চুরি করা

Comedy Drama Romance

3.4  

চুরি করা

Comedy Drama Romance

লেখকের প্রেমিকা

লেখকের প্রেমিকা

6 mins
479


পার্কের একপ্রান্তে সবুজ ঘাসের ওপর বসে আছে l প্রতিদিন সে এখানে আসে l বিগত ডের বছর তার ব্যাতিক্রম হয়নি l যেন সে না এলে পার্কের সৌন্দর্যে একটা খামতি থেকে যাবে l মাঝে মাঝে শরীর অসুস্থ হলে আসতে তার ইচ্ছা করে না, তবুও শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে তাকে আসতে হয় l আর শুধু এখানে এলেই হবে না l রীতিমতো তৈরী হয়ে আসতে হবে l না, না, তৈরী মানে সাজ-পোশাকের কথা বলছি না l ঝুমার মত সুন্দরী মেয়ের তৈরী হয়ে আসা আর না হয়ে আসা প্রায় সমান l কিছুদিন হল গ্রাজুয়েশন শেষ হয়েছে l ঝুমা আরও পড়তে চায় l কিন্তু বাড়িতে তার বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে l গতকাল পাত্র পক্ষ এসেছিল তাকে দেখতে, পছন্দও খুব হয়েছিল মেয়েকে l কিন্তু ঝুমা রাজি হয়নি l আর কিভাবে বা রাজি হবে, তার কী সেই অধিকার আছে l সমস্ত অধিকার এখন তার প্রেমিকের l আবার যে সে প্রেমিক নয়, খুঁজে খুঁজে লেখক প্রেমিকের প্রেমে সে পড়েছে l


কিন্তু প্রেমিক মশাই এইসব বিয়ের ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন l ঝুমা যখনই তাকে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলতে যায়, সে শুধু শোনে আর চুপ করে থাকে l এই লেখক প্রেমিকের জন্যই তাকে প্রতিদিন এখানে আসতে হয় l একদিন না আসতে পারলে, বাবুর মেজাজ তখন উর্দ্ধ গগনে উড়ে বেড়ায় l ঝুমাকে না দেখলে তার নাকি লেখা আসে না l ঝুমাও পড়েছে মুশকিলে l মা-বাবাকে আর কতদিন বুঝিয়ে রাখা যায় l তারা এটাই মনে করেন যে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে সব থেকে বড়ো দায়িত্ব -যেটা পালন করতেই হবে l তুমি পড়াশোনা অথবা চাকরি যাই-ই করো, বিয়ে তোমাকে করতে হবে l তাই আজ ঝুমা ঠিক করেই এসেছে, একটা বোঝাপড়া না করে সে ফিরছে না l অনেক সহ্য করেছে এবার একটা উত্তর চাই l কথাগুলো সে ভাবছে আর কষ্ট দিচ্ছে ঘাসগুলোকে l সেই মুহূর্তে আগমন ঘটল তার প্রেমিক মহাশয়ের l ঝুমার পাশে বসতে বসতে বলল,'ঘাসগুলো না ছিঁড়ে নাও আমার মাথার চুলগুলো ছেড়ো l'তারপর নিজের রসিকতায় নিজেই হাসতে লাগলো l ঝুমা কিন্তু নির্বিকার l মনে মনে সে গুছিয়ে নিচ্ছে কথাগুলো l কিন্তু ঝুমা কিছু বলার আগেই প্রেমিক মহাশয় বলল,'আচ্ছা এবার বল l' -কী? -আরে যেটার জন্য আমার এখানে আসা l


ঝুমা চুপ করে রইল l প্রতিদিন তাকে একটা আস্ত খবরের কাগজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আত্মস্থ করে এখানে আসতে হয় l শুধু খবরের কাগজ নয়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করতে হয় l এটাই তার রোজনামচা l তারপর এখানে এসে সমস্ত জ্ঞান উজাড় করতে হয় তার প্রেমিকের কাছে l ঝুমার প্রেমিক ইংরেজিতে ভীষণ কাঁচার সঙ্গে অলসতার চূড়ায় বিদ্যমান l তাই কোনো বিষয়ের ওপর গল্প লাগার আগে সে ঝুমাকে ফোন করে টপিকটা বলে দেয় l আর ঝুমা পুরো বিষয়টির ওপর খুঁটিনাটি পড়াশোনা করে আসে l ঝুমার খারাপ লাগে না l কারণ এইভাবেই সে অনেক নতুন জিনিস জানতে পেরেছে l পৃথিবীর কোথায় এখন কী অবস্থা সে সম্পর্কেও তার থেকে বেশি জানে এই তল্লাটে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর l -কী হল কিছু বলছো না যে! -কী বলব l তুমি কী জানো আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট? প্রেমিক একটু মাথায় চুলকে উত্তর দিলো -হ্যাঁ জানি l কংগ্রাচুলেশন l বলতে ভুলে গিয়েছিলাম l কিছু মনে করো না l আসলে একটা গল্প নিয়ে অনেক চাপে আছি l তাই কোনোদিকে নজর দিতে পারছিনা l ঝুমার ঠোঁটের ফাঁকে একটুকরো হাঁসি খেলে গেলো l তারপর বলল -সে তো বুঝলাম l এবার কী আমাদের ব্যাপারে কিছু ভাবলে? বাবা যে ওদিকে আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করে দিয়েছে l


এইতো গতকাল সন্ধ্যায় কিছু লোক এসেছিল l তাঁদের সামনে চরা মেকআপ করে, এই গরমের মধ্যে মোটা বেনারসি শাড়ি পড়ে, সং সেজে বসে থাকতে হয়েছে আমাকে l আমি ওসব আর পারবোনা l তুমি চল আজই বাবার সাথে কথা বলবে l মা আমাদের ব্যাপারে সব জানে l কিন্তু বাবার ভয়ে কিছু বলতে পারছে না l প্রেমিক মহাশয়ের এইবারে ভ্রু কুঁচকে গেলো l কী বলবে ভেবে পেলো না l ঝুমার বাবার সাথে কথা বলার মত সাহস ও যোগ্যতা কিছুই নেই তার l সে কী করে গিয়ে বলবে যে -আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি l বিয়ে করতে চাই l তখন যদি তার ব্যাপারে জানতেই চায় তাহলে কী জবাব দেবো সে l তখন কী বলতে পারবে -আমি একজন লেখক l আপাতত বাবার হোটেলে দিব্বি আছি l কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি l যদিও খুব বড়ো মাপের লেখক হয়ে উঠতে পারিনি l তবে অনেক বড়ো বড়ো প্রকাশকের সাথে দেখা করেছি, তারা আস্সাস দিয়েছে l কিন্তু সঠিকভাবে তারাও কিছু বলতে পারেননি l ঝুমা আর থাকতে না পেরে বলল -কই গো বলো l যাবে বাবার কাছে l আজ রবিবার, বাবা বাড়িতেই আছে l তোমার ভয় নেই, প্রথমে যা বলার আমি বলব l বাকিটা তুমি নিজেই গুছিয়ে বল l নিজেকে লেখক বলো, আর গুছিয়ে কথা বলতে পারোনা l লেখকের আঁতে ঘা দেওয়ার মত কথা l কোনো লেখকই এমন অপমান মেনে নিতে পারে না l এইকদিন খুব ইন্টারেস্টিং একটা গল্প নিয়ে কাজ করছে সে l


তাই আগের দিন ঝুমাকে থাইল্যান্ডের সাদা হাতি নিয়ে জেনে আসতে বলেছিলো l এখন সেসব সিকেই তুলে সে বলল -আচ্ছা চল l -সত্যি যাবে?  ঝুমা এর আগেও এই কথা বহুবার শুনেছে আর প্রত্যেকবারেই বাড়ির সামনে থেকে প্রেমিক মহাশয় পালিয়েছে l তাই ঝুমার সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক l কিন্তু এর আগে এমন জোর দিয়ে প্রেমিকমশাই কখনো বলেনি l তাই মনে একটু জোর পাওয়া গেলো l -হ্যাঁ যাবো বলছি তো l আমিও ক্লান্ত l কথাটা বলে অন্য কথা ভাবতে মশগুল হয়ে পড়লো -মা অনেকদিন থেকেই বলছে -বাবা, এবার একটা বিয়ে কর l তাতে যদি তোর ঐ লেখকপনা বন্ধ হয় l আমি জানি ঝুমার মতই মেয়ে পারবে তোর মত ছেলেকে সায়েস্তা করতে l এমন বাউন্ডুলের মত আর কতদিন ঘুরবি! বাবা বুড়ো হচ্ছে l আমারও বয়স অনেক হল l আমি যে পেরে উঠছি না বাবা l তুই বলিস তো তোর বাবাকে তোর আর ঝুমার ব্যাপার সবটা বলি l তারপর একটা ভালো দিন দেখে ওদের বাড়িতে যাওয়া যাবে l জানি ওদের অবস্থা ভালো কিন্তু ভগবানের কৃপায় আমাদেরও কিছু কম নেই l তুই ঝুমাকে একবার নিয়ে আসিস তো l অনেকদিন দেখিনি মেয়েটাকে l কেমন আছে মেয়েটা? ঝুমা বলল -এইবারে আগের মত মাঝ রাস্তায় আমাকে ফেলে পালিয়ে যাবে না তো! আগের বার আমাকে ঘরের বেল বাজাতে বলে তুমি কী না নিরুদ্দেশ l


আবার সেইবারে বাস থেকেই কিছু না বলেই পালিয়ে গিয়েছিলে l এবারও যদি সেই মতলবই থাকে আগে থেকে বলে দাও, কারণ এইবারে ঘরের ভিতরে ঠুকে গেলে একবারে বিয়ের দিন বের হব l -আচ্ছা l আচ্ছা l ওতো কথা কিসের!সেইদিন একটা কাজ মনে এসে গিয়েছিলো, তাই তোমাকে বলা যাওয়ার সময় পাইনি l তুমি চলত এখন l ঝুমার কেমন যেন সন্দেহ হল l ব্যাপারটা কী! এতো সহজে লেখক মহাশয় সে কাত হয়ে যাবে সেটা ঝুমার বিশ্বাস হচ্ছেনা l তবুও ভগবানের নাম নিয়ে দুজনে বাসে উঠলো l বাড়ি যেতে সময় লাগবে আধঘন্টার মত l সে সময়ে ঝুমা আর একটু বাজিয়ে দেখে নিতে চাইলো l -কী ব্যাপার বলতো? তুমি আজ এতো সহজে হার মেনে নিলে l ভাবলাম আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে l তারপর মনের মানুষের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে আবার বলল -তুমি কী আমার ওপর রাগ করে এমন করছো l কিন্তু কী করবো বল আমার যে আর কিছু করার নেই l বাবার মুখে কথা বলার সাহস নেই আমার l তাও তোমার জন্য বললেও তার কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না l তুমি চিন্তা করো না, আমিই কথা বলবো l তুমি শুধু হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাবে l -দেখো ওতো কথার দরকার নেই l তুমি যেতে বলেছো তাই যাচ্ছি l তাই চুপচাপ করে বসে থাকো আর আমাকে একটু ভাবতে দাও l ঝুমা আর কথা বাড়ালো না l জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখতে লাগলো l মাঝে মাঝে তার প্রেমিকের দিকে তাকাতে লাগলো l


ঝুমা মনে মনে কিছু বুঝতে পেরে মনে মনেই হাসতে লাগল l বাস থামলো এসে শখের বাজার l সেখান থেকে মিনিটখানিক পথ পেরোলে ঝুমা বোসের বাড়ি l বাস থেকে ঝুমা আগে নামলো l কিন্তু পিছনে কারোর নামার বিন্দুমাত্র আভাস না পেয়ে, ঝুমা ফিরে তাকালো l ততক্ষনে বাস ছেড়ে দিয়েছে l ঝুমা বুঝতে পেরে হাঁসি হাঁসি মুখ করে বাসের দিকে তাকিয়ে রইল l -পাগল একটা.. 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy