The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Manasi Ganguli

Romance

4.6  

Manasi Ganguli

Romance

প্রপোজ ডে

প্রপোজ ডে

5 mins
1.2K


   প্রেমে পড়ার কোনো দিনক্ষণ হয় না,কোনো হিসেব নিকেশ করে প্রেম হয় না,কে যে কখন কার চোখে বাঁধা পড়ে,কার যে কাকে দেখে হয় অ্যাড্রেনালীন রাশ,তা বলা মুশকিল। প্রতি মুহূর্তেই কত মানুষ কত মানুষের প্রেমে পড়ছে।

  তবু রিয়া আর সোমের প্রেমটা কিন্তু প্রথাগত নিয়ম মেনেই হল,যদিও বেশ কিছুদিন ধরে চলছিল ওদের চোখাচোখি --কত কথার আদান-প্রদান হত বুঝি এই চোখের মাধ্যমে তবু কেউ কাউকে বলেনি 'ভালোবাসি'। দুজনেই দুজনকে দেখার জন্য ছটফট করে,অকারণে সামনে ঘোরাঘুরি,অকারণ হাসি,বোঝাই যায় দুজনেই দুজনের কাছে আসতে চায়। 

     রিয়ার বন্ধু সুজাতার দাদার বন্ধু সোম। প্রথম দেখা রিয়ার সোমের সাথে সুজাতাদের বাড়িতেই। সুজাতার দাদা রাণাকে ধরে সোম পৌঁছতে চায় রিয়ার কাছে। সুজাতাও রিয়ার মনের ভাব বুঝে গিয়েছিল তাই সোমের অনুরোধে ভাইবোনে প্ল্যান করে ওদের মিটিংয়ের। সোমের পছন্দ ৮ই ফেব্রুয়ারি 'প্রপোজ ডে', সেইমত সেদিন বিকেলে সুজাতা রিয়াকে নিয়ে পৌঁছে যায় গঙ্গার ধারে যেখানে ওরা বন্ধুরা কলেজের ক্লাসের ফাঁকে গিয়ে বসে মাঝেমাঝে বটগাছের নিচে বাঁধানো বেদীতে। সোমকে নিয়ে রাণা সেখানে হাজির হয়,সুজাতা আর রিয়া তখন গল্প করছিল। রিয়া এসবের কিছুই জানত না, সোমকে এত কাছে দেখে রিয়ার হাত পা ঠান্ডা, দুজনে দুজনের পানে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষে। সেই সুযোগে ভাই বোনে সেখান থেকে সরে পড়ে,দূরে গিয়ে লক্ষ্য রাখে ওদের দিকে। সোম পিছন থেকে হাতটা সামনে আনে,যে হাতে ছিল একগুচ্ছ টকটকে লাল গোলাপ, বেশ প্রথাগত কায়দায় মাটিতে হাঁটু গেড়ে সেদিন প্রস্তাব দিয়েছিল সোম রিয়াকে,বলেছিল,'ভালোবাসি তোমায়'। রিয়ার কানে যেন মধু বর্ষণ করল,কিন্তু যার প্রতি এত আকর্ষণ সে আজ হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় রিয়াকে যেন লজ্জা ঘিরে ধরে চারপাশ থেকে। তার মুখ রক্তিম হয়ে ওঠে,ওদিকে সূর্যের অস্তরাগের ছায়া পড়েছে গঙ্গার জলে সোম আবেশে বিহ্বল,তার প্রিয়ার লজ্জারুণ মুখের পানে চেয়ে মনের ভেতর যেন তার বাঁশি বাজে। ওদিকে রিয়ার বুকের মাঝে যেন রঙিন প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। গোলাপগুচ্ছ হাতে নেবার সময় সোমের হাতের সাথে তার হাতের স্পর্শে বৃষ্টি ভেজা বুলবুলির মত তিরতির করে কেঁপে ওঠে সে।

     সেই শুরু,প্রেম চলতে লাগলো গড়গড়িয়ে। খুব তাড়াতাড়ি ওরা খুব কাছাকাছি চলে এল। এরপর ১৪ই ফেব্রুয়ারি 'ভালবাসা দিবস' পালন করল ওরা সারাদিন একসাথে থেকে। সেদিন কলকাতার পথে ঘাটে প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘনিষ্ঠ হয়ে ঘোরে প্রকাশ্যে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে,বারেবারে চুমু খায় এ ওকে,অলিখিত ছাড়পত্র দেওয়াই থাকে সেদিনের জন্য। রিয়া আর সোমও সেদিন সেভাবেই তাদের প্রথম প্রেমের দিবস উদযাপন করেছিল। রাতেও যেন কেউ কাউকে ছেড়ে বাড়ি ফিরতে চাইছিল না মানে পারছিল না ওরা কেউ কাউকে ছাড়তে। তবু বাড়ি ফিরতে হয়,এই সারাদিন একসাথে কাটাবার জন্য কত যে মিথ্যা কথা বাড়িতে বলতে হয় রিয়াকে,অবশ্য নাথিং আনফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার তাই ওরাও অবলীলায় মিথ্যা বলে ভালোবাসাবাসি করল সেদিন সারাদিন, রাতেরও বেশ কিছুটা সময়। 

