Sayandipa সায়নদীপা

Drama

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

পরগাছা

পরগাছা

9 mins
18.2K


কিছু দূরের একগ্রামে যজমান বাড়িতে যাবে বলে স্নান করছিল শম্ভুনাথ বাঁড়ুজ্জ্যে তখনই গিন্নি এসে বললো, “টাকা দাও তো, চিনি আনতে হবে।”

টাকার কথা শুনেই মনটা তেতো হয়ে গেলো শম্ভুনাথের, “চিনি! গেল হপ্তায়ই তো হর র বাড়ি থেকে চিনি আনলাম এর মধ্যেই খরচা করে ফেললে! বলি কি হবে শুনি চিনি দিয়ে?”

“আমড়ার চাটনি করবো গো। জানোই তো আমাদের গাছের আমড়া গুলো কেমন টক, একটু বেশি চিনি তো লাগবেই।”

“খেতে হবে না চাটনি, টক করে খাবে যাও। ওসব চিনি টিনি কিনতে পারবোনা।”

“তবে রে হতভাগা নিজে তো যজমান বাড়িতে বেশ নুচি পরোটা গিলবি এদিকে আমার নাতিপুতিগুলো একটু চাটনি খাবে তাতেও তোর কিপ্টেমি!” ঝাঁঝিয়ে উঠলেন দাওয়ার বসে থাকা শম্ভুনাথের বৃদ্ধা মা। বেচারা শম্ভুনাথ আর কি করে, ব্যাজার মুখে গিন্নির দিকে তাকিয়ে বললো, “গোঁসাই গিন্নির কাছে একটু চেয়ে নাও না।”

তেতে উঠলো গিন্নি, “দেখছেন মা দেখছেন? সারাজীবন লোকটা টিপে টিপে পয়সা রেখে যাবে আর লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আমাদের পাঠাবে লোকের বাড়ির জিনিস চাইতে। এখন তো গাঁয়ের লোকে আমাদের দেখলে সুট করে ঘরে ঢুকে দোর লাগিয়ে দেয় পাছে কোনো জিনিস চাই।”

এদিকে শম্ভুনাথও কিছু কম যায়না, সেও গিন্নির দিকে পাল্টা তেড়ে গেল। কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে বাদানুবাদ চলার পর অবশেষে রোজগার মতো গিন্নি পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে পুত্র পঞ্চাকে পাঠালেন গোঁসাই গিন্নির কাছে চিনি ধার করতে। ধার অবশ্য নামেই, এসব ধার কখনো শোধ হয়না। শম্ভুনাথ বেরোবার আগে গিন্নি একটু নরম হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁ গো কিসে যাবে অতদূর?”

“সে ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবেনা।”

“এই জন্য বলি একটা সাইকেল কিনে নাও, সাইকেল কিনে নাও কিন্তু তুমি শোনো সে কথা!”

“সাইকেল কিনবো! তোমার ভাই যে সাইকেলটা নিয়ে চম্পট দিলো তার বেলা!” ঝাঁঝিয়ে উঠলো শম্ভুনাথ। গিন্নিও আবার চড়ে গেলেন, “বলি চম্পট দিলো বলছো কেন? বলো নিজের জিনিসটা নিয়ে গেছে। তুমিই তো ওর সাইকেলটা এনে রেখে দিয়েছিলে ফেরত না দিয়ে; কখনো ভেবে দেখেছো এরকম কতো লোকের জিনিস নিয়ে চলে আসো আর ফেরৎ দাওনা! ভগবানের দয়ায় আমাদের সংসারে অভাব বিশেষ নেই কিন্তু তুমি তাও… এভাবে পরগাছার মতো আর কতোদিন চলতে হবে আমাদের!” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো গিন্নি।

