Aparna Chaudhuri

Drama

1  

Aparna Chaudhuri

Drama

প্রতিবাদ

প্রতিবাদ

3 mins
815


আজ আবার স্লিপটা নেবার সময় ওর হাতে হাতটা বুলিয়ে দিল লোকটা। অসহ্য লাগে রেশমার। লোকটার চোখের দিকে তাকায় না কখনো ও। তাকালেই বাজে ইঙ্গিত করে প্রতিবার। বাকি ট্রাক ড্রাইভাররা এরকম করে না। কেউ কেউ তো বেটি বলে ডাকে ওকে। বেশ লাগে ওর। কিন্তু প্রতিদিন এই লোকটা ওদের টোল নাকা দিয়ে যায়। আর প্রতিবারই কিকরে যেন ওর জানালার থেকেই স্লিপ নেয়। ও জায়গা বদল করেও দেখেছে। কোনও ফল হয়নি। ও ঠিক খুঁজে খুঁজে চলে আসে।

রেশমাদের এই টোল নাকাটা একেবারে হাইওয়ের মাঝখানে। চারদিকে ধূধূ প্রান্তর। এখানে ও ছাড়া আর কোনও মেয়ে কাজ করে না। আসলে চাকরিটা ওর না, ওর দাদার। দাদা রোজ সাইকেলে করে এখানে আসতো। কিন্তু কয়েক মাস আগে একদিন একটা অ্যাকসিডেন্টে ওর দাদার পা টা ভেঙে যায়। যতদিন দাদা সাইকেল চালাতে না পারছে ততদিনের জন্য ওরা রেশমাকে চাকরিটা দিয়েছে। দিতে চাইছিল না, কিন্তু রেশমাই অনেক কাকুতি মিনতি করে এখানকার সুপারভাইজারের কাছ থেকে যোগাড় করেছে চাকরিটা। কারণ একবার হাতছাড়া হলে আর ওই চাকরি পাওয়া যাবেনা।

বাবা মারা গেছেন পাঁচ বছর হল। বাড়ীতে ওরা চার ভাইবোন আর মা। দাদা বড়, তারপর রেশমা, ওর পরে এক ভাই এক বোন। তারা খুবই ছোটো। দাদাই সংসারের হালটা ধরে রেখেছিল।

যখন কাজ থাকেনা তখন ও বসে বসে শালিকদের দেখে। ওদের টোল নাকার অ্যাসবেস্টসের ছাদে থাকে কয়েকশো শালিক। যখন চাল বা গম ভর্তি বড় বড় ট্রাকগুলো এসে দাঁড়ায় তখন ওরাও সবাই দল বেঁধে নেমে আসে মাটিতে। লরির থেকে ঝরে পড়া চাল-গম খুঁটে খুঁটে খায়। জমিতে ওদের লাফিয়ে লাফিয়ে চলা দেখতে রেশমার খুব মজা লাগে।

সেদিন তিনটে শালিক এক সাথে নাচতে নাচতে যাচ্ছিল। দেখে ওর দারুণ হাসি পেয়ে যায়। খিল খিল করে হেসে উঠেই ও খেয়াল করে যে ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও আগেও কয়েকবার দেখেছে ছেলেটাকে এখানে। যদিও এখানে ও কাজ করে না। কারুর বন্ধু বোধহয়। যাকগে! ওর কি দরকার? 

কিন্তু আজ লরিটা চলে যেতেই ছেলেটা ওর জানালাটার সামনে এসে দাঁড়ালো।

রেশমার চোখ ফেটে জল আসছিল অপমানে।

“ আমি রমেশ, অনেকবার দেখেছি লোকটা যখনই আসে তোমায় বিরক্ত করে। তুমি ওকে কিছু বল না কেন?”

ওর কথা শুনে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল রেশমা।

“ কাঁদছ কেন? তোমার তো কোনও দোষ নেই এতে? আমি কি বলব সুপারভাইসারকে?”

“ না না । প্লিস! আপনি কিছু বলবেন না। আমি চাই না কোনও ঝামেলা হোক। ওরা যদি আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেয়?” গলাটা আর্তির মত শোনায় রেশমার।

“ তাহলে তুমি প্রতিবাদ করবে না! ঠিক আছে । “ হতাশ শোনায় রমেশের গলাটা।

পরেরদিন ঠিক বেলা দুটো নাগাদ এলো সেই ট্রাকটা । গম্ভীর মুখে স্লিপটা কেটে ড্রাইভারটার হাতে দিতেই ও খপ করে রেশমার হাতটা চেপে ধরল। দিন দিন সাহস বাড়ছে লোকটার। রেশমা চোখের কোন দিয়ে লক্ষ্য করলো রমেশ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো ওর। জানালা দিয়ে বাঁ হাতটা বাড়িয়ে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিল লোকটার গালে। হতবাক লোকটা ঝড়ের বেগে ট্রাকটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।

উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে রেশমা।

হাততালি দিতে দিতে ছুটে আসে রমেশ,” ব্রাভো! এই তো চাই!”

দেখতে দেখতে ওর সমস্ত সহকর্মীরা ওর চারপাশে জমা হয়ে গেলো।

“ এতদিন আমাদের বলিসনি কেন? তোর নিজের দাদা এখানে নেই তো কি হয়েছে? মনে রাখবি আমরা এতগুলো দাদা তোর পাশে রয়েছি! “

আনন্দে কেঁদে ফেলে রেশমা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama