নোবেল চুরি
নোবেল চুরি
নোবেল চুরি —
ডা: সত্যব্রত মজুমদার
তারিখ :-১৪/০৭/২০২২
—-------------
গুরুদেব, -------- কে " নারায়ন" হঠাৎ এত সকালে, এইরকম তো পূর্বে কখনো খুব বেশি হয়নি, ঠিক তাই, কবিগুরু, নারায়ন, আমিতো অতীব ভাগ্যবান, আপনার মতো মহাপুরুষের সেবায় নিয়োজিত দীর্ঘ শত বছর পেরিয়ে, এই অমূল্য অদৃশ্য ধামে, খুব চিন্তা ক্লিষ্ট, হতাশাগ্রস্থ, ক্রুদ্ধ, ভীত লাগছে, ঠিক ধরেছেন, আর আপনি তো মানুষ দেখেই বুঝবেন বৈকি — যুগস্রষ্টা, বিশ্বকবি, গতকাল "মর্তধামে "আপনার সৃষ্ট আশ্রমধাম স্বপ্নের শান্তিনিকেতন" বর্তমানে " অ -শান্তি নিকেতন " থেকে মূল্যবান নোবেল স্মারক ধারকটি খোয়া গেছে, এই কথা বলতে আমার ভয় হচ্ছে, ঘৃণা হচ্ছে, আপনার, আপনার কি প্রতিক্রিয়া হয়?
ও তাই নাকি, আমি কিন্তু অবাক হচ্ছি না,শোনো, মোট ১৫৭ টি ব্রাহ্ম দিকদর্শনের আঁধারে, আধ্যাত্বিক, গীতিকবিতা, ১৯১৩ সালের দশই নভেম্বর "অসলোতে" সুইডিশ নোবেল একাডেমি এই পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ১৯১০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় "গীতাঞ্জলি" ইংরেজি অনুবাদ "দা সং অফারিংস"—- আমি সবচেয়ে বেশি মানসিক কষ্ট সহ্য করতে পেরেছি - কনিষ্ঠতম সন্তান "শ্রীমান শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অকালপ্রয়াণ,( ১৮৯৬ হতে ১৯০৭)ইংরেজি সন, কিন্তু নারায়ন নোবেল চুরির সংবাদ, অবাক হওয়ার কি আছে! আমি তো জানতাম কালের নিয়মে তাই হবে — দুর্নীতির আঁতুড়ঘর, অপদার্থ নরদের হাতে ক্ষমতা, আমাদের নেই রক্ষা করার শিক্ষা, চেতনা, দক্ষতা, অদূরদর্শিতার কেতন ওড়ে, তথাপি পৃথিবীর কোটি জনমানুষের হৃদয়ে গাঁথা হয়ে আছে নোবেল, এই কথাটিই স্বস্তিদায়ক।
কিন্তু এত বড় লজ্জাজনক ঘটনা, গুরুদেব, সহ্য করার মতো না, আবার চোর ধরতে ব্যর্থ হয়েছে গোয়েন্দা বীরেরা, এই খবরও আছে জল জ্যান্ত সত্যের মত, তবে চুরি করা নোবেল গেলো কোথায়? সর্ষের মধ্যেই ভূত?
শোনো নারায়ন, সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতিটা বিবেচনা করার দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করো, রাগান্বিত হওয়ার কিছু নেই, আমার সাধের নিকেতনের বর্তমানে আমার স্বপ্ন সাধনাকে সম্পূর্ণরূপে ধূলিসাৎ করেছে, রবীন্দ্র সাহিত্য-সংস্কৃতির গৌরবোজ্জল ইতিহাস আজ অতীত- —- কোটিপতি আর এলিট ঘরের ছেলেমেয়েদের চরাচর, রাজনীতির পঙ্কিলতা, অসারতা, চরম উশৃংখলতা, সূরাসূরের উন্মাদনা —- আইন-আদালত — দিনরাত্রির বিরিয়ানি তে পরিণত হয়েছে, আর এইটাই হওয়ার ছিল, অযোগ্যদের হাতের পরশে অধঃপতন —- কবিগুরু আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন — মৃদুস্বরে, নারায়ন—- সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক কি জানো —-- নোবেল চোর বাবাজি বড়ই বুদ্ধিমান, চৌখস, জ্ঞানী, প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, মহামূল্যবান নোবেল স্মারককে নিজের হেফাজতে নিয়েছে —- আরো নিরাপদে সংরক্ষিত করার জন্য, আর আমিও এক্ষণে গর্ব অনুভব করছি, একদা নোবেল প্রাপ্তির জন্য — আর অবশ্যই আমি সব খেয়াল রাখছি অজানা অদৃশ্য — ব্রহ্মান্ডের আরেক প্রান্ত থেকে — এই সবুজ মাটির বিশ্বচরাচরেই থাকবে, চাঁদের দেশে নিশ্চয়ই স্থান নেবে না, আহা, যেমন দেশ তেমন তাঁর কর্মকাণ্ড —- নোবেল চুরির রহস্য এবার গল্পের গাছে তো উঠেছে।
" আমি ভাবি যদি সে তো অনেক ভাবনা,
না ভেবে তাই করি নাই কোন কান্না।
তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নোবেল চোর বাবাজি যেদিন আমার গীতাঞ্জলি পড়ে অনুধাবন করবে, সেই দিন লুকিয়ে রাখা নোবেল আবার ফিরিয়ে দেবে, ততদিন করে যাও শুধুই প্রতীক্ষা, আর স্মরণে রাখো আমার গীত সংগীত --------
"আমার মাথা নত করে দাও হে, তোমার চরণধুলার তলে,
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে।"
-----------------------