Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Mitali Chakraborty

Romance Classics Inspirational

3  

Mitali Chakraborty

Romance Classics Inspirational

মাল্টিটাস্কার:-

মাল্টিটাস্কার:-

5 mins
424


অনেকক্ষন হলো আবার একটি কর্মব্যস্ত দিনের সূচনা হয়ে গেছে। তাথৈ আর অর্ণব তখনও ঘুমে। ঊর্মি সকালে উঠে ফুল গাছে জল দেয়, খবরের কাগজে একটু চোখ বোলায়, তাথৈর স্কুলের ব্যাগটা রেডী করে নিয়ে ঘুমন্ত বাবা মেয়েকে ডাক দেয় উঠে পড়ার জন্য। তারা উঠে গেলে ঊর্মি ঢোকে বাথরুমে। স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে আবার কর্মকাণ্ডে যোগদানের জন্য যেতে হবে যে সকলকে। 

সসপ্যানে চায়ের জল বসিয়ে ময়দার তাল থেকে একটু একটু করে লেচি কেটে লুচি বেলছে সে। বেলে নিয়ে গরম তেলে দিতেই লুচি ভাজা শুরু হয়ে গিয়ে লুচিটা ফুলে একদম বলের আকার ধারণ করলো। পাশে দাঁড়ানো তাথৈ ফুলকো লুচির দেখে আনন্দে মাতোয়ারা। 

হাততালি দিতে দিতে বলছে, "কি সুন্দর গোলু গোলু লুচি। আমি খাবো বাপি আমি খাবো, আরেকটা লুচি ভেজে দাও...."। মেয়ের আনন্দ দেখে অর্ণব ভীষণ আপ্লুত। তার মুখে তৃপ্তির হাসি। তাথৈ তখনও উৎসুক হয়ে আছে লুচি ভাজা দেখতে, কিন্তু ঊর্মি ততক্ষনে স্নান পুজো সেরে এসে তাথৈকে লুচি বেগুনি খাইয়ে তৈরী করতে লাগলো স্কুলে পাঠাবার জন্য। 

***************

তাথৈকে স্কুলে রওনা করিয়ে দিয়ে ঊর্মি আর অর্ণব দু-কাপ চা আর লুচি বেগুনী নিয়ে বসলো। চা তে চুমুক দিয়েই ঊর্মি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলছে, "তুমি এতোটা সাহায্য না করলে আমি একা সবকিছু সামলাতে পারতামনা অর্ণব...."।

অর্ণব আলতো করে ঊর্মির হাতটা ছুঁয়ে বললো, "তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো ঊর্মি, আমি ভাবতাম ঘরসংসারের কাজ করা, রান্নাবান্না করা শুধুমাত্র মেয়েদের কর্ম। বাট আই ওয়াজ রং। অল ক্রেডিট গোজ্ টো ইউ মায় ডিয়ার, আচ্ছা আমি ঝটপট তৈরী হয়ে আসি ঊর্মি। তুমি ব্রেকফাস্ট করে নাও। তারপর একসাথে বেরোনো যাবে..."। 

***************

অর্ণব খাওয়া সেরে উঠে গেলে পরে ঊর্মি হারিয়ে যায় স্মৃতির অতলে। তখন সদ্যমাত্র বিয়ে হয়ে অর্ণবের বাড়িতে পদার্পণ ঊর্মির। বিয়ের বেশ কিছুদিন ঝড়ের বেগে কেটে গেলে পরে ঊর্মি লক্ষ্য করলো অর্ণবের সাংসারিক কোনো কাজেই মন নেই। স্নান করে ভেজা তোয়ালেটা খাটে ফেলে রাখা, নিজের ঘড়ি, ওয়ালেট, মোবাইল কিছুই খুঁজে না পাওয়া। অফিস যাওয়ার সময় তাড়া দেওয়া জলখাবারের জন্য। জুতো-মোজা এখানে সেখানে ফেলে রাখা। কোনো কাজে কোনো শ্রী ছিল না অর্ণবের। ঊর্মি এহেন অর্ণবের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিলনা। ঊর্মি বুঝতে পারছিল যে অর্ণব প্রচন্ড খামখেয়ালি আর সংসার সম্বন্ধে উদাসীন। আর তার থেকেও বেশি আশ্চর্যের হলো অর্ণবের বাবা মা কারোর কোনো চিন্তা নেই ছেলের আগোছালো জীবনযাপন করা নিয়ে। তাদের মতে বৌমা ঊর্মি আছে, এখন সেই খেয়াল রাখবে তাদের রাজপুত্রের। 

***************

অর্ণব আর ঊর্মির বিয়ের তখন সবে তিন মাস চলছে। একদিন অফিস থেকে এসে বাড়িতে খবর দিলো যে অফিসে কানাঘুষো চলছে অর্ণবের ট্রান্সফার হয়ে যেতে পারে হয়তো অন্যত্র। ঊর্মির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে তখন। সত্যিই যদি ট্রান্সফার হয়ে যায় তাহলে অন্য জায়গায় গিয়ে এই আগোছালো অর্ণবের খেয়াল রেখে একা আবার নতুন সংসার পাতবে কি করে ঊর্মি? একে তো অর্ণব এতো অলস, তার উপর কুটোটি নাড়তেও অপারগ। এখানে তো শাশুড়িমা আছেন, উনিই বেশির ভাগটা সামলে নেন। কিন্তু ওখানে তো ওনারাও যেতে পারবেন না, অর্ণবের ছোটবোন রয়েছে। কলেজ পড়ছে সে। তাকে ছেড়ে ওনারা বেশিদিনের জন্য ওখানে থাকবেনই বা কিরূপে?

মনেমনে প্রমাদ গুনে ঊর্মি। কায়মনে প্রার্থনা করছিল অর্ণবের ট্রান্সফারটা যেন বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু হায়! সে প্রার্থনা স্বীকার হয়নি ঊর্মির। তল্পিতল্পা গুছিয়ে অর্ণব আর ঊর্মি রওনা হয় সুদূর নয়ডা তে। প্রথম প্রথম ঊর্মি খুব হতাশাগ্রস্ত ছিল নতুন করে সংসার পাতা নিয়ে, একা হাতে সামলাতে হতো তাকে সবটা। হাঁপিয়ে উঠতো সে। অর্ণব বিন্দুমাত্রও সহায়তা করতো না ঘরোয়া কাজগুলোতে। অর্ণবের উপর অভিমান করে ঊর্মিও তাকে কিছু বলা ছেড়ে দিয়েছিল তখন। 

***************

নয়ডা আসার পরে অর্ণব বেরিয়ে যেতো সেই সকালে আর ফিরতো সন্ধ্যে পার হলে। একা ঘরে হাঁপিয়ে উঠতো ঊর্মি। গ্র্যাজুয়েশনের পরে মন্তেসরি টিচার্স ট্রেনিং নিয়েছিল ঊর্মি। অর্ণবের সাথে আলোচনা করে অনলাইনে একটি প্লেস্কুলে বায়োডাটা সহ আবেদন পাঠায় ঊর্মি। বেশ কিছুদিন পর ঊর্মিকে ডাকা হয় ইন্টারিউয়ের জন্য। ইন্টারিউয়ের দুইদিন পরে ঊর্মিকে দেওয়া হয় সুসংবাদ টি। প্লে-স্কুলটিতে শিক্ষিকা হিসেবে চয়নিত হওয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে আগামী সোমবার থেকে স্কুলে জয়েন করার কথা জানানো হয় ঊর্মিকে। ঊর্মি খুব খুশি তখন। 

সেদিন সোমবার। ঊর্মিকে স্কুলের প্রথম দিন নির্ধারিত সময় থেকে বেশ কিছুটা আগে পৌঁছতে হবে তাই সে সকাল সকাল উঠে অর্ণবের জন্য চা জলখাবার করে ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে একটা চিরকুটে লিখে যায় যে 'সে বেরোচ্ছে। অর্ণব যেন চা জলখাবারটা গরম করে নেয়'। 

ঊর্মির চলে যাওয়ার প্রায় একঘণ্টা পরে আলসেমি ছেড়ে বিছানা থেকে ওঠে অর্ণব। ঘুম চোখে বলছে "ঊর্মি আমায় চা টা দাও, আমি ব্রাশ করে নেই। খবরের কাগজ টাও রেখো, আমার শার্টটা ইস্ত্রি করে দিও..."। অর্ণব তখনও ঘুমের ঘোরে। হঠাৎ খেয়াল হলো ঊর্মি কোনো সাড়া দিচ্ছেনা। বেডরুম থেকে বেরিয়ে চিরকুটটা দেখতে পেলো সে। চিরকুটটা পড়ে মনে পড়লো যে আজ থেকে ঊর্মিকে স্কুলে যেতে হবে। পাংশুমুখে ঢেকে রাখা চা'টার তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরো রান্নাঘরের আনাচে কানাচে তাকিয়েও চা জলখাবার গরম করার কোনো বাসন-কোসন নজরে পড়লো না তার, তাই মাথা চুলকে মুখ কাচুমাচু করে বাথরুমে ঢুকে গেলো অর্ণব।

দুপুরে ঊর্মি এসে যখন দেখলো সকালের খাবার যেমন রেখে গেছিলো তেমনি রাখা আছে, তখন একটু করুনা হয়েছিল অর্ণবের জন্য; কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে ঊর্মি ভাবে এটাই মোক্ষম সুযোগ। যদি অর্ণবের মধ্যে নিজের ছোটছোট কাজ আর দায়িত্বগুলো সম্পর্কে সচেতন করতে হয় তাহলে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই অনুরূপ ওইদিন থেকে প্রত্যহ চলতে থাকে এই এক প্রক্রিয়া।

****************

একটা মোক্ষম ফন্দি আঁটে ঊর্মি। রাতের বেলায় অর্ণব অফিস থেকে ফিরলে পর কোনো না কোনো কাজে তার সাহায্য চাইতে শুরু করে ঊর্মি। অর্ণব প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও পরবর্তী সময়ে ঊর্মির সাহচর্যে ছোটছোট কাজে সাহায্য করে আনন্দ পায় সে। তাছাড়া কাজের অজুহাতে তারা একে অপরের সাথে আরো বেশি সময় অতিবাহিত করার সুযোগ পায়।

ধীরে ধীরে অর্ণব বুঝতে পারে স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই সকল কাজ জানা দরকার। তার মনের ভুল ভ্রান্তির কুয়াশা কাটতে থাকে যে ঘর সামলানোর দায় শুধু মহিলাদের। নতুন করে ভাবতে শুরু করে অর্ণব। ঊর্মির ধৈর্য্যের প্রশংসা না করে সে পারেনা। আজকে তার চিন্তাভাবনার এতো পরিবর্তন ঘটেছে ঊর্মির কারণেই। অর্ণব এখন বুঝতে পারে সব কাজেকর্মে নারী-পুরুষ ভেদে সবাই এক। নারীরা ঘরসংসার সামলে যেমন বাইরের জগতে নিজের কাজকর্মের দ্বারা এক ছাপ রেখে যাচ্ছে এক স্বপরিচয় গড়ে তুলছে, পুরুষরাও পারবে বাইরের জগতের সাথে ঘরোয়াকাজ তথা রান্নাবান্না করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে। পুরুষরাও পারবে ঘরের কাজে নিজের পারদর্শিতার ছাপ রেখে যেতে, কারণ দিনের শেষে আমরা সবাই সমান, সবাই সমানাধিকার চাই, তাহলে ঘরের কাজে কর্মে ছেলেদের করার অধিকার থাকেনা কেন?

তাথৈর জন্মের সময় ঊর্মির শ্বশুর শাশুড়ি ঘরের কাজে পটু অর্ণবকে দেখে বিস্মিত হয়ে যান। পরে অবশ্য শাশুড়িমা বুঝতে পারেন এসবটাই তেনার বৌমার কীর্তি। প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন,"আমার খোকন দেখি অনেক কাজ শিখে গেছে, আমি মা হয়ে পারিনি, কিন্তু তুমি করে দেখালে বৌমা। তোমার আর অর্ণবের জন্য গর্ব হয়। চিরসুখী হও তোমরা"। 

***********************

- কই তোমার হলো?

- হ্যাঁ, হয়ে গেছে।

অর্ণবের ডাকে চিন্তায় ছেদ পরে ঊর্মির। 

- চলো বেরিয়ে পরা যাক।

- হ্যাঁ। তাই চলো।

ঊর্মি তখন দরজায় তালা লাগাচ্ছে। উর্মির কাঁধের ব্যাগটা নিলো অর্ণব। ঊর্মি একটু মৃদু আপত্তি করতে অর্ণব হেসে বললো, "আই অ্যাম, অ্যান্ড আই উইল বি অলয়েজ এট ইউর সার্ভিস ম্যাডাম...."।

হেসে ফেললো দুজনেই, হাসতে হাসতে তারা রওনা দিলো গন্তব্যের দিকে....।


Rate this content
Log in

More bengali story from Mitali Chakraborty

Similar bengali story from Romance