Perfect partner
Perfect partner


স্কুল ব্যাগটা নিচে নামিয়ে রেখে অর্জুন দরজা খুলল ব্যাগের তিন নম্বর চেনের মধ্যে ছোট্ট পার্সে রাখা চাবিটা দিয়ে । ব্যাগটা সামনের সোফায় ছুঁড়ে ফেলে ধরাম ! করে দরজাটা বন্ধ করে দিল , আর দৌড়ে গিয়ে টিভির সুইচটা দিল। রিমোট চালু করে একের পর এক চ্যানেল ঘোরাতে থাকে। এমন সময় তার ব্যাগে রাখা ছোট্ট মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে। না খেলনা নয় , আসল মোবাইল ফোন । বাবা-মা দুজনেই অফিসের কাজের জন্য বাইরে থাকে, তাই মার্চ মাসেই ৯ বছরের জন্মদিনে এই মোবাইলটা কিনে দিয়েছিল বাবা । ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মা বলে, “সোনা, বাড়ি ফিরেছো ?”
অর্জুন বলে, “হ্যাঁ এইতো এলাম । তুমি কখন আসবে? জানো আজ কি হয়েছে?”
মা সাথে সাথেই বলে ওঠে , “বাবু অনেক কাজ জমে আছে, পরে বাড়ি ফিরে গল্প করবো । কেমন? তুমি এক কাজ করো , তুমি না হয় বাবাকে একটু ফোন করে নাও। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। রাখি তাহলে এখন?”
অর্জুনও হ্যাঁ বলে ফোনটা রেখে দেয়। ওদিকে সামনে টিভিতে চলছে Shinchan সারা ঘরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে আর মা mixi nohara তাকে তাড়া করে চলছে । একটু পরে আবার ফোন করে ও বাবার নাম্বারে। Caller tune এ বাজতে থাকে ‘ম্যায় কিসিকা সাপ্না হু জো আজ বানচুকা হু সাচ ’ আসলে ডোরেমন ওর সবচেয়ে প্রিয় কার্টুন । ডোরেমনের পকেট থেকে যেমন নতুন নতুন গ্যাজেট পাওয়া যায় তেমনি বাবার কাছে চাইলেও নতুন নতুন গিফট্ পায় সে। তাই ও মনে করে বাবা ওর কাছে ডোরেমন । তাই শ্যামলীদেবী জোড় করে ডোরেমনের এই গানটা সেট করিয়েছিল। এই নিয়ে অফিসে প্রায়শই সবার হাস্যরসের খোরাক হতে হয় chief ac
countant সমরেশ বাগচীকে । তবুও ছোট বাচ্চার মুখ চেয়ে কিছু বলতে পারেন না। দুবার বেজে গেল ফোনটা তবুও বাবা ফোন ধরল না দেখে ফোনটা রেখে দেয় অর্জুন। মুখ গোমরা করে টাই খুলতে খুলতে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে। হটাৎ একটা খট্ খট্ আওয়াজ শুনে সে রান্নাঘরের জানলার দিকে যায়। এখনো অতটা লম্বা হয়নি, তাই আস্তে করে টুল টা সরিয়ে এনে তার উপরে উঠে উঁচু হয়ে দেখার চেষ্টা করে, কি হচ্ছে এমন? সবাই সামনের কমপ্লেক্সের মাঠে বাঁশ পুতছে এই দেখে সে এক লাফে নামে আর দৌড়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। আধখোলা স্কুল ড্রেসপরে ছোট ছোট বুট জুতো পায়ে সে এসে হাজির হয় মাঠে । কত বড়ো বড়ো কাকুরা কেউ বাঁশ কাটছে, কেউ মাটিতে গর্ত খুঁড়ছে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে এদিক ওদিক চক্কর কাটতে থাকে অর্জুন। আচমকা ধাক্কা লাগে এক দাদুর সাথে। সেই দাদুও হাঁ করে তাকিয়ে আছে সেই প্যান্ডেলের দিকে। অর্জুনের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “কি হে দাদু, আস্তে দৌড়াও। পরে যাবে তো। ”
অর্জুন বলল, “তুমি জানো ! এখানে দশ হাতওয়ালা wonder woman এর প্যান্ডেল হবে তো।”
এই শুনে দাদু হো হো করে হেসে উঠে বলে, “দৌড়ে দৌড়ে তো কষ্ট হয়ে গেছে দাদুভাইয়ের। চলো ঐ ঘাসের উপরটায় গিয়ে বসি আর তোমায় তোমার wonder woman এর একটা গপ্পো শোনাই । চলো।” সাথে সাথেই অর্জুনও আনন্দে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে চলল। পাশ থেকে অন্য এক ভদ্রলোক বললেন, “যান যান অলকেশবাবু আপনার সময় কাটানোর সঙ্গী পেলেন শেষমেশ।”
দুজনেই এগিয়ে গিয়ে বসল ঘাসের উপর। আর সামনে প্যান্ডেল তৈরি দেখতে দেখতে দুজনে গল্প শুরু করল ।