Sayani Banerjee

Horror

1.9  

Sayani Banerjee

Horror

নজর

নজর

2 mins
997



গ্রামের দিকে একটা কথার খুব প্রচলন ছিল যে সন্ধে বেলা বাজার থেকে মাছ কিনে আনলে নাকি সে মাছে ভূতের নজর পড়ে । তবে গ্রামের শিক্ষক মহাশয়, কেদার বাবু এসব কথা কোনো দিনই কানে নিতেন না । বরং মজা করে বলতেন, " নাও গো ভূতওয়ালা মাছ এনেছি আজ কড়া করে একটু ঝাল দিয়ে ভূত কে নাকের নাকের জলে, চোখের জলে করে দাও" । স্ত্রী অবশ্য এই সব ভূত, প্রেতে যথেষ্ট ভয়ে পেতেন। কেদার বাবুর এতো উদাসীনতা এই বিষয়ে তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। অনেক বছর আগে, তখন গ্রামে বৈদ্যুতিক আলো আসেনি। সন্ধে বেলা হারিকেনের আলো বা লম্ফর আলো ছিল ভরসা। কেদার বাবুর গ্রাম অর্থাৎ মছলন্দপুর স্টেশন এ বাজার বসত। সকাল সন্ধে দুই বেলা সবজি ও মাছের ভরপুর পসরা থাকতো। হারুর দোকানে বন্ধুদের সাথে চা খেয়ে, গল্প করে, বাজার করে ফিরতেন কেদার বাবু। নিত্যদিনের মতো সে দিনও হারুর দোকানে চা হাতে নিয়ে বসলেন। কিন্তু বাকি বন্ধুরা আজ কেউই আসেনি। সারাদিন ধরে যা বৃষ্টি হয়েছে তাই আলসেমি করে কেউ আর বেরোয় নি । তবে একা হলেও আজ চায়ের সঙ্গী ছিল তার বেশ মজাদার ছোট খাটো একটি মেয়ে। হারুর মেয়ে। বছর তিনেক বয়স। বাবার কোলে চড়ে মাঝে মধ্যে আসে চায়ের দোকানে, আদো আদো কথা শুনে বেশ কাটে সময় টা, ছুটকি এলে। সেদিনও হারুর মেয়ে কে আদর করে তারপর যথারীতি বাজার করে বাড়ি ফিরলেন কেদার বাবু। বাড়ি যখন পৌঁছলেন তখন ঝড় বৃষ্টিতে চার পাশ ঝাপসা হয়ে এসেছে। ঝড়ের দাপটে গাছ পালা ভয়ানক ভাবে নড়ছে। এলো মেলো হাওয়ায় চার দিক ঘিরে এক ভয়ানক দুর্যোগ। কোনো রকমে বাড়ি ফিরে বাজার টা নামাতে নামাতেই ওনার স্ত্রী ছুঁটে এসে বললেন, - এ বাবা , ভিজে পুরো স্নান হয়ে গেছো। তাড়াতাড়ি জামা বদলে নাও। এই বলে উনি রান্নাঘরে গিয়ে মাছ ধুয়ে রান্না চাপানোর জোগাড় করতে লাগলেন। দূরের কলাগাছের পাশে বিদ্যুতের ঝলকানি শুধু চোখে পড়ছে। লম্ফ জেলে তিনি রান্না ঘরের জানলা থেকে দেখছেন মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলক। আনমনা হয়ে কাজ করতে করতে হঠাৎ জানলার দিকে তাকাতেই, হাত ফস্কে বসুন পড়লো মাটিতে। শব্দ শুনে দৌড়ে এলেন কেদার বাবু। গিন্নি তখন মূর্ছা যায়। রান্না ঘরের জানলা দিয়ে লম্বা হাত সোজা কড়াইয়ের ওপর, নাকি সুরে বলে চলেছে, - একটা মাছ দে। একটা মাছ খাবো। একটা মাছ দে না। মুখের দিকে তাকাতেই কেদার বাবু বিস্মিত, হতভম্ব। এতো হারুর মেয়ে, ছুটকি । সে রাতএ জ্ঞান নেই দুজনেরই। পরদিন বিকেলে হারুর দোকানে গিয়ে কেদার বাবু দেখেন দোকান বন্ধ। কিন্তু ঘটনার কইফিয়ৎ তাকে নিতেই হবে। তাই সোজা গেলেন হারুর বাড়ি, বাড়ির দালানে তখন কান্নায় কাতরাচ্ছে হারু। কেদার বাবু কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সে বলে উঠলো, কাল বিকেলে দোকান বন্ধ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছিলাম এতো বৃষ্টির জন্যে। ছাতা দিয়েও আটকাতে পারিনি। মেয়েটা পুরো ভিজে গেছিল। সন্ধে থেকে জ্বর। রাতে সেই জ্বর মাথায় উঠে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমার ছুটকি শেষ হয়ে গেল বাবু চোখের সামনে। আমি বাবা হয়ে কিছু করতে পারলাম না। মেয়ে টা মাছ খেতে বড্ড ভালোবাসতো। খাওনোর সে সুযোগ টুকুও পেলাম  না । ছুটকি চলে গেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror