লাল জামা
লাল জামা
লাল তাপ, কর্মশক্তি, রক্ত, ক্রোধ, ভালোবাসা আর রক্তে দোলা দেওয়া আবেগের প্রতীক। হাজার রঙের মাঝে লাল রঙ আলাদা করে দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তাই হয়ত নিজেকে উজ্জীবিত করতে মানুষ লাল পোশাক পরে, নারীরা বেছে নেয় লাল লিপস্টিক, হাতভর্তি লাল চুড়ি কিংবা কপালে লাল টিপ। মোটকথা লাল মানেই যেন সব মনোযোগ নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলা, দেখ আমি কতটা সজীব, কতটা প্রাণোচ্ছল! এ কথাগুলো যেমন সত্যি সেরকম এক করুণ ছবি ভেসে ওঠে আমার চোখের সামনে আজও, লালের সাথে যার হয়ে গেছে এক অটুট সম্পর্ক আমার মনে।
খুব কাছ থেকেই বীভৎস দৃশ্যটা দেখতে হলো আমাকে – আমার কানে এখনো বাজে অস্ফুট সেই আওয়াজ, “বোন , তোর লাল জামা ……”
বয়সটা আর কতই হবে, বারো তেরো ‘র কাছাকাছি। হয়তো এই রঙ্গীন পৃথিবীতে ছেলেটিরও একবুক স্বপ্ন ছিলো এই পুজোয় বোনকে নিয়ে ; হাড়ভাঙা পরিশ্রমের দামে কিনবে সে একট টুকরো লাল কাপড় আদরের বোনের জন্য। যে জিনিসটি তার বোনের খুব পছন্দ।
শান্ত তুলতুলে বোনটির মুখ চেয়ে সে ভুলে যেতো আর্তনাদের বর্ণমালার সমস্ত ব্যথা বেদনার কথা।
অল্প বয়সে মা বাবা হারা ভাইবোনের ঠিকানা ছিলো ফুটপাতের ধারে ;ভাইটি তার টোকাইয়ের কাজ করে জমিয়েছিলকিছু পয়সা, তার আদরের বোনের জন্য।
যে বোনটি বিগত সন্ধ্যার ফুলের ন্যায়, সারাদিন বসে থাকে ভাইয়ের পথ চেয়ে, কখন আসবে ভাই দুহাত ভরে মিঠাই নিয়ে।এই পুজোয় বোনের চাওয়া ছিলো রাস্তায় হেঁটে যাওয়া, পথিক শিশুর গায়ে থাকা একটি লাল জামা। সে বলেছিল তার ভাইকে আর তাই ভাইটি একটি একটি করে জমিয়েছিল টাকা বোনের হাতে তুলে দিতে শরতের শিউলি ফুলের ন্যায় ইপ্সিত চাওয়াকে ।
আর কিনতে চেয়েছিল কোটি টাকার মূল্যের
বোনের অধরে ফিনকি ঝরা অম্লান হাসি ; আর
আজ সেই ভাইটি নিথর দেহে পড়ে আছে রাস্তায়,
হাতে ধরে আছে একটি লাল জামা, বোনের জন্য।
পরীর মতোই সাজাতে চেয়েছিল বোনকে এই জামায়,কিন্তু ঘাতক ট্রাকের নিষ্ঠুর থাবায়,
জোনাকির মৃত্যুর নিষ্ঠুর দংশনে পরে আছে পিচঢালা রাস্তার মাঝে।সেই জামার লাল ক্যানভাসে লেগে আছে তাজা রক্তের আঁধার মৃত্তিকার জীবনের প্রতিচ্ছবি।তার দেখা হলোনা শিশির নির্মলতার বোনের মুখে কোটি মূল্যের হাসি,
এভাবেই হাজারো মানুষের নীলাম্বরী ছোঁয়ার মুখের হাসি, প্রতিনিয়ত মুছে যায় দানব ঘাতকের চাকার তলে। কালো রাজপথ হয়ে উঠে নিষ্ঠুরতার আধার, জ্বলন্ত ফুসফুস ছুঁয়ে রক্ত শুষে নেয় পিচাশ থাবার আড়ালে।
এখনও আমার খুব কাছ থেকে সেই শব্দটা
কানে বাজে “বোন , তোর লাল জামা। “