STORYMIRROR

Nurul Islam

Abstract Classics Fantasy

3  

Nurul Islam

Abstract Classics Fantasy

নারীর সার্থকতা

নারীর সার্থকতা

3 mins
4

খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন যেদিন আড়াল থেকে শ্বশুরকে বলতে শুনেছিলাম,

"কী এক বৌমা আনলাম, না আছে রুপ না আছে গুন 

আর না আছে বংশ মর্যাদা"।

আরও কষ্ট পাচ্ছিলাম যখন শুনলাম আমার শ্বাশুড়ি ভাশুর আর ভাশুরের বউ ও শ্বশুর এর সাথে সুর মেলাচ্ছিল।

নিজেকে তখন ঐ পরিবেশে বড্ড বেমানান আর অসহায় লাগছিল।

ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছিলো কিন্তু প্রকাশ করলাম না। 

আমার জা আমার থেকে সুন্দরী আর বয়স কম এই নিয়ে শ্বাশুড়ির অভিযোগের শেষ ছিল না।

আমি তানিয়া।

এমবিএ পড়ছি।

বয়স ২৫।

তানিমকে ভালোবেসে ছিলাম ঠিকই কিন্তু বিয়ে করেছিলাম দুই পরিবারের সম্মতিতে। 

তানিমের পরিবার প্রথমে রাজী না হলেও পরে রাজী হন।

কিন্তু বিয়ের পর থেকেই কারণে অকারণে তুচ্ছ বিষয় নিয়েও কথা শুনাতে ছাড় দিত না।

তাদের অভিযোগ গুলো ছিল এমন যে আমি বড় বউ এর মতন দুধে আলতা নই।

আমার বয়স বড় বউ এর চেয়ে ৫ বছর বেশি।

আমার বাবার অনেক টাকা নাই।

আর তার চেয়েও বড় কথা আমি আর তানিম সমবয়সী।

যেখানে তানিম আর আমার কোনো সমস্যা ছিল না সেখানে পুরো পরিবার আমার বিরুদ্ধে। 

তানিম আর আমার বোঝাপড়াটা বেশ ছিল।

সে কখনোই আমাকে অবহেলা করেনি। 

যতটা ভালো বিয়ের আগে বাসতো তার চেয়ে আরও অনেক বেশি এখন বাসে।

আমার শত কষ্ট আমি ভুলে যেতাম তানিমকে আকড়ে ধরে।

যতদিন যাচ্ছিল ততই তাদের কথা শুনানোর মাত্রা বেড়েই যাচ্ছিল।

আমি কখনই তানিমকে এসব জানাতাম না, আমি চাইতাম না তাকে মেন্টালি প্রেশার দিতে।

নিজের মধ্যেই চেপে রাখতাম।

কখনোই আলাদা হবার কথাও বলতাম না।

অনেক চেষ্টা করতাম সবার মন জয় করার।

আমার চেয়ে ছোট হওয়া স্বত্বেও জা এর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য তার সব কাজও আমি করে দিতাম।

বন্ধু হতে চাইতাম কিন্তু পারছিলাম না।

প্রতিনিয়ত শুনতে হতো তানিম আরও ভালো মেয়ে ডিজার্ব করে।

শ্বাশুড়ি আর জা এক হয়ে আমাকে প্রতি নিয়ত কষ্ট দিত।

পরিবার নিয়ে কথা শুনাতো।

বাবা মা বেড়াতে আসলে তাদেরকেও ছাড় দিত না।

তানিমের রোজগার কম বলেও কথা শুনাতো।

বড় ছেলে আর তার বউ কে নিয়ে তার গর্বের সীমা ছিল না।

মুখ থুবরে কাঁদতাম।

আল্লাহকে ডাকতাম।

এরই মধ্যে এমবিএ শেষ করে

তানিম আর আমি জব এপ্লাই শুরু করলাম।

তানিমের একটি বেসরকারি কোম্পানীতে ভালো পদে চাকরী হলেও আমার হচ্ছিল না।

হতাশ হই নি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।

জবের কথা শুনেই সবার মাথা গরম, ঘরের বউ বাইরে চাকরি করলে ছেলেকে টাইম দিতে পারবেনা।

চাকরী ওয়ালা মেয়েদের সংসার টিকেনা।

আল্লাহর রহমতে আমার একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকরী হয়। 

আমি আর তানিম আলাদা বাসা নিয়ে ঢাকায় অফিসের পাশেই ভাড়া থাকতে শুরু করলাম।

নিজেদের মত করে সংসার শুরু করলাম। 

দুজনই দুজনের বাবা মায়ের খরচ স্বরুপ সাধ্যমত টাকা পাঠাতাম।

এরই মধ্যে ঘর আলো করে আমার সন্তান রিয়াম জন্মালো।

আমার শ্বশুড় বাড়ির কেউ দেখতে এলো না।

আমি নিজে ছেলেকে নিয়ে তার দাদা দাদীকে দেখালাম।

সেদিন ও তারা কথা শুনাতে ছাড়ল না।

বলল চাকরী ওয়ালা মেয়েরা কখনোই ভালো মা হতে পারে না।

কষ্ট পেয়েছিলাম কিন্তু উত্তর দেইনি। 

বেয়াদবি করিনি।

তানিমকে তার পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনে কখনোই বাধা দেইনি।

বরং নিজ থেকে তাদের সকল অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করতাম।

কিন্তু পারিনি।

না আমি পারিনি সংসার জীবনের ২৫ টি বছর পাড় করেও আমি ভালো বৌ মা হতে পারিনি।

তবে হ্যা ভালো মা হতে পেরেছি।

আমার ছেলে আজ দশ জনের একজন।

একজন ক্যাপ্টেন এর মা হতে পেরে আমি গর্বিত।

হুম চাইলেই সেদিন শ্বাশুড়িকে বলতে পারতাম,

আপনার বড় ছেলের বউ হয়তো দেখতেই সুন্দর কিন্তু তার যোগ্যতা কি?

তার নিজের কোনো পরিচয় আছে?

গ্রজুয়েশন আছে?

ভালো পজিশন ভালো চাকরি কি আছে?

তার সন্তানেরা কি মানুষ হতে পেরেছে?

ভালো বিবেক কি তার আছে?

বাবার পরিচয় বাবার টাকায় গর্বের কিছু নেই।

হয়ত ভালো বৌ মা হতে পারিনি।

কিন্তু দিনশেষে ভালো স্ত্রী

আদর্শ মা হতে পেরেছি।

এটাই হয়ত আমার নারী জীবনের সার্থকতা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract