নীলকন্ঠ
নীলকন্ঠ


“কি দেখছো?”
“তোমায়।”
“শিকারের আগে শিকারকে দেখে নিচ্ছ প্রাণখুলে?”
“মানে!”
“মানেটা জানোনা বুঝি?”
“কি উল্টোপাল্টা বলছো তুমি!”
“উল্টোপাল্টা বলার ক্ষমতা যে আমার নেই তা তো তুমি জানোই ভালো করে।”
“হাসালে আমায়।”
“হয়তো আজ আমার প্রতিটা কথাই হাসাবে তোমায় কিন্তু সত্যি করে বলোতো ভুল কিছু কি বলেছি?”
“ঠিক ভুলের হিসেব তুমি আবার কবে থেকে রাখতে শুরু করলে?”
“যবে থেকে তোমার জীবনে ঐ নতুন বান্ধবী এসেছে তবে থেকে।”
“নতুন বান্ধবী!”
“কেন? তোমার ডাক্তার বান্ধবীর কথা আমি কিছুই জানিনা ভেবেছিলে? ওর সাথেই তো দেখি এখন তোমার যত কথা, আমি শুধু একটা প্রয়োজন হয়ে রয়ে গেছি তোমার জীবনে।”
“হঠাৎ করে এমন কথা বলছো কেন?”
“কারণটা তো তুমি ভালো জানবে। সত্যি করে বলোতো তোমার ঐ বান্ধবীর সাথে পরিকল্পনা করে আমাকে পৃথিবী থেকে সরাতে চাইছো তাই না?”
“রি…!”
“হাঃ হাঃ … তোমার মুখের পরিবর্তিত অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে যে আমি ভুল নই। সে তুমি আমাকে চাইলে মেরে ফেলতেই পারো, বাধা দেবো না। কেনই বা দেবো! তোমার জন্যই তো বেঁচে আছি আমি, এখন তুমি না চাইলে…”
“চুপ করো দয়া করে।”
“আমাকে চুপ করালেই কি সব মিথ্যে হয়ে যাবে! আমি জানি তুমি আমায় মেরে ফেলবে, না চাইলেও হয়তো বাধ্য হবে কেননা ওই কুহকিনী যে এখন তোমার সমস্ত মনে আধিপত্য বিস্তার করেছে, তোমার মন আর তোমার নেই।”
“প্লিজ… চুপ।”
“চুপ তো তুমি করাবেই আমায়, কিন্তু ঋদ্ধি তার আগে ভেবে দেখেছো কি আমি না থাকলে কে নীলকণ্ঠ হয়ে তোমার সব সমালোচনার গরল পান করবে এবার?”
“আমার লেখার সমালোচনার দায়ভার আমি নিজেই নেবো।”
“হাঃ হাঃ… হঠাৎ করে এতো সাহসী হয়ে উঠলে যে! তা সবই কি তোমার ওই নতুন বান্ধবীর জাদু?
তুমি নিজেও জানো ঋদ্ধি কতটা কাপুরুষ তুমি, সমালোচনার ভয় তোমার কতটা তীব্র যে অবলীলায় নিজের সৃষ্টিগুলোকে আমার নামে প্রকাশ করো! তোমার মধ্যে যে প্রতিবাদী লেখক সত্তা সে তোমাকে লিখতে বাধ্য করে আর তোমার মধ্যেকার কাপুরুষ তুমিটা তোমায় পেছন থেকে টেনে ধরে… তোমার ঐ কাপুরুষ সত্তাটাকে কোনোদিনও তুমি মেরে ফেলতে পারবেনা ঋদ্ধি। তোমার বান্ধবী আমাকে মেরে ফেলার ইন্ধন জুগিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে পারে কিন্তু তোমার ঐ আসল কাপুরুষ তুমিটাকে কি পারবে শেষ করতে?”
“চোপ… একদম চোপ…!”
“চুপ তো করবোনা আমি। আজ নাহয় কাল তুমি আমাকে শেষ করবেই তার আগে বলে যাবোনা আমার মনের কথাগুলো! তোমায় আমি ভালোবাসি ঋদ্ধি, এখনো সমান ভালোবাসি আর তাই তোমাকে সাবধান করে যাচ্ছি ওই কুহকিনীর মায়ায় পড়ে নিজের এমন ক্ষতি কোরোনা, তুমি পারবেনা সমালোচনা সহ্য করতে।”
“এসব বলে আর তুমি আটকাতে পারবেনা আমায়, তুমি ঠিকই বুঝেছ মরতে তোমাকে হবেই। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তুমি, আমার সব সৃষ্টি তোমার নামে চলিয়েছো…”
“আমি চালিয়েছি বোলোনা, তুমি স্বেচ্ছায় আমার ওপর চাপিয়েছ সেগুলো। তা মারবে যখন মারো আমায়, হাত কাঁপছে কেন তোমার? মারো বলছি...মারো।”
ফেসবুকে খবরটা পড়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাকে যেন ফোন লাগলেন সাইকোলজিস্ট শ্রীজাতা বসু, “হ্যালো আন্টি, কংগ্রাচুলেশন্স… লেখিকা ঋদ্ধিমা অবশেষে শেষ, আমি জানি ঋদ্ধি নিজে হাতে করেছে এ কাজ। দেখবেন এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“কংগ্রাচুলেশন্স টু ইউ শ্রীজাতা, তোমার অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এটা কোনোদিনই সম্ভব হতোনা।”
ডাঃ শ্রীজাতার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত থাকা মিসেস সাহা খেয়ালই করলেন না যে অগোচরে তাঁর পাশের ঘরে আবার সৃষ্টি হয়ে গেল এক নতুন নীলকণ্ঠ, ঋত্বিকা।
মা আর শ্রীজাতা যতই চেষ্টা করুক, ঋদ্ধিমাই আসলে ঠিক চিনেছিল ঋদ্ধিকে। সমালোচনার গরল পান করার মতো শক্তি ঋদ্ধির নেই, কোনোদিনও পারবে না সে এটা সহ্য করতে, কোনোদিনও না...
শেষ।