STORYMIRROR

sourav dey

Drama Tragedy Inspirational

3  

sourav dey

Drama Tragedy Inspirational

১লা ফাল্গুন

১লা ফাল্গুন

3 mins
189

মেজদির ছেলের অন্নপ্রাশনের দিনটা ক্যালেন্ডারে দেখতে গিয়ে ইংরেজির নীচে বাংলা তারিখটাও চোখে পরলো সুচিত্রার । "১লা ফাল্গুন" এই দিনটার সাথে জড়িয়ে থাকা কিছু ঘটনার কথাও মনে পড়ে গেল ওর।

পাঁচটা বছর আগে, সুচিত্রার তখন ২৭ । সেজদির বিয়েটা হয়ে গেছে আরও দুবছর আগে, তিন বোনের ছোট চার নম্বর হওয়াতে ওর বিয়েটা নিয়ে কারোরই ওতো টা মাথা ব্যথা ছিলনা, তবে সেই সময় সবাই ওকেও পাত্রস্থ করার জন্য প্রায় উঠেপড়েই লেগেছিল আরকি । সুচিত্রারও হয়তো বিয়ের ইচ্ছেটাও জেগেছিল, সমবয়সী বন্ধু বান্ধবী সবারই বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল বলে ।


জোর কদমে পাত্র দেখা শুরু হল। সুচিত্রার বাড়ির লোকের একটাই ডিমান্ড ছিল পাত্র যেন বাকী তিন দিদির হাসবেন্ডের মতো সরকারী চাকুরীজীবি হয়। ঘটকও সেইভাবে পাত্র দেখাচ্ছিল। তো এরই মাঝে এক পাত্রের সন্ধান এলো, পাত্র রাজ্য পুলিশে কর্মরত, ৩২ বছর বয়সী, নিজস্ব বাড়ি, উঁচু লম্বা, শ্যামবর্ণ। সুচিত্রার বাড়ির সবার তো বেশ পছন্দ হল। ছেলের বাড়িরও সবার সুচিত্রাকে ভালো লাগলো। তারপর দুই বাড়ি থেকে কথা এগোলো, "১লা ফাল্গুন" ওদের বিয়ে ঠিক হল ।


সুচিত্রা ওর দীর্ঘ ২৭ বছরের জীবনে কখনো প্রেম করেনি, কিছু ছেলে এসেওছিল কিন্তু ও নিজের উত্তম কুমারের আশাতেই বসেছিল বলে হয়তো তাদের সাথে কিছু কথা এগোয়নি। হোবু স্বামীর সাথে এই কারণে খুব লজ্জায় লজ্জায় ফোনে কথা বলা শুরু করলো। কিছুদিন কথা বলার পর ছেলেটার কিছু জিনিস সুচিত্রাকে অবাক করলো, ছেলেটি সরকারী চাকরি করার জন্য খুবই আত্ম অহংকারী। সুচিত্রাকে বলতো ওর জন্য নাকি অনেক মেয়েই একপ্রকার পাগল ও যে সুচিত্রাকে বিয়ে করছে এতে সুচিত্রা খুবই ভাগ্যবতী। জীবনে কখনো তেল মাখিয়ে চলবে না ছেলেটি সুচিত্রাকে সব কথাই মেনে চলতে হবে ওকে ওর। সুচিত্রা এসব কথা ওর দিদিদের সাথে শেয়ার করে, দিদিরা তখন হেসেই উড়িয়ে দেয় বলে ও হয়তো মজা করছে তোর সাথে, তুই কম কথা বলিস বলে তোকে রাগাতে এসব বলে। কিন্তু কোনটা মজা আর কোনটা মজা নয় এটা বোঝার ক্ষমতা সুচিত্রার ছিল।


এরই মধ্যে একটা খারাপ ঘটনা ঘটে, সুচিত্রার বাবা মারা যান । এতো খুশির মাঝে এরকম হবে কেউ ভাবতে পারেনি। এই খারাপ সময়ে সুচিত্রা ছেলেটিকে পাশে পাবে ভেবেছিল,"আমি আছি ভেঙে পড়োনা সব ঠিক হয়ে যাবে" এই কথাগুলো শুনতে চেয়েছিল কিন্তু সেটা হয়নি। সুচিত্রার মধ্যে অনেক কিছুই চলছিল ঠিক ছেলেকে কি বাছাই করতে পারলোতো ওর জন্য পরের জীবন কি সুখের হবে ওর। বিয়ের ডেট আর পিছানো হলনা, ওর বাবার কাজকর্ম একেবারেই মিটিয়ে নেওয়া হল যাতে বিয়েটা দেওয়া যায়। বিয়ের আর তখন মাসখানেকও বাকী নেই ছেলেটি একদিন সুচিত্রাকে ফোন করলো, ফোনটা ওর মায়ের কাছে ছিল ওকে দিতে দেরি হল উনার, ছেলেটিকে হ্যালো বলার সাথে সাথেই সুচিত্রাকে বলে উঠলো ছেলেটি - "তোমার মা এতো ছোটলোক কেনো উনি জানেনা আমার সময়ের একটা দাম আছে, এতক্ষণ লাগালো কেন "। সুচিত্রারা পাঁচ ভাই বোন আর ওর বাবা আজ অব্দী কখনো ওর মায়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বলনি আর সেখানে এই ছেলেটি যার সঙ্গে এখনো কিছু হয়নি তার এতবড় সাহস দেখে সুচিত্রা নিজেকে আর আটকালো না সেই মূহুর্তে বিয়েটাতো ভাঙলোই আর ছেলেটাকে অনেক কথাই শোনালো ওর শেষের কথাগুলো ছিল এরকম - "আমি সারা জীবন আইবুড়ো থাকবো তাও ভালো কিন্তু তোমার এতো অভদ্র ছেলেকে বিয়ে করবো না"।


তাই বলে সুচিত্রাকে এই ছেলেটির জন্য আইবুড়ো থাকতে হয়নি তার কয়েকমাস পরেই হায়দ্রাবাদ নিবাসী আইটিতে কর্মরত একজন সু পাত্রের সাথে ওর বিয়ে হয়। এই পাঁচ বছর চুটিয়ে সংসার করছে ও, বলতে গেলে ওর তিন দিদির থেকে ওই বেশি ভালো আছে। সবশেষে এটাই বলবো ভাগ্যিস ওর জীবনে "১লা ফাল্গুন" দিনটা আসেনি


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama