🍀কূর্ম অবতার🔺 ✍ঈপ্সিতা দেব

 🌸দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ🌸

কশ্যপ মুনির পত্নী অদিতির সন্তানরা হলে সমস্ত দেবদেবী অর্থাৎ অদিতি থেকে সকল দেব দেবীর জন্ম হয়েছে। দেবতারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হয়ে স্বর্গরাজ্যে ভোগ করেছিলেন _______ 

আর ইন্দ্র হলেন দেবতাদের রাজা।তার বাহন ছিল মস্ত বড় একটা হাতি । দেবরাজের গজের নাম ঐরাবত। দেবরাজ গজে আরোহন করে সর্বত্র ভ্রমণ করতেন । 

  দিতি পুত্র অসুর,এই অসুরেরা কিন্তু স্বর্গরাজ্য ভোগ করতে চাইতো।তারা ছিল শক্তিশালী।এরা স্বর্গের সিংহাসন লাভের বারবার স্বর্গ আক্রমণ করতো ।এই কারনে দেবাসুর সংগ্রাম লেগেই থাকতো।

     একবার দুর্বাশা মুনি স্বর্গে এসেছিলেন। তিনির তপস্যার ফলে অসাধারণ একটি বর লাভ করেছিলেন ।তার বলা সকল কথাই সত‍্যরূপে ঘটতো। তার স্বভাব ছিল ক্রুর ও রুক্ষ। তিনি অতি সামান্য কারণেই অনেক রেগে যেতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে বসতেন অভিশাপ ।এইজন্য দেবতাই হোক আর দানব হোক সবাই তাকে ভয় পেত।কোপন ঋষিকে সবাই একটু সমঝে চলতো।কারন তপস্যার ফলে তার মুখ থেকে বের হওয়া কথা সত্য হত।ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর তা নিবারণ করতে অসমর্থ।সফলে উনার অভিশাপ ফলশ্রুত হবেই সবাই কোপন স্বভাবের ঋষি দুর্বাশাকে তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করত।

    এদিন বৈকুন্ঠে লক্ষ্মী নারায়ন নিজেদের মধ্যে বার্তালাপে ব‍্যাস্ত ছিলেন।তখন দেবী লক্ষ্মী পারিজাত ফুল যা একমাত্র স্বর্গের বাগানে পাওয়া যায়।এই ফুলের সৌন্দর্য ও গন্ধে মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণু বক্ষবিলাসিনী দেবী লক্ষ্মী নারায়নের কাছে সেই ফুলের একটি মালা প্রাপ্ত করার আবদার করে।বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে বলে পারিজাত ফুলের মালা নারায়ণের গলায় শোভা পায়।তাই দেবী লক্ষ্মীর ইচ্ছে প্রকাশ করা পারিজাত ফুলের মালা আনা হোক।

সেই সময় নারায়নের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন ঋষি দূর্বাসা।দেবী লক্ষ্মীর ইচ্ছের কথা শুনে বলেন হে নারায়নী আমি আপনাদের দর্শনার্থে এসেছি।কিন্তু সৌভাগ্য ক্রমে আমি এখন দেবরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবো। তাই যদি আমাকে অনুমতি দেন তবে আমি প্রভুর জন্যে এই পারিজাত ফুলের মালা আনতে চাই।

 মাতা লক্ষ্মী খুশী হয়ে মহর্ষিকে মালাটি এনে দিতে অনুরোধ করলেন। তারপর ঋষি দূর্বাসা দ্রুত সেই স্থান থেকে স্বর্গ উদ‍্যানের দিকে রওনা দিলেন।

স্বর্গের দেবতাদের রাজা হলেন ইন্দ্র , দেবরাজ গজ ঐরাবতের উপর আসীন হয়ে সর্বত্র যাতায়াত করতেন।সেদিন ও দেবরাজ ঐরাবতে চড়ে আসছিলেন তখন তিনি দেখলেন কোপন ঋষি দূর্বাসা সেই পথ দিয়ে হেঁটে আসছিলেন।ঐ পথে দেবরাজ দুর্বাসা মুনিকে দেখে ঐরাবতের উপর থেকে নেমে ঋষির দিকে এগিয়ে আসে। তারপর দ

দেবরাজ ইন্দ্র দুর্বাসা মুনিকে দেখে বন্দনা শুরু করে দিলেন। দেবরাজ দুর্বাসা মুনিকে খুশি করার জন্যদেবরাজ ইন্দ্র তার স্তব করতে থাকে।সেই স্তবে মুনি সন্তুষ্ট হন।নারায়নের জন্যে নেওয়া স্বর্গের পারিজাত ফুলের দ্বারা একটি মালা যা ছিল দেখতে খুব সুন্দর ও গুণগত হিসেবেও তার ছিল অতুলনীয়। এই সৌন্দর্য লক্ষ্মীদেবী মুগ্ধ হয়ে যায়।সেই সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে লক্ষীনারায়ন কে এই মালাটা এনে দিতে বলেছিলেন নারায়ন মালা ইন্দ্রের নিকট ঐ মালাটা চাইলেন কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র দিতে চান নি। দূর্বাসা এই মালাটি বিষ্ণুদেবের জন‍্য নিয়েও দেবরাজকে উপহার দেয়।কিন্তু ইন্দ্র এই মালাটি নিজে না পড়ে ঐরাবতের গলায় পড়িয়ে দেয় ও ঐ স্থান ত‍্যাগ করেন। এই মালা দেবরাজ ইন্দ্র কাল হলো।

কিন্তু জড়ো বুদ্ধি সম্পন্ন গজ দ্রুত যাওয়ার সময় তার পায়ের সামনে পড়ে থাকা ঐ মালাটি অবলা জীব মালাটিকে মাড়িয়ে দেয়।সেই সময় ঋষি দূর্বাসা ঐ স্থানে আসেন তিনি এই দৃশ্যয় কুপিত হয়।ভাবেন তাকে ইন্দ্রদেব তাকে ইচ্ছে করে অপমান করেছেন তাই এই মালার স্থান হয়েছে ঐরাবতের গলায়।দুর্বাসা মুনি "নারায়নের জন‍্য এই পারিজাতফুলের মালাটি এনেও ইন্দ্রের বন্দনায় তুুষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে সে উপহার দেন । সেই মালাটি নিজের গলায় ধারণ না দেবরাজ মালাটি হাতির শুড়ে রেখে দেয় এবং মূর্খ হাতির সেই মালাটি গুরুত্ব না বুঝতে পেরে তা পা দ্বারা পিষ্ট করে ।"দেবরাজের অহংকারের এবার দুর্বাসা মুনি ভীষণ ক্রুদ্ধ হন।তখন ইন্দ্র সভায় তিনি এসে উপস্থিত হন।তিনি যা মনে করেন তাই দেবরাজ ইন্দ্রকে বলেন,সঙ্গে আরো বলেন। তাকে অবজ্ঞা করে এই আচরণ করেছেন।অহংকারে মত্ত হয়ে দেবরাজের এই কাজ অনুচিত ____

তখন অভিশাপ দেন যে " যে ধনের মোহে মত্ত হয়ে আমাকে অবমাননা করে আর দেওয়া মালার অপমান করলি সেই লক্ষ্মী ছাড়া হবে , আজ থেকে শ্রী স্বর্গচ্যুত হবে।"

দুর্বাসা মুনির অভিশাপ তো মিথ্যা হওয়ার নয় অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্র ভীষণ ভাবে কাঁপতে লাগল । দেবতারা ভীষণ ভীষণ বিপদে পড়ে হায় হায় করতে লাগলেন। কিন্তু আর কি হবে দুর্বাসা মুনির বাক‍্য যে সত্যি হবে। দেখতে দেখতে লক্ষ্মী দেবী সর্বভূতে অন্তর্নিহিতা হলেন এবং তার সঙ্গে স্বর্গরাজ্যে ঐশ্বর্য সব অদৃশ‍্য হয়ে গেল। তার লক্ষীকে হারিয়ে দেবতারাও সবাই শক্তিহীন হয়ে পড়লেন। 

দুর্বাসা মুনির বাক্য রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই।লক্ষীদেবী স্বর্গ থেকে অন্ত‍র্হিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বর্গরাজ্যের সৌন্দর্য, ঐশ্বর্য লোপ পেল, সমস্ত শ্রী ম্লান হল।দেবতারা লক্ষীকে হারিয়ে সবাই শক্তিহীন হয়ে পড়লেন ও তাদের তেজ নিষ্প্রভ হয়ে গেল ।

এদিকে দৈত্যরা দেখল এই সময় দেবতারা বেশ তুঘাদের স্বর্গরাজ্য দখল করার মস্ত বড় সুযোগ। দেবতাদের শক্তি হীন দেখে স্বর্গ রাজ্য আক্রমণ করল । এই পরিস্থিতিতে দানবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে দেবতাদের সাহসে কুলালো না । প্রাণভয়ে তারা স্বর্গরাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গেলেন । দেবতাদের স্বর্গ রাজ‍্য থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দৈত্যরা স্বর্গরাজ্য ভোগ করতে লাগলেন ।কিন্তু দৈত‍্যরা ছিল দুর্দান্ত প্রকৃতির। সাজানো গোছানো স্বর্গ তাদের হাতে পড়া মাত্রই ছারখার হয়ে গেল । স্বর্গের নন্দনকানন তাদের অত্যাচারে শুকিয়ে এলে ।অপ্সরা, কিন্নরী, বিদ্যাধরীদের বন্দী করে দৈত্যরা তাদের ওপর নানা রকম উৎপীড়ন আরম্ভ করে দিল । এদিকে দেবতারা তাদের আবার আক্রমণ করে এই ভয়ে তারা দেবতাদের খুঁজে খুঁজে বের করে নানাপ্রকার যন্ত্রণা দিতে লাগল ।তখন দেবতারা ব্রহ্মা আর কাছে কাছে এসে হাজির হলেন । ব্রহ্মা তখন ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।দেবতাদের তপে তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা ধ্যান ভাঙ্গলো।তারপর তিনি দেবতাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে ভীষণ দুঃখিত হলেন। দেবতাদের বললেন দেখো আমি শুধু সৃষ্টি করি কিন্তু তার রক্ষা ও পালনের ভার বিষ্ণুর উপর। তোমরা সকলেই বিষ্ণুর কাছে যাও ; একমাত্র তিনি তোমাদের দৈত্য দের হাত থেকে উদ্ধারের ভার নিতে পারেন । 

ব্রহ্মার আদেশ অনুযায়ী তারা সবাই চললেন বিষ্ণুর কাছে, বিষ্ণু তখন ক্ষীর সাগরে অবস্থান করছিলেন । দেবতা যেখানে কৃষ্ণ নাম জপ করতে লাগলেন ।বিষ্ণু দেবতার অন্তরের কথা বুঝতে পারলেন । তিনি দেবতাদের বললেন দেখো তোমরা যে পর্যন্ত অমরত্ব লাভ না করবে ঠিক সেই সময় পর্যন্ত দৈত্যকে পরাজিত করতে পারবেন না।তাই তোমাদের অমৃত লাভ করতে হবে। বিষন্ন মুখে দেবতারা ফিরে এলেন আমার কাছ থেকে ,তারা আবার গেলেন দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে। তখন তিনি ব্রহ্মাকে বললেন পরম পিতা তাহলে দয়া করে বলে দিন কিভাবে আমরা অমরত্ব লাভ করতে পারি। 

ব্রহ্মদেব তখন বললেন সাত সমুদ্র তলে অমৃত আছে সেই অমৃত লাভ করতে হবে। 

- ইন্দ্রদেবতা বলেন কি উপায়ে এই অমৃত লাভ খরা সম্ভব?

ব্রহ্মদেব বললেন এই অমৃত সাগরের তলদেশে রয়েছে।সেখান থেকে একে উদ্ধার করা খুব কঠিন ব্যাপার।আগে সমস্ত সাগরকে মন্থন করতে হবে।

এই কথা শুনে দেবতারা পড়লেন মহাবিপদে ।সপ্ত সাগর মন্থন কিভাব করা যাবে? ব্রহ্মার নিকট সাহস করে দেবরাজ ইন্দ্র এই মন্তব্য করে।

এই মন্তব্য শোনার পর ব্রহ্মদেব বললেন মন্দার নামে পর্বত আছে তাকে মন্থন দন্ড হবে।আর বাসুকীর নাগ রজ্জু রূপে তাকে জড়িয়ে থাকবে। একদিকে থাকবে ওর মাথা অপরদিকে থাকবে তার লেজ। দেবতারা একদিকে তারা ধরে টানবে।

দেবরাজ বলেন কিন্তু এতো বড়ো মন্দারকে কিসের উপর বসানো হবে?

ব্রহ্মদেব পরামর্শ দিলেন তাদের বিষ্ণু শরনাপন্ন হতে; কারণ একমাত্র তিনি ছাড়া এই বিশাল পর্বতের ধরনের শক্তি কারো মধ্যে নেই। তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন এবং একযোগে সবাই স্তুতি করতে লাগলেন। 

দেবতাদের স্তুতিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের মনোবাসনা পূরণ করতে রাজি হলেন। তিনি অভয় দিলেন আমি কূর্ম রূপ ধারণ করব এবং মন্দার পর্বতকে পিঠে ধারণ করে সমুদ্রের নিচে অবস্থান করবো তখন তোমরা সমুদ্র মন্থন করতে থাকবে ।



অমর হওয়ার বাসনা দৈত‍্যদের কমই ছিল না।দেবতাদের একার পক্ষে মন্থন করা সম্ভব না দেবতা দৈত্যের মিলিত উদ্যোগে অমৃত পাওয়া যাবে ।দৈত‍্যরা তাই সাহায্য করতে রাজী হল।

তখন ভগবান বিষ্ণু কূর্ম মূর্তি ধারণ করে নিচে সমুদ্রের অতল তলে বসবাস করতে লাগলেন।এরপর তিনি নিজের পিঠে মন্দার পর্বত ধারন করলেন।

এরপর শুরু হলো মন্থন প্রক্রিয়া। দেবতা আর দৈত‍্যরা এই মন্থন কার্য সম্পন্ন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো।

সাত সাগরের তলদেশে মন্থনের দিনের পর দিন কেটে গেল।কিন্তু কিছু্র দেখা পাওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়ে।কালকূটের বিষ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সমগ্র সৃষ্টির জ্বলে পুড়ে যাওয়ার জোগাড় ।দেবতা দানবেরা এই অবস্থা থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইন্দ্র ব্রহ্মার কাছে এসে এই সঙ্কট থেকে কিভাবে বেড় হওয়া যাবে তা জানতে চান।

পিতামহ জানান এই বিপদের হাত থেকে মহাদেব আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবেন।আর কেউ পারবেন না। তখন সবাই আবার মহাদেবের কাছে উপস্থিত হয় ।

নাই তবে মহাদেবের ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। দেবতাদের অনেক স্তব-স্তুতি পর মহাদেবের ধ্যান ভাঙ্গলো ।তিনি প্রথমে ঐ স্থানে এসে উপস্থিত হলেন ।তিনি সেই কালকূট বিষ পান করে কন্ঠে ধারন করেন। এরপর থেকে তার কণ্ঠে রং হয়ে গেল নীল।তিনি নীলকন্ঠ নামে প্রসিদ্ধ হলেন।জগত গরলের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে দেবতা আর দৈত‍্যরা আবার মন্থন শুরু করল।

এরপর অন‍্যান‍্য জিনিসের সঙ্গে দেবীলক্ষ্মী সাগর থেকে উঠে এলেন। হাতে তার অমৃত ভান্ডার। অমৃত দেখে দেবতা ও দানবদের আনন্দ আর ধরে না।এই অমৃত দেবতাদের পান করানোর জন‍্য বিষ্ণু নতুন রূপে দর্শন দিলেন। 

স্বর্গচ্যুত লক্ষ্মী দেবীর হাতে অমৃত ভান্ডার প্রত‍্যক্ষ করা মাত্রই দেবতা ও দৈত্যদের আনন্দ আর ধরে না।দুই পক্ষই অমৃত পান করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে।উভয় পক্ষের উদ্গ্রীবতা চরম শিখরে পৌঁছায়।কিন্তু দেবতারা ভাবেন যদি অসুরেরা অমৃত পান করে তাহলে তারাও অমর হয়ে উঠবে।অমর হলে দৈত্যদের আর মেরে ফেলা যাবে না।আর দৈত‍্যরা আর দেবতাদের ভয় ও পাবে না।দানবেরা নিজ স্বভাব গুনে সাজানো গোছানো সব স্থান ছাড়খার করে দেবে।এই সব ভাবনা যখন দেবতারা দিশেহারা তখন দেবগুরু বৃহস্পতির সঙ্গে দেবতারা পরামর্শ করেন।এরপর দেবগুরু বৃহস্পতির নির্দেশে দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর শরনাপন্ন হয়।

     পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনা করে ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের আস্বস্ত করেন; ভুবনভোলানো মোহিনী মূর্তি ধারণ করেন।ভগবান বিষ্ণুর মোহিনী রূপে ঐ অমৃত কলস নিয়ে যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসেন;তখন দেবতা সেই রূপ দেখে দেবতারা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন।আর দানবরা অমৃতার কথায় ভুলে গেলেন,,, মোহিনী রূপে মুগ্ধ হয়ে গেল।এমন অসামান্য সুন্দরী রমনীর দর্শন ইতিপূর্বে দৈত্যরা করেনি।তাই তাদের মনে তম গুনের প্রভাবে কাম বাসনা জাগ্রত হলো,তারা এতটা মোহিত হয়ে গেল যে তারা অমৃতের কথা ভুলে গেল।

এদিকে ভগবান বিষ্ণু তখন সবাইকে সারিবদ্ধভাবে উপবেশন করতে বলেন।একদিকে দেবতারা ও অপর দিকে দানবেরা উপবেশন করলেন।মোহিনী রূপী বিষ্ণু সেই অমৃত দেবতাদের পরিবেশন করতে শুরু করলেন। দেবতারা অমৃত পান করে আবার বলিয়ান হয়ে উঠলেন ও অমৃতের প্রভাবে অমরত্ব লাভ করলেন ।

এর মধ্যে আবার একটা ঘটনা ঘটলো মোহিনী যখন 

দেবতাদের মধ্যে অমৃত বন্টনে ব‍্যাস্ত তখন দেবতাদের রূপ ধরে রাহু সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে দেবতাদের সারিতে এসে বসে।

দেবতাদেরকে অমৃত পরিবেশন কালে দেবতাদের মধ্যে রাহুর লুকিয়ে উপবেশন করার বিষয়টি চন্দ্র ও সূর্য দেখতে পান।সূর্যদেব ও চন্দ্রদেব অমৃত পানের পর দেবতারূপী রাহুর আচরণ ভঙ্গিতে সন্দেহ পোষণ করে। কারন দেবতাবেশধারী রাহুকে দেখে চন্দ্র সূর্যের সন্দেহ হয়।তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।দেবতাবেশধারী রাহুকে মোহিনী অমৃত পরিবেশ করা মাত্র - চন্দ্র-সূর্য মোহিনী রূপী বিষ্ণুকে ছদ্মবেশী রাহুর কথা বিস্তারিত জানায়। ছদ্মবেশী দেবতা যে কোনো দেবতা না দেবতাবেশধারী দৈত‍্য রাহু তা মোহিনীকে জানায়; 

চন্দ্রদেব ও সূর্যদেবের কথা শোনা মাত্রই বিষ্ণু তৎক্ষণাৎ দিব‍্য দৃষ্টি দ্বারা সত‍্যতা যাচাই করেন।দেখেন সূর্যদেব ও চন্দ্রদেব সন্দেহ সত্যি।এরপর বিষ্ণু কালক্ষেপণ না করে সুদর্শন চক্রকে নির্দেশ দেন রাহুর মস্তক ছেদন করার ।

সুদর্শন চক্র বিষ্ণুর নির্দেশে রাহুল মাথা কেটে ফেলে।কিন্তু অমৃত পানের ফলে অমৃত গলা পর্যন্ত যাওয়ার ফলে ছেদনের পর মস্তক ও ধর বিচ্ছিন্ন হলেও অমর হয়ে রয়ে গেল ।মস্তক রাহু নামে আর গ্রীবা থেকে বাকী অংশ কেতু নামে পরিচিত হলো। সেই থেকে রাহুর সঙ্গে চন্দ্র সূর্যের বিরোধ।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাহু মাঝে মাঝে চন্দ্র সূর্যকে গ্রাস করে।কিন্তু চন্দ্র-সূর্য রাহুর কাটা গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এই ঘটনার পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ নামে পরিচিত।



ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করে অমৃত বন্টন করেছিলেন। এইভাবে ভগবান বিষ্ণুর কূর্ম রূপ ধারণ করে সমুদ্র মন্থনে সহযোগিতা করেন।দেবতাদের সহায়তা করে,এইভাবে আসুরিক শক্তির ক্ষমতা খর্ব করে ,অশুভর অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবান যুগে যুগে অবতার গ্রহণ করেন ।



কুর্মঅবতার ও প্রাণীজগতের দ্বিতীয় স্তর

ক্রমে সমুদ্রের তলায় পলি পড়ে কর্দমের সৃষ্টি হল। নতুন প্রানের সৃষ্টির উপাদান তৈরী হল।এর ফলে সৃষ্টির আদিম যুগের সূচনা হয় ।বহু বছর ধরে এমন ভাবে থাকার পরে দেখা গেল সমুদ্রের তলায় জলের মধ্যে দেখা গেল এক প্রকার প্রাণের উদ্ভব হয়েছে ।মৎস্যের মতো এই প্রানীর চলন গতি মন্থর ধীর ,এই প্রানী চঞ্চল ও সঞ্চালন ক্রিয়াশীল নয়।এই প্রানী কির্দমের মধ্যেও মন্থর গতিতে হেঁটে চলে।এছাড়া এরা জলেও সঞ্চরণ করতে পারে। ছাড়া এরা থাকতে পারে ন।জল ছাড়া থাকলে মৎস্যের মতো এদের মৃত্যু ঘটে না।এইভাবে ধীরে ধীরে জলের প্রাণীর সৃষ্টি হলো। কর্দমের মধ্যে সৃষ্ট প্রানীর কূর্মের আবির্ভাব ঘটল।। কূর্ম হল একপ্রকার কচ্ছপ;এই কচ্ছপ প্রাণিজগতের আবির্ভূত চতুষ্পদ প্রথম প্রাণী।প্রনী জগতের চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্যেই এটি আদি পুরুষ।প্রানী জগতের পদের আবির্ভাব প্রথম এই প্রানীতেই দেখা যায়।