Akash Karmakar

Drama Romance Inspirational

3  

Akash Karmakar

Drama Romance Inspirational

প্রথম দেখা

প্রথম দেখা

3 mins
382


মেয়ের পঁচিশতম জন্মদিনে রবীন বাবু ঠিক করেছেন একটু অন্যভাবে উদযাপনের মাধ্যমে তিনি তিন্নিকে উপহার দেবেন। কি করবেন - কোথায় যাবেন এসব নিয়ে যখন কর্তা গিন্নি দুজনেই চরম ভাবনায় ডুবে গেছেন ঠিক তখনই হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। আওয়াজ পেয়ে গিন্নী দরজা খুলতেই হতবাক, অচেনা কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দল দাঁড়িয়ে দরজায়। রবীন বাবুর স্ত্রী কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওনারা করজোড়ে বললেন, আমরা রাস্তার ঐপাড়ে অবস্থিত আমাদের বাড়ি উপসংহার থেকে আসছি। প্রতি বছরের মতই এবারেও আমরা ছোট করে মায়ের আরাধনার ব্যবস্থা করেছি, আপনারা সপরিবারে এলে আমাদের ভালো লাগবে। আসলে সেভাবে তো কেউই আসে না এই বুড়োবুড়ীদের সাদামাটা পুজো দেখতে তাই এবছর আমরা নিজেরাই এই আমাদের আশেপাশের এলাকায় মৌখিক আমন্ত্রণ বার্তা দিতে বেরিয়েছি। এরকম সাদর আমন্ত্রণ বোধহয় এর আগে কখনোই জোটেনি কারোর কপালে। রবীন বাবু এরকম একটা আমন্ত্রণ বার্তা পাওয়া মাত্রই সাথে সাথে একটা দারুণ পরিকল্পনা নিয়ে নিলেন তবে সেটার ব্যাপারে কাউকেই কিছু জানতে দিলেন না, না গিন্নী জানতে পারল আর না তিন্নী। সবটাই নিজের মগজের সিন্দুকে তালা দিয়ে বন্দী করে রাখলেন রবীন বাবু। 


মেয়ে তিন্নি আই টি সেক্টরে জবের জন্য বাইরে থাকে, বিগত দু'বছর জন্মদিন বাইরেই কাটাতে হয়েছে। কিন্তু এবছর পঁচিশ বছরের পূর্তি, তাই বাবার কড়া নির্দেশে মেয়েকে বাড়িতে আসতেই হয়েছে। বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে তিন্নী, জন্মদিনে কিছু তো খাস হতেই হবে। সৌভাগ্যবশত এবছর মহাসপ্তমীর দিনেই সেই শুভলগ্ন উপস্থিত, একেবারে সোনায় সোহাগা। 


রবীনবাবু নিজেই মেয়ের জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেওয়ার প্ল্যান করেছেন, তবে এ বিষয়ে পুরোপুরি সাহায্য পেয়েছেন উপসংহারের আবাসিকবৃন্দ ও কর্তৃপক্ষের। মহাসপ্তমীর সকাল উপস্থিত, মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাটুকুও না জানিয়ে বললেন, নাও তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও, আমরা এখন তিনজনে ঐ বৃদ্ধাশ্রমে যাব। মা ও মেয়ে দুজনেই অবাক, মানছি ওনারা বাড়ি এসে নিমন্ত্রণ করে গেছেন কিন্তু তা বলে এখনই যেতে হবে? তাও আবার মেয়ের জন্মদিনে? গিন্নীর সাথে এই নিয়ে দুটো কথা হলেও রবীনবাবুর নির্দেশ মতো দুজনেই তৈরী হয়ে গেল, বেশ এবার রওনা দিলেন উপসংহারের উদ্দেশ্যে। 


বেশ এবার শুরু হল সারপ্রাইজের পালা, এমনিতেই বৃদ্ধাশ্রমে পুজো উপলক্ষ্যে একটা সাজো সাজো রব, আর অন্যদিকে তিন্নীর জন্মদিনের পায়েসের গন্ধে সুবাসিত সমগ্র আশ্রম। সেখানকার সমস্ত আবাসিকরাই তিন্নীকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন, তিন্নীও মুহূর্তের মধ্যে হয়ে গেল সকলের স্নেহের নাতনি। অনেক দাদু-দিদার চোখের কোণার জমা জল স্পষ্টতই বলে দিল বাস্তবটা আসলে কেমন। যাইহোক সপ্তমীর সকালে তিন্নীও শাড়ি পড়ে উপস্থিত উপসংহারের পূজা মন্ডপে, সেখানে প্রথমে মায়ের চরণে অঞ্জলি অর্পণ করে জন্মদিনের উদযাপন চলল দারুণ উদ্দীপনার সাথে। ইতিমধ্যেই তিন্নীর চোখ গিয়ে পড়েছে একটি ছেলের উপর, ছেলেটি তেমন কোনো হিরো লুকস নিয়ে আসেনি, বা বলতে পারেন আপনার আমার স্মার্ট শব্দের অর্থের বেড়াজাল হতে সে বহুদূরে, তবুও তাকে তিন্নীর নজর এড়িয়ে গেল না। সকালে আসার পর থেকে সে লক্ষ্য করেছে ছেলেটিকে, কেমন যেন নীরবে সে প্রতিটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধার খেয়াল রেখে চলেছে, ছেলেটি যেন তাদেরই সন্তান সম, বয়সে অনেকটাই ছোট কিন্তু দায়িত্বে সবার ঊর্ধ্বে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, তার নাম রাহুল, তার বাবা মা ঠিক কবে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন তা তারও আর মনে পড়ে না। তারপর থেকে সে কোনোভাবে চলে আসে উপসংহারে, বেশ এখানেরই স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ওঠে। খাওয়ার সময় তিন্নী রাহুলের পাশেই বসে, দু-চারটে কথাও হয়। সাদামাটা ছেলেটা ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছিল তিন্নীর মনের ভেতরে, এই জন্মদিন যেনো তার সমগ্র জীবনের চেহারাটাই বদলে দিতে চলেছিল। রাহুলকে আরও ভালো করে জানবে বলে তখনই সে ভেবে নিল, পুজোর চারটে দিন উপসংহার ছাড়া তার আর কোনো গন্তব্য নেই। কেই বা বলতে পারে, দশমীর বিসর্জনের পরেই হয়তো উপসংহার হতেই এক নূতন সূচনা হতে চলেছে রাহুল-তিন্নীর। হ্যাঁ এভাবেও তো সপ্তমীতে দেখা হতেই পারে, প্যান্ডেল-লাইট এসব তো ক্ষণস্থায়ী, অনুভূতিতে যদি সততা থাকে তবে তো একতলা ঘরও সাতমহলা প্রাসাদে পরিণত হয়ে যায়...তাই না বন্ধুরা? 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama