গন্তব্য - সায়নী ব্যানার্জী
গন্তব্য - সায়নী ব্যানার্জী


-কিরে এখনও মাঠে কি করছিস?স্কুল যাবি না?দেরি হয়ে যাবে তো এবার ...
বাবার গলা পেয়েই তাড়াতাড়ি করে তৈরী হয়ে স্কুলে বেরোনোর সময় পেছন থেকে জ্যেঠু ডেকে উঠলো-
-শোন অবিনাশ আমাদের বাড়ির সব ছেলে মেয়েরাই লেখাপড়া করে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত.এ বছর তোর মাধ্যমিক l পড়ায় মন না দিয়ে সারা দিন ওই কাদা মাটি নিয়ে পরে থাকা আমরা কিন্তু সহ্য করবো না l
কথার উত্তর না দিয়ে মুখ নিচু করে বেরিয়ে গেলো অবিনাশ l রাস্তায় যেতে যেতে তার মনে একটাই প্রশ্ন- শুধু কি লেখাপড়া করেই বড় হওয়া যায়? আর কোনো কাজ কি সম্মানের নয়? অবিনাশ তার মা কেও এই কথা জিজ্ঞাসা করেছে অনেকবার.. ছেলের হাতে মাটির তৈরী মূর্তি বালি দিয়ে বানানো কারুকাজ মুগ্ধ করলেও ছেলেকে পড়াশুনার বাইরে এইসব নিয়ে ভাবতে তিনি অনেকবার বারণ করেছেন l .অবিনাশের মা জানতেন পড়াশুনায় গাফিলতি হলেই পরিবারের সকলে অবিনাশকে দূরে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে দেবেন l ছেলেকে ছেড়ে তিনি থাকতে পারবেন না l কিন্তু অবিনাশ হাজার চেষ্টা করেও লেখাপড়াকে ভালোবেসে উঠতে পারেনি l কোনো রকমে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোলেও তারপর স্কুল কলেজ তাকে কোনোদিন টানেনি l টান শুধু একটাই l মাটি, বালি l বাড়ির পরিবেশ অবিনাশের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল তার এই কাজ এর জন্য l ঘর ছেড়ে ওড়িশায় এক ভাড়া বাড়ির বাসিন্দা সে আজ গত তিন বছর ধরে l যুক্ত হয়েছে নানা সংস্থায় l হাতের কাজে নৈপুণ্য আজ বেড়েছে অনেকটাই l সৃষ্টি তে অবিনাশের হাতের ছোঁয়া বারবার নজর কেড়েছে অনেক বড় বড় সংস্থা এমন কি আন্তর্জাতিক সংস্থারও l
.এসেছে অর্থ , সম্মান l তবে ঠিক অতটা হয়তো না যতটা হলে অবিনাশের পরিবার তাকে মেনে নিতে পারে l চিরাচরিত চিন্তার পরিবেশ ,অবিনাশের চোখ দিয়ে অন্য পৃথিবীকে দেখতে চায়নি কখনো l কিন্তু নিজের স্বপ্ন পূরণের রাস্তায় আত্মতৃপ্তির স্বাদ পেয়েছে অবিনাশ l স্যান্ড আর্টএ এখন বেশ পরিচিতি আছে অবিনাশের.l
পাঁচ বছর পর সেন বাড়ির ফোনের ওপার থেকে যখন অবিনাশ জানালো নিউ জার্সির এক বড় সংস্থা অবিনাশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে স্যান্ড আর্ট শিল্পী হিসেবে , তখন সেন বাড়িতে কেবল দীর্ঘশ্বাস আর আত্মদহনের জ্বালা l
অবিনাশের প্লেন , এখন সবে , নিউ জার্সির মাটি ছুঁয়েছে l