Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy

কর্কটের বিজয়

কর্কটের বিজয়

3 mins
298


বর্তমান প্রগতির যুগে নানা রকম উন্নয়নের সাথে সাথে মানব জীবনে অনেক রকম চাপও বেড়েছে।

সারাদিনের সেই চাপ মানুষকে মানসিক রোগগ্রস্ত করে তুলছে, মানুষ নেশার দাসে পরিণত হচ্ছে।

Alcohol আর Cigeratte কত যুবকের জীবনী শক্তিকে নষ্ট করে অসুস্থতার পথে ঠেলে দিচ্ছে। এরকম একটি জীবনের কথা নিয়ে এসেছি। পড়ার পরে আপনাদের অনুভূত হবে এই সর্বনাশা নেশা কিভাবে একটা পরিবার ও স্বয়ং নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির জীবনে কিভাবে সর্বনাশ ডেকে আনে। 


প্রিয়া বিছানায় আধশোয়া, আলতো করে পা দুটো বালিশে তোলা, আধো ঘুমে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে, কিন্তু মাথাটার অসহনীয় যন্ত্রনা , তার ক্রিয়া বিভ্রাটের কথা সব সময় জানান দিচ্ছে। মাথার আর দোষ কোথায়, ক্ষমতার বাইরে গিয়ে তো আর কাজ করবে না। হঠাৎ প্রিয়ার চোখ পড়ে গেল খাটের সোজা আয়নাটার দিকে, প্রিয়ার ঠোঁটের উপর কালো তিলটা এখন শুকিয়ে যাওয়া মুখটায় আরও বেশী স্পষ্ট।

প্রিয়ার মনে পড়ে গেল, সুবীর যখন প্রেমের প্রস্তাব দিল, বলেছিল ওর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঐ তিলটা। প্রিয়া ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।

সুবীর এম.বি.এ করার পর চাকরী, পরিণাম বিবাহ। মনের মানুষকে পুরো পাওয়ার আনন্দে ভরপুর ছিল ওরা। প্রিয়াকে আদর করার সময়, প্রিয়ার ঠোঁট দুটোকে তিল সমেত সুপ্রিয় নিজের ঠোঁটের মধ্যে পুরে নিতো। তিলটার কদর সুপ্রিয়র কাছে বরাবর বেশী ছিল। হঠাৎ চমকে উঠলো প্রিয়া , একটা গোঙানির আওয়াজ! বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে সুবীর, চিৎকার করার শক্তি আর নেই। কেমো দেওয়ার পর সে আর ঠোঁট দুটি নাড়াতে পারছে না। প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল সুপ্রিয়। একফোঁটা জল চোখ বেয়ে নেমে আসছে; ডান চোখ বেয়ে। ডানপাশে কাত হয়ে শুয়ে আছে সুপ্রিয়। প্রিয়া দেখল অপরাহ্ণের আলো বট গাছটা ঢেকে রেখেছে, সূর্য ডোবা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সূর্য তো ডুববেই, মিছিমিছি বট গাছটা প্রিয়াকে অন্তরালে রাখছে।

প্রিয়া পশ্চিম দিকে বারান্দার চেয়ারে বসে পড়লো। মনে পড়লো বাবুর পুলকার থেকে পড়ে গাড়ির সাথে অ্যাক্সিডেন্টের কথা; কত দায়িত্বহীনতার সাথে কাজ করে এই ড্রাইভাররা, বাচ্চাদের জীবন চলে যায়। বাবু চলে যাওয়ার পর সুবীর চেন-স্মোকার হয়ে পড়ে। প্রিয়া বলতো, "এভাবে সারাদিন সিগারেট খেও না, আমি কি নিয়ে থাকবো বলো তো, আমার কিছু নেই ..."

সুবীর বলতো, " তুমি ঘুরতে যাও, বেড়াতে যাও, আবার লেখা শুরু করো, আমি তোমাকে তো বাঁধা দিই না..."

প্রিয়া অঝোরে কেঁদে বলে উঠেছিল, "দয়া করো, ক্ষমা করো। আমি পারবো না, আমার হাত সরে না। শেষে বাবু যখন অ্যাকসিডেন্টের পর মৃত্যু শয্যাতে, তখন কোনওমতে ছড়া লিখেছিলাম--

আয় রে পরী আয়-

আমার ছোট্ট বাবু ঘুমায়।

তোর সোনার কাঠি দিয়ে-

বাবুর চোখ দুটি দে ছুঁয়ে।

ঘুম থেকে উঠুক আমার ছেলে,

ঝাঁপিয়ে পড়ুক শূন্য কোলে।

যাস না তুই পালিয়ে চলে,

আকাশে নিস না ওকে তুলে।

আর পারবো না, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো... আমি পারবো না সুবীর," বলে উঠেছিল প্রিয়া ।

সুবীর চিৎকার করে বলে উঠেছিল, "তুমি থামো, শুধু কান্না আর স্মৃতিকে নিয়ে পড়ে থাকো... আমাকে টাকা রোজগার করতে হবে, ডেপুটি ম্যানেজার আমি, এত চাপ! ...আমার অফিস... অফিস... আগে।"

কেঁদে ফেলেছিল সুবীর, বলেছিল, "সিগারেট ছাড়তে পারবো না প্রিয়া , সিগারেটের টান আমাকে জীবনটা সমতল দেখায়, এত এবড়ো-খেবড়ো, খাদময় জীবন আমি দেখতে চাই না..." 


প্রিয়ার কিছুই বলার ছিল না। পশ্চিম বারান্দায় প্রিয়া দাঁড়িয়ে, সূর্য ডুবে গেলো, মাথায় ঘুরছে কথাগুলো,

"Smoking not good for health" , "Smoking causes throat cancer"

প্রিয়া আর্তনাদ করে উঠলো যা সুবীরের গোঙানিকে ছাপিয়ে গেল।

( উপরের লেখাটা একটা গল্প যেটা বাস্তব নির্ভর। এটা যে সত্য ঘটনার উপরে তৈরী - সেটা হলো যে আমি ব্যক্তিগত ভাবে লাগামছাড়া স্মোকিংর জন্য ভোকাল কর্ডের ক্যান্সারে আক্রান্ত হই এবং এখন চিকিৎসা অন্তে সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে সেটা সকলের ভালোবাসায়, আশীর্বাদের হেতু - কিন্তু শারীরিক কষ্টটা বলে বোঝানো যাবে না। তাছাড়া chemo ও রেডিয়েশণের after effect। তাই এই প্রাণঘাতী এই নেশা যত দ্রুত দূর করা যায় তত মঙ্গল।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy