অন্যের মাঝে খুঁত খুঁজে, নিজেকে নিখুঁত আমি ভাবিনা।খুঁত সবার মধ্যেই থাকে, মানুষ কখনো নিখুঁত হতে পারেনা। " আমিও সেটাতেই বিশ্বাসী ছোট থেকে।


তারপর দূর্গা পূজার অষ্টমীর দিন শ্রেয়াদের পাড়াতেই প্রথম দেখা হল দীপ্তর সাথে। সেদিন একসাথে অঞ্জলি দিলাম, ভোগ খেলাম। তারপর সন্ধ্যাবেলা সবাই মিলে ঠাকুর দেখতেও বেরিয়েছিলাম। খুব ভালো সময়


কাটিয়েছিলাম সেদিন। তারপর বাড়ি আসার পরপরই দেখলাম দীপ্তর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। শ্রেয়াও ফোনে বলল দীপ্ত নাকি আমার খুব তারিফ করছিল। তারপর থেকে দীপ্তর সাথে চিট চ্যাট হতে থাকে, ভিডিও কলেও কথা বলতাম। এবার আপনারা হয়তো ভাবছেন ও তো কথা বলতে পারেনা তাহলে কিভাবে ? ওর ভাষা আমাকে আলাদাভাবে শিখতে হয়নি কখনো আপনাআপনি হয়ে গেছে। আমরা দুজন কতই কিছু না বলতাম। আমি তাই ভাবি এখন কোনো কথা বলা ছেলের সাথে আজ আমার বিয়ে হলে আমি এতোটা খুশি হতাম না যতটা দীপ্তর সাথে হচ্ছি। বেশ কয়েকমাস কেটে গেল, আমার আর দীপ্তর বন্ধুত্ব তাও বেশ গাঢ় হয়ে গিয়েছিল। আমিও বুঝতে পারছিলাম দীপ্তরও আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু নিজে থেকে বলতে পারছে না। তারপর আমিই একদিন ওর সাথে দেখা করে বলেই ফেললাম যে আমি ওকে ভালোবাসতে চাই ও কি অনুমতি দেবে, একটা আলাদা এক্সপ্রেসন ছিল ওর মুখে, বোঝানোর চেষ্টা করলো সবাই আমাদের মেনে নেবে কিনা। আমি বললাম আমরা দুজন দুজনকে মেনে নিলেই চলবে বাকি কারো প্রয়োজন নেই। সেদিন থেকে পথ চলা শুরু।


এরপর আস্তে আস্তে সবাইকে জানানো শুরু করলাম। শ্রেয়াতো শুনে খুব খুশি। সেদিন থেকে ওর সাপোর্টও আজ অব্দী আমাদের সাথে আছে। আমার বিয়ের গাঁটছড়াটা ওই বাঁধবে। বাকি বন্ধু বান্ধবীদের যখন জানালাম সামনে সব ভালো ভালো বললেও, পরে শুনতে পারলাম আমি নাকি মহান সাজার জন্য এটা করেছি। কেউ কেউ বলেছিল নাকি ছেলেটা সরকারি চাকরি করে ওই দেখে রিলেশনে গেছি,কয়েকদিন ফূর্তি করে ছেড়ে দেবো। বাড়ীতে জানালাম মা মামা অবাক, মামা বললেন প্রেম করছো সেটাও মেনে নিলাম কিন্তু এরকম একটা ছেলের সঙ্গে সারা জীবন থাকতে পারবে তো, পরে মন ঘুরে যাবেনা তো, সেই সময় কিন্তু নিজের সাথে আরেকটা মানুষ তার পরিবারের জীবনও নষ্ট হবে। স্বাভাবিক ছিল মামার সেই সময় এরকম মনে হওয়াটা। মা থ্রু আউট ছোট থেকে আমার সমস্ত বিষয়ে সাপোর্ট করে এসেছে কিন্তু এই বিষয়টাতে প্রথম দিকে মন থেকে মানতে পারছিলনা। তারপর দীপ্তর সাথে পরিচয় করালাম যখন তখন মায়েরও বেশ মনে ধরছিল। বুঝেছিল এই ছেলেই পারবে আমাকে খুশি রাখতে। ওদিকে দীপ্তর পরিবার যখন জানলো তখন ওরা এই সম্পর্কটা হতে দিতে চাইনি। কারণ ওরা চেয়েছিল দীপ্তর মতোই কেউ আসুক ওর জীবনে তাহলে নাকি দুজনে ভালো কমিউনিকেট করতে পারবে একসঙ্গে হ্যাপী থাকবে। কিন্তু দীপ্তর জেদের কাছে হার মানতে হল ওদের, ও বুঝিয়ে দিয়েছিল খুশি থাকলে আমার সাথেই থাকবে, আর কারোর সাথে না। যেদিন ওদের বাড়িতে প্রথম গেছিলাম ওর মা আমার হাত ধরে বলেছিল দীপ্ত খুব সরল ছেলে ওর খেয়াল রেখো ওকে কখনো দুঃখ দিও না। আমিও কথা দিয়েছিলাম, যা আমি সারা জীবন পালন করবো। সবার অনুমতি নিয়ে এই তিন বছর চুটিয়ে প্রেম করেছি। মান অভিমান খুনসুটি ঝগড়াঝাটি সব কিছুই ছিল আপনাদের মতো তথাকথিত নর্মাল সম্পর্ক গুলোর মতোই আমাদের সম্পর্কে।


আজ এই বিয়ের পিড়িতে বসে মনে হচ্ছে আমি পারলাম নিজেকে অনেকটা প্রমাণ করতে নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে। এখনও অনেক পথ চলা বাকি অনেক গল্প বলা বাকি সেটাও জানি পূর্ণ হবে। তাই বলবো ভালোবাসার মানুষের মধ্যে খুঁত না খুঁজে তার ভালো দিকগুলোকে আপন করে নিলে অনেকের ভালোবাসাই পরিণতি পাবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance