নায়ক
নায়ক


বিদিশা একদিন সেভেন্টির বলিউড সিনেমার নায়িকাদের মত করে ঠোঁট,চোখ মেলে তাপসকে বলল,ড্যাডি চায় পে বুলাএ হ্যায়।
এই তো সবে কলেজ শেষ হল!...মিনিমাম পাঁচটা বছর তো দিতে হবে নিজেকে প্রমাণ করতে!...তা না...এখনি ডাক পড়ে গেল?
এখন সে কী বলবে তার এতবড় হেড ব্যাঙ্কের ড্যাডিটিকে?
...ভাববার জন্য সময় তার হাতে নেয়।ওদিকে বিদিশাও চুপ মেরে গেছে।কী ব্যাপারে ডেকেছে...যদি আগেভাগে একটা মিনিমাম সাজেশন পাওয়া যেত।এনসারগুলো ঠিকঠাক প্রিপারেশন করা যেত।সব তাকে গাড্ডায় ফেলানোর কারসাজি!!
নেহাত ওই পাগলীটাকে মনের খাঁচায় একটু বেশিই স্পেস দিয়ে ফেলেছে।না হলে এরকম অত্যাচার সে মোটেও সয়ে নিত না।
এই জন্যই লোকে বলে প্রেমের আঠা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করতে নেয়।
এ যে কাঠালের আঠা...।
তাও যদি গানটা গান্ডুছোদা বন্ধুগুলো কিছুদিন আগে এভাবে বেসুরো গলায় হলেও শোনাত।
এভাবে হাবুডুবু খাওয়ার আগে দুবার ভাবত।এখন এমন অবস্থা,পোষ্টে গোল ঠুকে দুহাত তুলে নাচাও যাবে না।
...যাই হোক দুরু,দুরু বুকেই তার ড্যাডির চোখের সামনে তাপস একটা চেয়ারে বসল।চুল,গোফ দুটোই তো পেকে গেছে ভদ্রলোকটির।তবু শালা এখনো গোফের ধার কমেনি।
দেওয়ালে টাঙানো ওই তলোয়ারের অগ্রভাগের মতই ছূচালো।
যখন তিনি ফাইলের থেকে নজরটা তাপসের দিকে ঘোরালেন।তাপসের মনে হল বোধ হয় একটা সিংহ শেষবারের মত তার শিকারটাকে পর্যবেক্ষণ করছে!
এখন তাপসের ভগবানকে ডাকা ছাড়া দ্বিতীয় কোন কাজ নেয়।
বিদিশার বাবা গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,কী নাম তোমার?
তাপস ভাল করে ঢোকটা গিলে বলে উঠল,তাপস চ্যাটার্জী ।
---কতদিন হল বিদিশার সাথে মিশছো?
তাপস একবার ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে নিল।
বিদিশা স্টিলের গ্রীলে পাক খেয়ে হাসতে,হাসতে ফোনে কথা বলছে।কী অদ্ভুত মেয়ে মাইরি!!
...সিংহের সামনে টেনে এনে আর পা নাচিয়ে মজা চাখছে?
তাপস বুঝে গেল।এই যুদ্ধটা তাকে একাই লড়তে হবে ।
সুতরাং গলা ঝেড়ে জবাব দিল,এই বছর তিনেকের মত।
ওর ড্যাডি আবার কাজে ঢুবে গেলেন,
---এবার বন্ধ করতে হবে।
আচ্ছা মুশকিল তো!...অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীতে কোন জীব বাঁচতে পারে?
এতবড় জ্ঞানী মানুষ হয়ে এই সামান্য বোধটুকুও নেয়?
তাপস বলে উঠল, কেন স্যার?
---কী করো তুমি?
----করি না। তবে অবশ্যই কিছু একটা করব।এই তো সবে পড়াশুনোটা শেষ করলাম।
আবার সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাপসের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,তোমার হাতে ছমাস সময় আছে। কিছু করে দেখানোর।যদি সে রকম কিছু করতে পারো তবেই বিদিশাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখো।তার আগে না।
তাপস উত্তরটা বুঝতে পেরেও আর একবার কনফার্ম করার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,ঠিক বুঝলাম না স্যার।
তার ড্যাডি এবার ফাইল গুছিয়ে উঠে পড়লেন।যেতে,যেতে বলে গেলেন,ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ছেলেরা তো ব্রিলিয়্যান্ট হয় শুনেছি।তুমি তো দেখছি বেশ কাঁচা!
...আমরা আজ লন্ডনে যাচ্ছি সকলে মিলে।ছমাস বাদে ফিরব।এসেই বিদিশার বিয়ে ব্যাপারে ফাইন্যালি কথা হবে ।ও তো আমার একমাত্র সন্তান।আর আমার প্রপার্টি তো সব উইল করে রেখেছি।চ্যারিটেবল ট্রাষ্টে ডোনেট করা হবে।সুতরাং মেয়েকে তো আর যার,তার হাতে শপে দিতে পারি না।আশা করি বুঝতে পেরেছ।এবার আসতে পারো।
ওর ড্যাডি চলে যাওয়ার পর করুণ চোখে তাপস একবার রঙিন ব্যালকনিটার দিকে শেষ বারের মত তাকাল।
সেখান থেকে তার মনের প্রজাপতিটিও ডানা মেলে সবকিছু ফ্যাকাশে করে উড়ে গেছে।
এতবড় কঠিন শাস্তি!
ভেতরে ঢোকার আর সাহস করতে পারল না। তাই বিদিশাকে ফোনেই ট্রাই করতে লাগল।
ওদিকের ফোন সুইচ অফ।সেই ফোন চালু হল গিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে।
বিদিশাই কলটা করল ।
---হ্যালো ডার্লিং...কেমন আছো?
এদিকে তাপস বাথরুমে হাল্কা হতে ঢুকেছে।সবে প্রথম ধাপের লোডটা মুক্তি পেয়েছে।
এই অবস্থায় আর যাই হোক কথা বলতে ইচ্ছে করে না।
তাপস জ্ঞানশূন্য অবস্থায় কই মাছের মত লাফিয়ে উঠল,আরে বিদি তুমি!ভুলে যাওনি তাহলে?
---জানি রাগ করেছ।ছাড় সেসব কথা।বলো কোথায় আছো....এখন কী করা হচ্ছে?
---বাথরুমে বসে...মলত্যাগ করছি।
----ইয়ার্কি মেরো না প্লিজ ডার্লিং।আমি খুব টেনশেন ফিল করছি।
---সে তুমি যাই ফিল করো...আমি তো আর মিথ্যে বলতে পারি না তোমাকে।তাই আপাতত যা করছি তাই বললাম।...তবে এখান থেকে বেরিয়ে আজ এক জায়গায় কাজে জয়েন করার আছে।
ও প্রান্তে বিদিশা উৎসাহিত ভাবে বলে উঠল,ও..রিয়েলি!...দুদিনের মধ্যেই চাকরী জুটে গেল বুঝি?
----আরে বিদি...এ চাকরী নয়।এ হল কাজ।যা আর পাঁচটা হতভাগা ছেলে বেঁচে থাকার জন্য করে।...আমার তো আবার আরো ডেন্জারাস অবস্থা ।শুধু একা বাঁচলে হবে না। সাথে তোমাকেও রাখতে হবে।এখন ঢুকছি ডেলিভারি ম্যান হিসেবে ভাল সার্ভিস দেখিয়ে ছমাসের আগেই একটা পিৎজা আউটলেটের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হয়ে যাব।কী বলো বিদি পারব না?
----অফকোর্স ডার্লিং।বেস্ট অফ লাক।
দিন পাঁচেক পর তাপস একটা অর্ডারের ডেলিভারি দিতে শরৎ বোস রোডে যাচ্ছে। সময় দেওয়া আছে থার্টিন মিনিট। মর্নিং টেন ও ক্লকে এমন জমকালো বস্তুটি কার উদর ঠান্ডা করবে!!
...তাপসের সবথেকে বেশি আগ্রহ ওই স্থলহস্তির একবার দর্শণ লাভ করা।
নিশ্চয়ই পাঞ্জাবী কেউ হবে।
এই সময় সিগন্যাগে সময়গুলো বেশি খেয়ে দেয়।
পাশ কাটিয়ে বাইকটা একদম রাস্তার ধারে নিয়ে গেল।সবুজ আলোটা দেখামাত্রই সাঁ করে ফাঁকে বেরিয়ে যাবে।
এদিকে আলো জ্বলে উঠেছে। একটি মহিলার চিৎকার ভেসে এল।
একজন যুবক মহিলাটির গলা থেকে সোনার হারটা টান মেরে ছিড়ে দৌঁড়ে পালাচ্ছে।মহিলাটি প্রেগনেন্ট।হয়ত কারু অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। শালা লোফার বেটাও মকায় ছিল।এখানে আবার কোন ট্রাফিক পুলিশও নেয়।অটোমেটিক সিগন্যালিয়ের এই এক ঝামেলা!
অগত্যা বাইকটা কোনরকমে দাঁড় করিয়ে তাকেই ছুটতে হলে।
মিনিট দশেক লাগল ওর ঘাড়টা শক্ত করে ধরে আনতে।
ছেলেটা তো এসেই মহিলার পায়ে ষষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করে বলে উঠল,বাঁচান দিদি।...দয়া করে পুলিশে দেবেন না।মায়ের শরীর খারাপ।হাতে টাকা নেই। কেউ ভিক্ষাও দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এসব করছি।আমায় ক্ষমা করুণ।আর কক্ষনো এসব করব না।
মহিলাটি হারখানা পেয়েই তো হাসতে শুরু করেছেন।
বলে দিলেন,আমি আমার জিনিস পেয়ে গেছি।ব্যাস...এবার তুমি ভাই যেখানে খুশি যেতে পারো।নো টেনশেন।
ছেলেটা চোখদুটো মুছে চলেই যাচ্ছিল।হঠাৎ তাপস তাকে ডাকল,এই শোনো।
ছেলেটা হাতজোড় করে দাঁড়াল।
তাপস কয়েকটা একশ টাকার নোট ওকে দিয়ে বলল,আমার তরফ থেকে এটা তোমার মায়ের চিকিৎসার জন্য। আশির্বাদ দিতে বলো...যেন তাড়াতাড়ি প্রমোশনটা হয়ে যায়।
তখনি তাপসের মনে পড়ে গেল।সে একজন পিৎজা ডেলিভারি ম্যান।হাতে মাত্র পনেরো মিনিট ছিল।তাকে ঠিকানায় পৌঁছতে হত।বাইক স্টার্ট করতে গিয়ে দেখে ওর অর্ডার করা পিৎজা মহিলাটি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন।
তাপসের মাথায় হাত!!
...এই মরেছে!
মহিলাটি নাক কুচকে বলে উঠলেন, বড্ড খিদে পেয়েছিল ভাই।ডাক্তার এই সময় খালি পেটে থাকতে একদম মানা করেছেন।ভেতরেও তো একজন আছে।অন্তত তার কথা ভেবে ক্ষমা করে দাও।তুমি বরং দাম যা নিয়ে নাও।
উত্তরে তাপস বড় কষ্টে হেসে বলে উঠল,সে কী বলছেন ম্যাডাম... একদম না।আপনার সন্তানের আমিও তো কাকুমনি।ওকে এটা আমার তরফ থেকে বার্ড ডে পার্টি।
...আশির্বাদ করুণ যাতে আমার প্রমোশনটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
সেই যাত্রায় তাপসের আর প্রমোশন পাওয়া হল না।বরং কম্পানি থেকে বহিস্কার জুটল।
কাগজের কর্মখালি দেখে এবার সে সাউথসিটি মলে একটা বিদেশি ঘড়ির শো রুমে সেলস ম্যানের কাজ পেল।
এবারও তার টার্গেট মাস কয়েকের মধ্যে প্রমোশন কুড়িয়ে অন্য কোন শো রুমে ম্যানেজার হওয়া।
দুর্ভাগ্যবশত সেখানেও সে একটা ঝামেলায় জড়িয়ে গেল।
...একদিন একটি ছেলে নেশায় চুর অবস্থায় তার গার্লফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে শো রুমের সবথেকে দামী ঘড়িটা শো করে ডেমো দিতে বলল।
তাপস খুব সুন্দর করে ইংরেজিতে বোঝাতে শুরু করল।সে কথা মেয়েটি শুনলেও ছেলেটি শুনছিল না। কারণ সে তখন মেয়েটির খাটো স্কার্টের ভেতরে নির্লজ্জভাবে আঙুল ঢোকাতে ব্যস্ত ছিল। মেয়েটি তত বিরক্ত বাসছিল।বার,বার বলছিল,প্লিজ..প্লিজ।নেক্সট ডে।
এক সময় তাপস আর সহ্য করতে পারল না। ছেলেটার ইঞ্জিন পয়েন্ট বরাবর একটা জুতের পাঞ্চ দিয়ে হাতটা ঝেড়ে নিল।
ছেলেটাকে অজ্ঞান অবস্থায় সেই সময় অটো করে বাড়ি পৌঁছে দিলেও।শেষ রক্ষা হয়নি।
পরের দিন হকি স্ট্রিক নিয়ে পাঁচ,ছয় জনের দল দুটো এনফিল্ডে করে চলে এল।দলের হেড সেই ছেলেটা ।
যাইহোক কিছু হওয়ার আগেই মেয়েটিও কোথা থেকে এসে পড়াতে একটা বড় ধরণের বিস্ফোরণ হতে,হতে বেঁচে গেল।
বাঁচল না শুধু তার কাজটুকু।ম্যানেজার হিসেব মিটিয়ে করজোড়ে সেদিনই তাকে বিদায় জানালেন।
এভাবে তাপস ছমাসে প্রায় দশটার মত কাজ জয়েন করে আর ছাড়ল।
প্রত্যেক জায়গা থেকে সে তার সততার গুনের জন্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
এটা আজকাল যুগে ওর সবথেকে বড় উইক পয়েন্ট।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করা এবং অসহায়কে সাহায্য করতে যাওয়া ।সে চোখ বুঁজে থাকতে পারে না। আর অনুকুল পরিস্থিতিতে গা ভাসিয়ে স্থির থাকতেও পারে না। তাই আর প্রমোশন পাওয়া হল না।
এদিকে বিদেশের কাজ সম্পন্ন করে কোলকাতার মাটি ছুঁয়ে ফেলল বিদিশারা।
আবার ডাক পড়ল তাপসের।সে তো জেনেই গেছে।এরপর কী হবে?
তাই আজকাল বিদিশার ফোন ধরাও কমিয়ে দিয়েছে।
তবু মনটাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না। তার মন তো বিদিশা ছাড়া অন্য কারু নামই জানে না।
শত অনুরোধেও ভোলেনি।
....তাই আজ মুখোমুখি শেষ বোঝাপড়াটা করার জন্যই তার আসা।না হলে সে আসতোই না।যখন তার যোগ্যতা নেয়।তখন সে ছিনিয়ে নিতে পারে না।
সত্যিই তো একজন অবস্থাপন্ন বাবা কেন তার মেয়েকে জেনেশুনে একজন অযোগ্য ছেলের হাতে তুলে দেবেন?
কষ্ট হলেও তাকে মেনে নিতেই হবে। তাবলে নিজের ভালবাসাকে বাঁচানোর জন্য শত অন্যায়ের বিষ পান করে চুপচাপ বিবেকের মৃত্যু দেখবে!!....এমনটাও সে পারবে না।
একজন সত্যিকার প্রেমিক হওয়ার আগে সে একজন সত্যিকার মানুষ হতে চাই।
শত অন্যায় চোখের সামনে ঘটতে দেখেও নিজেকে সেসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাটা একজন মানুষের কর্তব্যে পড়েনা।
বিদিশার ড্যাডি একই রকম ফাইলের গোছা নিয়ে বসে রয়েছেন।
আজ আর তাপসের মনে ভয়,সংশয় কোনটাই নেয়।
তিনি ঘাড় নিচু অবস্থাতেই তাপসের উদ্দেশ্যে বললেন,প্রমাণ করতে পেরেছ নিজেকে?
---ইয়েশ স্যার।
---ভেরি গুড।কত ব্যালান্স জমা করেছ?
-----অয়ান থাউজেন্ড এন্ড এইট্টিন রুপিজ অনলি।
তিনি অল্প আওয়াজ করে হেসে উঠলেন,এই দিয়ে দুজনার চলবে?
---আপাতত এটা আপনি আপনার ডোনেট রাশির সাথে জুড়ে নিন স্যার।জীবনের প্রথম ঘাম ঝরার সঞ্চয় রাশি।আমি দান করতে চাই স্যার ।এরপর যদি বিশ্বাস করে বিদিশাকে আমার হাতে তুলে দেন ।আমি কথা দিচ্ছি স্যার,ওকে কোনদিন ভালবাসার অভাব হতে দেব না।সৎ ভাবে উপার্জন করে দুটো পেট চালিয়ে নিতে পারব।
বিদিশার ড্যাডি এবার ফাইলটা তাপসের দিকে বাড়িয়ে বলে উঠলেন,নিচে সাইনটা করে দাও।
তাপস পড়ে দেখল।"সেভেন এঞ্জেল ইন্দো-এশিয়ান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট"এর ওনার কপি।
তাপস অবাক হয়ে জানতে চাইল,আপনার বোধ হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।এখানে আমার সাইন হবে না। ওনারের।যিনি ট্রাস্ট দেখাশুনো করবেন।
----আমাকে দেখে কী তোমার মনে হয়..আমি কোন ভুল করছি?
---কিন্তু...
---আগে সাইনটা করো।পরে কিন্তুটা শুনছি।
সাইন শেষে ফাইলটা টেনে গুটিয়ে রেখে বিদিশার ড্যাডি চোখ থেকে চশ্মাটা গুটিয়ে খাপে ভরে বলে উঠলেন,এসো আমার সঙ্গে ভেতরে।একসাথে বসে একটা মুভি দেখব।
বিদিশা, তার ড্যাডি এবং তাপস পাশাপাশি সোফায় বসে পড়লেন।তাদের সামনে একটা সাদা পর্দা টাঙানো রয়েছে।
বিদিশার হাতে রিমোট।
সুইচ টিপল।
মুভির কটা সিন যেতেই তাপস চমকে উঠল।এতো তার বিগত ছমাসের কার্যকলাপগুলো!!
এ তো সবকিছু তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো!!
সেই পিৎজা সেন্টার থেকে শুরু করে শো রুম...ট্রান্সপোর্ট কম্পানি...ডোর টু ডোর..!!
মুভিটা শেষ হওয়ার পর বিদিশার ড্যাডি বলে উঠলেন,বিদিশা একদিন আমায় বলেছিল, তুমি অত্যন্ত সৎ ছেলে তাই তোমাকেই সে বিয়ে করবে।
আমি তার কথামত তোমাকে পরীক্ষা করতে চেয়ে ছিলাম। তুমি সত্যি সত্যিই সৎ কিনা জানার জন্য। তাই ইংল্যান্ড যাওয়ার নাটকটা করতে হয়েছিল।
আসলে আমার লোকজনই তোমার সামনে ওই অভিনয়গুলো আমার কথা মত করেছিল। আর আমার লোকই ঘটনাগুলো আড়ালে থেকে স্যুট করেছিল।
হয়ত ভাবতে পারো।স্যুটিং তোলার কী দরকার ছিল?
আমি বলছি।দরকার ছিল। কারণ আজকালকার যুগে এরকম একটা ছেলে পৃথিবীতে আজো বেঁচে আছে।এটা আমি এবং বিদিশা মানলেও চ্যারিটির অন্যান্য সদস্যগণ সেটা মানতে চাইতেন না। মুভিটা তারাও লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করে অবাক হয়ে গেছেন। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই চ্যারিটি চালানোর জন্য আমরা সবাই একজন সৎ এবং উদ্যোমী ছেলেকে খুঁজছিলাম।একসঙ্গে দুটো কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে,ভাবিনি।
তাপস উঠে এসে বিদিশার ড্যাডিকে প্রনাম করে বলে উঠল,আপনি আমাকে নিজের কাছে জিতিয়ে দিলেন স্যার।
আমি তো ভেবে ছিলাম।আমার সততা বোধহয় আমার সবথেকে বড় দুর্বলতা।
আজ মনে হচ্ছে।কথাটা মিথ্যে ।সত্যের জয় সব সময় হয়।শুধু তার উপর ধৈর্য এবং বিশ্বাস অটুট রাখতে হয়।
-------সমাপ্ত------