খুন
খুন
আধা বানানো বাড়িটার ছ’তলার ন্যাড়া ছাদে উঠে সদ্য শেষ হওয়া বোতলটা ছুঁড়তে গিয়ে শিবার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। বাবার রাজমিস্ত্রি হবার দৌলতে এরকম আধা- বানানো বাড়িতে ছেলেবেলার সিংহভাগ কেটেছে শিবার। মনে পড়ে এরকমই কোন বাড়িতে ফিরেছে শিবা ইস্কুল থেকে আর তার বাবা তার মুখে ভাত তুলে দিচ্ছে। বাড়ি বানানোর জন্য বাঁধা ভাঁড়ায় শহরের মাথায় বসে অনেক এরকম গ্রাস শিবা মুখে পুরেছে।
হঠাৎ ছোটনের গলায় শিবার সম্বিত ফিরল , “ মালটাকে ধরে এনেছি বস।”
শিবা তাকিয়ে দেখল ছোটন বুড়ো মইদুল দর্জিকে প্রায় পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসছে। বুড়ো ছ’মাস তোলার টাকা দেয়নি, বিশুদা বলে দিয়েছে আজই একটা এস্পার নয় ওস্পার করে আসতে।
শিবা বুড়োর দিকে তাকায়, “কি বুড়ো, মাল্লু কোথায়?”
-“বাবা, আমায় ছেড়ে দাও, আমি গরিব দর্জি, আমার ছেলেটা ইস্কুল থেকে এসে বসে থাকবে।“
শিবা উঠে বুড়োর কলার ধরে- “ছেড়ে তো দেব তোমায়, আগে শালা মাল্লু ছাড়, নাহলে এক কাজ কর, বাড়িটা লিখে দাও, ওখানে বিশুদা ফ্ল্যাট বানাবে।“
বুড়ো কান্নায় ভে
ঙে পড়ে। ছোটন বুড়ো মইদুলের কোমরে এক গুঁতো মারে-“শালা কাঁদছিস কেন? বস যা বলছে কর তাড়াতাড়ি।”
বুড়ো কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলার চেষ্টা করে। শিবার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। বুড়োর কলার ধরে রেলিং-বিহীন ছাদের ধারে নিয়ে আসে শিবা।
-“বাড়িটা দিবি শালা? নাকি এমনিই নিয়ে নেব?”
বুড়ো হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষা করে, কাকুতি মিনতি করে ছেড়ে দেবার জন্য-পরের মাসে টাকা দিয়ে দেবে। কিন্তু আজ খালি হাতে ফিরলে বিশুদা ছাড়বে না। একটা ধাক্কা দিয়ে হাতটা সরিয়ে নেয় শিবা। মইদুলের আর্তনাদ শোনা যায় -“বাবু...”
শিবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কুড়ি বছর আগের দৃশ্যটা। শিবা বসেছিল এরকমই একটি আধা-বানানো বাড়ির মেঝেতে, বাবা ভাঁড়ায় বসে কাজ করছিল। হঠাৎই বাবার হাত ফস্কায়, বাবা এমনই করে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল- “বাবু”- শিবাকে বাবু বলে ডাকত বাবা।
দাঁতে দাঁত চেপে নিচে উঁকি মারল শিবা- মইদুলের দেহটা ঠিক তার বাবার লাশের মতই নিচে পড়ে আছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে শিবা ছোটনকে শান্ত গলায় বলল, “ মইদুলের ছেলেটাকে দলে ভর্তি করে নিস...”