মোহন দাস

Abstract Tragedy Others

4.0  

মোহন দাস

Abstract Tragedy Others

প্রসব যন্ত্রনা

প্রসব যন্ত্রনা

3 mins
338


দশ মাস গর্ভে সন্তান বড় করেও শেষমেষ তাকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলো না মামনি । ওরও তো স্বপ্ন ছিল, আশা ছিল স্বামী-সন্তান-সংসারের । মেয়েটার বয়স বেশি না আঠারোর শুরুতেই সম্বন্ধ আসতে শুরু হয়, গরিব বাপের মেয়ে বিয়েতে পণ দেওয়ার রেওয়াজ আছে গ্রামে । গায়ের রঙ শ্যামলা বলেই বাবা বিশ্বনাথ দাস তাড়াতাড়ি মামনির বিয়েটা দিতে চাইলেন, মামনির পড়াশোনা করে বড়লোক ও শিক্ষিত পরিবারে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু বাবা চাষ করে সংসার চালান, বড় ছেলে নাড়ুগোপাল কে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতেই বুকে চাপ লেগেছে, তারপর দু' দুটো মেয়ের বিয়ে দিতে হবে; অনেক চিন্তা । বিশ্বনাথ দাসের ধানের ক্ষেত ছিল বিঘা দুয়েক, বাড়ির পেছনে পুকুর ও ফলের গাছ । সব মিলিয়ে বাবার চিন্তা ছাড়া সুখেরই সংসার ।


মামনির বিয়ে হলো গ্রাম থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরের শিমুরালির একটা গরীব ঘরেই । ছেলেটি খুবই ভালো, পরিশ্রমি ও বুদ্ধিমান, ছেলেটির চেহারা স্বাভাবিক কিন্তু শ্যাম বর্ণ ।


যাই হোক মামনির শ্বশুড় শ্বাশুড়ী একটু অন্য গোছের, মামনির প্রতি ওদের মন যেন নেই, সকাল-দুপুর-রাত কেবল খিটখিট করে, এটা সেটা কত কাজ করতে বলে, মেয়েটাকে একটুও বসতে দেয় না । মামনির শ্বশুর-শাশুড়ির দাবি ছিলো বিয়েতে পণ হিসেবে কুড়ি হাজার টাকা, খাট আলমারি ও কিছু গয়না দেওয়ার । মামনির বাবা দশ হাজার টাকা সমেত বাকি জিনিস দিয়েছেন, বাকি দশ হাজার টাকা মাস চার পরে দেবেন । এই কারণেই নাকি মামনি অসুন্দর সেই কারণে জানিনা, মামনির সাথে ভীষণ দুর্ব্যবহার করতে লাগলেন তারা, মামনির স্বামী বাড়ি ফিরলে শ্বশুর-শাশুড়ি খুব ভালো ব্যবহার করেন । কিন্তু ছেলের পিছনে বৌমাকে পশুর মতন দুর্ব্যবহার করতে থাকে । মামনি মুখ চাপা স্বভাবের, মনে মনে রাখে সব কথা ভাবে - 'একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে', 'এটা তো আমারই বাড়ি, আমারই সংসার' ।


সাত মাস গর্ভে সন্তান নিয়েও মামনি কল থেকে জল আনা, রান্না করা, বাসন মাজা, কাঁচাকুঁচি - একটা সংসারের যাবতীয় কাজ করে । ওর কষ্ট হয়, মাঝে মাঝে তলপেটটা ফেটে পড়তে চায়, চোখে জল এলেও মামনি তার স্বামীকে বুঝতে দেয় না । সংসারে কেউ আপন নেই ওর, একমাত্র স্বামী তাকে একটু বোঝে, একটু ভালোবাসে । কিন্তু সারাদিনটা মামনির খুব কষ্টে কাটে ।


মামনি কেঁদে কেঁদে পাঁচ মাস পর বাপের বাড়িতে চলে এলো । মামনির এখানে কোন সমস্যা নেই, দাদা আছে, বোন, মা-বাবা সকলেই তার নিজের কেউ তাকে কষ্ট দেবেনা । বেশ আনন্দের সাথেই সাধ অনুষ্ঠান করা হলো, আত্মীয়-স্বজন বেশ কয়েকদিন থেকেও গেলেন ।


কিন্তু হঠাৎ একদিন মামনি অসুস্থ হয়ে পড়ল, ভীষণ অসুস্থ মনে হল আজি সন্তান জন্ম দিতে চলেছে সে । তৎক্ষণাৎ মামনির পরিবার সকলে মিলে তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো, ডাক্তারবাবু বললেন,


- না এখনো মাস খানেক পরেই ডেলিভারি হবে, এরকম অসুখ মাঝে মাঝে হয় ।


এরপর মামনিকে নিয়ে সকলে বাড়ি ফিরে এলো ।


হঠাৎ একদিন বাথরুমে মামনি পা পিছলে পড়ে গেল, আর্তনাদে ছুটে গিয়ে বোন আর মা মামনির ওই অবস্থা দেখে হতবাক, মনে হচ্ছে সন্তান বোধহয় বাড়িতেই হয়ে যাবে, ও খুব কষ্ট পাচ্ছে, জলদি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো । কিন্তু সেই হসপিটালে ডেলিভারি করানোর মতো ডাক্তার নেই, কাজেই পাশের হাসপাতালে তাকে ট্রান্সফার করে দিলো । গাড়িতে করে নিয়ে যেতে যেতে যা হলো তা বর্ণনা করার মতো সাহস হারাচ্ছি ।


মামনি কাতরাতে কাতরাতে মা ও কাকিমা কে বলছে - 'আমাকে সিজার করো, আমি মরে যাব, প্লিজ' কিন্তু হসপিটাল এখনো অনেক দূর, অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে । মা, দাদা, কাকিমা তাকে ধরে বসে আছে । হসপিটালের সামনে নেমেই নাড়ুগোপাল ডাক্তারকে ছুটে ডেকে আনলো, নাড়ুগোপাল ব্যাস্ত হয়ে ডাক্তারকে বলল - 'ডাক্তার বাবু, তাড়াতাড়ি আমার বোনকে বাচান, ওর বাচ্চা হবে ।' ডাক্তার বলল - 'কার ?' নাড়ুগোপাল রেগে গিয়ে বললো - 'এইতো আমার বোন ।' ডাক্তার বাবু বললেন - 'ও তো মারা গেছে ! মারা যাবার পরে এনেছেন ?'


ব্যাস এক নিমেষেই সব কিছু শেষ হয়ে গেলো, আঁধারে ঢেকে গেলো মামনির সংসার, সন্তান, স্বপ্ন আর 'একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ।'



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract