Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Debdutta Banerjee

Drama

4  

Debdutta Banerjee

Drama

মায়ে-পোয়ে

মায়ে-পোয়ে

5 mins
1.6K


প্রচন্ড গরমের পর সন্ধ‍্যায় যখন বেশ উথাল পাথাল হাওয়া বইতে শুরু করেছিল দুষ্টুর মনে হয়েছিল আজ ঠিক বৃষ্টি হবে। গরমের ছুটিতে প্রতিবারের মত এবারও হোষ্টেল থেকে মামাবাড়ি এসেছে ও। মা বাবাকে মনে পড়ে না তেমন ওর। ছোটবেলা একটা দূর্ঘটনা ওর মা বাবাকে কেড়ে নিয়েছিল। তারপর থেকে মামাই ওর মা বাবা সব। উত্তরবঙ্গের চালসা বলে একটা ছোট্ট টাউন, তারপাশেই একটা ছোট্ট ছবির মত সুন্দর চা বাগানের ম‍্যানেজার ওর মামা। প্রতি তিন বছর পর পর বাগান বদলায় মামা। তাই ও হোষ্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। এই বাগানটায় মামা গত বছর এসেছে বদলি হয়ে। ওদের কাঠের দোতলা বাংলোর পেছনের বারান্দাটায় দাঁড়ালেই চোখে পড়ে কুর্তি নদী। ছোট বড় মাঝারি পাথরের ফাঁক দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে এক স্বচ্ছ জলধারা, পায়ের পাতা ভেজা জল, কোথাও বা হাঁটু ডোবে। জলের থেকে বেশি বালি আর বোল্ডার। মাঝ বরাবর চড়া, সেখানে বুনো কুলের ঝোপ। শীতকালে লাল লাল বুনো কুলে সেজে উঠেছিল ওই ঝোপগুলো। শীতের ছুটিতে এসে দুষ্টু ঐ কুল খেয়েছিল প্রচুর।বাংলোর হাতায় সবুজ কার্পেটের মত লন। নানারকম ফুলের গাছ, পেছনে সবজির ক্ষেত। কত রকম ফলের গাছ। সকাল সন্ধ‍্যায় নাম না জানা পাখির দল এসে ভিড় জমায়। দুষ্টুর এসব দেখেই সময় কেটে যায়। 

তবে সন্ধ‍্যার পর এ বাগানে খুব চিতা বাঘের উপদ্রপ হয়। হাঁস, মুর্গি, গরু, ছাগল হামেশাই টেনে নিয়ে যায় তারা। মাঝে মাঝে ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের পাতা ফাঁদে ধরাও পড়ে। গত বার দু দিন বাঘ দেখেছিল দুষ্টু। খাঁচার মধ‍্যে কি তার হুংকার। হাতি তো পিছনের বারান্দায় সন্ধ‍্যার পর বসলে প্রায়ই দেখা যায়। কুর্তি নদী পার করে হাতির দল যাতায়াত করে, ওটাই নাকি ওদের যাতায়াতের রাস্তা। হাতিদের করিডোর বলে মামা। 

মামার বাংলোয় যে মালি দাদা কাজ করে তার সঙ্গে বেশ ভাব হয়েছে দুষ্টুর।

রাত নটা থেকেই শুরু হল ঝড় বৃষ্টি। বিদ‍্যুতের চমকে আকাশটা চিড়ে যাচ্ছিল মাঝে মাঝেই। কয়েকটা গাছ ভেঙ্গে পড়ার আওয়াজ ভেসে আসছিল। খাওয়ার পর দোতলার টিনের চালের ঘরে শুয়ে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শুনতে বেশ লাগছিল দুষ্টুর। 


ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠা ওর বরাবরের অভ‍্যাস। পিছনের বারান্দায় গিয়ে ও অবাক। চারদিক লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে রাতের তাণ্ডবে। কুর্তির জল বেড়ে গেছে বহুগুন। বড় পাথর গুলোর উপর দিয়ে হু হু করে বইছে ঘোলা জল। মাঝের চড়াটার বেশিরভাগ জলের নিচে। ঝোপগুলোর মাথা আর বালির ছোট্ট ঢিপি জেগে রয়েছে শুধু।  

মামা ভোরেই রাউন্ডে বেরিয়ে গেছেন। বেশ কিছু শেড-ট্রি ভেঙ্গে পড়েছে। কুলি বস্তিতে কুর্তির জল ঢুকেছে নাকি ভোর রাতে।

রোজ সকালেই একবার নদীর ধারে হেঁঁটে আসে দুষ্টু । আজ জল বেড়ে গেছে দেখে আর নিচে নদীর কাছে নামেনি ও। বাংলোর থেকে দু টো ধাপ নেমে দেখছিল শান্ত কুর্তির ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপ।

 কিন্তু ওটা কি? মাঝ নদীতে চড়ের মধ‍্যে একটা কিছু নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে যেন। ধুসর রঙের হাতির ছানা মনে হচ্ছে তো একটা!! ভালো করে তাকিয়ে কুর্তির অপর পারে গাছের আড়ালে বড় হাতিটাকে দেখতে পায় দুষ্টু। ওটা বোধহয় মা। ঈশ। ছানাটা মাঝখানে এলো কি করে ? এত জলে পার ও তো হতে পারবে না। 

মালিদাদাকে ডেকে ছানাটাকে দেখায় দুষ্টু।মালি দাদা ভালো করে লক্ষ‍্য করে বলে -'' বোধহয় নদী পার হচ্ছিল। হঠাৎ বৃষ্টিতে জল বেড়ে গেছে বলে ওখানে আটকে গেছে। মা টা ছানাকে ফেলে যেতে পারেনি। ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ''

-''এখন উপায় ?'' দুষ্টুর দু চোখে উদ্বেগ। 


-''জল কমতে সময় লাগবে। পাহাড়ে বৃষ্টি না কমলে জল কমবে না। ছানাটা ভয় পেয়েছে। খুব ছোট বাচ্চা। '' মালি দাদা কথা বলতে বলতে নদীর কাছে চলে আসে। 

আজ নদীর জল মাটি গোলা খাকি রঙের, যে নদী দুষ্টু রোজ পার হতো আজ সে ফুঁসছে আক্রোশে। 

দুষ্টু জানে এ নদীতে এত পাথর রয়েছে যে সাঁতার ও কাটা যাবে না। অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। 

-'' কিন্তু একটু পরেই চা পাতি তোলা শুরু হবে। ওপারেও লেবাররাও পাতি তুলবে। বড় হাতিটাকে দেখলেই খোঁচাবে ওরা। হাতিটাও ক্ষেপে যাবে। বিপদ আসতেই পারে। '' মালিদাদা বলে। 

-'' বাচ্চাটাকে না নিয়ে মা হাতিটা যাবে না। কিছু কি করা যায়?'' দুষ্টু প্রশ্ন করে। 

-''বাবুকে ফোন করলে বাবু ফরেষ্ট অফিসে খবর দেবে। ওরা এসে ব‍্যবস্থা নেবে। কিন্তু সময় লাগবে।আর জলে ভরা কুর্তিতে ওরাও কিছু করতে পারবে না। '' কথা বলতে বলতেই মালি দাদার চোখ ঘুরছে চারপাশে। কাল ঝড়ে দুটো বড় গাছ ভেঙ্গেছে বাংলোর ভেতর, পাঁচটা সুপুরি গাছ গোড়া থেকেই ভেঙ্গে পড়েছে। সেগুলোই মালি আর দারোয়ান কেটে পরিস্কার করছিল সকালে। 

হঠাৎ সুপুরি গাছগুলো দেখে দুষ্টু লাফিয়ে ওঠে। বলে -''মালিদাদা এই গুড়িগুলো যদি ঐ চড়ে নেওয়া যেত আর ঐ ধারে নদীর ওপর ফেলে দিতাম ওগুলোর উপর দিয়ে কি ছানাটা পার হতে পারত ? ''

মালি দাদা বলে -'' এদিকটায় জল কম, বোল্ডারে পা দিয়ে আমি পৌঁছে যাবো ঐ চড়ায়। কিন্তু ওদিকের ধারাটা ছোট হলেও স্রোত বেশি এবং গভীর। তাই মা হাতিটাও আসতে পারছে না। আর আমি ওকে পার করাতে গেলে যদি মা হাতিটা ক্ষেপে যায় ? ''


ততক্ষণে দারোয়ান বাবুর্চি আরে দুজন কাজের লোক চলে এসেছে ব‍্যপারটা ঠিক কি দেখতে। সবাই মিলে আলোচনা করে অবশেষে সেটাই ঠিক হলো। নদীর জলের উপর দিয়ে প্রথমে দু জন মাঝের চড়ায় চলে গেলো। এরপর গুড়িগুলোকে নেওয়া হল। তারপর ওধারে নদী যেখানে সরু ও স্রোতটা একটু কম সেখানে গুড়িগুলো পেতে দেওয়া হল। ছানাটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে জুল জুল চোখে সবটা দেখেছিল। এগোচ্ছিল না।

 কিন্তু ওদের অবাক করে ঐ সুপুরি গাছ শুঁঁড় দিয়ে ধরে মা হাতিটাই জলে নেমে এলো। 

ওরা তাড়াতাড়ি দূরে সরে গেলো। মা টা চড়ায় আসতেই ছানাটা ছুটে গিয়ে মায়ের পেটের নিচে ঢুকে গেলো। মা ওকে সুপুরি গাছের গুড়ির উপর ঠেলে তুলে দিল। তারপর জলে নেমে শুঁঁড় দিয়ে ঠেলে ঠেলে নিয়ে গেল ও পারে। কয়েকটা সেকেন্ড দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছিল দুষ্টু। ওরা ও পারে পৌঁছতেই দুষ্টু হাততালি দিয়ে উঠল। হাতিটা একবার ওদের দিকে ঘুরে তাকালো, ওর চোখে কৃতজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। তারপর ঢুকে পড়ল গাছের আড়ালে। বাচ্চাটাও মায়ের পেটের নিচে ঢুকে গুটি গুটি এগিয়ে গেলো। 

আজ অনেকদিন।পর নিজের মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল দুষ্টুর। ও জানে মা কে হারানোর ব‍্যাথা। তাইতো এভাবে ছানাটাকে মায়ের কাছে পৌঁছে দিল ও। বাংলোয় পৌঁছে আরেকবার ও পারে তাকালো। বহুদূরে চা বাগানের ফাঁকে এক মা তার সন্তান পেয়ে খুশি মনে এগিয়ে চলেছে। 



Rate this content
Log in

More bengali story from Debdutta Banerjee

Similar bengali story from Drama