বেলা পড়ে এসেছে তাও রোদের তেজ এখনো রয়েছে যথেষ্ট, অনেকটা হাঁটার ফলে যথেষ্ট হাঁপিয়ে গেছে শম্ভুনাথ। যাওয়ার সময় এর সাইকেল তার গরুর গাড়ি এসবে চেপে দিব্যি আরাম করে পৌঁছে গিয়েছিল ঘোষ বাড়ি কিন্তু ফেরার সময় কিচ্ছু পেলো না। তার ওপর যজমান বাড়িতে যদি ঠিক মতো দক্ষিনা দেয় তাহলেও বা অনেক পথ হাঁটার দম থাকে কিন্তু এরা যা দিলো বলার নয়। তখন থেকে শম্ভুনাথের মনটা তেতো হয়ে আছে, এই ঘোষ বাড়ির পৌরোহিত্য আর নয়, এই শেষ। একটু ভালো করে দক্ষিণাটাও দিতে পারে না! রাগে গরগর করতে করতে শম্ভুনাথ হঠাৎ আবিষ্কার করলো কখন যেন চলতে চলতে দনাই খালের ধারে চলে এসেছে। একটা ঢোঁক গিললো সে, গলাটা শুকিয়ে গেছে। সামনে এগোলেই দনাই গাঁ, এখন অবশ্য ওটাকে গ্রাম না বলে শ্মশান বলাই ভালো। গেল বছর যা মড়ক লাগলো গ্রামে বলার নয়, আশেপাশের গ্রামগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু দনাইটা একেবারে উজাড় হয়ে গেল। এখন বোধহয় একটা বাড়িতেও লোক থাকেনা, শেষের দিকে তো এমন হয়েছিল যে কেউ কাউকে জল দেওয়ার অবধি ছিলো না। শম্ভুনাথের এক দূর সম্পর্কের বোন লতার বিয়ে হয়েছিল এই দনাইতে, অল্প বয়সেই বিধবা হয় তাই একলাই থাকতো ঘরে। মড়কের সময় নিজের দুধেল গাইটাকে নিয়ে লতা গিয়েছিল শম্ভুনাথের বাড়িতে আশ্রয় চাইতে কিন্তু পাছে নিজের ঘরেও এসে রোগ ঢোকে সেই ভয়ে লতাকে থাকতে দেয়নি সে তবে সহজ সরল লতাকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে ওর একমাত্র ভরসা দুধেল গাইটাকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল শম্ভু। পরে লতা গাই ফেরত চাইতে এলে শম্ভুনাথ জানায় গাইটা মরে গিয়েছে, আসলে লতা যখন ফেরৎ চাইতে এসেছিল তখন সেটাকে পঞ্চা নিয়ে গিয়েছিল মাঠে ঘাস খাওয়াতে। ছেলেটার বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছিল ওই অবলা জীবটার ওপর আর নিজের ছেলের মুখ চেয়েই শম্ভুনাথ লতাকে ওই ছোট্ট মিথ্যেটা বলে। এ আর এমন কি দোষ! সন্তানের জন্য মিথ্যে বললে পাপ লাগেনা। তার ওপর অমন দুধেল গাই বিনেপয়সায় পেয়েও তা হাত ছাড়া করার মতো বোকা শম্ভুনাথ নয়। কিন্তু তারপর থেকে তো লতা আর কখনো তার বাড়ি যায়নি, কোথায় গেল মেয়েটা কে জানে! দনাইয়ে আর থাকে না সে তো নিশ্চত।

মড়কের পর থেকে আশেপাশের গাঁয়ের লোক বেলা পড়ে এলে দনাইয়ের দিকে আর বিশেষ যায়না কেউ, তারা বলে মড়কে মরে যাওয়া লোকগুলোর ভুত নাকি এখনো ঘোরে বাতাসে। ভুতের ভয়টা শম্ভুনাথের কোনোকালেই নেই, তাই সে নির্ভয় চিত্তে এগোতে থাকলো। গ্রামটার মধ্যে ঢুকে দেখলো পরিত্যক্ত বাড়িগুলো সব পড়ে রয়েছে একলা, কোনোটা ভেঙে পড়েছে কোনোটা আবার আগাছায় ভরে গেছে। জমিগুলোও সব বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে আছে, শুকিয়ে প্রায় জমির সাথে মিশে যাওয়া ধানগাছের গোড়াগুলো শুধু নীরবে তাদের অতীত অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আবার একটা ঢোঁক গিললো শম্ভুনাথ, গলাটা শুকিয়ে কাঠ, এতটা হেঁটে পেটের খিদেটাও বেশ চাগাড় দিয়ে উঠেছে। শেষমেষ একটা জমির আলে বসেই পড়লো সে, সঙ্গে তো জল নেই আর এখানে জল পাওয়ার কোনো আশাও নেই তাই প্রসাদের চিঁড়ে মাখা দিয়েই গলা ও পেট দুটোকেই সন্তুষ্ট করতে হবে আপাতত; পরের গ্রামে গিয়ে নাহয় চেয়ে চিন্তে জল খাওয়া যাবে। পুঁটলি খুলে খেতে লাগলো শম্ভুনাথ।

খাওয়া শেষ করে মস্ত একটা ঢেকুর তুললো সে। এবার গায়ে বল এলো খানিকটা। হাঁটা শুরু করা যাক আবার, এই ভেবে প্রসন্ন চিত্তে হাঁটা শুরু করলো শম্ভুনাথ। কিছুটা যাওয়ার পরই মনে হলো কেউ যেন কোথাও কাস্তে দিয়ে ধান কাটছে, দনাইতে চাষই হয়েছে কই যে কেউ ধান কাটবে! ব্যাপারটাকে বিশেষ পাত্তা দিলো না সে। কিন্তু কিছুটা হাঁটার পর আবার সেই একই শব্দ এবং স্পষ্ট মনে হচ্ছে তার ঠিক পেছনেই কেউ যেন ধান কাটতে কাটতে এগিয়ে আসছে, আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে শম্ভুনাথ দাঁড়িয়ে গেলে সে শব্দও থেমে যাচ্ছে। পেছন ফিরে একবার দেখে নিলো শম্ভুনাথ কিন্তু নাহ কেউ কোত্থাও নেই। আবার হাঁটা শুরু করলো সে এবং আবার সেই শব্দের পুনরাবৃত্তি। এবার শম্ভুনাথের একটু যেন ভয় ভয় লাগতে শুরু করলো; আরেকবার পেছন ফিরে দেখে নিয়ে সহসাই নিজের গতি বাড়ালো। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই শব্দটাও যেন সমান গতিতে ধাওয়া করতে শুরু করলো তাকে।

মনে হচ্ছে যেন অদৃশ্য কোনো ব্যক্তি কাস্তে দিয়ে ধান কাটতে কাটতে সমান তালে পিছু করে যাচ্ছে শম্ভুনাথের। শম্ভুনাথের সব সাহস এবার পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল, তবে কি লোকে ঠিকই বলে দনাই গাঁয়ে ভুত আছে!

ভুততে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বোধহয় আচমকা ছুটতে শুরু করলো শম্ভুনাথ, কিন্তু ভুত মশাই তো এতো সহজে বেকুব বনার পাত্র নন। তিনিও সমান তালে ধান কাটতে কাটতেই ছুটতে লাগলেন শম্ভুনাথের পেছনে। শম্ভুনাথ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকলো, খেয়ালই করলো না কোনদিকে যাচ্ছে সে বা কখন যেন তার পুঁটলি ছিল সমস্ত প্রসাদ, দক্ষিনা সব পড়ে গেল মাটিতে।

অন্ধকারটা আচমকাই নেমে এলো। আর পারছেনা শম্ভুনাথ, হাঁফ ধরে গেছে তার। দাঁড়িয়ে পড়ল সে। নাহ ভুত বাবাজির কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা আর, তবে কি ক্ষান্ত দিলেন তিনি? যাচাই করার জন্য একটা পা তুলে আস্তে করে সামনের দিকে বাড়ালো শম্ভুনাথ, আর সঙ্গে সঙ্গে চড়চড় করে ভুত বাবাজিও একগাছি ধান কেটে ফেললেন। পা টা যথাস্থানে ফিরিয়ে এনে এবার ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললো শম্ভুনাথ, কোনোদিনও কি ভেবেছিল সে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে! এবার কি করবে সে? কিভাবে নিষ্কৃতি পাবে এই ভুতের থেকে!

পুঁ… পুঁ… শাঁখের আওয়াজ ভেসে এলো কোথাও থেকে। চমকে উঠে শম্ভুনাথ সামনে তাকিয়ে দেখলো কখন যেন ছুটতে ছুটতে একটা গ্রামের কাছাকাছি এসে পড়েছে সে। যদিও গ্রামটা চেনা চেনা ঠেকছে তাও অন্ধকারে ঠিকঠাক ঠাহর করতে পারলো না এটা কোন গ্রাম। এবার বুকে একটু বল এলো তার। আজকের রাতটা নাহয় এই গ্রামের কোনো গৃহস্থের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েই কাটিয়ে দেওয়া যাবেখন, তবে আগে গিয়ে অনেকটা জল খেতে হবে, ছাতি শুকিয়ে কাঠ। আবার ছোটা শুরু করলো শম্ভুনাথ, ভুতবাবাজিও চললেন সাথে।

একদম গ্রামে ঢোকার মুখেই যে বাড়িটা তার বেড়ার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো সে। বাড়ির বউ একটা লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে তুলসী তলায় প্রদীপ দেখাচ্ছেন। বউটির প্রণাম করা শেষ হতেই শম্ভুনাথ ডাকলো তাকে, “শুনছেন মা?” কিন্তু বিধিবাম। শম্ভুনাথকে দেখে বউটি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘোমটা টেনে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। গাঁয়ের মেয়েমানুষ, ভরসন্ধ্যেবেলা অচেনা পুরুষকে এভাবে ডাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেছে। বাড়ির ভেতর থেকে আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো শম্ভুনাথ, আবার কান্না কান্না পাচ্ছে তার। অন্য ঘরগুলোয় গিয়ে কি একবার চেষ্টা করে দেখবে! এই ভেবে যেই ঘুরছে সে অমনি বাড়ির ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো, “কে হে বেড়ার ধারে? এই ভর সন্ধ্যেবেলা কি চাই?” শম্ভুনাথ আবার পাঁই করে বাড়িটার দিকে ঘুরে গদগদ গলায় বললো, “আজ্ঞে কত্তা আমার নাম শম্ভুনাথ বাঁড়ুজ্জ্যে, বাড়ি ধুলাগ্রাম।”

“তা এখানে কি মনে করে?”

“আজ্ঞে বসন্তপুরে এক যজমান বাড়িতে গিয়েছিলাম ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।”

“ সবই তো বুঝলাম কিন্তু এখানে কেন?”

“মনে হয় অন্ধকারে দিক ভুল করে ফেলেছি, ঠিক ঠাহর হচ্ছে না কিছুই। আজ রাতটা যদি একটু আশ্রয় দেন…” ভুতের পাল্লায় পড়ার কথাটা বেমালুম চেপে গেল শম্ভুনাথ, কারণ সে জানে এরা একবার যদি টের পায় ভুত তার ঘাড়ে চেপেছে তাহলে এক্ষুনি মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেবে।

“আপনাকে বিশ্বাস করি কি করে? যা দিনকাল পড়েছে…আপনি কোন কুমতলবে যে নেই কি করে বুঝবো?”

“আপনি ধুলাগ্রাম বা তার আশেপাশে গ্রামেও যাকেই আমার নাম বলবেন দেখবেন ঠিক চিনবে।”

“তা এই রাতের বেলা আমি আপনার গ্রামের কাকে খুঁজতে যাবো শুনি?”

“না… মানে… আমি ব্রাহ্মণ লোক মশাই। আমাদের গ্রামের মহেশ্বরের নামে দিব্যি কেটে বলছি লোক আমি খারাপ নই, শুধু আজকের রাতটার জন্য আশ্রয় দিন, আমি আপনার দাওয়ার ওই খাটিয়াটাতেই রাত কাটিয়ে দেব।” কিছুক্ষন ভাবলেন গৃহস্বামী, তারপর বললেন, “আসুন।”

আশ্রয় দিতে অনিচ্ছা থাকলেও গ্রামবাংলার মানুষ অতিথি সৎকারে কখনোই ত্রুটি রাখেননা। গৃহস্বামীও শম্ভুনাথের আদর আপ্যায়নে কোনো খামতি রাখলেন না। অনেক্ষন পরে প্রানভরে জল আর খাবার খেতে পেয়ে শম্ভুনাথের ধড়ে যেন প্রাণ এলো। ভুত বাবাজিও আর কোনো উৎপাত করেনি অনেক্ষন, তবুও শম্ভুনাথের মনের ভয় যেন কাটতেই চাইছিল না। গৃহস্বামীর সাথে গল্প করতে করতেও বারবার তাকিয়ে নিচ্ছিল আশেপাশে। নাহ, ভুতবাবাজি অবশেষে বোধহয় রেহাই দিলো তাকে। রাতে খাওয়া দাওয়ার শেষে বাইরের খাটিয়ায় গা এলিয়ে দিলো শম্ভুনাথ। একটা ব্যাপারে অবশ্য তার কেমন যেন খটকা লাগছিলো, যতবারই গৃহস্বামীকে গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করেছে সে ততবারই তিনি অন্য প্রসঙ্গ এনে এড়িয়ে গেছেন প্রশ্নটা, কিন্তু কেন! যাইহোক, এ নিয়ে বেশিক্ষন মাথা ঘামাতে পারলোনা শম্ভুনাথ, প্রকৃতির শীতল বাতাসের স্পর্শে সারাদিনের ক্লান্তি শীঘ্রই ঘুম হয়ে নেমে এলো চোখে।

সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙল শম্ভুনাথের কিন্তু উঠে বসতে যেতেই মনে হলো কোমরটা যেন শক্ত হয়ে গেছে, কিছুতেই নাড়াতে পারছেনা ওটা। কোমরটাকে তোলার চেষ্টা করতে করতেই সামনে তাকিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হলো তার। এ কোন বাড়িতে আছে সে! বাড়িটা এভাবে রাতারাতি ভেঙে পড়লো কি করে! আর এই বাড়িটাতেই তো…লতা! নাহ এ কি করে সম্ভব! আশেপাশটা দেখার চেষ্টা করতে যেতেই অনুভব করলো কোমরের মতো ঘাড়টাও শক্ত হয়ে গেছে। শুধু কোমর আর ঘাড় নয়, সারা শরীরটাই কেমন যেন শক্ত হয়ে গেছে। পায়ের তলাটা আবার ভেজাভেজা ঠেকছে না! সে কি তবে শুয়ে নয়, দাঁড়িয়ে আছে! শরীরটা এমন শক্ত হয়ে গেছে যে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখার জো নেই। সোজা যতদূর চোখ গেলো ততদূর দেখেই শম্ভুনাথের শরীর জুড়ে এক হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল... এ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সে? কোথায় গেল রাতের সেই গ্রাম! দিনের আলোয় স্পষ্ট চিনতে পারছে এ তো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাওয়া দনাই…!

হঠাৎ একটা কাক এসে উড়ে বসলো শম্ভুনাথের হাতের ওপর, তাড়াতে গিয়েও তাড়াতে পারলোনা ওটাকে তার আগেই সে নিজের জৈবিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেললো শম্ভুনাথের গায়ে। ঘেন্নায় চোখ দুটো বন্ধ করতে যেতেই টের পেল শরীরে একটা চাপ অনুভূত হতে শুরু হয়েছে; একটা লতা তরতর করে উঠে গেল তার শরীরে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে, অবাক হয়ে গেল শম্ভুনাথ। সেই সাথে অনুভব করলো পায়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগতে শুরু করেছে, ঠিক যেন কেউ ঘাস বুলিয়ে দিচ্ছে তার পায়ে। লাফানোরও উপায় নেই, একজায়গায় আটকে গিয়েছে সে। গায়ের রংটাও শ্যাওলা ধরা গুঁড়ির মতো হয়ে গেছে না! লতাটা জোরে চেপে ধরছে তার শরীর, ব্যাথা লাগছে গায়ে আর সেই সঙ্গে মনে হচ্ছে যেন তার শরীরের ভেতর থেকে কেউ বা কারা যেন শুষে নিচ্ছে সব কিছু।

অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল শম্ভুনাথ; বুঝলো এবার তার সব ফিরিয়ে দেওয়ার পালা...

***শেষ***


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama