Baishakhir Golpo

Tragedy Classics Inspirational

4.5  

Baishakhir Golpo

Tragedy Classics Inspirational

না ফেরার দেশে অমলকান্তি

না ফেরার দেশে অমলকান্তি

3 mins
443


ভাবছি আজ একবার আমার সেই বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে যাবো।গত 2 বছর ওর সাথে যোগাযোগ নেই।অতিমারীর পরিস্থিতি র জন্য আর পাঁচ জনের মত আমিও কান্ত।কত   

সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে।

না!!আর ভাববো না।আজ বেরিয়েই পড়ি।

ট্রেনে উঠে,সিটে বসে খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে মন কে ভাসিয়ে সেই অতীতের স্বাদ আস্বাদনে মত্ত উন্মুক্ত মন......

সেই কোন ছেলেবেলার কথা...

আমার একেবারে ছোট্টবেলার আরেক বন্ধু ছিল। নাম অমলকান্তি। অমলকান্তি খুব ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখত। যা নাকি জাম আর জামরুলের পাতায় একটুখানি হাসির মতো লেগে থাকে। রোজ দেরি করে ক্লাসে আসত, পড়া পারত না, শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকত, যা দেখে ভারি কষ্ট হত আমার। আমরা মোটামুটি এখন সবাই প্রায় প্রতিষ্ঠিত। এক অমলকান্তি ছাড়া।

সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।না অমলকান্তির কবি হয়ে ওঠা হয়নি। হওয়া সম্ভবও ছিল না। অমল বারো ক্লাস পেরানোর আগেই বাবা সংসারের দায়িত্ব দিয়ে মুক্তি নিলেন। ছোট ছোট দুই বোন, বারোমাসি অসুখে ভোগা মা, তার সঙ্গে মানসিক বিকারগ্রস্থ এক দাদা। সব মিলিয়ে এক অস্বাভাবিক সংসারের জোয়ার এসে পড়ল অমলের ওপর। অমল মাস মাইনের চাকরি খুঁজতে খুঁজতে হিসেব নিকেশের খাতা লেখার কাজে যোগ দিল এক পোশাকের দোকানে ।চাকরি পাওয়ার পাঁচদিনের মাথায় চাকরি গেল। হিসেবের খাতায় অমল লিখেছিল, ‘’কখন বয়স গড়ায় কে জানে। বিকেল চুঁইয়ে সন্ধে নামে জীবনের নিয়মে।‘’ পত্রপাঠ অমলের বিদায় ঘোষণা করেছিলেন দোকানের মালিক। তারপর এগলি, ওগলি পেরিয়ে শেষমেশ অন্ধকার ছাপাখানা। ওর শ্রমিক হাতের দিয়ে ছেপে বেরোয় অনেক কবিতা, প্রবন্ধ, দিনবদলের স্বপ্ন, সেসব গন্ধ ওই ছাপাখানার মধ্যে থেকেই যতটা পারে অমল শুষে নেয়। কিন্তু অমলের কবিতা অন্ধকার ছাপাখানা কাড়তে পারেনি। হাজারো দারিদ্র কাড়তে পারেনি। অমল আজও কবিতা লেখে। এই অস্থির সময়ের কবিতা।ছাপাখানার অন্ধকার জগতের কবিতা। বাস্তবকে নগ্ন করে কাব্যিক ছলনায়। বয়স গড়িয়েছে অমলের। আর বিয়ে করে ওঠা হয়নি। সমাজ সংসারের দায়িত্ব সামলাতে সামলাতেই সময় কাবার। অমলকান্তি এখনও পেয়ারাতলার গলিতেই থাকে। লোহার গরাদে দেওয়া একতলা ঘর পথের ধারেই। নোনা ধরা দেওয়ালেতে মাঝে মাঝে ধ্বসে গেছে বালি, মাঝে মাঝে স্যাঁতাপড়া দাগ। ওর সঙ্গে আর একটা জীব থাকে একভাড়াতেই। সেটা টিকিটিকি। পাঁচশ টাকার ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে দুহাজার টাকা ।তবু আজও অমল বা লড়াই করছে, লড়াই করছে তাদের ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নকে জোড়া লাগানোর জন্য ।।

জীর্ণ ভাঙ্গা বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াই। আশেপাশের লোকজন আমাকে দেখে থমকে আছে। কৌতুক সরিয়ে তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন.." কাউকে খুঁজছেন??"

আমি বলি.." আগে হ্যাঁ এটা অমলকান্তির বাড়ি ও কোথায় আছে??"

যে কজন দাঁড়িয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা হতাশার ছাপ। তাদের মধ্যে একজন বয়স্ক লোক বলেন

" ও বুঝি আপনার বন্ধু ছিল!!"

জানিনা আমার কেমন যেন মনের কু ডাকছিল। কয়েক সেকেন্ড পর বললাম.. "আজ্ঞে হ্যাঁ ছোটবেলার বন্ধু!"

লোকটি জিজ্ঞাসা সূচক উক্তিতে আমাকে বলেন

" বিগত দুই বছর যাবত বন্ধু সহিত বোধহয় কোন যোগাযোগ নেই!! থাকলে এখানে আর খুঁজতে আসতেন না!"

ভয় এবং আশঙ্কায় আমি জিজ্ঞাসা করি "কি হয়েছে বলুন তো??"...

"ছোট থেকে যে ছেলেটা রোদ্দুর হতে চাইত..... গতবছরের ধরে তার সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। পরিবারের কেউ ই জীবিত নেই!! ওই জীবিত ছিল। বুড়ো অশ্বত্থ গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে অমলকান্তি রোদ্দুর হয়েছে।".....

লোকটির কথা শুনে চোখ থেকে দুফোঁটা জল বেরিয়ে এলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলাম.....

ঝুপ করে আঁধার নেমে এল, আঁধার যখন আসে এমন করেই আসে। অমলকান্তি রোদ্দুর অবশেষে গোধূলির শেষ অস্তমিত রাগে মিশে গেলো চিরদিনের জন্য।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy