কাপালিকের কবলে - ৭
কাপালিকের কবলে - ৭


কাপালিকের কবলে - ৭ (শেষ পর্ব)
শুভময় মণ্ডল
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির কন্যা নিজে একজন কর্মরতা সিনিয়র আই পি এস অফিসার। তাঁর ছেলে নিজে উপরাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সচীবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে কর্মরত! কোনো ভাবে কি তাঁদের সাহায্য নেওয়া যায়! যা ভাবা আর কি!
আমি সেইরাতেই ফ্ল্যাইট ধরে দিল্লী পৌঁছালাম। সমীরা ম্যাডামকে সিধা তাঁর বাড়িতে গিয়ে নক করলাম। সেখানে ডিউটিতে থাকা সিকিউরিটি অফিসারটি, আমার সাথে আগে ফরেন্সিক ট্রেনিং করেছিলো মাস খানেক। তাই বিশেষ ঝামেলায় পড়তে হলো না।
সব কথা ম্যাডামকে খুলে বলার দরকার পড়লো না। তিনি নিজেই বললেন - তাঁর বাবার মৃত্যুটা স্বাভাবিক হার্ট অ্যাট্যাক দেখানো হলেও, সেটা নরম্যাল হার্ট অ্যাট্যাক হতেই পারে না। কারণ, তাঁর মৃত্যুর দিন সন্ধ্যাতেই তিনি চেকাপ করিয়েছিলেন এবং সব কিছু নরম্যাল ছিলো। কাজের বা অন্য কিছু নিয়েও কোন চাপ ছিলো না সেই মুহুর্তে।
যাই হোক, তিনি বিষয়টা নিয়ে আর জলঘোলা করেননি। কিন্তু এখন আমি আসার পর তিনি বুঝতে পারছেন, জল বহুদূর অবধি গড়াবে, হয়তো গড়িয়েছেও। তাই বললেন - তুমি বোধ হয়, ঠিক আমার সঙ্গে না বরং আমার ছেলে রাহুলকে চাইছো কথা বলতে, তাই না?
আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতে, তিনি আমায় বসিয়ে রেখে ভিতরের ঘর থেকে, রাহুলকে ডেকে দিলেন। তাকে আমি সেই চিপস থেকে পাওয়া তথ্য এবং আমার গোটা অন্যালাইসিস রীপোর্টের প্রিন্ট আউট ভরা একটা সিল্ড এনভেলপ দিলাম। তাকে রিকোয়েস্ট করলাম ব্যক্তিগতভাবে ওটা স্যারের হাতে পৌঁছে দিতে।
ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম রাত তখন প্রায় দু'টো। বিশ্বজিতের মামার ফোন থেকে নেট ওপেন করে, আমার পার্সোনাল গভ মেল আইডি থেকে, একটা ই-মেল করে সেগুলোর স্ক্যানড্ কপি পাঠিয়ে দিলাম উপরাষ্ট্রপতির মেলে, সেই সঙ্গে তা রাষ্ট্রপতির মেলেও কপি করে দিলাম।
তারপরেই আবার ফোনটাকে সুইচ্ড অফ করে, ব্যাটারি এবং সিমটা খুলে নিয়ে রওন
া দিলাম চণ্ডীগড়ের দিকে। সকালবেলা, ওখানে পৌঁছে যখন ধাবায় খেতে বসেছি, ওদের টিভির নিউজে দেখলাম বলছে রাহুলের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, তার সকালে অফিস যাবার সময়।
আমার অফিসের সেই ইমিডিয়েট বসও নাকি কিডন্যাপ হয়েছেন। আমার সেই বন্ধুটির মৃত্যুর খবরের সাথে, আমার বাড়িতেও সন্ত্রাসবাদী হামলা ও আমার নিখোঁজ হয়ে যাবার সংবাদও শোনাচ্ছে! বুঝতে পারলাম, আমার বিপদ এখনও কাটেনি যতক্ষণ না, উপরাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপতি নিজে ঐ মেল দেখছেন বা আমার ঐ এনভেলপটা হাতে পাচ্ছেন।
আমি ওখান থেকে খানিক বাদে বাসে করে কালকার দিকে চলে গেলাম। আবার একটা ধাবা, আবার টিভির নিউজ দেখে খবর নিতে থাকলাম। সন্ধ্যার আগে জানতে পারলাম, রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে জানানো হয়েছে - এই মুহুর্তে ঐ পদের দায়িত্বে থাকা উপরাষ্ট্রপতির পক্ষে, দু'টো চার্জ সামলে এখনই কোনো বিদেশ সফরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই মুহূর্তে তাঁর সমস্ত ফ্যরেন টুর ক্যানসেল।
আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন না হওয়া অবধি তাঁর এবং পি. এম. এর নাকি সমস্ত বিদেশ সফর স্থগিত থাকছে। আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজনে আসার পর, দুজনে আলোচনা করেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
টিভিতে এই খবর যখন সম্প্রসারিত হচ্ছে তখন, তার ঠিক নিচে রানিং টপ নিউজ হেড লাইন্সে দেখাচ্ছে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে সীমান্তের কাছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বহু সংখ্যক জঙ্গী ঘাঁটি নাকি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা! আমি অবশেষে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তারপর ফিরে দিল্লীর হেড কোয়ার্টারে গিয়ে রীপোর্ট করে, আবার নিজের ডিউটি জয়েন করে নিলাম।
কাহিনী শেষ করার আগে একটু আপডেট দিই - আমাদের সেই বিশ্বজিতও পরে ডিস্টেন্স এডুকেশনের সাহায্যে তার গ্র্যাজুয়েশন করে নিয়েছে। সম্প্রতি তার বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে, জমিয়ে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে এলাম ক'টা দিন সেখানে। ওরাও বেশ ভালোই আছে।
।।সমাপ্ত।।