ফুল ফুটল
ফুল ফুটল


আজ ঋতব্রতর স্কুলে প্রথম দিন। তবে মনটা খুব ভাল নেই তার! পোস্টিং হয়েছে বাড়ির থেকে অনেক দূরে এই ধ্যাধেড়ে গোবিন্দপুরে। অথচ উপায় ও নেই। বাবা নেই, মা আর ছোটো ভাই পড়াশুনা করছে। চাকরিটার খুবই দরকার। হাওড়া থেকে ট্রেনে ঘন্টা তিনেক লাগে। ওখানেই থাকতে হবে তাই মায়ের মনটাও খারাপ। সকাল থেকে সে যা যা খেতে ভালবাসে তিলের নাড়ু, মোয়া বানিয়ে সব গুছিয়ে দিয়েছে সাথে.. খেয়ে দেয়েই রওনা হয়ে পড়ল.. সন্ধের আগে পৌঁছালেই ভাল।
ট্রেন থেকে নেমে তো চক্ষু চড়কগাছ। এ কোথায় এল! একটা স্টেশনমাস্টারের ঘর, ইতিউতি কয়েকটা দোকান, ব্যস! এখান থেকে আবার রিক্সায় মিনিট দশেক। স্কুলের হেডমাস্টারের বাড়িরই নিচের তলায় তার থাকার ব্যবস্থা হল। হেডস্যার রমেশবাবু সাদরে তার অভ্যর্থনা করলেন, কিন্তু বরাবর শহরে বড়ো হওয়া ঋতব্রতর মন খারাপ হয়েই রইল।
সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে কোনোমতে দুটো মুখে গুঁজেই স্কুলে এল। একটা বিরাট মাঠে অতি প্রাচীন দোতলা বাড়ি কোনোমতে দাঁড়িয়ে "রামকমল বিদ্যাপীঠ"
তকমা লাগিয়ে। দেখে কোনোরকম ভক্তিশ্রদ্ধা হলনা ঋতব্রতর। হঠাৎ দু জোড়া ছোট্ট ছোট্ট হাত দুদিক থেকে চেপে ধরল তাকে.. সরল চোখের হাজার প্রশ্ন ঝিলিক মারছে তাতে..
"তুমি কি আমাদের নতুন স্যার?"
কি অমলিন সেই হাসি! ঋতব্রত না হেসে পারলোনা। কোথা থেকে তার গম্ভীর মুখে হাসির রামধনু খেলে উঠল। রমেশবাবু তাকে আগে ক্লাসরুমে নিয়ে গেলেন শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করানোর জন্য। সকলে একসাথে গুডমর্নিং বলার সাথে সাথেই তার মনে হল যেন একঝাঁক ফুল একসাথে হাওয়ায় দুলে উঠল! মেঘের মাঝে রোদের ছটার আভাস। একটু আগের দুটিও ছিল সামনের বেঞ্চেই। সেও হেসে সক্কলকে গুডমর্নিং বলল। আর এতোক্ষণে তার দিনটি যেন প্রকৃত অর্থে ভাল হয়ে উঠল।