Subhash Kar

Abstract Inspirational Others

4  

Subhash Kar

Abstract Inspirational Others

করোনা-আবহে আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা

করোনা-আবহে আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা

3 mins
264



আগে (মানে প্রাক-করোনা কালে) ফেসবুকে একটা পোষ্ট মাঝে মাঝে চোখে পড়ত। হুবুহু ভাষাটা মনে নেই, তবে থিমটা ছিল- আজ যারা তোমার কাছের লোক সেজে প্রেম-ভালবাসার কথা বলছে, তুমি মরে গেলে তারাই অস্থির হয়ে যাবে- তোমার এই দেহটাকে পোড়াবার বা মাটিচাপা দেবার জন্যে কত তাড়াতাড়ি তোমাকে শ্মশানে বা কবরখানায় নিয়ে যাবে। 


বলতে সংকোচ নেই, ওই পোষ্টটা আমার একেবারেই ভাল লাগত না। আমি যদি খুব ভুল না হই, তবে ওই পোষ্টের মর্মবাণীটা হ'ল- এ জগতে কেউ কারো আপন নয়- শেষের সেদিনই সেই পরত্বের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। আমার কিন্তু মনে হ'ত, এধরণের নেগেটিভ দর্শন ছড়ানোর কোন মানে নেই। একথা ঠিক যে, কবির ভাষায় "শেষের দিনে সেজন বিনে /কে আর আপন আছে রে ...?" কিন্তু তাই বলে বেঁচে থাকতে কাউকে দেওয়া কিংবা কারো কাছ থেকে পাওয়া সব ভালবাসাই কি ভুল বা মূল্যহীন? নিশ্চয়ই নয়। 


এই যে নিজের চারপাশে কিছু মানুষকে নিয়ে সুখদুঃখকে শেয়ার করে পরস্পরের মধ্যে একটা বন্ধন অনুভূত হয়, বেঁচে থাকার এটাই তো প্রধান চালিকাশক্তি। নইলে তো এই জীবনটাই অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। মরণের সাথে জীবনের তখন আর কার্যকরী পার্থক্য কিই বা থাকে? শুধু একক একটা বৃত্তের ভেতর আবেগহীন অনুভূতিহীন মৃতবৎ একটা শরীরের ভার বহন করা ছাড়া? 


এই নশ্বর দেহের মৃত্যু অবধারিত। আর মৃত্যুর পর এই পচনশীল শরীরকে দ্রুততম সময়ে দাহ বা কবরস্থ করাটাই তো সমাজের পক্ষে সার্বিক হিতকর। তবে যেদিকটা দেখা দরকার তা হ'ল- দেহ ছেড়ে যে মানুষটি না ফেরার দেশে হারিয়ে গেল, তাকে যথাযথ সম্মানটুকু দেয়ায় যেন কোন কার্পণ্য না হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেই সম্মান মৃতদেহটির সৎকারকার্যেও প্রতিফলিত হবার কথা, যা এখন পরিস্থিতির চাপে প্রায় অদৃশ্যই বলা চলে (ভিভিআইপি দের বাদ দিয়ে)। কোভিড ছাড়া অন্যভাবে মৃত্যু হলেও এখন সহজে শেষযাত্রায় সঙ্গী হবার রাস্তা সীমিত।


আর করোনা রোগীর মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহের সৎকার নিয়ে যে কি বীভৎস ও অমানবিক পরিস্থিতি উদ্ভুত হয়, তা আমরা সকলেই কমবেশী দেখছি। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খুব কাছের কারোর পক্ষেও মৃতদেহ দেখার সুযোগ বিরল। অনেকক্ষেত্রে তো প্রশাসন মৃতের আত্মীয়স্বজন কাউকেই মৃত্যুসংবাদটা পর্যন্ত না জানিয়ে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলছে। কোথাও একের দেহ অন্যের বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে- যেন মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষটার জীবনের গোটা মূল্যও শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। আবার কোথাও কোভিডে মৃত পিতার শেষকৃত্যের সময় মুখাগ্নি করতে নিজের সন্তানই অস্বীকার করেছে এবং উপস্থিত ম্যাজিষ্ট্রেট স্বয়ং সে কাজটা করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। 


অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, আজ করোনা-আবহে চারদিকে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে মানুষের উপর মানুষের বিশ্বাস অটুট রাখাটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও স্রেফ করোনায় আক্রান্ত হবার অপরাধে আবাসনের অন্য ফ্ল্যাটবাসিন্দারা রোগীর পরিবারকে বাইরে থেকে তালাবন্দী করে রেখেছে। আবার কোথাও আবাসনে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেয়া নিরাপত্তা রক্ষী গুরুতর অসুস্থ হয়ে (কোভিড নয়) আবাসনের বাইরে মাটিতে শুয়ে পড়ে থাকলেও দিনরাত ভয়ে কেউ তার কাছেও ভিড়েনি- সাহায্য করা তো দূর অস্ত্! কোথাও একটি বড় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কোভিড ধরা পড়ায় এবং আশু অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ায় অন্য একটি কোভিড হাসপাতালে জরুরীভিত্তিক রেফার করা রোগীকে খোদ পিপিই পরিহিত স্বাস্থ্যকর্মীই অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিতে অস্বীকার করেছে এবং পরিণামে রাস্তায় পড়ে গিয়ে রোগীর মৃত্য হয়েছে। 


এমনিতে কোভিড সংক্রান্ত নানা নিষেধাজ্ঞা বা লকডাউনের নিয়ম না মানার অনেক উদাহরণ থাকলেও, করোনা রোগীর চিকিৎসায় /শুশ্রূষায় নিযুক্ত ডাক্তার, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি 'অতি সচেতন' পাবলিকের দুর্ব্যবহারেরও নজিরও বড় কম নয়। এই যে এত এত অমানবিক ঘটনা ঘটছে, তাতে মানুষের স্বার্থপর কুৎসিত রূপটাই ক্রমশঃ ধরা পড়ছে। তাহলে কি কোভিড ১৯ এসে আমাদের প্রেম-ভালবাসার ভণ্ডামির আসল মুখোশটা খুলে আমাদেরকে নগ্ন করে দিয়ে স্রেফ এক টুকরো কাপড়ের মুখোশের লজ্জা নিবারণীই পরিয়ে দিয়েছে? মানবসভ্যতা নিয়ে কথায় কথায় আস্ফালনকারী আমাদের কি আগেই আয়নায় নিজেদের এই কুৎসিত মুখগুলি দেখে নিয়ে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল? এবং এখনও কি আত্মবিশ্লেষণ করে আত্মসংশোধনের রাস্তাই অবিলম্বে খুঁজে বের করা উচিৎ নয়?




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract