৷৷ সন্ধায় চায়ের দোকানে ।।
৷৷ সন্ধায় চায়ের দোকানে ।।
রোজকার মতোই আমি বেরিয়েছি মিন্টুদার দোকানে আড্ডা দিতে। দুপরের বৃষ্টিটা হওয়াতেই সন্ধার আবহাওয়ার সাথে গরম গরম চা ও পকরা খাওয়ার জন্য মিন্টুদার দোকানে এসে দেখি আমার দুই অপদার্থ বন্ধু বসে ভালোই আড্ডা দিচ্ছে।
আমাকে দেখে হারু বলে উঠলো--
হারু:-কিরে অয়ন তোর এত দেরি হল যে?
অয়ন :- আর বলিস না ভাই! আজকে দুপুরে আমার বাড়িতে খাসির মাংস হয়েছিল সেই মাংস খেয়ে, যে মজার ঘুম হয়েছে তা তোকে আর কিভাবে বোঝাবো।
অমিত :-বাহ ভালোই তো হয়েছে তুই ওদিকে মটনের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছিস আর আমরা এখানে না খেয়ে বসে আছি।
অয়ন হেসে বলল ---
অয়ন:- আরে না আজকে যে দুপুরে বৃষ্টিটা হয়েছিল তারই জন্য বাবা বাজার থেকে মটন নিয়েছিলেন তাই একটু খেয়ে দিলাম আর কি।
হারু :- ঠিক আছে তুই যখন আজকে মটন খেয়েছিস তাহলে আমাদেরও তোকে মটন পাঠিয়ে দিতে হবে।
অয়ন :- হ্যাঁ দিতে পারি কিন্তু আমার এটা শর্ত আছে।
অমিত :- কিসের শর্ত?
অয়ন :- আমরা একটা গেম খেলব।
হারু :- কি গেম?
অয়ন :- আরে আমার পুরো কথাটা শেষ হতে দে! কথা বলার মাঝখানে কথা বললে ভারী বিরক্ত করে।
আমাদের গ্রামের দক্ষিণ-পূর্বের কোনে যে ঘাটটি আছে, ওই শ্মশান ঘাটে থাকা একটি অসস্থ গাছ আছে, যে ওই গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙে আনবে তাকাই আমি মটন পার্টি দেব।
অমিত চমকে বলল - কি কি আরেকবার বল, তোর মাথা পাগল হয়ে গেছে বোধ হয়, ওই শ্মশান ঘাটে রাতের বেলা যে গেছে সে আর কোনদিন ফিরে আসেনি আর তুই বলছিস ওই শ্মশান ঘাটে গিয়ে একটা ডাল ভেঙে আনতে,
আমার মটন খাওয়া তাহলে আর হবে না, তুই ভাই হারু ভাবি আমি কিন্তু যাবো না।
হারু উৎসাহী হয়ে বলল :- তাতে কি হয়েছে একটা বুদ্ধি এসেছে,
রাতে একা গেলে অসুবিধা হবে তাই আমরা দুজন একসঙ্গে যাব।
অয়ন বলল - উুঁ..হু! ওটা বললে হবে না যদি যাবি তোরা দুজন আলাদা আলাদা যা।
হারু বলল- কেন হবেনা, আমরা দুজন একসঙ্গে যাব আর একসঙ্গেই মটন পার্টি খাবো।
অমিত হারুর দিকে তাকিয়ে বলল -কেন ভাই তুই এত পাগলামি করছিস, আমার মটন খাওয়ার দরকার নেই চল পয়সা দিয়ে দুজন মটন কিনে খেয়ে খেয়ে নোব।
মটনের জন্য অকালে কেন প্রাণ হারাবো?
অয়ন :- ভাই তাহলে তোরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বল তোরা কি করবি ,
মটন পার্টি যদি নিতে চাস তাহলে তোদেরকে এই গেমটা খেলতে হবে।
না হলে ভাই মটন পার্টির কথা ভুলে যা।
হারু বলল -আমি আর অমিত দুজনই ওই গাছের ডাল ভেঙ্গে এনে কাল সন্ধ্যায় এখানে দেখা হবে,
আর অয়ন তুই মটন পার্টি দেওয়ার জন্য তৈরি থাকিস।
অমিত আমতা আমতা হয়ে হারুর কোথায় রাজি হয়ে গেল।
ওই রাতে অমিত আর হারু দুজন বেরিয়ে পড়ল ওই শ্মশান ঘাটের উদ্দেশ্যে।
অন্ধকারের রাত চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার একে অপরের মুখ দ
েখা যাচ্ছে না।
মাঝেমধ্যে শিয়ালের ডাক দুজনের গাছ ছমছমি করে দিচ্ছে।
অমিত ভয়ে ভয়ে বলল -
এএএ ভাই হারু দু চার পিস মটনের জন্য আজকে বোধহয় আমাদের দুজনের প্রাণ হারাতে হবে, আর আমার যদি কিছু হয় তাহলে দেখিস ভূত হয়ে আমি তোর প্রাণটা নিয়ে নেব।
হারু অমিতকে সাহস দিয়ে বলল -
আরে ভাই তুই এত চাপ নিচ্ছিস কেন আমি তো আছি।
অমিত বলল -
হ্যাঁ, তুই তো আছিস কিন্তু সেটাই বড় ভয়য়ের কথা। এই শ্মশানে তুই নিজের প্রাণ কিভাবে বাঁচাইবি চিন্তাভাবনা নেই, আর তুই কিনা আমার প্রাণ বাঁচাবি।
এভাবে তারা কথা বলতে বলতে শ্মশানের সামনে এসে পৌঁছায়।
ওই শ্মশানের চারিদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকার মানুষের কোন চিহ্নমাত্রই নেই, মাঝেমধ্যে ভয়ানক শিয়ালের ডাক আর জিঞ্জি পোকার ডাক আমাদেরকে আরো ভয়াবহিত করে দিচ্ছে।
অন্ধকারের ভিতরে ওই অসস্থ গাছটিকে খুঁজতে আমরা শ্মশানের ভিতরে প্রবেশ করলাম।
শ্মশানের ভিতরে চারিদিকে উঁচু উঁচু সমাধি আর মানুষের কঙ্কালগুলি এদিক ওদিক পড়ে আছে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা ওই অসস্থ গাছের নিচে এসে পৌঁছালো।
দিনের বেলা চেয়ে রাতের বেলা ওই অসস্থ গাছটিকে আরো ভয়ানক লাগছিল।
অমিত বলল :-ভাই হারু আমার কিন্তু খুব ভয় লাগছে। এখনো সময় আছে চল ফিরে যাই।
হারু :-তুই যে এত ভীতু আমি আগে জানলে তোকে নিয়ে আসতাম না।
তুই নিচে দাঁড়া আমি ডাল ভেজে আনছি। যত্তসব ভীতু কোথাকার।
এই বলে হারু গাছের কাছে যেতে হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়ার ঝোকা তাদেরকে কাঁপিয়ে দিল।
তারপর হঠাৎ একটা কঙ্কালের হাত হারুর গলা টিপে ধরার চেষ্টা করে।
অমিত বলে -ভাই হারু তো তো তোর পেছনে ওটা কি? যেন মনে হচ্ছে একটা কঙ্কালের হাত।
হারু পিছন ফিরে তাকাতে কঙ্কালটি তার গলা টিপে ধরে।
কঙ্কালটি বিকট হাঁসিতে হাসতে হাসতে বলে...................................
তোরা আমার এখানে.....
বিকট হাঁসি...................
আজ তোদের শেষ দিন।
তেদের হাড় মাংস আজ আমি চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো।
বিকট হাঁসি...................
অমিত এসব দৃশ্য দেখে ওখানে অজ্ঞান হয়ে যায়।
কিন্তু হারু প্রানপন চেষ্টা করে ওই কঙ্কালের হাত থেকে বাঁচার জন্য,
বাঁচও বাঁচও আমায় মেরেফেলল
অবশেষে হারু ও অজ্ঞান হয়ে পড়লো।
বিকট হাঁসি.....................
পরের দিন সকালে হারু ও অমিতের জ্ঞান ফিরে দেখে ওরা অয়নের বাড়িতে বিছানায় শুয়ে আছে।
অয়ন বললো- ভাগ্যিস আমি গ্রামবাসী দের নিয়ে তোদের পিছনে গিয়েছিলাম তা না হলে তোদের যে কি অবস্তা হতো.......
অয়ন হঁসে বললে - ওসব কথা থাক চল মটন রান্না হয়েছে, খেতে খেতে তোদের কালকের রাতের কথা শুনবো।
.....................................................................