শেষ থেকে শুরু
শেষ থেকে শুরু
কলিং বেলটা বেজে উঠলো, রিমা দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলল, দেখল রজ্জক আঙ্কেল এসেছে। পিসিকে ডাক দিয়ে বলল আঙ্কেলের আসার কথা। পিসি তখন ছাদে জামা কাপড় তুলছিল, তুলে তাড়াতাড়ি নামল নীচে। রজ্জক তখন ড্রয়িং রুমে বসে, সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রিমার পিসি বলতে থাকল এতোদিন পর মনে পড়ল তোর আমাদের কথা। এরই মধ্যে রিমার মাও রান্না ঘর থেকে চা বানিয়ে নিয়ে এসে রজ্জকের হাতে দিল, আর বলল সত্যি অনেক দিন পর এলেন রজ্জক দা আর চেহারাটাও দেখছি অনেকটা খারাপ হয়ে গেছে শরীর-টরীর খারাপ ছিল নাকি? রজ্জক তখন বলল আর বলবেন না বৌদি এই কয়েকটা মাস যা গেল বলার মতো না। ছয়মাস আগে ছোট ছেলেটা মামা বাড়িতে ঘুরতে গেল, এসেই ওর আর্মি তে জয়েনিং ছিল লেটারও চলে এসেছিল। তো মামা বাড়িতে গিয়ে মামার ছেলেদের সাথে গঙ্গায় গেছিল স্নান করতে, কীভাবে যে তলিয়ে গেল কেউ বুঝতেই পারেনি, কয়েক ঘণ্টা পর বডি পাওয়া গেল। বড় শোক পেয়েছিল সাবানা ছোট ছেলের এরকম হওয়াতে। তারপর থেকে কেমন যেন হয়ে গেছিল ও। আসলে সবসময় ছোটটার সাথেই তো থাকত। বড়টাতো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাঙ্গালোরে রয়েছে, আমিও আসি কয়েকমাস পরপর এখনতো গুজরাটে পোস্টিং আমার, আর্মি অফিসার হয়ে যাওয়ার পর থেকে আরও প্রেসার। এই দুমাস আগে সাবানাও আর রইল না চলে গেল ছোট ছেলের কাছে। এখন তাই একা কি আসব আর বাড়িতে কার জন্যই বা আসবো, তাই আরকি এতোদিন পর। সবারই চোখ প্রায় ছলছল করছে এসব শোনার পর। রিমার মা পিসি দুজনেই অনেক শান্ত্বনা দিল রজ্জক কে। বলল যখনই মন খারাপ লাগবে এ বাড়িতে চলে আসতে। সেদিনের সন্ধ্যাটা এভাবেই কেটে গেল ওদের।
কয়েকদিন পর ঘটক মশাই এর ফোন এলো রিমার মাকে তিনি বললেন যে সন্ধ্যাবেলায় রিমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। রিমার মাও রিমাকে কোথাও বেড়োতে মানা করল। রিমার ঠিক বিয়ে করার ইচ্ছা নেই, টালবাহানা করতে থাকে। মা তখন ওকে বোঝাচ্ছে আমাদের অবর্তমানে তোকে কে দেখবে, ভাই এরও সংসার হবে ও কি দেখবে তোকে। তোর বাবা আর আমার মতোন নাকি সবাই যে তোর পিসির দেখা শোনা করছি এখনো। সন্ধ্যায় পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর রিমা ওর মাকে বলল আচ্ছা তোমরা আমাকে বলছ তোমাদের পর আমাকে দেখবে কে, তাহলে পিসিকেই বা তখন দেখবে কে। একটা কাজ করলে হয়না পিসি আর রজ্জক আঙ্কেলতো সেই স্কুল লাইফের বন্ধু, শুনেছি রজ্জক আঙ্কেলতো পিসিকে পছন্দও করতো বিয়েও করতে চেয়েছিলো। কিন্তু মুসলিম বলে এই বাড়ি থেকে দেয়নি। তো রজ্জক আঙ্কেলতো এখন একা আর পিসিও আজ অব্দী বিয়ে করনি তো ওদের জুটিটা এখন কেমন হবে সময় পাল্টেছে দুজনের বয়সও হয়েছে। মা তো বকা দিয়ে তখন চুপ করিয়ে দিল রিমাকে।
রাতের বেলা ঘুমানোর সময় রিমা শুয়ে শুয়ে ওর পিসিকে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা পিসি তুমি বিয়ে করোনি কেন রজ্জক আঙ্কেলের সাথে বিয়ে হয়নি বলে? পিসি বলল নারে রজ্জককে আমাদের বাড়ি থেকে না করে দেওয়ার পর তো সম্বন্ধ দেখছিল আমার। কিন্তু তুলি মানে আমার সেই ছোটবেলার বান্ধবীর সাথে যা ঘটনা ঘটল ওর বিয়ের পর, ওই দেখে আমার একটা আতঙ্কই এসে গেছে বিয়ের উপর। ওকে ওর বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন পণের জন্য অত্যাচার করতো শেষে তো পুড়িয়েই মেরে ফেলল ওকে। রিমা বলল আচ্ছা পিসি এখন যদি তোমায় রজ্জক আঙ্কেল বিয়ের কথা বলে তুমি করবে, পিসি খানিকটা লজ্জাও পেল আবার মিচিমিচি রাগ দেখিয়ে ঘুমাতে বলল।
তখন প্রায় প্রতিদিন সন্ধেবেলাই রজ্জক আঙ্কেল আসতো রিমার পিসির সাথে গল্প করতে। কত ধরনের গল্প গুজব চলতো ওদের মাঝে। রিমার মাও বিষয়টা নোটিশ করলো, দেখলো দুজনে বেশ ভালোই রয়েছে একসাথে। তো শেষে একদিন রজ্জককে বলেই ফেলল রজ্জকদা এখন তো আপনি একা বাকি জীবনটাতো পড়েই আছে, ছেলেতো আপনার ছেলের মতোই আছে, তো এই শেষ জীবনে কাউকে দরকার তো, রিমার পিসির সাথে বাকি জীবনটা কাটানোর কথা ভাবতেই পারেন। রজ্জকও তখন জানালো ও এই প্রস্তাবটা দিতো কিন্তু সেবারের মত যদি এবারো এদিক থেকে না আসে তাই বলেনি। এবার শুরু হল রিমার পিসিকে বোঝানোর পালা, প্রথমেতো নাই করছিল কিন্তু মনের কোথাও রজ্জকের প্রতিতো একটা ফিলিঙ্কস ছিল তার জন্য আর বেশিদিন না করতে পারল না।
একটা শুভদিন দেখে ওদের দুজনের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হল। রজ্জকের বড় ছেলেরও এই বিয়েতে কোনো আপত্তি ছিল না। ওউ চেয়েছিল ওর বাবা খুশি থাকুক। রিমার পিসি আর রজ্জক দুজনেই নিজেদের জীবনে শেষ থেকে শুরু করল। একটা অসমাপ্ত ভালোবাসা সম্পূর্ণ করল।।
