কুয়াশা সরিয়ে রোদ্দুর
কুয়াশা সরিয়ে রোদ্দুর
পনেরো দিন হল মৌয়ের বিয়ে হয়েছে অভির সাথে। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমা অর্থে যা বোঝায় তা না হলেও অভির চাকরী সূত্রে অষ্টমঙ্গলার পর দিনই ওরা চলে আসে দিল্লিতে। আর এখানে ওদের সংসার ওদের দুজনেরই। তাই দুজনের একা সময় কাটানোর কোন অসুবিধাও নেই।
ডিসেম্বরের এই সময়টা বেশ ঠান্ডা পড়ে এখানে। তবুও কেন জানেনা মৌয়ের সকালবেলার সেই কুয়াশা ঘেরা ভোরে, সবুজ ঘাসের শিশিরসিক্ত লনে, ঠান্ডা হিমেল হাওয়ায় একা একা বসে নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে কোন অসুবিধা হয়না। আজও তার অন্যথা হয় নি।
‘তোমাকে কতদিন বলেছিনা মৌ সকালে এভাবে ঠান্ডায় বসে থাকবেনা। তুমি মা হতে চলেছ, আর একা নয়। ডাক্তার বলেছে সাবধানে থাকতে কিন্তু তুমি কোন কথাই শুনছ না। না ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করছ, না হাসিখুশি থাকছ। তোমার কিসের এত চিন্তা। আমি তো বারবার বলেছি এ সন্তান আমার, ওর বাবা আমি। আর তো কয়েকটা দিন পরেই আমি সবাইকে খুশির খবরটা দেব।’ একটা ভালোবাসার সাথে অনুযোগ মেশানো সুরে কথাগুলো বলল অভি।
‘কিন্তু আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি। আমার ভুলের শাস্তি তোমাকে পেতে হচ্ছে।’ কান্না ভেজা কন্ঠে কথাগুলি বলল মৌ।
‘ছি ছি মৌ ভালোবাসাকে ভুল বলতে নেই। আর তুমি আমাকে ঠকাবে কি তোমাকেই তো ঈশ্বর ঠকিয়েছেন। সেদিন যদি অফিস থেকে ফেরার সময় বাইক অ্যক্সিডেন্টে তন্ময় পৃথিবী থেকে চলে না যেত তবে নিজের ভালবাসার মানুষকে হারিয়ে যাকে ভালবাসনা এমন একটা মানুষের সাথে তোমাকে সারাজীবন কাটাতে হত না। তবে আমাকে শেষ সময় সব জানিয়ে যাওয়ায় আমি তোমার পাশে থাকতে পারছি এটাই আমার কাছে অনেক।’ কথাগুলি বলে একদৃষ্টিতে মৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল অভি। কুয়াশার চাদর সরিয়ে ফুটে উঠল সূর্যের আলো।
অভি নিজের মনে মনে বলল ‘মৌ এই আলোতে তোমাকে খুব সুন্দর দেখায় তবে আজ তোমাকে নিজের মুখে বলার সময় নয় আর সেই ঠিক সময়টার জন্য আমি অপেক্ষা করব।’