    এভাবে প্রেম যখন বেশ জমে উঠেছে সোমের চাকরি হল সুদূর মুম্বাইতে। খুশির খবরেও আসন্ন বিচ্ছেদের আশঙ্কায় দুজনের চোখের জল সেদিন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। থমথমে মুখে বিদায় জানালো রিয়া সোমকে।

      সেখানে অপরিচিত পরিবেশে একা হয়ে পড়বে তাই শ্রেয়াকে কাকুতি জানায় সোম তাকে চিঠি লেখার জন্য। সেটুকু সম্বল করেই ও অবসর কাটাবে রিয়াকে কাছে পাবে। রিয়া মন উজাড় করে চিঠি লেখে,যা মুখে বলতে পারেনা তাই ভাষায় লিখে ফেলে সহজে।

 

আমার তুমি,

      

      কেমন আছ জানতে চাইব না,জানি যেমন আমি আছি তোমায় ছাড়া,তেমনি তুমি আমায় ছাড়া। আমাদের এ বিচ্ছেদ বড়ই অসহনীয়। মন সদাই বড় অশান্ত,চেষ্টা করি নিজেকে শান্ত রাখার। নিজেকে নিজেই বোঝাই। মনে মনে তোমার কাছে থাকার বাসনায় কত কি ভাবি। ভাবনা আমার এইরকম-----


আকাশ তো একটাই

তোমার মাথার ওপরের মেঘ

কখনো তো ভেসে আসে

আমার মাথার পরে,

সে তুমি থাকো যতই দূরে।

আমি যে তোমার ছায়া দেখতে পাই।

           এই যে বাতাস ছোটাছুটি করে

           সে তো কখনো নিশ্চই তোমায় ছুঁয়ে আসে

           কখনও তো এসে আমায় ছুঁয়ে দেয়,

           আমি যে তোমার পরশটুকু পাই।

রাতে ঘুমের শেষে জাগরণে

চোখ খোলার আগে যে

আমি তোমাকেই দেখি

তুমি যে আছ আমার অনুভবে,হৃদয়জুড়ে।

            এপথ ওপথ সেপথ

            সে যতদূরের পথই হোক

            ছুঁয়ে আছে একে অপরকে

            সেভাবেই আমি ছুঁয়ে আছি তোমায়     

                         নিবিড়ভাবে।

ঘুম ভেঙ্গে প্রথমপ্রাতে

তুমি আমি একই মাটিতে

দিনের প্রথম পদক্ষেপ ফেলি

দিন শুরু করি আমরা দু'জনে দু'জনকে স্পর্শ করে।

           একটাই সূর্য ওঠে পূব-আকাশে

           যার দিকে তাকিয়ে

           তুমি আমি দু'জনেই দিনের প্রথম প্রণাম 

           করি

           প্রভাত-রবির প্রথম কিরণের মধ্যে দিয়ে

           আমরা দু'জনে দৃষ্টি বিনিময় করি।

একই চাঁদের জোছনায়

আমরা দু'জনেই স্নান করি

তাইতো আমাদের মাঝে নেই কোনো দূরত্ব

আমরা রয়েছি মিলেমিশে একাকার হয়ে।


     কত স্বপ্নের জাল বুনি আমি তোমায় ঘিরে। এসো আমরা দু'জনে মিলে সেই সুখস্বপ্নে ডুব দিই।


আকাশে আমরা একটুকরো জায়গা নেবো

সেখানে বানাবো আমাদের স্বপ্নের বাড়ী,

নীল মেঘ দিয়ে ঘর আর কালো মেঘ দিয়ে ছাদ,

সেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি।

মেঘের ওপর দিয়ে আমরা দু'জনে

হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াব,

রাতের আঁধারে তারারা আমাদের পথ দেখাবে।

আমরা ঘুরব,আমরা উড়ব,আমরা বেড়াব,

আকাশের রঙ পরিবর্তনের সাথে সাথে

আমরাও রঙীন হয়ে উঠব।

ভোরের সূর্যোদয়ের সাথে আমাদের মেঘের ঘর

নীল থেকে লাল হয়ে যাবে,

আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে দু'জনে দু'জনের

ভেতরের আগুন দেখতে পাবো সেই লাল আলোয়,

আমরা দু'জনে দু'জনার উত্তাপ নেবো।

আস্তে আস্তে নিভে যাবে লাল আলো,

আমরা শীতল হব আবার,মেঘ আর হাওয়ার সাথে।

রাতের জোছনায় চান করে 

আমরা দু'জন স্নিগ্ধ শীতল হব,

গভীর ভালবাসায়,রোমাঞ্চে ভরে যাবে আমাদের হৃদয়,

আমরা দু'জনে দু'জনকে স্পর্শ করে তৃপ্ত হবো।


    প্রিয় আমার,স্বপ্ন নিয়েই আমরা খুশী থাকি আপাতত, আর দিন গুনি মিলনের।

আমি তোমার জন্য থাকবো বসে

কাল কাল আরো কাল

প্রয়োজন হলে চিরকাল

আমার এ অপেক্ষা বড় মধুর,

সে তুমি থাকো যতই দূর।


ভোরের সূর্যোদয় দেখি যখন,


অরুণ আলোয় রক্তিমতা সারা শরীর ছেয়ে

ডালে ডালে মুখর পাখি উঠল যে গান গেয়ে

খুশীতে মন উঠল ভরে আকাশ পানে চেয়ে

তোমার ছিলাম তোমার আছি থাকবো তোমারই হয়ে

 

   তুমি তো জানই প্রিয়, আমার বুকের মাঝে অনায়াসে কয়েকটা আকাশের জায়গা হতে পারে,সেই একবুক ভালবাসা নিয়ে তোমার পথ চেয়ে, তোমারই অপেক্ষায়--


                       তোমার আমি 

                          শুধু তোমার                                         ৷                    শুধুই তোমার, শুদ্ধু তোমার

  

     চিঠির এক কোণে লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে একটা চুম্বন চিহ্ন এঁকে দেয় রিয়া আর অপেক্ষা করে সোমের প্রতিক্রিয়া জানার। রিয়া সোমকে চিঠি দিতে বারণ করেছে কারণ বাড়িতে জানাজানি হলে ফল ভাল হবে না। রিয়ার পড়াশোনা শেষ হলে,সোমের বাড়িতে বিয়ের কথা উঠলে তবেই জানাতে চায় রিয়া। তখন কেউ বাধা দিলেও সোমের হাত ধরে বেরিয়ে পড়তে কোন অসুবিধা থাকবে না তার। ফোনেও বেশিক্ষণ কথা বলার উপায় নেই,মা খুব কড়া প্রকৃতির। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে সোমকে মিস কল করবে ও,নতুন চাকরি,ফ্রি থাকলে সোম ফোন করবে এমনই কথা আছে। তাই রিয়াকে কদিন যে অপেক্ষা করতে হবে একটু কথা বলার জন্য সে জানে না। 

     ওদিকে চিঠি পেয়ে সোমের পাগল পারা অবস্থা। ইচ্ছা করছে ছুটে এসে রিয়ার ঠোঁটের সমস্ত রস শুষে নিয়ে তার ঠোঁটের রসে রিয়াকে সিক্ত করে তুলতে। রিয়ার চুম্বনের ওপর চুম্বন আঁকছে সমানে,সারা চিঠিময় চুম্বন এঁকে এঁকেও যেন তৃপ্তি হচ্ছে না তার,রিয়ার জীবন্ত স্পর্শ অনুভব করছে যেন সে। এরপর চিঠিটা নিয়ে সে জেরক্স করে তার অফিসে রাখে নিজের ড্রয়ারে, অরিজিন্যালটা ঘরে। অফিসে কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে বার করে ফাইলের মাঝে রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে আর ঘরে ফিরে অরিজিন্যালটা নিয়ে চোখে,মুখে,গালে বোলায়,কখনও হাতে নিয়ে,কখনও বুকের উপর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দূরত্ব দুজনের ভালবাসার গভীরতা এনে দিয়েছে।

      রিয়া থাকে অধীর অপেক্ষায়। তারও ইচ্ছা করে সোমের কাছ থেকে একটা চিঠি পেতে,ভালোবাসার কথা শুনতে কিন্তু উপায় নেই,তাই প্রতীক্ষায় থাকে।

     "আশায় আশায় বসে আছি 

      ওরে আমার মন 

      কখন তোমার আসবে টেলিফোন"।


Rate this content
Log in

More bengali story from Manasi Ganguli

Similar bengali story from Romance