খুঁটি পূজা
খুঁটি পূজা


নমস্কার আমি পূজা, বয়স ২৭, উচ্চতা ৫'৬", গায়ের রং ফরসা, রোগা পাতলা চেহারা, বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরতা, কলকাতায় পৈতৃক বাড়ি, মা বাবার সাথেই থাকা হয়।
ভাবছেন এখানে পাত্র চাই এর বিজ্ঞাপন দিচ্ছি কেন, আসলে এই পাত্র চাই এর বিজ্ঞাপন দেখেই ছয় সাতজন পাত্র ও তাদের পরিবার যোগাযোগ করেছিল কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই শেষে সব জায়গা থেকে না টাই শুনতে হয়েছিল। সবারই একটাই কথা আপনাদের মেয়ে বড্ড রোগা, আরেকটু চেহারা ভালো হলে আমাদের ছেলের জন্য ভাবতাম। কেউ কেউ বাড়ি যাওয়ার সময় তো বলেই গেলো একটু ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া কোরো ঠিক আছে।
ব্যাপারটা কি বলুন তো এইসব কথা আমার কাছে নতুন ছিলনা ছোট থেকেই শুনছি। মাও আগে বেশি করে দুধ ডিম ফল এই পাউডার সেই পাউডার ভিটামিন ট্যাবলেট কত কিছুই না খাইয়েছে ফেডআপ হয়ে শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কোনো খাবারই আমার গায়ে লাগেনি। বন্ধুরা তো আমার এইরকম খুঁটির মতো চেহারার জন্য খুঁটি পূজা বলেই ডাকতো। ছোট থেকেই পড়াকু ছিলাম আর ক্যারিয়ার ফোকাস ছিলাম ওই কারণে কখনো ওই রূপচর্চা শরীরচর্চা এইসব আমার দ্বারা হয়নি। সবসময় আমি এটাই মনে করতাম অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকবো কেন, বিয়ে হোক আর না হোক নিজের দায়িত্ব নিজেই সামলাবো।
তা একদিন ফেসবুকে নোটিফিকেশন ঢুকলো একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে। চেক করতে গিয়ে দেখি একটা বেশ হ্যান্ডসাম ছেলে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে। মনে মনে ভাবছিলাম নিশ্চয়ই আমার ফিল্টার দেওয়া প্রোফাইল পিক দেখেই পাঠিয়েছে, বাস্তবে আমার এই ক্ষেদি পেঁচির মতো চেহারা দেখে পালাবে। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলাম, যথারীতি হাই হেলো আরও নানা ধরনের কথাবার্তা শুরু হল। এইরকম করে বেশ কয়েকটা মাস কাটলো, ছেলেটা দেখছি ইন্টারেস্ট হারায়নি ফুল দমে চ্যাটিং করে চলেছে, তারপর একদিন ফোন নাম্বার চাইলো দেখাও করতে চাইল। তা এই কয়েক মাসে ছেলেটাকে আমার ঠিকঠাকই লেগেছিল, ও বেসরকারী একটা কোম্পানিতে চাকরি করে বাড়িতে মা বাবা আর ভাই আছে। তাই আমিও আপত্তি করলাম না, নাম্বার শেয়ার করলাম।
একদিন সময় সুযোগ করে মিটও করলাম, দেখা করতে যাচ্ছি আর ভাবছি আজকের পর থেকে হয়তো আর কথা হবে না আজই লাস্ট। কিন্তু বিষয়টা পুরো উল্টোই হলো সেদিনের পর থেকে আমাদের একটা আলাদাই বন্ডিং তৈরি হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিল কত পূর্ব পরিচিত দুজন, এতো দিনের জমানো কথাগুলো হয়তো এর জন্যই ছিল। এর কিছু দিন পর ও সরাসরি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিল, আমি ওকে তখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম হঠাৎ আমি কেন, তখন একটু ফিল্মি হয়েই ও বলেছিল ভালোবাসায় মনটাই আসল একটা সময় পর তো এই রূপটা আর থাকবেনা। কথাটা ফিল্মি হলেও এটাই বাস্তব যতই রূপবান স্বাস্থ্যবানের পেছনে ছুটি না কেন একটা সময় এর পর এসবের কিছুই থাকবে না। শুধু মানুষ দুটোই পরে থাকবে তাদের মধ্যে ভালোবাসাটাই রয়ে যাবে।
তা শেষ অব্দী বেশ ধুমধামেই আমাদের বিয়েটা হল। এই খুঁটিতেও মালা পরল এরও পূজা সম্পন্ন হল।