প্রতিশোধ
প্রতিশোধ
মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার । রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন ! ঘুম চোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল ! সদ্য জড়িয়ে আসা ঘুমটা যেন এক চটকায় ভেঙ্গে গেল । একি কথা ! নিজের অজান্তেই বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেয় তনুজার কপালে ।
একটু আগেই বেশ কয়েকটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে জোর করে শুয়ে পড়েছিল তনুজা । না, একবার যেতেই হবে চৈতির কাছে , তন্দ্রা জড়ানো চোখে উঠে দাঁড়ায় সে । সেই মত, কিছুটা ধাতস্থ হয়ে, গাড়ি বার করে নিজেই ড্রাইভ করে চৈতির বাড়ি পৌঁছায় তনুজা ।
চৈতি তখনও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে । "কি হল কি ?"
তোকে তো বললাম, আমি ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্নটা দেখেছি । অনুপম নিশ্চয় কোনও বিপদে আছে । ওর ফোনও লাগছে না । প্লিজ, কিছু একটা কর ।"
"এতো ব্যস্ত হওয়ার কি আছে ! তুই তো জানিস প্লেনে ফোন অ্যালাও নেই ।" ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল তনুজা ।
"কিন্তু এয়ারপোর্টে পৌঁছে তো একটা ফোন করতেই পারতো । তারপর এই স্বপ্ন ! আমার কিছু ভালো লাগছে না । তুই একটা কিছু কর ।"
"তুই অযথাই এত চিন্তা করছিস । অনুপম তো আর বাচ্চা ছেলে নয় !"
"তবু আমার মনটা কেমন করছে !"
হঠাৎ চৈতির মোবাইলটা বেজে ওঠে । "হ্যালো, আমি ইন্সপেক্টর সেন বলছি, আপনি কি চৈতি ম্যাডাম বলছেন ?"
"হ্যাঁ "
"অনুপম রায় আপনার কে হন ? "
"আমার হাজব্যান্ড । কেন, কি হয়েছে তার ?"
"ডুলং পাহাড়ের নীচে তার ডেড বডিটা পাওয়া গেছে । ফ্লাইটের টিকিট থেকে তাঁর নাম আর মোবাইল থেকে আপনার নংটা পেলাম... হ্যালো, হ্যালো আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন...” ফোনটা হাত থেকে নীচে পড়ে গেছে চৈতির, ওপার থেকে তখনও ভেসে আসছে ইন্সপেক্টর সেনের কন্ঠস্বর ।
"চৈতি কি হয়েছে ? কে ফোন করেছিল ?"
চৈতি ততক্ষণে বালিশের নিচে থেকে বার করেছে একটা ছোট্ট চকচকে পিস্তল ।
"কি বোকামো করছিস ! রাখ ওটা । অনুপম গেছে কিন্তু তোকে তো বাঁচতে হবে । এরকম ছেলে মানুষি করিস না, প্লিজ ।"
মূহুর্তে একটা বাঁকা হাসি খেলে যায় চৈতির চোখে মুখে, তারপর পিস্তলটা তুলে ট্রিগারে আলতো চাপ দেয় । সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ...... তনুজা !
"এটা কি করলি তুই ?" ককিয়ে ওঠে রক্তাক্ত তনুজা ।
"সেটাই তো জানতে চাই কেন এমন করলি ?" চিৎকার করে ওঠে চৈতি ।
"ও, তারমানে তুই সব জেনে গেছিলি !"
“হ্যাঁ, তবু তোর মুখ থেকে সব শুনতে চাই । শুনেছি মৃত্যু পথযাত্রী কখনও মিথ্যে কথা বলে না, আশা করি তুই আমাকে সত্যিটাই বলবি ।"
“তবে শোন, অনুপমের সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল । সে কথা দিয়েছিল তোকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে আপন করে নেবে । কিন্তু সেটা কাজে পরিণত হচ্ছিল না কিছুতেই । এর মাঝেই আমি প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ি । গত মাসেই আমার অ্যাবরসন হয় । তুই জানিস না । আমি তখন কোথাও ঘুরতে যাই নি এখানেই ছিলাম । লাইফ লাইন নার্সিংহোমে । আর তার পরই আমি বুঝতে পারি অনুপম আমাকে কোনও দিনই আপন করে নেবে না । কারণ তাহলে সে তোর পৈতৃক সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে । … আমি সুযোগের অপেক্ষা করছিলাম । সেটা কাল পেলাম । ওর ফ্লাইট ভোর তিনটেয় । আমি যাবার আগে একবার একা ডুলং পাহাড়ের ধারে দেখা করতে চাই, শেষবারের মতো... আর তারপরের ঘটনা তো মনে হচ্ছে তুই জেনে গেছিস । আচ্ছা, তুই কেমন করে জানলি ? " কোনও রকমে কথা গুলো শেষ করে তনুজা ।
"ওই লাইফ লাইন নার্সিংহোম থেকেই । আমার এক বান্ধবীর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল, তাকে দেখতে আমিও সেদিন লাইফ লাইন নার্সিংহোমে গেছিলাম । সেখানেই তোকে-আর-অনুপমকে এক সাথে দেখি । মনে আছে, তার পরে পরেই তোর পুরোনো ড্রাইভারটা কাজ ছেড়ে চলে যায় আর নতুন একজন ড্রাইভার আসে । ওটা আমারই প্লান্ট করা । ও আমাকে তোদের সব খবর দিত । কিন্তু তুই যে অনুপমকে মেরে ফেলার ছক কষছিস সেটা আমি বুঝতে পারি নি ..."
"ও ও ও তো খুন করেছে আমার গর্ভের সন্তানকে । আমাকে বাধ্য করেছে অ্যাবরসন করাতে.... দিনের পর দিন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোগ করেছে আমার শরীরটাকে । আমি ওকে শাস্তি দিয়েছি ... শাস্তি... আঃ আঃ আঃ... " ক্রমশ লুটিয়ে পড়তে থাকে তনুজা ।
চৈতি বলে চলে "তোকে রাত দুটোয় একা গাড়ি নিয়ে যেতে দেখে সন্দেহের বশে সেও তোর পিছু নেয় । সে যখন পৌঁছায় ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে । সেই আমাকে প্রথম খবরটা দেয় । আমি তাকে পরিচয় গোপন রেখে পুলিশে খবর দিতে বলি । আর তোকে এই ভাবে ডেকে নিয়ে আসি এখানে । "
“কিন্তু তুইও বাঁচতে পারবি না পুলিশ এল বলে !" মেঝেতে পড়ে থাকা চালু মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসে তনুজা ।
"হা, হা, হা" পাগলের মতো হাসতে থাকে চৈতি তারপর পরপর গর্জে ওঠে তার হাতের পিস্তলটি ।
খানিক পরে, দরজায় ধাক্কা । "দরজা খুলুন ! আমি ইন্সপেক্টর সেন ! আমি ফোনে গুলির আওয়াজ শুনেছি ... পাগলামি করবেন না... মিসেস রায় !!!"
বলরাম, দরজা ভাঙো, কুইক"
দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে থ' হয়ে যান ইন্সপেক্টর সেন । সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে আর বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে বারুদের কটু গন্ধ । মেঝেয় একটা মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আর পাশের সোফায় নিথর হয়ে পড়ে আছেন... মিসেস চৈতি রায় । তাঁর কপালের ডান পাশে একটা গভীর ক্ষত আর তা দিয়ে ক্রমাগত গড়িয়ে পড়ছে তাজা রক্ত আর ডান হাতে ঝুলে রয়েছে একটা ছোট্টকটা ছোট্ট খুনে পিস্তল ।