SHUBHAMOY MONDAL

Drama Action Crime

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Action Crime

প্রথম রিপু

প্রথম রিপু

4 mins
164



মে মাসের এক সকালে, কাঁকুরগাছি রেললাইনের পাশে মিললো - একটি এম বি এ ফাইনাল ইয়ারে পড়া ছাত্রের লাশ। সে বিহার থেকে কলকাতায় এসেছিলো পড়তে। বেশ ভালো ছাত্র হিসাবে নাকি কলেজে পরিচিতিও ছিলো তার।


খাবরের কাগজে যা প্রকাশিত হয়েছে, ছেলেটি কাছাকাছি একটা সোসাইটিতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতো একা। সে কোন একটা অপিসে পার্ট টাইম জব করতো - নিজের পড়ার এবং এখানে থাকা খাওয়ার খরচ তোলার জন্য। বাড়ির হাল বোধ হয় ততটা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় তার।


পুলিশের ধারণা, রেললাইন ধরে যাবার সময়, অথবা পাশে থাকাকালীন ট্রেনের ধাক্কায় সে ছিটকে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবরের কাগজে এই দুর্ঘটনার খবরটা পড়ে, হীরক সেন ওরফে হীরুর কেমন যেন অসম্পূর্ণ মনে হলো কাহিনীটা।


তখনই তাই একবার ঐ থানার এস আই, কৃষ্ণদাকে কল করলো - হ্যালো, দাদা আমি হীরু বলছি। ওপার থেকে এস আই কৃষ্ণ দে জানালেন - আমি গাড়ি চালাচ্ছি। আধ ঘন্টায় বাড়ি ফিরে কথা বলি? হীরু সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিলো।


কৃষ্ণদা ফিরেই তাকে কল করে, তাঁর ফেরার কথা জানালেন। হীরুও কয়েক মিনিটেই গিয়ে হাজির হলো তাঁর ফ্ল্যাটে। বৌদি দুজনকেই চা বিস্কুট দিলেন বসার ঘরে। কৃষ্ণদা বাথরুম থেকে মুখ হাত ধুয়ে টেবিলে এসেই বললেন - বলো, জরুরী তলব কেন?


হীরু - ঐ বিনোদ কুমার নামের ছেলেটার কেসটা। ওটা যা পেপারে বেরিয়েছে দেখলাম, সেটা পড়ে তো মনে হলো না - পুরো ঘটনাটা ঠিক ঠাক প্রকাশ করেছে বলে। আসল ঘটনাটা কি - অ্যাক্সিডেন্ট না মার্ডার?


কৃষ্ণদা - তুমি তো ভয়ঙ্কর সন্দেহ বাতিক হয়ে যাচ্ছো ভাই। এটা মার্ডার হতে যাবে কেন? একটা সিম্পল অ্যক্সিডেন্ট কেস।


হীরু তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বললো - আমি সাংবাদিক নই দাদা, গোয়েন্দা। আমার কাজ সত্য উদ্ঘাটন করা, পুলিশেরও সেটাই দায়িত্ব। আর আমিও আপনাদের বরাবর এই কাজে হেল্প করেই এসেছি। নিন, এবার বলুন।


কৃষ্ণদাও হেসে ফেললেন তার কথা শুনে। সত্যি তোমার জুড়ি মেলা ভার। কেসটা আমারও মনে হচ্ছে মার্ডারই। যদিও অফিসিয়ালি অ্যাক্সিডেন্ট দেখিয়েই কেসটা ক্লোজ করার কথা হয়েছে। তা তোমার হঠাৎ এরকম মনে হলো কেন আগে শুনি?


হীরু - এমবিএ স্টুডেন্ট। সকাল আটটা থেকে ক্লাস স্টার্ট হয়। পার্ট টাইম জব করে মাঝরাতে যে ফেরে রোজ, ভোর বেলার ফার্স্ট ট্রেনের ধাক্কায় তার মারা যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়? যখন তার অপিস বা কলেজ কোনটাতেই যাবার জন্য রেললাইনের ধারে তাকে আসতে হয় না! কিন্তু আপনার এরকম মনে হবার কারণটা কি?


কৃষ্ণদা - সেটা তো ঠিক। না, আমার এমনটা মনে হবার কারণ - ওর হাতের মুঠোয় একটা কারোর শার্টের ছেঁড়া পকেট পাওয়া গেছে বলে। ওর পড়নে টি শার্ট আর হাফ প্যান্ট ছিলো। কিন্তু পকেটের কাপড়টা লিনেন, বেশ দামী কোনো শার্ট থেকে ছিঁড়ে নিয়েছে বোঝা যায়। হয়তো খুনীর হবে, শেষ মুহুর্তে প্রাণে বাঁচতে হয়তো ধরেছিলো ও।


হীরু - শার্টের ঐ ছেঁড়া পকেটটা দেখা যায় কোন ভাবে?


কৃষ্ণদা - এই তো, আমার মোবাইলে ছবি তোলাই আছে তো, দেখো। - বলে নিজের মোবাইলে তার ছবিটা বের করে দেখালেন। হীরু ব্লুটুথে ছবিটা নিজের মোবাইলে শেয়ার করে নিলো।


হীরু - ওর ফ্ল্যাটটায় একবার যাওয়া উচিত, তাই না? আপনারা যাচ্ছেন?


কৃষ্ণদা - হ্যাঁ, যাওয়া তো উচিত। তবে অফিসিয়ালি বোধ হয় যাওয়া হচ্ছে না, বুঝেছো?


হীরু - তাহলে আপনি একটু রেস্ট নিয়ে নিন। আমি বাড়ি থেকে স্নান খাওয়া সেরেই, আসছি আপনার এখানে। চলুন দুজনে একটু ঘুরে আসি ওখান থেকে।


কৃষ্ণদা - বেশ, তুমি তাহলে রেডী হয়ে চলে এসো। এগারোটা নাগাদ বেরোবো, ঐ কথাই রইলো। আমার বাইকেই যাবো ঠিক আছে তো? 


হীরু রাজি হয়ে বাড়ি ফিরে এসেই, চটপট রেডী হয়ে, যথা সময়ে কৃষ্ণদার বাড়ি পৌঁছালো। সেখান থেকে ঐ সোসাইটিতে বিনোদের ফ্ল্যাটে গেলো দুজনে।


সিকিউরিটি থেকে জানালো, ফ্ল্যাটের মালিক এসে নাকি ওর ঘরে বসে আছে। দুজনেই তাই দৌড়ে গেলাে সেখানে। দেখে - একটা কুড়ি বাইশ বছরের ছেলে, বিনোদের বই পত্র ঘাঁটছে! 


ওরা দুজন সরাসরি ঘরে ঢুকে এলো। ছেলেটা হঠাৎ তাদের এভাবে ঢুকে আসায় একটু চমকেই উঠলো। কৃষ্ণদা তাঁর আই কার্ড দেখিয়ে বললেন - পুলিশ। আপনি এখানে কি করছেন? এই ঘরে ঢুকেছেন কেন?


ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বললো - এটা আমার ফ্ল্যাট। আমার বন্ধুকে থাকতে দিয়েছি। ওর থেকে একটা বই নেবার জন্য এসেছিলাম - দেখি দরজা খোলা, সে কোথাও গেছে হয়তো। তাই তার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আপনারা এখানে কেন? কাউকে খুঁজছেন?


হীরু - বিনোদ কুমার কি আপনার বন্ধু? মানে, তার সঙ্গে আপনার নিশ্চয়ই যোগাযোগ আছে, কথাবার্তা হয়? কবে তার সঙ্গে লাস্ট কথা হয়েছে? ওহো, আপনার নামটাই তো জানা হলো না।


ছেলেটি বললো - আমার নাম রাহুল গোয়েল। বিনোদের সাথে আমার পরশু সন্ধ্যেতেই কথা হয়েছিলো। এসব কেন জিজ্ঞাসা করছেন?


হীরু - আপনি পেপার পড়েন না বা নিউজ দেখেন না? 


রাহুল - এম বি এর ফাইনাল ইয়ার স্যার - প্রচণ্ড চাপ। টিভি দেখা, পেপার পড়া তো দূর, মোবাইল ঘাঁটারও সময় নেই এখন। কিন্তু এসব কেন বলছেন - কিছু হয়েছে বিনোদের?


হীরু - গতকাল ভোরে ট্রেনে ধাক্কা খেয়ে বিনোদ মারা গেছে। আজকের সব কাগজেই তার মৃত্যুর খবর ছবি সমেত বেরিয়েছে - আপনি দেখেনই নি?


রাহুল মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। সে মারা গেছে? আর আমরা খবরটাও পাই নি? তার বডি কোথায় আছে? কি করে এমন হলো? ওর বাড়ির লোকেরা খবরটা জানে? মানে আপনারা জানিয়েছেন?


কৃষ্ণদা বললেন - তার বাড়ির ঠিকানা পেলে তো জানাবো। পড়নের একটা বারমুডা প্যান্ট আর টিশার্ট ছাড়া, আর তো কিছুই পাওয়া যায়নি। আমাদের এক কলীগ তোমাদের কলেজে ওকে কয়েকবার দেখেছিলো, সেই সূত্রেই জানতে পারলাম - সে এখানে থাকতো। এখন, তুমিই তার বাড়ির ঠিকানা দাও, অথবা তুমিই জানিয়ে দাও তাঁদের। 


রাহুল - ঠিকানা দিচ্ছি। যা জানাবার, আপনারাই জানান। পুলিশ যখন বিষয়টা দেখছে, তখন তো আপনাদের থেকেই খবরটা তাদের পাওয়া উচিত। বলে সে একটা কাগজে তার ঠিকানাটা লিখে দিলো। হীরু সেটা নিয়ে তার শার্টের বুক পকেটে রাখলো।

ক্রমশঃ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama