লকডাউনের দিনগুলি(24)
লকডাউনের দিনগুলি(24)


সবেমাত্র প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় সেমিস্টারে ওঠার পর থেকেই যেন গণিতটা বোঝার মতো লাগছিল, যেন মনে হচ্ছিল বিশাল পরিমাণ বোঝা হঠাৎই কেউ যেন চাপিয়ে দিয়েছে মাথার উপর। সেই ছোটো ক্লাস ওয়ান, টু থেকে শুরু করে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত প্রতিটি ফাইনাল পরীক্ষার শেষে অন্তত একটি মাস ছুটি পেতাম। কিন্তু এবারও ছুটি ছিল, তবে মাত্র তিনদিন। তাই পুরানো অভ্যাসগুলো এই রদবদল মেনে নিতে পারছিল না। প্রথম সেমিস্টারের অতিরিক্ত সিলেবাস শেষ করার পর আবার আরও একটা দৈত্যাকার সিলেবাস যেন বিপদের ঘন্টার মতো চোখের সামনে বেজে চলেছিল। সেই যে পরীক্ষার শেষে গল্পের বই পড়া, একটু ক্রিকেট খেলা বন্ধুদের সাথে, সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরোনো আরও কত কি, কিন্তু এবার যেন কিছুই সম্ভব হয়েছিল না।যেন একঘেয়েমির ছলে কাটতে লাগল দিনগুলো। স্বভাবতই কিছুদিন ছুটি পাওয়ার জন্য মন উদগ্রীব হয়ে রইল।
এমন সময় একদিন হঠাৎই শুনলাম 'লকডাউন'। তবে লকডাউনটা যে কি তখনও ঠিক জানতাম না,তবে করোনার কথা অল্প অল্প শুনেছি। যেটা শুরু হয়েছিল মার্চ মাসের ২৫ তারিখে।আপাতত ২০-২১ দিন মতো ছুটি পাওয়া যাবে ভেবে তো আনন্দ আর ধরে না। কলেজ বন্ধ পাশাপাশি টিউশনও বন্ধ, একেবারে সম্পূর্ণ ছুটি।যেমনটা আগে পেতাম প্রতিটা পরীক্ষার শেষে। প্রথম কিছুদিন তো বেশ করে ঘুমিয়ে নিলাম।তবে আগে একটু সুযোগ হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম, কিন্তু এবার তা সম্ভব হল না। কেননা লকডাউন চলছিল।একটু দুঃখ পেলাম বটে, কিন্তু মেনে নিলাম। একটু বেলা পর্যন্তই ঘুমিয়ে থাকতাম। কিছুটা সময় খাওয়া-স্নানের পেছনে কেটে যেত। সময় থাকলে ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতাম।তবে সিনেমা দেখতে খুবই পছন্দ করতাম,বিশেষত মিঠুন চক্রবর্তীর হিন্দি সিনেমাগুলো। তবে হিন্দি লেখাটা মূল উদ্দেশ্য ছিল।বিকেলবেলা শরীরচর্চা করতাম।কখনো দিদি,বোন আরও কয়েক-জন বাচ্চাদের নিয়ে ছোটবেলার মতো লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠতাম,কখনো আবার লুডো খেলার ধুম পড়ে যেত। সন্ধ্যা হলেই বসতাম গল্পের বই নিয়ে, কখনো আবার একটু-আধটু নিজেই লিখে ফেলতাম। "উহান", "করোনা", " দেবতা" "ঝরাপাতা ", " অতৃপ্তি " ইত্যাদি নানা কবিতা রচনা করেছিলাম যেগুলো স্টোরি মিরর এর পেজে দিয়েছিলাম এবং কবিতাগুলো যে ভালো লেগেছে অনেক পাঠকের,এমন মন্তব্যও তারা করতেন। এরই মাঝে হিন্দি ভাষা লেখা আয়ত্ত করে ফেললাম। এভাবেই দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনও অতিবাহিত হয়ে গেল।যে যে ইচ্ছাগুলো অপূর্ণ ছিল সবই প্রায় একে একে পূরণ হল।
তৃতীয় পর্যায়ে লকডাউন শুরু হলে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করতাম। স্যাররা অনলাইন পড়ানো শুরু করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। পরীক্ষার সময়ও চলে এসেছে, অথচ অনেকটা সিলেবাসও বাকি রয়েছে। চিন্তা যেন আরও বেড়ে গেল আগের থেকে। অন্যদিকে নিউজ চ্যানেলে আগে শুনতাম আমেরিকা, ইটালির কথা।আর এখন ভারতেরও একই পরিস্থিতি। তারপর একদিন আমাদের শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের খবর কানে এল। সব মিলিয়ে এখন এক ভয়াবহ অবস্থা। তবে এরই মাঝে একটি খুশির খবর ছিল যে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে না। একটু স্বস্তি পেলাম।
একটু ছুটি হয়তো চেয়েছিলাম ঈশ্বরের কাছে। কিন্তুকরোনা বা লকডাউন চাইনি কখনো। খুব একাকী লাগেএখন। কলেজে যেতে খুব ইচ্ছা হয়, বন্ধুদের সাথে একসাথে বসে ক্লাস করতে ইচ্ছা হয়, অনলাইন ক্লাসে যে একেবারেই অভ্যস্ত নই। লকডাউন শেষ হোক তাড়াতাড়ি। ঈশ্বর যেন আবার আগের মতো সবকিছু সুন্দর করে দেয়, এই প্রার্থনাই রইল তাঁর কাছে।