Sayantani Samanta

Abstract Drama Tragedy

3  

Sayantani Samanta

Abstract Drama Tragedy

লক্ষ্মী বিসর্জন

লক্ষ্মী বিসর্জন

8 mins
325



আজ জমিদার বাড়ি সেজে উঠেছে নানা ফুলে,সারা বাড়িতে লোক গিজগিজ করছে।কেউ ফুল দিয়ে বাড়ি সাজাতে ব্যাস্ত তো কেউ রান্নার কাজে মন দিয়েছে,আর বাড়ির ছেলেরা তো তাঁদের বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়েতে নিজেদের সব কিছু উজাড় করে দিচ্ছে।এককথায় সারা বাড়িতে সবাই ব্যাস্ত বছর একুশের কলির বিয়ের জন্য।।


রায় বংশের নাম শুনলে কাঁপবে না এমন কোনও জমিদার ডাকাত কেন তখনকার দিনে ব্রিটিশরাও কাঁপতো।।প্রতাপ রায় হলেন রায় বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র,ওনার এক কথায় সারা বাংলার লোক জড়ো হয়ে যেতে পারে।।সেই প্রতাপ রায় আর শ্যামলী দেবীর কন্যা হল কলি।যেমন রূপ তার তেমন দেমাক,,যা একবার মুখ থেকে বেরোয় সেটা তার চাইই চাই।নাহলে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে।।বাড়িতে সমস্ত বৌদের ছেলে হয়েছে।আর কলির ঠাম্মা চাইতেন ওনার এক নাতনি হোক।তাই প্রতাপ বাবুর প্রচেষ্টায় শ্যামলী দেবী আবার গর্ভবতী হন।ভগবানের কৃপায় ওনার ফুটফুটে রূপে সমৃদ্ধা কলির জন্ম কিন্তু গুণে সমৃদ্ধা কিনা.....!


কলি আজ ভারী খুশি ওর আজ বিয়ে।।সারাক্ষন তো বিয়ে বিয়েই করত।তাই বাবা মা উপায় না পেয়ে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওপর অত্যন্ত প্রতাপশালী জমিদার বংশের সাথে।।কলির পাত্রকে একবার দেখেই ভালো লেগে গেছিল কিন্তু পাত্রের পাশে বসা শাঁখা সিঁদুর মাথায় ঘোমটা লাল পেড়ে জাঞ্জিভরম কিন্তু গায়ের বর্ণ শ্যামলা চোখ গুলো ডাগর ডাগর হলেও নাক থ্যাবড়া সামনের দুটো দাঁত উচু আর কপালে কাটা দাগ।।কলির দিকে তাকিয়ে হাসলেন উনি, কলির যেন গা গুলিয়ে উঠলো ওনাকে দেখে।।রূপের তো ছিরি নেই,,,কেন এদেরকে আনে আমার রাজপুত্র?যে ওর পায়ের ধুলো হওয়ার যোগ্যও না।।উফফ এই কালো শ্যাওলার সাথে আমায় থাকতে হবে নাকি?

মনে হাজার প্রশ্ন নিয়ে মা কে জিজ্ঞাসা করতেই জানলো ওটা নাকি ওর রাজপুত্রের বৌ।।দু বছরের চেষ্টাতেও পেটে বাচ্চা আসে নি।।আর বাড়ির অন্য সব বৌদের শুধুই মেয়ে হচ্ছে তাই বৌটার নামের পাশে অলক্ষী অপয়া অভাগী বাঁজা,,আরো নানা অপবাদ লেগেছে।।বাড়ির কেউই ওই কুৎসিত বৌকে এক্কেবারে অপছন্দ করে।তবুও বাড়ির একমাত্র খুঁটি ওই কুৎসিত বৌ! বাড়ির সব কিছু ওই বৌ ছাড়া উদ্ধার হয় না।।।।কলি মনে মনে ভাবলো ,"বিয়েটা করেই ফেলি।এমন বাড়িতে গেলে সবাই কুৎসিত বউয়ের থেকে সুন্দরী বৌকে যে রাজরানী করে রাখবে এটা আমি জানি।আর রাজকুমারী রাজরানীই তো হবে!ওই বৌকে নিজের জায়গা ভালো করে তো বোঝাতে হবে নাকি?ও ছাড়াও যে বাড়ি চলবে এটা ওকে বোঝাতে হবে।।"কলির মুখে অদ্ভুত বিজয়ী অমানুষের হাসির রেখা ফুটে উঠল।।


★★★★★★★★★★

গাঢ় লাল রঙের সোনালী রঙের গুটি দেওয়া শাড়ী  গা ভর্তি সোনার গয়না,এক একটা গয়না বারো ভরির,,,চুলে খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা,,চোখের সামনে পান পাতা নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে এলো প্রিয়ের নতুন বৌ।সত্যিই বৌটাকে দেখতে অসাধারণ।।প্রিয়ের সাথে ভালোই মানাবে,,,প্রিয়ের পাশে তো আমাকে বরাবরই বেমানান লাগে এবার নতুন বৌকে ওর সাথে দারুণ মিল হবে।।ব্রিটিশ বাবুদের তো অন্তত নিজের সুন্দরী বৌকে দেখাতে পারবে! লজ্জায় আমাকে লুকিয়ে রেখে বলতে তো হবে না "বিয়ের ধারে কাছে এখনো যাওয়া হয় নি"!    

প্রিয় হল দাসবাড়ির বর বৌ শকুন্তলার স্বামী।।শকুন্তলা ভালোবেসে প্রিয় নামে একমাত্র ডাকে।।।আসল নাম হল অজয় দাস।।শকুন্তলাকে অজয় যেন দু চোখে হারায়,,আর হবে নাই বা কেন? সেই শৈশব বেলা থেকে যে ওরা প্রেমলীলায় মত্ত।।শকুন্তলার চোখের জল ওর উদাস হয়ে থাকা সহ্য করতে পারে না অজয়।ওর কষ্টে উদাসে অজয়ের বুকে ব্যাথা হয়।যেন নিজেরই কষ্ট হচ্ছে তবে দশ গুণ বেশি।শকুন্তলাও এখনো ভাবে এটা কি স্বপ্ন? সে তো এতো গরিবের দিনে দুবার বা কোনও কোনও দিন একবারও খেতে না পাওয়া অভাগী মেয়ে।যার কপালে নেই সুখ সারাদিন মায়ের কথা বাবার কষ্ট,,না দেখতে পারত না তাই বসে থাকতো ওই নদীর পাড়ে।।তার কিনা এই দাস জমিদার বংশে বিয়ে হয়েছে? অবিশ্বাস্যই লাগছে শকুন্তলার কাছে।।


ওর এ বাড়িতে আসায় কেউই খুশি হয় নি শুধু ওর শ্বশুর মশাই ছাড়া।ওর শ্বশুরমশাই ছিলেন ওর বাবার ছোট বেলার খেলার একমাত্র সঙ্গী।তাই উনি শকুন্তলা কে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন,,,আর ওনার ছেলের শকুন্তলা কে বিয়ে করার প্রস্তাবে এককথায় রাজি হয়ে যান।।যখন শকুন্তলা বাড়ির চৌকাঠ পেরোলো বাড়িতে যেন লক্ষ্মীর আগমন হল।সারা বাড়িতে যেন লক্ষ্মী নিজের আশীর্বাদ ঢেলে দিতে লাগলো।শাশুড়ি মা আর ঠাম্মা থেকে খুড়ি মা সবাই ওকে অপমান করতো কথায় কথায়,,শুধু ওর রূপের জন্যই।ও শুধু একটা উত্তর দিত,"আমাকে তো এই রূপ ভগবান দিয়েছে।তাঁকে গিয়ে অপমান করুন আমাকে কেন করছেন?এতে তো আমার কোনও হাত নেই।"

শকুন্তলার বাড়িতে আগমনের দুদিনের মধ্যেই ওদের পাট ব্যবসায় জোয়ার আসে।ওদের ব্যবসা বাংলায় নাম করতে থাকে।বাড়িতে প্রতিদিন সোনার মোহর আরো কত কিছু আসতে শুরু করে সঙ্গে ব্রিটিশদের আগমন তো লেগে রয়েছেই।।শকুন্তলা পড়াশোনা বেশ ভালোই জানতো।পড়ার ইচ্ছাও ছিল,,কিন্তু টাকার অভাবে পড়তে যেতে পারত না।বাড়ির পাশে থাকা সন্ন্যাসী বাবার কাছ থেকে পড়তো,, তিনি নাকি সন্ন্যাস নেওয়ার আগে খুব বড় শিক্ষক ছিলেন।।শকুন্তলার উদ্যোগে একটা বড় কাপড়ের ব্যবসা আরম্ভ করল দাস বংশ।আর সেখানেও জোয়ার আসতে শুরু করল,,ভাটা আসলো না বললেই চলে।।সব ঠিকঠাকই চল ছিল ,,,বাড়িতে ওর গুনের জন্য ওর কর্ম পরায়তার জন্য অপমান একটু হলেও কমে ছিল।।কিন্তু সেদিন খুড়িমার ছেলে আর তার বৌ যখন কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো তখন ওর শাশুড়ি ওর চুলের মুটি ধরে ঘরে হিরহির করে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বলল,"পোড়ামুখী আমার বংশধর তো আনতে পারলি না।শুধু ব্যাবসার নাম করে বাইরের লোকেদের সাথে ফস্টিনস্টি? বাঁজা কথাকার,,,,বিয়ের তো এতদিন হয়ে গেছে।অলক্ষী আমার ছেলেটাকে তো খেয়েইছিস আর এবার আমাকে আমার নাতির মুখ দেখাবি না বলে ঠিক করেছিস নাকি?"

শকুন্তলা সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,"মা আপনার ছেলেই তো এখন বাচ্চা নিতে চায় না।আমি তো কতবার বলেছি একটা ফুটফুটে সন্তানের জন্য কিন্তু ও বার বার বারণ করতো।।"


তখন উনি ঠাটিয়ে চড় মেরে বলেছিলেন,"আমার ছেলের নামে একটাও বাজে কথা বলবি না পোড়ামুখী।।"


শকুন্তলা সব অপমান মুখ বুজে সহ্য করে নিত।কারণ ও বুঝতে পেরেছিল এ বাড়িতে গুনের কদর খুব কম করে,,রূপের জৌলুস বেশি!



হঠাৎ কলির মায়ের ডাকে শকুন্তলা বাস্তবে এলো,,"কিগো বৌ এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে?যাও যাও তোমার নতুন সখীর যে সিঁদুর দান হবে গিয়ে লজ্জা বস্ত্রটা ধরো।।"

শকুন্তলা হেসে গেল লজ্জাবস্ত্র ধরতে।।কলির ফর্সা মুখে আজ খুশি যেন ধরছে না।।শকুন্তলা ধীরে ধীরে কলির মাথার ওপর লজ্জা বস্ত্র ধরলো।প্রিয় একবার ওর দিকে তাকালো করুন দৃষ্টিতে যে দৃষ্টিতে আজে একরাশ বেদনা কষ্ট,,শকুন্তলা বুঝলো প্রিয় কি বলতে চাইছে,,,ও হেসে বলল,"নাও প্রিয় আমার সখির সিঁথি লাল সিঁদুরে রঙিন করো।।"

প্রিয় সিঁদুর পরিয়ে দিলো,,কলির সারা নাকে সিঁদুরের গুঁড়ো পরে যেন ফর্সা মুখটাকে আরো সুশ্রী করে তুলেছে,,,সাথে এক হাসি খুশি মুখে টপতে লাগলো নোনতা জল।হয়তো কোথাও এই খুশির বাঁশির সাথে বিরহের বাঁশিও বাজলো....!

★★★

কলি আর প্রিয়র বিয়ের এই কটা দিন যেন শকুন্তলার এক অচেনা হাসি মুখে নিয়েই থেকেছে।সেটা বুঝতে পেরে প্রিয় ওর যতই কাছে আসার চেষ্টা করেছে শকুন্তলা এড়িয়ে গেছে অথবা প্রিয়র আবেদন নাকচ করে দিয়েছে।শকুন্তলা যেন একটু একটু করে গুমরে গেছে এই কদিনে যার কারণ প্রিয় ভালো মতোই বুঝতে পারছে।কিন্তু ওর কি করণীয় আছে এখানে? সে শুধু মাটির পুতুল,,মা ঠাম্মা আর শেষে শকুন্তলার কথায় এই বিয়েতেই তো জোর করে রাজি হল।কলিকে ও সুখ দিতে পারবে না কখনোই ,,,সেটা মানসিক হোক বা শারীরিক।।



কলি এই বাড়িতে যেন রাজরানি হয়ে থাকছে।সব কাজ বাড়ির কাজের লোক করে দিয়ে যায়।শুধু একটা কাজই কলির ইচ্ছায় শকুন্তলা করে।নিত্যদিন পায়ে আলতা পড়ানো।।প্রিয় বারবার এই কাজে বাধা দিতে গেলে কলি গর্জে ওঠে,"অত দরদ দেখানোর কি আছে?শুধু তো আলাতাই পরাচ্ছে।আর তো কিছুই করছে না।।আর যা হচ্ছে শকুন্তলার ইচ্ছা তেই হচ্ছে।তাই বাধা দিতে একদম আসবে না।।"

প্রিয় কিছু বলতে পারে না শকুন্তলার অনেক ভাষা লোকানো হাসি দেখে।।যেন এই হাসিই কোনও বড় বিপদ ঘটাতে সক্ষম।।



ধীরে ধীরে শকুন্তলা যেন আরো চুপ হয়ে যেতে লাগলো।বাড়ির লোকের অপমান কলির নির্যাতন ব্যাবসার কাজ আর ওর প্রিয়ের থেকে দূরে থাকা যেন ওকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিতে লাগলো।।ঠিক যেমন মোমবাতি আগুনের তাপে ধীরে ধীরে গলে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।।মনের মানুষ দূরে থাকলে যে কত কথা চেপে রাখতে হয় বুকে,,কত কান্না রাগ ক্ষোভ জমিয়ে রাখতে হয় সেটা শকুন্তলা ভালো বুঝতে পারছে।।রোজ রাতে তো শুধু প্রিয়ের বুকে মাথা দিয়ে শান্তির নিরাপদ আশ্রয় পেতে চায়,,নিজের শরীরকে প্রিয়ের মধ্যে বিলীন করতে চায় কিন্তু কলিই তো আসতে দেয় না ওর প্রিয়কে।।শকুন্তলার কথা আর কেউ শোনার নেই এই তিমিরে.......

★★★★★

শকুন্তলার আজ খুব খুশির দিন ওর বোন কলির চাঁদপানা ছেলে হয়েছে।সারা বাড়ি খুশিতে গমগম করছে,,সবাই এসে কলির ফর্সা নাড়ু গোপালের মতো ছেলেকে আদর করছে।।শকুন্তলার কাধেই সব দায়িত্ব পরেছে,,বাচ্চার দেখাশোনা থেকে আত্মীয়দের আপ্যায়ন বাড়ির লোকেদের খেয়াল সব....ও যেন দশভুজার মতো সব দিক সামলাচ্ছে।।


কলি আজ রাজরানির মতো গয়না শাড়ী পরে ওর গোপালকে নিয়ে বসে আছে।।সব আত্মীয়রা ওর শাশুড়িকে বলছে,"ভাগ্য করে বউ পেয়েছ বিয়ের এক বছরের মধ্যেই মা হল।।কি রূপবতী গো তোমার ছোট বৌ।কিন্তু ওই বড় বৌ কি কুৎসিত আর বিয়ের দু বছর হয়ে গেল তবুও মা হতে পারল না।ছি এই বৌ তো পরিবারের কলঙ্ক।।"


শাশুড়ি মুখ বাকিয়ে বলেন," যা বলেছ নেহাতই আমার বাবুর ভালোবাসা।নাহলে ওই বৌকে কবেই বিদায় করতাম।।"


হয়তো কথা গুলো ওনারা একটু জোরেই বলেছিলেন কিন্তু বোঝেন নি এটাও কেউ শুনতে পারে।পারে না কোনও নারীর অবহেলিত মনই শুনেছে এই সমস্ত কথা।।


শকুন্তলা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়া আচল নিয়ে দৌড়ে ঘরের দিকে যাবে তখনই কোনো বলিষ্ঠ পুরুষ হাত ওকে টেনে একটা থামে আড়াল করে দাঁড়াল।।

শকুন্তলা কাঁদতে কাঁদতে হালকা আবছা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখল ওর পরম পুজনীয় স্বামী প্ৰিয় যে আজকাল তার কাছে আসতে চাইলেই কলি টেনে নিয়ে চলে যায়।।

প্রিয় বলল,"আজকের দিনে তো তোমার খুশি থাকার কথা কাদছ কেন?"


শকুন্তলা কিছু না বলে প্ৰিয়র বুকে মুখ গুঁজে বলল,"কেউ আমাকে ভালোবাসা তো দূর সম্মানটুকুও করে না।আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।এখন আবার তুমিও আমার কাছে আসছো না।তুমি জানো না রাত্রে তোমার বুকে মাথা দিয়ে না ঘুমালে আমার ক্লান্তি কখনওই যাবে না।আমার মন যে শুধু তোমার জন্যই সারাক্ষণ বিক্ষিপ্ত।।"


প্রিয় হাত দিয়ে শকুন্তলার চোখের নোনতা জলে ভেজা চিবুক তুলে বলল,"এখন তো এসেছি?আর কেঁদো না আজকের দিনে তোমার চোখে কান্নার জল না খুশির আনন্দের জল থাকার কথা।।"


শকুন্তলা কান্না থামিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।প্রিয়ও

নিজের একমাত্র প্রেমিকাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে শত চুম্বনে ভরিয়ে দিলো।।।তখনই প্রিয় শকুন্তলাকে ছেড়ে ছিটকে গেল।।শকুন্তলা তাকিয়ে দেখল ওর শাশুড়ি খুড়শাশুড়ি ঠাম্মা আরো অনেক বয়স্ক লোকজন আর কলি রক্তবর্ণ চোখে গোপালকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।।


শাশুড়ি শকুন্তলার চুলের মুঠি ধরে থামে কয়েকবার মাথা জোরে ঠুকে দিলো,,,প্রিয় বাধা দিতে গেলে ওর ঠাম্মি আর কলি ঢালের মতো দাঁড়িয়ে পড়ল।।

শকুন্তলাকে চড় মারা থেকে যা নয় তাই করে মারল।।

শকুন্তলা সব মুখ বুজে সহ্য করেই গেল।।

শাশুড়ি রেগে বললেন,"কাঙালের জাত আমার ছেলের মাথা তো পুরোই খেয়ে ফেলেছিস।আবার এখন পীড়িত করতে এসেছিস? একেই তো বাঁজা!"


শেষে আর পারল না বলেই ফেলল,"কি দোষ করেছি আমি মা?এভাবে মারছেন কেন!আপনার বাড়ির বৌ হয়ে এসেছি বলে এটাই আমার দোষ?আমি কুৎসিত বলে এটাই আমার দোষ ? এতে তো আমার কিছুই করার নেই?সব ভগবানই বানিয়েছে।।তাহলে আমাকে দোষারোপ করছেন কেন? আর আপনার ছেলে আমার স্বামী,,তার মাথা অন্তত আমি খাব না।। আর আমি বাঁজা এতেও আমার দোষ নেই,,ভগবান আমায় সেই ভাগ্য দেননি।।তাই আমাকে দোষ করে করে কোনও লাভ নেই।।"


কলি গোপালকে ওর শাশুড়ির কোলে দিয়ে শকুন্তলার সামনে এসে নিজের জামদানি শাড়ীর আচল দুই হাত ধরে পেতে বলল,"আমাকে আমার সংসার স্বামী সামলাতে দাও।তোমার কোনও দরকার নেই সংসারে,,,এই সংসার আমার স্বামী আমি নিজেই সামলাতে পারবো।নিজের তো পোড়া কপাল তাই মা হওয়ার সুখ ও পেতে পারলে না।।তাই দয়া করে নিজের এই কালো ছায়া আমার সংসারে রেখো না।চলে যাও এই বাড়ি থেকে আর এসো না।পারলে মরে গিয়ে প্রায়িশ্চত্ত করো।।"


প্রিয় আর পারলো না কলির পাশে এসে দাঁড়িয়ে চোখের কোনে জল নিয়েই বলল,"চলে যাও,,থেকো না এই সংসারে।নিজের ছায়া আর এই বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে।।"


শকুন্তলার কানে যেন এই কথা গুলো বিষের মতো ভেদ করে হৃদয়ে গিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিলো।ওর চোখের সামনে যেন সব কালো অন্ধকার দেখল,,নিজের স্বামীর জন্য এতো কিছু সহ্য করেই রয়ে গেল এই সংসারে।কিন্তু শেষে কি পেল সেই অবহেলা সেই মনের মানুষের কাছেই অপমান।।

শকুন্তলা না পারল না এক ছুটে বেরিয়ে গেল লুটিয়ে পড়া আচলে খোলা এলোমেলো চুল নিয়ে ওর হাতে বানানো তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসারকে ছেড়ে ।।

বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে বেরিয়ে গেল ওই দূর রূপনারায়ণ নদীর কাছে,,,যেই নদী এখন জোয়ারের জলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে,,যার স্রোতের টানে অনেক কিছুই ভেসে চলে যাচ্ছে তীব্র বেগে,,,সেই স্রোতেই হয়তো মিশে যাবে এক অন্য নারীর অধ্যায়।যেই অধ্যায় কখনও পূর্ণ হবে না...ওই স্রোতের সাথেই ভেসে চলে যাবে অন্য কোনও অধ্যায়ের খোঁজে.


পৃথিবীর বুক থেকে বিসর্জন হল লক্ষ্মীর ওই রূপনারায়ণ নদীর বুকে



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract