Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

মনের টানে

মনের টানে

3 mins
3.2K


- বড়বাবা তুমি কোথায় যাচ্ছ?

- গ্রামে যাচ্ছি বাবা। তোমার বড়মা তো এবার আমার সঙ্গে আসেনি তাই তার জন্য মনটা কেমন করছে।

- তাহলে এবার যখন আসবে বড়মাকে নিয়ে আসবে, একা একদম আসবেনা কিন্তু।

- আমি কি আর আসতে পারবো বাবা!

**********

সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া মঙ্কু এখনও ঠিক করে দিনক্ষণের হিসেব রাখতে শেখেনি তবুও তার মনে হয় বেশ অনেকগুলো দিন কেটে যাচ্ছে কিন্তু বড়বাবা আসছেনা। মন খারাপ হয় তার। মায়ের কাছে সে নিয়ে অনুযোগ জানাতে যেতেই মায়ের মুখটা থমথমে হয়ে যায়, বলে বড়বাবার নাকি খুব শরীর খারাপ। তবে শিগগির তিনি আসবেন শীতটা পড়লেই। একথা শুনে মঙ্কুর আনন্দ তো আর ধরে না, সে রোজ সকাল হলেই খোঁজ নেয় শীতের ছুটি পড়ল নাকি! শীতকালেই তো আবার তার হ্যাপি বাড্ডে, সবাই বলে প্রভু যীশুর যেদিন হ্যাপি বাড্ডে সেদিনই নাকি মঙ্কুরও হ্যাপি বাড্ডে। তাই শীতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে সে, ভাবে শীতের ছুটিতে তবে দারুণ কিছু হতে চলেছে। এর মাঝেই আবার কখনও সখনও বড়বাবার ঘরে ঢুকে সে তাঁর খাটে লাফালাফি করে, আলনায় ঝোলানো বড়বাবার পাঞ্জাবিটা টানাটানি করে গন্ধ নিতে চায় মানুষটার।

সব অপেক্ষার মাঝেই আচমকা একদিন ঘুম থেকে উঠে মঙ্কু আবিষ্কার করে দাদাই আর দিদুন বাড়িতে নেই। মা বলে ওরা গেছেন বড়বাবার কাছে অর্থাৎ মঙ্কুর মায়ের দেশের বাড়ি। দাদাই দিদুনের এই হঠাৎ করে যাওয়ায় একটু অভিমান হয় মঙ্কুর, ভাবে তাকেও তো সঙ্গে নিয়ে যেতে পারতো। পরক্ষণেই মাথায় আসে হয়তো দাদাই আর দিদুন বড়বাবাকে আনতে গেছে। কথাটা মনে হতেই আনন্দে নেচে ওঠে সে, মাসিমণির কাছে গিয়ে আব্দার করে কোকো সন্দেশ বানিয়ে দেওয়ার জন্য। ওর মাথার চুলগুলো ঘেঁটে গিয়ে মাসিমণি সত্যি সত্যিই লেগে পড়ে সন্দেশ বানাতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কাজু আর কিশমিশটা দিয়ে যখন মাসিমণি সন্দেশটা সাজাতে ব্যস্ত ঠিক তখনই আচমকা ফোনটা বেজে ওঠে। রান্না ছেড়ে মা গিয়ে ফোনটা তোলে, অপর প্রান্ত থেকে শুধু ভেসে আসে। মায়ের হাত থেকে ফোনটা স্লিপ করে পড়ে… মায়ের দিকে তাকানো মাত্রই সন্দেশ ছেড়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে মাসিমণিও…

**********

শব্দটা আগে কয়েকবার শুনলেও মঙ্কু বোঝেনা “মারা যাওয়া” ঠিক কাকে বলে, সে শুধু টের পায় ওটা খুব খারাপ কোনো ব্যাপার হবে। সেদিন বাবা আর স্কুল যায়নি। বাবা আর মাসিমণি অনেক ধূপ আর ফুল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কোথায় যেন। বাবার হাতে ফুলগুলো দেখে মঙ্কু প্রথমে ভেবেছিল ওগুলো বুঝি নতুন ফুলের গাছ, বাবা বাগানে লাগাবে বলে কিনে আনলো কিন্তু তার বদলে ওরা ওগুলো নিয়ে চলে যায় কোথাও। আর ওরা বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই মা আলমারি থেকে বড়বাবার ছবিটা পেড়ে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে। আজ যেন মাকে কাঁদতে দেখে অন্যসময়ের মত চুপ করাতে যেতেও ভুলে যায় মঙ্কু, তার ভেতরেও যেন কেমন একটা উথালপাথাল শুরু হয়। নিঃশব্দে তার চোখ বেয়েও বৃষ্টি নামে, বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে সে।

দুপুরে ঘুম আসেনি ওর, শেষ বিকেলে তাই বড় সোফাটার মাথায় চড়ে বসে মঙ্কু, ওখানটায় বসলে সোজাসুজি রাস্তাটা দেখা যায়। ওখানে বসেই মঙ্কু এতদিন সবার আগে বড়বাবার আসার কথা টের পেয়ে যেতো। আজ চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে উঠেছে তার। বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি বড়বাবা এলো কিন্তু বড়বাবা তো আসেনা! তারপর হঠাৎ করেই আচমকা যেন কোথার থেকে একটা রুপোলি আলোর ঝলকানি এসে লাগে চোখে। এই আলোটা তো মঙ্কু চেনে, বড়বাবার লাঠি দুটোয় রোদ পড়লে মাঝেমাঝে এমন করেই তো ঝিকমিক করে উঠতো তারা। চোখদুটো কচলে রাস্তার দিকে তাকায় মঙ্কু। দেখে বড়বাবা দাঁড়িয়ে, হাসছেন তার দিকে চেয়ে। বড়বাবার গা থেকে এক অদ্ভুত দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। বড়বাবা হাতদুটো তোলেন ওপরের দিকে। মঙ্কু চিৎকার করে ওঠে, “বড়বাবা… ও বড়বাবা…”

মঙ্কুর মা চমকে ছুটে আসে ওর কাছে, মঙ্কু দেখে বড়বাবার শরীরটা আস্তে আস্তে আলো হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশে। মা যখন মঙ্কুর কাছে এসে পৌঁছায় ততক্ষণে কেউ কোত্থাও নেই। সে আস্তে আস্তে ঘুরে তাকায় তার মায়ের দিকে, তারপর তার নরম তুলতুলে হাতদুটো দিয়ে মায়ের চোখের জল মুছিয়ে বলে, “কেঁদোনা মাম্মাম, তোমার দাদু মারা যায়নি, আমার বড়বাবা কোথাও যায়নি। বড়বাবা তো স্টার হয়ে গেছে। এবার থেকে দেখবে রোজ আমরা দেখতে পাবো তাকে…”

শেষ।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sayandipa সায়নদীপা

Similar bengali story from Drama