মরমিয়া
মরমিয়া
গাড়িটা থামল।
আজ তো তাড়াতাড়ি আসার কথা ছিল?
টলমল করতে করতে মাদকাসক্ত শরীরটা বেডরুমের বিছানায় আশ্রয় নিল।
প্রথম বিবাহবার্ষিকী!
ছিঃ! তুমি এসবও খাও। এতদিন শুধু জানতাম সিগারেটের ধোঁয়াটাই উড়িয়ে দাও।
বাবা মা আজ জানলে কত কষ্ট পাবেন, জানো সেটা তুমি।
সারাদিনের এতো অপেক্ষা, ধৈর্য্য সব এভাবে অবহেলিত!
আচ্ছা আমাদের এই দিনটা এত মূল্যহীন করে দেওয়ার আগে একবারও ভাবলে না তুমি?
কতটা ভালোবেসে আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম, সম্পর্কটাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম, তোমাকে প্রতিপদে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম।
আর তুমি?
ঘুমিয়ে পড়েছে বিধ্বস্ত শরীরটা। বুকপকেটে উঁকি দিচ্ছে 'কাজটা তো আর নেই!'
দরজাটা বন্ধ করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে থাকা এক বছরের নববধূ...
অভিমানের পারদ যখন সিক্ত হয় নোনাজলে;
চোখধাঁধানো ফ্ল্যাটের দেয়াল চালাঘরের গল্প বলে।
সকল আবদার আবার বন্ধ থাকে ঠোঁটের সিন্দুকে;
সূর্য উঠলেই সবাই সভ্য! নইলে যে গল্প হবে নিন্দুকে।
মিলিয়ে গেল রাতের তারা জড়িয়ে ধরে জ্যোৎস্নাকে;
লড়াইয়ের শুরু নতুন ভোরে পোষ মানিয়ে বর্ষাকে।
শুকিয়ে গেলে কান্নার রং ধারণ করো আমায় আবার ঠোঁটে;
ঝলমলে এই বাহারি রাত হানল আঘাত ক্রাইসিসের চোটে।
ঝাপসা কাঁচের হাইওয়েতে ছুটে চলা শহরে রেশমের ঢেউ;
একঝাঁক রোদ্দুর ছাড়া মধ্যবিত্তের আপন কি হয়েছে কেউ?
একটা কথা কি জানো তো প্রিয়তমা; যে বসন্তের ভোরে তোমাকে মিষ্টি সুরে ডাকে কোকিলের কুহুতান, কিংবা অষ্টমীর সকালের উষ্ণ রোদে তুমি মেলে ধরো হলুদ শাড়ির আঁচল, যখন লাল আবীরমাখা গালে প্রিয়জন স্পর্শ করে তার গাল, যখন ভিজে জামায় কেউ দরখাস্ত নিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে একটা চেয়ার না হোক্―টুলের খোঁজে, যখন দু-চারটে ছোটো আলাপ প্রিন্সেপ ঘাটে এক পৃথিবী পরিকল্পনা করছে, যখন একটা বাচ্চা ছেলে ভ্যালেন্টাইন ডে তে এক ঠোঙা মুড়ির লাঞ্চ জোগাড়ে সারাশহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভালোবাসা বেচবে বলে...
ঠিক তখনই, হ্যাঁ তখনই মনিকর্ণিকার ঘাটে আরেকটা চিতা জ্বলে উঠল। একটা দিনের কাঁটা ছ'টার ঘর ছুঁল। ভোরের শীতল ফুরফুরে বাতাস পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল।