STORYMIRROR

Shilpi Dutta

Romance Tragedy

2  

Shilpi Dutta

Romance Tragedy

প্রসাধনের আড়ালে

প্রসাধনের আড়ালে

3 mins
475



সোহিনী, এই ফাইলটাতে তোমার নেক্স্ট প্রোজেক্টটা আছে। এটা সেই মেয়েটির ফাইল যার কথা কালকে তোমাকে বলেছিলাম। কেসটা একটু সেনসিটিভ তাই আমি চাই এই কাজটা তুমিই কর। তোমার কাছে বুদ্ধি, বিবেচনা, সাহসের সাথে সাথে আছে একটা সুন্দর মন।’ এই বলে আমাদের এন.জি.ও. এর চেয়ারপারসন মিসেস রূষা চ্যাটার্জী ফাইলটা আমার হাতে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন।

     কালকে মেয়েটার কথা শোনার পর থেকেই ভীষন অস্থিরতায় কেটেছে আমার সারারাত। তাই ফাইলটা হাতে পেতেই একটুও দেরি না করে খুলে ফেললাম। ফাইলে মেয়েটার পূর্ব জীবন পড়ে ও মেয়েটার ছবিটা দেখে খুব চেনা বলে মনে হল।

          ফাইলে লেখা আছে মেয়েটি বেশ কিছু বছর আগে তার ভালবাসার মানুষটার হাত ধরে সংসার বাঁধার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ঘর ছেড়েছিল। অনেক খোঁজ করার পরও তার পরিবারের লোকেরা তার কোন খবর পায়নি। তবে এই কিছুদিন হল মেয়েটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে একটা পতিতালয় থেকে। সেখান থেকেই তাকে উদ্ধার করে সমাজে ফিরিয়ে আনতে হবে আমাকে।

      সন্ধ্যে হতেই বেরিয়ে পড়লাম মেয়েটির ঠিকানার উদ্দেশ্যে। চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলনা। তবে সেই অঞ্চলের ভিতর অবধি আমাকে যেতে হলনা। গলির মুখেই একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দেখলাম অতি উগ্র সাজে ও ঝকমকে পোষাকে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।

     মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম ‘তোমার সঙ্গে কথা আছে।’ মেয়েটি বলল ‘এখান থেকে চলে যাও, এই জায়গা তোমার মত ভাল মেয়েদের জন্য নয়।’ আমিও নাছোড়বান্দা আজ ওর সাথে কথা না বলে কিছুতেই ফিরবো না ঠিক করেছি। একটু হ্যাঁ-না এর পর মেয়েটি হঠাৎ বলল ‘সোহি তোকে বলছি না এখান থেকে চলে যেতে।’ মেয়েটির মুখে সোহি নামটা আমাকে একঝঠকায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল আমার অতীতে। বললাম ‘চৈতী, তোর একি অবস্থা?’

     চৈতী আমার ছোটবেলার প্রাণের বন্ধু। একদিন ওকে না দেখলে আ

মার চলত না। আমাদের মধ্যে কোন গোপনীয়তা নেই— আমার এই ভুল ভেঙ্গেছিল যেদিন ও আমাকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম মনে মনে। সেই চৈতিকে এতদিন পর এই অবস্থায় নিজের চোখের সামনে দেখে কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম ‘কি করে এরকম হল?’ বলল ‘বাড়ি থেকে বেরোনোর পর রাজু আমাকে বোম্বেতে নিয়ে যায়, সেখানে একটা মন্দিরে আমাকে বিয়েও করে। বিয়ের রাতে যখন আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখন আমার ঘরে ঢোকে চারজন লোক। তাদের মুখেই জানতে পারি রাজু আমাকে ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। সেই রাতে দুচোখ ভরা জল নিয়ে আমি একে একে ওদের ভোগের বস্তু হয়ে উঠি আর তারপর মাঝে মাঝে স্থান বদল ও প্রতিরাতে হাত বদল হতে হতে আজ এখানে।’ একটু থেমে নিজেই আবার বলতে শুরু করল ‘ভাবছিস বাড়িতে কেন ফিরলাম না? কোন মুখ নিয়ে ফিরব বল? আমার সব বিশ্বাস, সব সম্মান শেষ হয়ে আমি একটা শরীর সর্বস্ব জড় পদার্থে পরিণত হয়েছিলাম, যার কাউকে দুঃখ দেওয়া ছাড়া আর কারো থেকে তিরস্কার ও লাঞ্ছনা ছাড়া কিছুই পাওয়ার ছিলনা তাই শত কষ্ট হলেও এই জীবনেই রয়ে গেলাম।’

      আমার চোখ দিয়ে দু গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। ওকে বুকের মধ্যে টেনে নিলাম।

        একটু পরে ও আমার চোখের জল মুছিয়ে বলল ‘জানিস সোহি আমি এত উগ্র প্রসাধন লাগাই অন্যদের মত খদ্দেরদের খুশি করতে নয়, চেনা জগতের থেকে নিজেকে আড়াল করতে।’ আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললাম ‘প্রসাধনের আড়ালে বাইরের রূপকেই শুধু আড়াল করা যায় পাগলী, নিজের অন্তরকে আড়াল করা যায় না।’

      অনেকটা সময় কেটে গেল। আমি অনেক কষ্টে চৈতীর থেকে তার রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে এলাম। ওই উগ্র প্রসাধনীর আড়ালে আমার এতদিনের বন্ধুকে অপরিবর্তিত অবস্থায় দেখে মনে এক অদ্ভুত শান্তি পেলাম। এখন অপেক্ষা শুধু চৈতীকে একটা নতুন দিনের আলোয় নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনার। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance