STORYMIRROR

RAKHAL DAS

Horror

4  

RAKHAL DAS

Horror

মৃত্যুর প্ল্যাটফর্ম

মৃত্যুর প্ল্যাটফর্ম

3 mins
461

শিরোনাম 

অধ্যায় ১: প্রাচীন রেলস্টেশনের আহ্বান


রাতের গভীরে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ঝিরঝির বাতাস বইছে। আকাশে মেঘ জমে গেছে, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। একদল তরুণ-তরুণী - অর্ঘ্য,অয়ন , শুভ এবং বিকাশ - একটি পুরনো রেলস্টেশন সম্পর্কে জানতে বেরিয়েছে। এই স্টেশনটির নাম "অন্ধকারপুর স্টেশন।"

অন্ধকারপুর স্টেশন বহু বছর ধরে বন্ধ। কথিত আছে, এখানে রাতে ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়, কিন্তু কোনো ট্রেন আসে না। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, এই স্টেশনে যে কেউ রাত কাটাতে যায়, সে আর ফিরে আসে না।


"ভূতপ্রেত বলে কিছু নেই," অর্ঘ্য বলল। "এটা নিশ্চয়ই গুজব।" অয়ন একটু ভীত হলেও বিকাশ আর শুভ উত্তেজিত। তারা ঠিক করে, এক রাত ওই স্টেশনে কাটাবে।


অধ্যায় ২: রেলস্টেশনের প্রথম রাত


রাতের ১১টা। তারা স্টেশনে পৌঁছে দেখে, জায়গাটা যেন একটা ভূতের আস্তানা। প্ল্যাটফর্মের চারদিকে গাছপালায় মোড়ানো, পুরনো বিল্ডিংয়ের জানালাগুলো ভাঙা। স্টেশনের নাম লেখা সাইনবোর্ডটি ঝুলে আছে, যেন কয়েক মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে।


চারপাশে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। প্ল্যাটফর্মের ঠিক মাঝখানে একটি ভাঙা বেঞ্চ। অর্ঘ্য ক্যামেরা বের করে ছবিগুলো তুলতে শুরু করল। কিন্তু ছবি তোলার সময় তার মনে হল, কেউ যেন দূরে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।


অয়ন বলল, "এটা ঠিক বোধ হচ্ছে না। আমরা কি ফিরে যাবো?"

বিকাশ হেসে বলল, "তুই তো সবসময় ভয় পাস। একটু অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ কর।"


কিছুক্ষণ পর রাত আরও গভীর হয়ে এলো। চারজন মিলে স্টেশনের অপেক্ষমান ঘরে ঢুকল। ঘরটি যেন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়নি। দেয়ালের ফাটল থেকে শিকড় গজিয়েছে। হঠাৎ প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ শোনা গেল।


অধ্যায় ৩: অদ্ভুত ট্রেনের আগমন


শুভ বলল, "ট্রেনের হুইসেল? এখানে তো কোনো ট্রেন আসে না!"

প্ল্যাটফর্মে বেরিয়ে তারা দেখে, স্টেশনের দূরে এক আলো জ্বলছে। সেটা ক্রমশ কাছে আসছে। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, ধোঁয়া ছাড়তে থাকা একটি পুরনো বাষ্পচালিত ট্রেন স্টেশনে থেমে গেল।


তারা হতবাক হয়ে ট্রেনটির দিকে তাকিয়ে থাকে। ট্রেনের গায়ে লেখা: "মৃত্যুর যাত্রী"। ট্রেন থেকে একটি বৃদ্ধ কন্ডাক্টর নেমে এসে বলল, "যাত্রী আছো কি? উঠে পড়ো, রাত প্রায় শেষ।"


তাদের কারও গা শিউরে ওঠে। অয়ন চিৎকার করে বলল, "না, আমরা যাব না!" কিন্তু অর্ঘ্য আর বিকাশ , কৌতূহলবশত, ট্রেনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। শুভ এবং অয়ন ও তাদের বাধা দিতে চেষ্টা করে, কিন্তু ট্রেনের দরজা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।


অধ্যায় ৪: ট্রেনের অভিশপ্ত যাত্রা


ট্রেনের ভেতরটা অন্ধকার এবং ঠান্ডা। চারপাশে বসার সিটগুলোতে ধুলো জমে আছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর, তারা দেখতে পায়, ট্রেনের আসনে কিছু ছায়ামূর্তি বসে আছে। তাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না, শুধু কালো হুডের নিচ থেকে লালচে চোখ জ্বলজ্বল করছে।


একটি মূর্তি মৃদু গলায় বলল, "তোমরা এখানে এসেছো কেন? তোমরা জানো না, এই ট্রেন থেকে কেউ ফিরে যেতে পারে না।"


অর্ঘ্য সাহস করে বলল, "তোমরা কারা? এটা কী ধরনের জায়গা?"

মূর্তিটি বলল, "আমরা সেইসব আত্মা, যারা এই স্টেশনে অভিশপ্ত হয়েছি। এখানে যাত্রা শুরু করলে আর ফিরে যাওয়া যায় না।"

হঠাৎ ট্রেনের ভেতর লাইট জ্বলে ওঠে। তারা দেখতে পায়, ট্রেনের প্রতিটি আসনে রক্তমাখা মৃতদেহ বসে আছে।


অধ্যায় ৫: পালানোর চেষ্টা


বিকাশ আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে। "আমরা এখানে থাকব না! দরজা খোলো!"

কিন্তু দরজা আর খুলছে না। ট্রেন চলতে শুরু করে। ট্রেনের জানালা দিয়ে তারা দেখতে পায়, বাইরে অদ্ভুত সব দৃশ্য। মনে হয়, তারা কোনো অতিপ্রাকৃত জগতে ঢুকে পড়েছে।


শুভ ট্রেনের কেবিনে গিয়ে দেখতে পায়, ট্রেন চালকের কোনো শরীর নেই। কেবল একটি কঙ্কাল ট্রেন চালাচ্ছে।


অয়ন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, "আমরা এখানে মারা যাবো!"

অর্ঘ্য বলল, "না, আমাদের একটা পথ বের করতেই হবে।"

অধ্যায় ৬: চূড়ান্ত মুখোমুখি


ট্রেন হঠাৎ একটি অন্ধকার টানেলের মধ্যে থেমে যায়। কন্ডাক্টর এসে বলে, "তোমাদের সময় শেষ। এবার নেমে যাও।"


তারা টানেলে নেমে দেখে, সেখানে একটি বিশাল দরজা। দরজার ওপারে শোনা যায় করুণ চিৎকার এবং কান্নার আওয়াজ।


বিকাশ বলে, "এটা যেন নরক! আমরা এখানে এসেছি কেন?"

অর্ঘ্য দরজা খুলতে গেলে দরজা থেকে একটি কালো ছায়া বেরিয়ে এসে তাদের গ্রাস করার চেষ্টা করে।


শুভ পেছন থেকে একটি ভাঙা লোহার রড তুলে ছায়াটিকে আঘাত করে। দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়, এবং তারা টানেল দিয়ে দৌড়ে ট্রেনের দিকে ফিরে আসে।


অধ্যায় ৭: স্টেশনে ফিরে আসা


তারা ট্রেনে ফিরে এসে দরজা খুলে স্টেশনে নেমে পড়ে। কিন্তু স্টেশনে নেমে তারা দেখতে পায়, চারপাশে কোনও কিছু নেই। প্ল্যাটফর্ম ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।


অয়ন কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আমরা কি আর কখনো বাঁচব না?"

কন্ডাক্টরের ছায়ামূর্তি দূর থেকে বলল, "এই ট্রেন এবং এই স্টেশন তোমাদের কাছে ফিরে আসবে, যতবারই পালানোর চেষ্টা করো না কেন।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror