Sayandipa সায়নদীপা

Drama Tragedy

4.4  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama Tragedy

মাতৃ দিবসের গল্প

মাতৃ দিবসের গল্প

6 mins
1.6K


আজ মাতৃ দিবস। সকাল থেকে নিউজ ফিড উপচে পড়া ভীড় - হয় মায়ের সাথে সেলফি নয়তো ইমোজি মেশানো ভালো ভালো ভালোবাসার কথা। আমি এ দুটোর কোনোটাই করিনি। বরং সকাল সকাল মায়ের ওপর এক চোট রাগারাগি করেছি কারণ আমার মাথা গরম, উপহার দিইনি কিছু কারণ আমি বেকার, মাকে অবিলম্বে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন জেনেও চুপ করে থেকেছি - কারণ, আমি মায়ের ভালো মেয়ে নই, ছিলামওনা কোনোদিন। আমি স্বার্থপর।

কিন্তু আমার এই স্বার্থপরতার সঙ্গে মিশে আজ আরেকখানি ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। দুপুর আর বিকেলের মাঝামাঝি সময়টাকে ঠিক কি বলে? ওই সময়টাতে বাড়ির কাছাকাছি একটা ফাঁকা মাঠের ধারে দেখলাম একটা তুলোর বল পড়ে থাকতে। লাল পিঁপড়েতে ছেয়ে ছিলো তার চারিধার। অবাক হলাম, সঙ্গে সঙ্গে মিয়াও ডাকটা শুনে সম্বিৎ ফিরল। বুঝলাম ওটা তুলোর বল নয়, একটা কয়েকদিন মাত্র বয়েসের বিড়াল ছানা। কাছে যেতে বুঝলাম রোগ অসুখে নয়, কেউ ওকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরেছে। আর ওই মিয়াও ডাকটা…? ওটা এমনি এমনি ডাক ছিলো না। ওটা ছিলো এক মায়ের করুণ আর্তি। হয়তো আততায়ীর উদ্দেশ্যে একটাই প্রশ্ন করছিল বারবার - “কেন আমার এতো বড় ক্ষতিটা করলে?”

সন্তান হারা সব মায়ের তো এই একই প্রশ্ন থাকে। আজ মাতৃ দিবস। এটা লিখতে লিখতেও আমি শুনতে পাচ্ছি সেই কান্না। তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে সে, হয়তো বলতে চাইছে - “ফিরিয়ে দাও আমার দুধের শিশুটাকে।” 

আততায়ীও হয়তো আজ ফেসবুকে পোস্ট করেছিল সক্কাল সক্কাল - “লাভ ইউ মা।” কিংবা, “আজ মাতৃ দিবসে আমার ছেলের/মেয়ের থেকে পাওয়া উপহার।”

যে কাঁদছে তাকে আমি চিনি। আমি ওকে জন্মাতে দেখেছি এক ঝড় জলের বিকেলে। দেখেছি কিভাবে ওর মা সেই দুর্যোগের হাত থেকে ওকে আগলে রেখেছিল সেই দিন। চোখের সামনে দেখেছি মিনিয়েস্তাকে বড় হতে--- “মিনিয়েস্তা”, মোমো এই নামটাই দিয়েছিল ওকে। মিনিয়েস্তাও আজ মা হয়েছিল, এক প্রচন্ড রোদ গরমের দিনে। কিন্তু মিনিয়েস্তা পারল না ওর সন্তানকে বাঁচাতে। হয়তো ওর মায়ের মতোই প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে মিনিয়েস্তাও হতে পারত এক সফল মা। কিন্তু মিনিয়েস্তার লড়াইটা তো ছিলো বোধহয় প্রকৃতির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম নিকৃষ্ট জীবটার সাথে। তাই হেরে গেলো মিনিয়েস্তা। মিনিয়েস্তা এখনও কেঁদে চলেছে এক নাগাড়ে।


পশুপ্রেমী আমি কোনো কালেই নই। হাসপাতালের বেডে মানুষের বদলে কুকুরকে ঘুমাতে দেওয়া উচিৎ কিংবা হাসপাতালের মেঝেতে শোয়া রোগীকে কুকুর কামড়াতে এলে তাকে তাড়িয়ে না দিয়ে চুমু খাওয়া উচিৎ--- এত প্রেম কোনদিনও আসেনি আমার, ফলে ফেসবুকের নিউজ ফিড থেকেছে শূন্য, তর্কাতর্কি থেকে আমি থেকেছি মুক্ত। রাস্তায় কুকুর কাছে ঘেঁষতে চাইলে তাকে তুতু করে ডেকে বিস্কুট না দিয়ে আমি প্রয়োজনে লাঠি কুড়িয়ে ভয় দেখাই তাকে। পশু পাখিদের প্রতি প্রেম আমার আসেনা। তাও আজ মিনিয়েস্তার কান্নাটা কেন বুকে এতো বাজছে জানিনা, কেন দুপুর থেকে এক মুহূর্তও স্থির হয়ে থাকতে পারিনি জানিনা। মিনিয়েস্তার প্রতি আমার করুণা হচ্ছে? সত্যিই কি আমি ওকে করুণা করার কেউ? ওকে করুণা করার যোগ্য আমি? আমি তো “আমি”... শুধুই “আমি”, আমার সব টুকু শুধু “আমার”। আর তাই তো বোধহয় বুকটা কেঁপে উঠছে ভয়ে, শিউরে উঠছি বারবার…. জানি আমাকে দিয়ে সবাইকে বিচার করলে চলে না। কিন্তু আমি তো একা নই, আমার সাথে দাঁড়িয়ে মিনিয়েস্তার সন্তানের আততায়ী। বিন্দুতে বিন্দুতে সিন্ধুর জন্ম--- আমাদের মত দুজন দুজন যোগ করতে করতে কবে এই স্বার্থপরতা, হিংস্রতার বড় সমুদ্রটা তৈরি হয়ে গেছে কে জানে! এই সমুদ্রেই আবার আমরাই হাবুডুবু খাচ্ছি… আজ তুমি ডুবেছো, কাল আমি ডুববো।


শেষ।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama