কাপালিকের কবলে - ৪
কাপালিকের কবলে - ৪
কাপালিকের কবলে - ৪
শুভময় মণ্ডল
বনের মধ্যে যে গাছটার শিকড়ে মুখ ঘষছিলো নেউলটা - সেটা দেখতে পেয়ে গিয়েছিলাম প্রায়, এমন সময় পিছন থেকে আমার মাথায় গাছের ডাল দিয়ে কেউ একটা জোড়ে আঘাত করলো।
মাথাটা ফেটে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো, আর আমিও মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম ওখানে। একটু সময় লাগলো আমার, ঐ ব্যথাটা সহ্য করে উঠে দাঁড়াতে। ততক্ষণে নেউলটা চলে গেছে।
আবছা অন্ধকারে ভালো করে তাকিয়ে দেখি - লাল ধুতি পরা, গায়েও লাল চাদর জড়ানো একটা লোক, সেই গাছের শিকড়টা সংগ্রহ করে হাতে নিয়ে ওখান থেকে চলে যাচ্ছে!
আমি চিৎকার করে বললাম - শুনুন, ঐ শিকড় আমাকে একটু দিন না। আমার খুব দরকার। লোকটা আমার গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া মাত্রই, হনহনিয়ে চলে যেতে লাগলো। আর আমি শিকড় চাইতে চাইতে, তার পিছু নিলাম।
সে এবার দৌড়াতে শুরু করলো, আমিও তার পিছু ধাওয়া করলাম। সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে, এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই, দৌড়াচ্ছিলাম আমরা। এই দিকটায় গাছপালা একটু কম ঘন হওয়ায়, সন্ধ্যের সদ্য নামা অন্ধকারেও আমি তার গতিবিধি মোটামুটি আঁচ করতে পারছিলাম।
প্রায় সাত ক্রোশ দৌড়ে এসে হঠাৎ, ধপ ধপ করে দুজনেই পর পর আছাড় খেয়ে পড়লাম - বনের মধ্যেই একটা বেশ অনেকটা ফাঁকা মতন জায়গায়। কিছু বুঝে ওঠার বা আমরা মুখ তুলে চাইবার আগেই, বালিতে দুজনের মাথা চেপে ধরে পিছমোড়া করে আমাদের দুজনেরই হাত পা বেঁধে ফেললো কারা যেন!
তারপর দেখি, দুজনেই ঐ হাত পা বাঁধা অবস্থায় যেন হাওয়ায় ভেসে ঢুকে পড়ছি আরও গহীন বনে! ভয়ে তো চোখ বন্ধ করে, মনে মনে ঠাকুরকে ডাকছি - হে ভগবান রক্ষা করো। আমি যেন মায়ের কাছে ফিরতে পারি আজ শিকড়টা নিয়ে, মাকে যে বাঁচাতেই হবে।
খানিকক্ষণ পরে, সেই অদৃশ্য বাহকেরা আমাদের যেন মাটিতে আছড়ে ফেললো। চোখ খুলে দেখি - সামনে জ্বলছে দাউ দাউ করে এক বিরাট হোমাগ্নি। আর, দুহাতে দুটো ধুনুচি জ্বেলে নৃত্য করে করে শ্মশান কালী মায়ের আরাধনায় মত্ত এক ভয়ঙ্কর দর্শন কাপালিক! মূর্তির সামনে পোঁতা হাঁড়িকাঠ, আর পাশে রাখা একটা বিরাট খাঁড়া!
পুজো শেষ করে কাপালিক আমাদের সামনে এসে বসলো। বললো - আমার আজকের এই পুজো শেষ হবে নরবলি দিয়ে। তোদের মধ্যে একজনকে বলি দেব এখন। এখন বল, মায়ের কাছে বলির জন্য তোদের মধ্যে উত্তম নর কে?