লেনিন
লেনিন
'দাদা! মহা কেলোর কীর্তি হয়েচে!’
হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বলল জগা।
নীরেন তখন সবে সকালের চা খেয়ে বসেছে ফোন নিয়ে ।
ভাবছিলো রথীনকে বলবে স্টোনচিপ্ এর অর্ডারগুলো এবার থেকে জগাকে দিয়ে দিতে।
‘কেন রে রথীন কিছু করলো না কি?’
‘করলো মানে? একে তো সব কাজ নিজের হাতে রাখছে, তার ওপর কাল রাতে যেখানে ইঁট আন্লোডিং হচ্ছিল সেখানে গিয়ে বাওয়াল করেছে। কিছু ছেলে জোগাড় করে ভাঙচুর করেছে। আমাকে ফোন করেছিল ডাব্বু। আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম। লাইন পাইনি। ডাব্বুকে তাই বলেছিলাম ইঁটগুলো বাঁচাতে। একটু হাতাহাতি হয়েছিলো। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গেছে। সকালে ডাব্বুর বৌয়ের ফোন। পুলিস এসে ডাব্বুকে তুলে নিয়ে গেছে! এখন তুমি কিছু করো। নাহলে রথীনের বড্ড বাড় হয়েচে। আমি কিন্তু ওকে ছাড়বো না। ’
‘ঠিক আছে। আমি দেখছি। তুই যা এখন। ’
নীরেন বলল।
জগা চলে যেতে রথীনকে ফোন লাগালো নীরেন।
‘ তোর কবে আক্কেল হবে বল্ তো। সামনে লোকাল ইলেকসন্। এর মধ্যে এই সব কেউ করে? আর যদি করবিই, আমাকে একবার জানাবার প্রয়োজন বোধ করলি না? এতো লায়েক হয়ে গেছিস্ তোরা?’
বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলল নীরেন।
‘তুমি দাদা জানো না জগা ডাব্বুকে নিয়ে কি করে বেড়াচ্ছে! এমনকি তোমার পেছনে ভুলভাল বলে বেড়াচ্ছে! বলছে তুমি একদল থেকে আরেক দলে এসেছো। এসে কাঠি করছো। ’
রথীন বলে গেলো এক নিমেষে।
‘ঠিক আছে। আমি তা বুঝে নেবো। তুই কেসটা তোল্। ডাব্বুর বৌ এসে বেফালতু কান্নাকাটি জুড়েছে এখানে। আমি বেরোবো একটু। হাই কমান্ড ডেকেছে। ’
এই বলে ফোন রাখলো নীরেন।
রাত সাড়ে নটা নাগাদ পার্টি অফিস্ থেকে ফিরে নীরেন সবে টিভি চালিয়েছে।
দেখলো কারা যেন লেনিনের মুর্তি ভেঙেছে।
যদিও
ঘটনাটা ত্রিপুরায় ঘটেছে,তবু কেমন যেন লাগলো নীরেনের। হাজার হোক্ লেনিনের সামনে কতোবার দাঁড়িয়েছে সে।
কতো কথা শুনেছে ওঁর সম্মন্ধে। লাল পার্টির রমরমার সময়ে।
রাশিয়ান রিভোলিউশন। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো। ফিডেল্ কাস্ত্রো।
আর তার ওপর এই গেরুয়া পার্টি।
যা যা ওরা করবে তার বিরুদ্ধে লড়তেই হবে।
হাই কম্যান্ডের স্পষ্ট লাইন।কোনোরকম ফ্যাসিস্ট্ শক্তিকে মাথা তুলতে দেওয়া যাবে না।
নীরেনের মনে পড়লো রথতলার মোড়ে লেনিনের একটা মুর্তি এখনও আছে। খানিক অবহেলায়।
রথীন , জগা , ডাব্বু,পটলা, সবাইকে ফোন করলো নীরেন।
‘লেনিনের মুর্তির সামনে আয়্। রথতলায়। এক্ষুনি। ’
নীরেনের কথার ওপর কেউ খুব একটা কিছু বলে না। শুধু জগা একটু আমতা আমতা করে বলেছিল, ‘সেকি দাদা, এতো রাতে আমরা লেনিনের মুর্তির সামনে গিয়ে কি করবো!’
‘সবই যদি তুই বুঝতি তা হলে তো হয়েই যেতো! ’
ধমক দিয়েছিলো নীরেন।
‘ ও পাড়ায় আরো কিছু মুর্তি আছে যে’
ডাব্বু একটু চিন্তিত কন্ঠে বলেছিলো।
‘কার কার ?’
জানতে চাইলো নীরেন।
‘যেমন , কোন্ এক ফুটবলার, আর এক কোন্ স্বামীজির আর এক কি যেন নাম ’
‘ঠিক আছে ,ঠিক আছে, ঐ গুলোর কথা পরে ভাবা যাবে’
বলল নীরেন।
মোটামুটি জনাছয়েক ছেলেকে দিয়ে লেনিনকে গার্ড করার ব্যবস্হা করে নীরেন ফিরতে যাবে।
হঠাৎ চোখে পড়লো লেনিনের মাথায়, দুই চোখে , কপালে কাকে পটি করে রেখেছে।
খারাপই লাগলো নীরেনের।
‘ ওরে কেউ একটু জল সাবান দিয়ে মুর্তিটা একটু পরিস্কার করে রাখিস্। কাল সকালে প্রেসে্র লোক আসবে। ’
এই বলে বাড়ীর পথ ধরলো নীরেন।