sourav dey

Drama Tragedy Inspirational

4.3  

sourav dey

Drama Tragedy Inspirational

পাগল প্রেমী

পাগল প্রেমী

4 mins
904


          " যখনই পড়েছে নজর

           আমিতো হয়ে গেছি তোর ''

‌না না আপনাদের গান শোনাচ্ছি না। এই গানটাতো শুনিয়েছিল এই গল্পের নায়ক তাও আবার আমাকে। প্রথমেতো পেয়েছিল প্রচন্ড হাসি তারপর মনে হয়েছিল সত্যি পাগল। গল্পের নাম শুনে হয়তো আপনারাও নাক সিটকাচ্ছেন ভাবছেন পাগল প্রেমীও আবার হয় নাকি তাও আবার আজকাল-কার দিনে। আরও অবাক হবেন এটা শুনে যে এটা আর পাঁচটা গল্পের মতো নয় এটা একটা সমপ্রেমের গল্প। "সমপ্রেম" শব্দটি সম্পর্কে আশা করি আপনারাও সবাই ওয়াকিবহাল। 

‌এবার তাড়াতাড়ি আমার ইন্ট্রোটা সেড়ে ফেলি আমি হলাম ধ্রুব, বাকি ছেলে দের থেকে আলাদা আপনাদের ভাষায় মেয়েলিও বলতে পারেন। তাই স্কুলে বন্ধুরা খুব বিরক্ত করত, কতরকম নামে ডাকতো,পাশে বসতো না, আরো অনেক কিছু চলতো। আমিও তাই কারোর সাথে কথা বলতাম না, কেউ আমার সাথে ভালো করে কথা বললে ভাবতাম এই মনে হয় একটু পরে অপদস্থ করবে। এর মাঝে আমার একটাই বন্ধু ছিল প্রিয়ম, ও আমার মতোই ছিল তাই আমাদের জমতোও বেশ। 


‌ক্লাস তখন টেন, সামনে টেস্ট পরীক্ষা স্কুলে ছেলেরাও কম আসছিল তাই আমাদের তিনটে সেকশনকে একসাথেই বসানো হচ্ছিল। সেই জন্য অরুণও আমাদের আগের বেঞ্চে বসছিলেন। এবার ভাবছেন অরুণটা আবারকে  ইনিই হলেন আমার গল্পের হিরো। ওকে আগে থেকেই দেখতাম , আমাদের সেকশনে ছিলনা বলে কখনই কথা হয়নি। তা এখন দেখছি ও শুধু আমাদের বেঞ্চের দিকেই তাকিয়ে থাকে, আমি ভাবতাম ক্লাসে আমি আর প্রিয়ম দুটোই তো এলিয়েন আছি তাই ভালো ভাবে দেখে হয়তো। তারপর ওপরের ওই গান গুনগুন করে শোনাতো, প্রিয়ম বলতো জানিসতো গানটা তোর জন্যই গাইছে। আমি মনে করতাম ও হয়তো বাকি ছেলেদের মতো আমাকে ব্যাঙ্গ করছে। তারপর নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করতো, টিফিন অফার করতো, কেউ আমাদের কিছু বললে প্রতিবাদ করতো। একদিন প্রিয়ম আসেনি সেদিন অরুণ আমার পাশে এসে বসলো। তারপর ও বললো ও অনেকদিন ধরেই আমাকে নোটিশ করে, আমি গম্ভীর গম্ভীর থাকি বলে কথা বলার সাহস পায়নি, কিন্তু ও আমাকে খুব পছন্দ করে আমি ওকে এরকম ইগনোর করি ওর খুব খারাপ লাগে। ওই সময়টা আমার ক্ষেত্রে এমন ছিল হেট্রো মেট্রো হোমো বাই এসব কিছু বুঝতাম না ছেলে ছেলেতেও ভালোবাসা সম্ভব জানতাম না। বাকী দের থেকে আমি আলাদা কেন এই সবই বারবার ভাবতাম। তো সেই সময় অরুণ কে বলে দিয়েছিলাম দেখ তুই এসব আর বলবি না কখনো আর ছেলে ছেলেতে এসব হয়না । ক্লাসে জানলে পরে আরো বেশি করে আমায় ক্ষ্যাপাবে সবাই। 


‌ তবে উনি তো পিছনে হাটার পাত্র ছিলেন না। প্রিয়মের কাছ থেকে আমার নাম্বার নিয়ে দিনরাত শায়েরি পাঠাতে শুরু করে। সামনে টেস্ট পরীক্ষা বলে স্কুল যাচ্ছিলাম না আর উনি মহাশয় আমাকে দেখতে না পেয়ে এসব করছিলেন। শুধু শায়েরি তে থেমে থাকেনি ফোন করাও শুরু করলেন, যত বলি জ্বালাতে না পড়তে দিতে ততই ভালোবাসি ভালোবাসি বলে চেপে বসতো। শেষে বিরক্ত হয়ে আমার বান্ধবী কে একদিন বললাম ব্যাপারটা ও অরুণকে সাথে সাথে ফোন করে খুব ঝাড় দিয়েছিল। অরুণ ওকে আমার নিজের দিদি ভেবে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল তারপর কিছুদিন আর ফোন মেসেজ কিছু করেনি। টেস্ট পরীক্ষাও ভালোভাবে কেটে গেল। 


তারপর ডিসেম্বর মাস পড়লো ২৫শে ডিসেম্বর এলো, বাড়ি থেকে প্রথম পারমিশন পেলাম কলকাতা যাওয়ার প্রিয়মের সাথে তাও আবার পার্কস্ট্রিটৈ। শুনেছিলাম ওখানে খুব সুন্দর সাজায়। রাতের মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে তাই বিকাল বিকাল রওনা দিলাম, স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম অরুণ বাবু দাড়িয়ে রয়েছেন। তারপর প্রিয়ম বললো পুরো প্লানটাই ছিল অরুণের, ও ওখানে এর আগেও অনেকবার গেছে সব ভালোভাবে চেনে। তারপর তিনজন গেলাম, সেদিন সত্যি খুব মজা করেছিলাম। অরুণ এতোটাই এফর্ট দিচ্ছিল যে আমারো ওকে আস্তে আস্তে ভালো লাগছিল। 

মাধ্যমিক পরীক্ষাও কেটে গেল। ছুটি চলছিল, ফোন ম্যাসেজে কথা হতো অরুণের সাথে। এরই মাঝে আমার জন্মদিন এলো। ওর সাথে বিকালে দেখা করলাম হাটতে হাটতে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসলাম। আমাকে বড় সাইজের ডেয়ারি মিল্ক গিফট করলো। একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছিলাম, ব্যাপারটা বেশ রোমান্টিক লাগছিল আমাদের কাছে। এর মধ্যে বোনাস ছিল আচমকা বৃষ্টি। ভিজলাম দুজনে বেশ ভালো করে। গঙ্গার পাড়টা ওই সময় ফাকা ছিল বৃষ্টিও পড়ছিল এই সুযোগে আমরা প্রথম কিস করলাম। তারপর যে যার বাড়ি চলে এলাম।


   কিন্তু আমাদের ঐসব কান্ড কারখানা আমার বাবার এক বন্ধু দেখে নিয়েছিল তখন তো সেটা আমরা বুঝিনি। পরের দিন যখন বাবা বকাবকি শুরু করল তখন বুঝলাম। বাবা বলল ঐসব মানসিক অসুস্থ ছেলেদের সাথে একদম মিশবি না এগুলো মানসিক রোগ এক ধরনের। আমিও তখন ভয় লজ্জা দুটোই পেয়েছিলাম। সাথে সাথে অরুণকে ম্যাসেজ করে সব বললাম, যেটা আমাদের মাঝে স্টার্ট হচ্ছিল ওটা ওখানেই স্টপ করে দিতে বললাম। কিছুদিন আর কোনো কথা হয়নি। হঠাৎই একদিন সকালে বারবার কল করে যাচ্ছে, শেষে বাধ্য হয়ে তুললাম, আমাকে বলল ও বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে আছে, আমি তো রিকুয়েস্ট করলাম ওকে চলে যেতে। বলল যতক্ষণ না আমি বেরোব যাবেনা। আমি না করে দিচ্ছিলাম বলল জানলা দিয়ে দেখ একবার, যেই তাকালাম দেখছি হাতে একটা ব্লেড নিয়ে ও হাত কাটছে, দৌড়ে গেলাম বাইরে ততক্ষণে হাত কেটে রক্ত বেরোচ্ছে। ও বলল দেখ আমি চাইনা সম্পর্কটা ভাঙতে পরে আমরা একসাথে থাকব এখন কিছুদিন গোপন রাখি সব। আমার ওর কথার চেয়ে হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে ওই দিকেই নজর। ততক্ষণে বাবা চলে এসেছে। ওকে তো খুব বকাবকি করল , তারপর পাশের ওষুধের দোকানে গিয়ে হাতে ব্যন্ডেজ করিয়ে ওর বাড়িতে পৌছে দিল ওর বাবা মা কেউ সব জানিয়ে এসেছিল। 

  এরপর আর পাগল প্রেমীর সাথে মুখোমুখি আমার দেখা হয়নি। আমিও ওই সময়ে বাবার ভয়ে, সাহসের অভাবে আর কোনো কন্টাক্ট রাখতে পারিনি অরুণের সাথে। আজ এতো বছর ভাবি সেদিন যদি বাবাকে সাহস করে বলতে পারতাম বাবা এগুলো কোনো মানসিক রোগ নয়, আর যদি সত্যি রোগ হয় আমিও তাতে সমান ভাবে আক্রান্ত, তাহলে গল্পের শেষটা হ্যাপি হত। মাঝে সাঝে স্টক করি অরুণের প্রোফাইল যদি কোনো গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওর ছবি দেখতে পাই। আর যদি এখন রিলেশনশিপেও থেকেই থাকে তাহলে কি সেই পাগলের মতোই ভালোবাসে তাকে? 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama