Riya Roy

Drama Romance Classics

2.6  

Riya Roy

Drama Romance Classics

জটিলতা

জটিলতা

24 mins
584


ধূসর রং এর মেরুন পাড় শাড়ি, চুলটা মাঝারি খোলা ছিলো । একরাশ চঞ্চলতা নিয়ে আশাবরী। হালকা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে পথ হাঁটছে।

আশাবরীর সঙ্গে পথ হাঁটছে মৃগাঙ্ক। মৃগাঙ্কের ফুল স্লিভ অলিভ রঙের গেঞ্জি টা হাতের উপরে তোলা আর সেখানেই আশাবরী ওর হাতটা ধরে হেঁটে চলেছে। মাঝেমধ্যে মৃগাঙ্ক ও গলা মেলাচ্ছে আশাবরীর সঙ্গে। 


কিছু সময় পরে...


হঠাৎ মৃগাঙ্ক বললো, "একটা অটো বা টেক্সি ধরি নাকি?"

আশাবরী বললো, "কেন বলতো?"

মৃগাঙ্ক -- "না তুমি এতক্ষণ ধরে হাঁটছো!"

আশাবরী---"তাতে কি হয়েছে।" 

মৃগাঙ্ক বলে উঠলো, 

"তোমার পা ব্যাথা করবে,  

আশাবরীর মুখের দিকে তাকিয়ে মৃগাঙ্ক।  

আশাবরী মৃদু হেসে বলল , "করলে করবে তাছাড়া তোমার সাথে শহর দেখতে বেরিয়েছি যখন তখন, এই পথ চলাই ভালো তাই না...?"

মৃগাঙ্ক--- "আচ্ছা বেশ।"


কিছু ক্ষন পরে আবার.…..


মৃগাঙ্ক বললো, "এই ওদিকে আর যাওয়া যাবে না। এই রাস্তাটা ধরি চলো ।" 

আশাবরী---"কেন ? কি হলো? ওটাতে কি সমস্যা..?

মৃগাঙ্ক-- "আরে তোমার মনে নেই ওটাতেই তো তোমার বান্ধবীর পাড়া সবাই দেখতে পাবে আমাদের।" আশাবরী বলে উঠলো, 

"গীতালীর বাড়ি ..জানিতো তো ! দেখলে দেখবে জানলে জানবে।" 


মৃগাঙ্ক কিছু ক্ষন আশাবরীর দিকে তাকিয়ে বললো,  

"কি ব্যাপার বলতো তুমি আজ ভীষণ ফুরফুরে মনে হচ্ছে ..?" আশাবরী বললো, 

"এতে ফুরফুরে এর কি আছে ! একদিন না একদিন তো সবাইকে জানাতেই হবে।

তারপর মৃগাঙ্কে এর দিকে তাকিয়ে বললো , আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই।"


মৃগাঙ্ক --- "সেই ...ভালো ... ।


দুজনে হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে আবার হাঁটছে । 


অনেকটা যাবার পর সামনে বেশ বড়সড় একটা মাঠ ।

মাঠের একটা দিক ঝোঁপ ঝাড়। 

আশাবরী আকাশ এর দিকে তাকিয়ে-- "রোদটা পড়ে যাচ্ছে চলো বসি ..."


মৃগাঙ্ক--"জানতাম তোমার পা ব্যথা করবে।"


আশাবরী-- "মোটেও না ...আমার এখন হাঁটতে ইচ্ছে করছে না ।"

মৃগাঙ্ক হাসি হাসি মুখে--" তবে কি ইচ্ছে করছে।"


আশাবরী বললো, "গান গাইতে ..বলেই দু লাইন গাইতে গাইতে বসে পড়লো তারপর বললো--

"ওই যে বুড়ো লোকটাকে দেখছো.. ফুচকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর কাছ থেকে আজ ফুচকা খাবো। "

মৃগাঙ্ক বললো, "আচ্ছা এরই মধ্যে তোমার খিদে পেয়ে গেলো। তাহলে চলো কোনো রেস্টুরেন্টে বসলেই তো হতো শুধু শুধু এই মাঠের মধ্যে। "


আশাবরী বললো, "কেনো.?. আমার বেশ ভালো লাগছে, তুমি ও বসো।


মৃগাঙ্ক বসে পড়লো। 


হালকা হাওয়া দিচ্ছে। সামনে বড় বড় ঘাস গুলো হাওয়ার টানে দোল খাচ্ছে।


মৃগাঙ্ক এর গায়ের কাছে ঘেঁষে আশাবরী মুখটাকে গম্ভীর করে বললো,

"আচ্ছা মৃগাঙ্ক ...তোমার সাথে যদি আমার আর দেখা না হয়।" 


মৃগাঙ্ক আশাবরীর দিকে তাকিয়ে বললো -- " তোমার ঠাকুমা যদি মত না দেয় তবে হয়তো সত্যি দেখা হবে না।  তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে আচ্ছা আশাবরী তুমি এতজন থাকতে আমায় কেন ভালোবাসলে? আমি একটা সামান্য রিপোর্টারের চাকরি করি। তুমি এত বড়ো বাড়ির মেয়ে, ...."

সঙ্গে সঙ্গে আশাবরী বলে উঠলো, "আর তোমার গান , সেটা কি কিছুই নয় । 

আমার ঠাকুমা একজন গানের শিল্পী তুমিতো জানো । আর উনি কি তাও তোমায় মেনে নেবে না বলো। " 


মৃগাঙ্ক বলে উঠলো, "জানি না তোমার ঠাকুমাই জানেন উনি কি করবেন? আমি আর ভাবতে চাইনা এই মুহূর্তটা নষ্ট করতেও চাই না।"


আশাবরী বলে উঠলো, "আচ্ছা আমি না হয় ভালো বেসেছি কিন্তু তুমি কেন ভালোবাসলে...?"


মৃগাঙ্ক খুনসুটির ছলে গম্ভীর ভাবে বললো ---"ভালোবাসিনি তো...।


আশাবরী অবাক হয়ে তাকিয়ে।



মৃগাঙ্ক আবার খুনসুটি র ছলে বললো, " তোমার নামটা সুন্দর , আমার ভালো লাগে । মৃগাঙ্গ মৃদু হাসলো আবার বললো, 

তুমি বলেছিলে তোমার ঠাকুমার দেওয়া। কি দূরদর্শী মানুষ, আগে থেকেই জানতেন তুমি গায়িকা হবে।"


আশাবরী--- "কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবে না। তুমি কেন বললে ভালোবাসো না। আমি আর কথাই বলবো না ।" আশাবরী মুখ ঘুরিয়ে নিল।


মৃগাঙ্ক হাসির ছলে--

"ওই লোকটার কাছ থেকে আলু কাবলি নিয়ে আসলেই তো হয় । আমার ভীষন খিদে খিদে পাচ্ছে কিন্তু একজন সে ব্যপারটা দেখছেই না, মুখেই খালি বলে ভালোবাসি। অথচ মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।" 


আশাবরী হেসে ফেলল...


মৃগাঙ্ক হাসতে হাসতে গেলো আলুকাবলি আনতে।


আশাবরী গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো। মৃদু গলায়। মৃগাঙ্ক আসলো আশাবরী থেমে গেলো। মৃগাঙ্ক বললো, " থামলে কেন বলতো ? অনেক দিন তোমার গান শুনি না। গাও না। এই নাও আলুকাবলি.." 


আশাবরী গুনগুন করতে করতে বললো, " মৃগাঙ্ক

তোমার মা কেমন আছেন?


মৃগাঙ্ক বললো, "মা তোমার কথা বলছিল .."


আশাবরী বললো, "আজ চলো, নিয়ে চলো... যাবে?"


মৃগাঙ্ক বললো, " আজ থাক আজ তো তুমি বলেছিলে আমার সাথে সময় কাটবে।"


আশাবরী মৃগাঙ্কের গায়ে মাথা দিয়ে তোমার সাথেই তো কাটাচ্ছি । 


মৃগাঙ্ক বললো, "এরমধ্যে তোমার কোনো গানের অনুষ্ঠান আছে?"


আশাবরী বলে উঠলো, "এই মাসের শেষের দিকে একটা আছে, তুমি আসবে তো ওই দিন?"

মৃগাঙ্ক বললো, " যাবো । "


আবার ঝিকিয়ে পড়লো হালকা রোদ্দুর আর বয়ে চলছে হাওয়া। 

মৃগাঙ্ক আশাবরীর খুনসুটি ভরা ভালোবাসা ভেসে চলেছে চলতি হাওয়ার সাথে।



আশাবরীর মেজ জ্যাঠু প্রীতম কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করছে আশাবরীকে মৃগাঙ্কের সঙ্গে। 


মৃগাঙ্ক সাধারণ বাড়ির ছেলে কাগজে র দপ্তরে রিপোর্টারের চাকরি করে । মাঝেমধ্যে গানের অনুষ্ঠানেও গাইতে দেখা যায়। মা ছাড়া আর কেউ নেই।


আশাবরী ধনী পরিবারের মেয়ে। আশাবরীর সাথে মৃগাঙ্কের গানের অনুষ্ঠান থেকে আলাপ হয় একদিন আর তারপর প্রেম।


আশাবরীর ঠাকুমা শৈলজা চৌধুরী। ঠাকুরদা নেই।

ঠাকুমা যা বলেন সেই কথা গোটা পরিবার মেনে চলে। এই চৌধুরী বাড়িতে আলাদা করে কোনো কারোর স্বাধীনতা নেই। 

আশাবরীর দুই জ্যাঠু সতীশ, প্রীতম তাদের স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা এবং আশাবরীর বাবা দীপক ,মা সবাই এই বাড়িতেই একসাথে আছে। 


সবাই ঠাকুমাকে ভয় পায়, তাই সবকিছু মেনে নেয়। 


আশাবরীর ঠাকুমা শৈলজা চৌধুরী দাম্ভিক , অহংকারী, সবসময় পরিপাটি পোশাক পরে থাকেন। পাঁচ বছর আগে শৈলজার স্বামী মারা যায় তারপর থেকে তাকে সাদা পোশাকে দেখা যায়।

একসময়ে গানে খুব নাম ছিলো এখন আর তিনি গান করেন না কিন্তু নাতনিদের শিখিয়েছেন । বিশেষত আশাবরীকে তিনি বড় গায়িকা করতে চান। 

আশাবরীর বড় জ্যাঠু সতীশ তার দুই মেয়ে নীপা এবং দীপা । নীপা একটি ছেলে কে ভালোবেসে ছিলো অবাঙালি কিন্তু ঠাকুমার মত ছিল না তাই নীপাকে জোর করে ঘরে আটকে রেখে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল। দিদির এই ঘটনার পর দীপা নিশ্চুপ হয়ে যায়। দীপা নিজের মতো থাকে আর ঠাকুমা যা বলে মেনে নেয়। আশাবরীর মেজ জ্যাঠুর প্রীতমের এক ছেলে । ছেলের বিয়ে হয়েছিল তার ঠাকুমার পছন্দের পাত্রীর সাথেই। 

এই পরিবারের কারোর সাহস নেই শৈলজার মুখের ওপর কথা বলার।  




সেদিন রাত্রে শৈলজার ঘরে প্রীতম এলো বললো, "আসব মা...

শৈলজা--"এসো বসো। কি ব্যাপার অফিস থেকে সোজা আমার ঘরে ঢুকলে মনে হলো, কি ?জরুরী কিছু।"

প্রীতম বললো, "হ্যাঁ মা আমি আশাবরীর ব্যাপারে কিছু বলতে এসেছি।" 

শৈলজা বললো, "আশু দিদিভাই এর.. কি হয়েছে? কই ছোট বউমা তো কিছু বললো না। দীপক( আশাবরীর বাবা) ও একটু আগেই দেখা হলো, কই কিছু বললো না।"

প্রীতম বললো, "না মা আশুর মা বাবা এ ব্যাপারে এখনও হয়তো কিছু ভাবেনি।

শৈলজা -- "কি ব্যাপারে..?

প্রীতম -- "আশুকে আমি মৃগাঙ্কর সঙ্গে প্রায়ই দেখছি। ছেলেটার সঙ্গে ওর মেলামেশা। ছেলেটি , কাগজের অফিসে চাকরি করে। গান গাইতে পারে। তুমি তো জানো মা ।ওই অনুষ্ঠানে আলাপ হয়েছিল । আশুর সঙ্গেই গান করেছিল একিই জায়গায়। প্রথমে বিষয়টা তেমন কিছু ছিলো না কিন্তু এখন..."


শৈলজা --- "তুমি কি বলতে চাইছো দিদিভাই ওই ছেলেটাকেই পছন্দ করে।"


প্রীতম --- " হ্যাঁ মা, তাই তো মনে হচ্ছে।  ছেলেটির পারিবারিক অবস্থা তেমন কিছুই না। এসব বাড়িতে আশু কোনো দিনই থাকতে পারবে না। ও এখন বুঝতে পারছে না হয়তো , ওই গান শুনে আবেগের বশে ছেলেটার সাথে । যদি নীপার মতো কোনো কান্ড হয়ে যায়, তাই তোমাকে জানালাম। সেদিন অনুষ্ঠানে তো মৃগাঙ্কর সাথে দীপক , ছোট বউমা সবারই আলাপ হয়েছিল। কিন্তু তখন তো গায়ক হিসেবে এখন ব্যাপারটা"


শৈলজা বলে উঠলো, "আহ্ আশু দিদিভাই কে বোঝাতে হবে। ওর জন্য আমি তো পাত্র একরকম ঠিক করেই রেখেছিলাম। সরোজকে তোমার মনে আছে তো!"


প্রীতম বললো, "হ্যাঁ সরোজদা তো দাদার সাথে একিই কলেজে পড়তো। ওরাতো মহারাষ্ট্র এ চলে গেছিলো।"


শৈলজা --" হ্যাঁ ওরা এখন কলকাতাতে আর ওর ছোট ছেলে অঙ্কিত। তার সাথেই আমি ভেবেছি।।। সরোজকে একটু বলেওছিলাম।"

প্রীতম বললো, " কিন্তু মা ...দীপক কে...


শৈলজা বললো, "দীপক বা ছোট বউমাকে আমি বলবো। আর আশু দিদিভাই কেও আমি বোঝাবো। 

তুমি চিন্তা করো না। "


কয়েকটা দিনপর..


একলা আশাবরী ঘরে কেউ নেই। তানপুরাটা নিয়ে গান প্র্যাকটিস করছে। 

আশাবরীর গানে চৌধুরী বাড়িটা ভরে ওঠে। সবাই পছন্দ করে তার গান।


সুদীপ্ত মানে প্রীতমের ছেলে তার স্ত্রী তনুশ্রী ঢুকলো। তনুশ্রী আসার পর আশাবরী তানপুরা নামিয়ে টেবিলের পাশের চেয়ারে এসে বসলো। তনুশ্রী বললো, " গান থামালে কেন?" 

আশাবরী বললো, " আর ভালো লাগছেনা। টেবিল থেকে জল এর বোতলের জল খেয়ে বললো--" সুদীপ্তদা অফিসে চলে গেছে বউদি?"


তনুশ্রী বললো, "কেন কিছু দরকার ছিলো? তোমার দাদা তো আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলো।"


আশাবরী -- "না কিছু না বউদি..." আশাবরী একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলো।


তনুশ্রী-- " আজকাল খুব অন্যমনষ্ক থাকো প্রেমে পড়েছো নাকি?... 


দীপা ঢুকলো ঘরে বললো, " এই বাড়িতে প্রেম তাহলেই হয়েছে।"

আশাবরী দীপার দিকে তাকিয়ে বললো -- "কেন কি হবে..?"

দীপা বল্লো, "ঠাকুমাকে চিনিস না তুই , দিদির কথা মনে নেই?

আশাবরী -- "দ্যাখ দীপাদি বড়দির কথাটা আমি জানি , কিন্তু তাও আমি বলবো বড়দি অনেক নার্ভাস ছিলো তাই প্রোটেস্ট করতে পারে নি। কিন্তু আমি ঠিক পারবো আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই ।দীপাদি তুই চাস না।"

দীপা বলে উঠলো, " এই চৌধুরী বাড়ির ঐতিহ্য বহন করতে করতে আমাদের নিজেদের কোনো ইচ্ছে থাকবে না।"

তনুশ্রী বলে উঠলো, "সেটাতো ঠিক কিন্তু বড়োদের অমান্য করে বিশেষত ঠাকুমার কথা পারবে তুমি.."

দীপা বললো, "আচ্ছা বউদি তুমি ওকে বোঝাও তো কত্ত ঝামেলা হবে। এখনো সময় আছে আশু তুই মৃগাঙ্কে সবটা খুলে বল পরে কষ্ট পাবার চেয়ে এখন ই জেনে যাওয়া ভালো নয় কি?

তনুশ্রী বললো, "তার মানে সত্যি তুমি মৃগাঙ্ক মানে সেই অনুষ্ঠানের গায়ককেই"  

দীপা বললো, " প্লিস বউদি কাউকে বলো না ।"

আশাবরী বলে উঠলো," শোনো তুমি সবাই কে বলতে পারো বউদি, আমি ভয় পাইনা। ও সাধারণ ঘরের ছেলে । আর ও সাধারণ বলে ঠাকুমা যদি না মেনে নেয় তবে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। "

তনুশ্রী হাসি মুখ করে আশাবরীকে আশ্বাস দিয়ে বলে উঠলো, --"আচ্ছা আমার মনে হয় ঠাকুমার পছন্দ ই হবে উনিতো গানই পছন্দ করেন। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।" 


দীপা বললো, "তুমি তাহলে এখনো পরিবারের লোকজন দের চেনোনি বউদি। বংশ আভিজাত্য এর বাইরে ওরা কিছুই বোঝে না। এই চৌধুরী বাড়িতে ঠাকুমার কথাইতো শেষ কথা।

তেমন জানলে আশুকে সব অনুষ্ঠানে গান গাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। দিদির কথাটা তো তুমি ভালো করে জানোইনা।"

তনুশ্রী বললো, " বিয়ের পর থেকে এই তোমাদের সাথেই যা কথা বলি খোলামেলা। আর তোমাদের দাদা তো কিছুই বলে না। তবে এটা বুঝি যে এ বাড়িতে স্বাধীনতা নেই কারোর।"

তনুশ্রী আবার বললো, "আমাকে বিয়ের আগে দেখতে ঠাকুমা গেছিলো। কি গম্ভীর ভাবে সব কিছু জিজ্ঞেস করেছিলো। একটা গান গেয়েছিলাম। আমার গানের ভুল ধরেছিল। কি নার্ভাস লেগেছিলো সেদিন। সেদিন এর কথাগুলো আমার আজোও চোখে র সামনে ভাসে।" আশাবরী তনুশ্রী র দিকে তাকিয়ে, বললো" ঠাকুমা একদম ঠিক মেয়েকেই সুদীপ্ত দার জন্য এনেছিল। সেটা বলতেই হবে।" 

দীপা বললো, " হ্যাঁ আমাদের মিষ্টি বউদি বলেই হেসে উঠলো।"

  


কিছু দিনের পর........


সরোজ ও তার স্ত্রী এবং ওদের ছোট ছেলে অঙ্কিতকে ঠাকুমা নিমন্ত্রণ করলো। 

ওরা সবাই এলো।

পরিবারের সকলের সঙ্গে আলাপ হলো সেই সঙ্গে আশাবরীর সাথে অঙ্কিতের বিয়ের কথাটাও খানিকটা এগিয়ে গেলো। দীপক এবং তার স্ত্রীর কোনো আপত্তি করলো না। পরিবারের বাকি সবাই খুশি এ সম্পর্কে। 

তাছাড়া শৈলজার মতকে মেনে তো নিতেই হবে। এমনটাই হয়ে আসছে।


তবে বাড়ির বড় বউ এবং মেজ বউ দুজনেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলো কি এমন হলো এত তাড়াতাড়ি আশাবরীর বিয়ে ঠিক করা হচ্ছে।

মেজ বউ মানের প্রীতমের স্ত্রী বললো, "আচ্ছা দিদি দীপা থাকতে মা হঠাৎ আশুর বিয়েটা আগে ঠিক করলেন কেন?" 

বড় বউ সকলের জন্য রান্না ঘরে মিষ্টির থালা সাজাতে সাজাতে বললো, " কি জানি মায়ের মনে কি চলছে, তবে সকালে ছোটকে জিগ্যেস করেছিলাম ওতো কিছুই জানে না।" 

মেজবউ বললো, "সত্যি খুব অদ্ভুত লাগল।"

বড় বউ -- "নে চল সব কিছু গুছিয়ে পরিবেশন করতে পারলে আবার মা পরে একগাদা কথা শোনাবে।"


বসার ঘরে সতীশ , দীপক, প্রীতম এবং সরোজ ও তার স্ত্রী জমাটি আড্ডা চলছে।


দীপককের স্ত্রী দীপাকে ডেকে বললো অঙ্কিতকে খাবার গুলো আশাবরীর ঘরে দিয়ে আসতে।


কিছু ক্ষন পরে----

আশাবরীর সাথে অঙ্কিতের আলাপ হলো। আশাবরীর ঘরে অঙ্কিত এলো অঙ্কিত বললো," আচ্ছা তুমি শুনেছি গান করতে পারো। তোমার কোনো গানের অনুষ্ঠান কি এর মধ্যে আছে থাকলে প্লিজ বলো আমি যেতে চাই।" 

আশাবরী বিরক্ত হয়ে বললো--

"না এখন নেই। আচ্ছা আপনারাতো আগে মহারাষ্ট্রতে ছিলেন এখানে এলেন কেন? না মানে এখানে

কলকাতায়..."

অঙ্কিত--" বিজনেস এর জন্য। ওখানে দাদা বউদি আছে। আমরা কোলকাতায় চলে এলাম। যদি এখানে না আসতাম আপনার সাথে যে দেখাই হতো না। বলেই অঙ্কিত হাসলো। তারপর আবার বললো, আমার বাবার মার মুখে শুনেছি আপনার ঠাকুমা নাকি দারুন গান করতেন। আপনি কি তারই কাছে শিখেছেন। "

আশাবরী বললো, "হ্যাঁ ঠাকুমার কাছে আমরা সবাই গান শিখেছি।" 


দীপা ঢুকলো নীচে থেকে খাওয়ারের প্লেটটা নিয়ে অঙ্কিতের দিকে তাকিয়ে আপনার জন্য । 


অঙ্কিত বললো, "আপনি কে,? নীচে আপনাকে দেখিনিতো।"


দীপা -- "আমি আশু মানে আশাবরীর দিদি বড় জ্যাঠুর মেয়ে‌।" 


অঙ্কিত-- "আচ্ছা। ..

আপনারা তাহলে এক সাথেই ঠাকুমার কাছে গান শিখতেন।


দীপা -- "তা শিখতাম আমি , আশু আর আমার দিদি নীপা ।কিন্তু আশাবরীর গানের গলা সব চেয়ে ভালো তাইতো ঠাকুমার ইচ্ছে ছিলো ও মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা করুক। ওই আমাদের মধ্যে একমাত্র স্টেজে গান করে ঠাকুমার পরে।"

আশাবরী বলে উঠলো, দীপা দিও খুব ভালো গান করে কিন্তু ওর ডাক্তার হবার শখ ছিলো এই বছর ও ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।" 

অঙ্কিত বললো, "ওরে বাবা তাই নাকি। তাহলে কোনো প্রবলেম হলেই আপনাকে জ্বালাবো।"

দীপা বললো, "এখন নিন এগুলো খেয়ে নিন।"

অঙ্কিত আবার বললো, "আপনাদের বাড়িটা খুব সুন্দর।

আশাবরী-- "আর বাড়ির মানুষ গুলো.."

অঙ্কিত হেসে উঠলো, হাহাহা আপনাদের খুব মজা কি সুন্দর এসঙ্গে ভাইবোনরা বড় হয়েছেন।

নীচে আপনার দাদার সাথে আলাপ হলো।" 

দীপা বললো, "কেন ..? শুনেছি আপনার ও তো দাদা আছে ।"

অঙ্কিত বললো, "থাকলে কি ভাবে দাদা খুব গম্ভীর স্বভাবের, আমার সাথে তেমন কথা হয় না ।"


এই ভাবে ওদের মধ্যে কথোপকথন চলতে থাকলো।


আশাবরীর চিন্তা বাড়ছে।

সবাই চলে যাবার পর।

আশাবরী মৃগাঙ্ককে ফোন করল।

তাড়াতাড়ি দেখা করতে বললো, সবটা জানালো। মৃগাঙ্ককে।


দুদিন পর...

মৃগাঙ্কের সাথে আশাবরী রেস্টুরেন্ট এর কেবিনে বসে।

মৃগাঙ্ক বললো, "এখনি তোমার ঠাকুমা তোমার জন্য... তুমি কি বললে ? তোমার বাবা মা...


আশাবরী বললো, "ওরা সবাই একরকম রাজি। আমি কিছু বলিনি এখনো। 

মৃগাঙ্ক --"তুমি কি চাও..?

আশাবরী --"এভাবে বলছো কেন? , তুমি তো জানো আমার বাড়ীর লোকজন কে সবাই বিশেষত ঠাকুমাকে।

মৃগাঙ্ক বললো, "তুমি তো সেদিন নিজেকে স্বাধীন করতে চেয়েছিল এও বলছিলে আমি ভয় পাইনা তাহলে এখন কেন ভয় পাচ্ছো?

আশাবরী বললো, "আচ্ছা তুমি কি আমাকে ভরসা করতে পারছো না। "

মৃগাঙ্ক--" না তা একেবারেই না কিন্তু ঠাকুমাকে সবটা না জানালে দেরি হয়ে যাবে ।" 

আশাবরী মৃগাঙ্কের হাত হাত রেখে বললো, " আমি ঠাকুমাকে জানাবো । তুমি শুধু আমার পাশে থেকো।"

মৃগাঙ্ক আশাবরীকে আশ্বাস দিলো।



চৌধুরী বাড়ির খাবার টেবিল , খেতে বসেছে সতীশ, দীপক প্রীতম। বাড়ির বউরা পরিবেশন করছে।

খাবার টেবিলে শৈলজার তিন বউমা আর ছেলেরা এই বিয়ে নিয়ে কথা বলছেন। কেন এত তাড়াতাড়ি এই বিয়ে, তাছাড়া দীপা আছে তার আগে কেন আশাবরীর। এইসব কথা চলছে ।

শৈলজার মেজ ছেলে প্রীতম মৃগাঙ্কের কথাটা কাউকে কিছু জানালো না,

শুধু বললো, "মা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তোমাদের অসুবিধে টা কি?"

সতীশ , দীপক ও প্রীতমের কথায় সায় দিলো।


হঠাৎ শৈলজা ঢুকলো বললো, "আমি যা ভেবেছি সেটা কি তোমাদের পছন্দ নয়? দীপা দিদিভাই এবছর ফাইনাল ইয়ার দেবে। তাই আশু দিদিভাই এর বিয়েটা আগে ঠিক করছি।

তোমরা বিয়ের প্রস্তুতি নাও। আর ছোট বউমা আশু দিদিভাই কে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করো। "


আশাবরীর বড় জ্যাঠিমা হঠাৎ বলে উঠল, " আশুর ও তো নতুন গানের ক্যারিয়ার ওর যদি এখন মত না থাকে তাহলে কি জোর করা ঠিক হবে মা...।"


শৈলজা বললো, " ওকে সবাই বোঝাও।"


তারপর পরিবেশটা ভারী হয়ে গেলো।



আশাবরীর বিয়েতে কোনো ইচ্ছে নেই তা ধীরে ধীরে সবাই বুঝেতে পারছে ।

কিন্তু বাড়ির সবাই বোঝাতে শুরু করলো ।


কিছু দিনের পর...


আশাবরী 

ঠাকুমার ঘরে ঢুকে বললো, " আসবো..?"

ঠাকুমা-- এসো আশু দিদিভাই.."

আশাবরী-- "আমার কিছু বলার আছে।

ঠাকুমা-- " বলো কি বলবে?"

আশাবরী -- "আমি অঙ্কিতকে বিয়ে করতে পারবো না। "

ঠাকুমা --"কি বলছো দিদিভাই? আমি ওনাদের কথা দিয়েছি। তোমার বাবা মা পরিবারের বাকি সকলেরই তো ওকে পছন্দ। তোমার কি ছেলেটি কে পছন্দ নয়।" 

আশাবরী ---"না না অঙ্কিত ভালো ছেলে। কিন্তু আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। তুমি ও তাকে চেনো।"

ঠাকুমা--"সেকি একথা তুমি আগে বলোনি?"

আশাবরী বললো, "আমি বলতাম । কিন্তু তুমি যে এত তাড়াতাড়ি আমার জন্য সমন্ধ আনবে তা বুঝিনি। "

ঠাকুমা বললো, "তুমি কি সেই গায়ক ছেলেটিকে ভালোবাসো? আমার কানে খবরটা এসছে...

তোমার যখন অন্য কাউকে পছন্দ তবে তাই হোক। 


আশাবরী উচ্ছ্বসিত হয়ে --"সত্যি ..ঠাকুমা তুমি, মৃগাঙ্কে মেনে নিচ্ছো। আর বাড়িতে সবাই.. বিয়ের আয়োজন সেই ব্যপারটা।"


ঠাকুমা বললো, "তুমি ওকে একদিন আসতে বলো।

বাড়িতে সবাইকে আমি বলবো। তোমার কোনো চিন্তা নেই।"


ঠাকুমার কথা গুলো কে সত্যি ভেবে আশাবরী ভীষণ খুশি হয়ে গেলো।

ঠাকুমার মনে কি চলছে তা কিছুই বুঝলো না।

ঠাকুমা সবাইকে বাড়িতে মৃগাঙ্ক আসার কথা জানালো।


আশাবরীর বাবা মা , বাকিরা অবাক হলো কিন্তু এ ব্যপারের কারোর কিছুই বলার নেই। শৈলজার কথায় ওঠ বস করা ছাড়া বাকিদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।


রান্না ঘরে সেদিন ...

প্রীতমের স্ত্রী বললো --সতীশের স্ত্রী কে " আচ্ছা দিদি মা এর ব্যাপারটা তুমি কিছু বুঝতে পারছো? একবার অঙ্কিত আবার এখন ওই মৃগাঙ্ক।" সতীশের স্ত্রী-- " দ্যাখ মেজো মৃগাঙ্ককে তো আশু ভালোবাসে তাই মা হয়তো।" আশাবরীর মা ঢুকলো আর বললো, আমার  কিন্তু খুব  ভয় করছে জানতো দিদি ,মা মৃগাঙ্ককে মেনে নিচ্ছে। আশুর যে কি দরকার ছিল এই ছেলে টাকে ভালোবাসার।" প্রীতমের স্ত্রী -- হ্যাঁরে ছোটো তুই মৃগাঙ্কর ব্যপারটা কিছু বুঝিসনি।" আশাবরীর মা -- -ওইতো গতবারের অনুষ্ঠানে আলাপ হয়েছিল কিন্তু আশু যে ওকেই ভালবাসবে তা জানতাম না।" সতীশ এর স্ত্রী-- "মৃগাঙ্ক ছেলেটা খারাপ নয় ।তবে মা র মনে কি চলছে জানি না। এই বাড়িতে ছেলেরা সব মায়ের দলে। কারোর সাথে আলোচনা করা যাবে না উহ্।"

প্রীতমের স্ত্রী -- "হ্যাঁ তা যা বলেছো মায়ের সব সিদ্ধান্ত গুলো তো ঠিকও নয় তাও ওনার কথা না শুনলে হুলুস্থূল কাণ্ড হবে। 

আশাবরীর মা-- "জানোতো আমি না সেদিন মাকে একটা ডাইরিতে একটা ছবি দেখতে দেখছিলাম। আমাকে দেখেই সরিয়ে নিলো কি ছিলো বুঝতে পারলাম না। প্রীতমের স্ত্রী মৃদু হেসে-- "আরে ওনার সেই প্রেমিকের ছবি।" 

আশাবরীর কৌতুহল নিয়ে বললো, " মা-- মানে এখনোও উনি ওনাকে মনে রেখেছেন। আচ্ছা মেজদি উনি আদৌ বাবাকে ভালোবাসতেন। "

সতীশের স্ত্রী--- "ছোট তুই যে কি বলিস না। ভালোবাসবে না কেন? আসলে এটা ওনার প্রেম ছিলো । ওনার বাবা মা এনার সাথে বিয়ে দেননি তাই হয়তো একটা শূন্যতা কাজ করে তাই মাঝেমধ্যেই ওই ছবিটা ডাইরিটা দেখেন।"

আশাবরীর মা-- -- "বাবা তো জানতেন শুনেছি। উনি কোনো দিন আপত্তি করেনি? "

প্রীতমের স্ত্রী-- "তোর মেজদার মুখে শুনেছি ছোট বেলায় নাকি এটা নিয়ে টুকটাক সমস্যা হয়েছে কিন্তু আমাদের শ্বশুর মশাই তো দেখেছিস খুবই ভালো মানুষ তাইতো মায়ের গান করাকে বাঁধা দেয় নি।"

সতীশ এর স্ত্রী ---" হ্যাঁ আর মায়ের ওই প্রেমিক ও শুনেছিলাম গান করতেন। তবে ওই ভদ্রলোক কোথায় আছে তা মা বোধাহয় জানেন।  

অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে এবার রান্না গুলো শেষ করতে হবে চল...।"


শৈলজা কোনোদিনই তার পুরোনো প্রেমিকে ভুলতে পারেননি। গানের ডাইরিতে রাখা প্রেমিকের ছবি তার অবসরের মুঠো বাতাস। 


দুদিন পর দুপুর বেলা টেলিফোন এ

আশাবরী মৃগাঙ্ককে সবটা জানাবে বলে দেখা করতে চাইলো। 

মৃগাঙ্ক বললো, "সে এখন তার কলিগ পরাগ দার বাড়িতে আছে , আর এখানে চলে আসতে বললে আশাবরী চলে গেলো। পরাগ বাড়িতে ছিলো না তখন। 

এদিকে মৃগাঙ্ক কাজে বেশ ব্যস্ত।

আশাবরী এলো। বললো, " পরাগ দাদা নেই দরজা খোলা। এবার তো চোর ঢুকে যাবে ঘরে।"

মৃগাঙ্ক কাজ করতে করতে মৃদু হেসে বলল-- "সে তো কবে থেকেই ঢুকেছে ।

মানে মন চুরি করা কি চুরি নয়‌ ।আশাবরীর সাথে খুনসুটি র ছলে কথা বলছিলো মৃগাঙ্ক বেশ খানিকটা সময়।

তারপর আশাবরী মৃগাঙ্ককে বললো, " জানো তো ঠাকুমা আমাদের ব্যপারটা মেনে নিয়েছে। "

মৃগাঙ্ক কাজ থামিয়ে আশাবরীর দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি ..?"

আশাবরী মৃগাঙ্কর কাছে গিয়ে মুখে হাসি নিয়ে , "হ্যাঁ ঠাকুমা তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে‌ । এখন তুমি বলো; তুমি কবে যাবে?"  

মৃগাঙ্ক বললো, "আর তোমার বাবা মা  , বাড়িতে বাকিরা , তোমার সেই যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল অঙ্কিত। 

আশাবরী--"ঠাকুমা সবার সাথে কথা বলে নেবে ওসব ভাবার কোনো দরকারই নেই। "


মৃগাঙ্ক সেদিন আশাবরীর কথায় খুশি হয়ে এগিয়ে এলো।

আশাবরী মৃগঙ্কের হাতে হাত রেখে , চোখে চোখ। সেদিন দুজন দু'জনের খুব কাছে এলো আর একে অপরের ভালোবাসা ছুঁলো শরীর।

জানলা দিয়ে তখন সূর্য এর রঙিন আলো। আশাবরী আর মৃগাঙ্কের স্বপ্ন নতুন একটা ভাষা পেলো।


কিছু দিন পর....


মৃগাঙ্ক এলো আশাবরীর বাড়িতে। সবার সঙ্গে কথা হলো। 

ঠাকুমা ডেকে পাঠালো মৃগাঙ্ককে তার ঘরে। আর বললো" দিদিভাই তুমি বাইরে যাও আমি ওর সঙ্গে একা কথা বলবো। আশাবরী তার ঠাকুমা কে বিশ্বাস করলো।


সবাই যাবার পর শৈলজা বললো, "মৃগাঙ্ক বসো....

তোমার শিক্ষা, তোমার গান আমার ভালো লাগছে কিন্তু তুমি আশু দিদিভাই এর যোগ্য নও এই পরিবারের সঙ্গে বেমানান। তোমার ওই কাগজে অফিস থেকে তেমন কিছু ভালো রোজগার হয় না , তা আমি জানি। তোমাকে এখন প্রচুর স্ট্রাগল করতে হবে। আশু দিদিভাই যে সুখের মধ্যে যে আরাম এ মানুষ হয়েছে তা নিশ্চিয়ই এই বাড়িটা দেখে তুমি বুঝতে পারছো। আশু দিদিভাই এখন ঘোরে র মধ্যে আছে গান পাগল তাই তোমাকে ...

তুমি দিদিভাই এর জীবন থেকে চলে যাও।"

মৃগাঙ্ক বললো,  

"কিন্তু আশাবরী কে আমি ভালোবাসি আর তাছাড়া প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই ওঠা পড়া থাকে। আপনার মতো অর্থ হয়তো নেই কিন্তু আশাবরীর কোনো অভাব হবে না। আমরা সুখে থাকবো।"


শৈলজা বললো, "এই বিয়েতে আশাবরী তার পরিবারের কাউকে পাশে পাবে না। কারন আমার মত টাই এই বাড়িতে শেষ কথা। তুমি পারবে তার এই চেনা পৃথিবী কে শুধু তোমার শুকনো ভালোবাসা দিয়ে ভরাতে।"

মৃগাঙ্ক বললো, "আশাবরী আমাকে চায়, আমাকে ভালোবাসে। এর থেকে বেশী আর কি হতে পারে।"

শৈলজা, " এই সব ঠুনকো ভালোবাসা যা আশু দিদিভাইকে কষ্ট দেবে । জীবন আমি বেশি চিনি তোমার থেকে।

যাইহোক তুমি চলে যাও ওর জীবন থেকে।আমি আশুর বিয়ে অন্যজায়গায় ঠিক করেছি আর ও ভালো থাকবে সেখানে। আর তুমি যদি আশুকে নিয়ে অন্যরকম কিছু ভাবো তার ফল কিন্তু ভালো হবে না। 

তুমি আশুকে ভুলে যাও। আর আমার সাথে কি কি কথা হয়েছে সেটা তুমি সম্পূর্ণ গোপন রাখবে। আশু যেনো কোনো দিন না জানতে পারে।"


মৃগাঙ্ক অসম্মানিত বোধ করলো। 

সেদিন মৃগাঙ্ক চলে গেলো। আশাবরীকে কিছু জানতে দিলো না।



মৃগাঙ্ক শৈলজার কথাকে উপেক্ষা করে আশাবরীকে বিয়ে করতে পারেনি।শৈলজার প্রত্যেকটা কথা কাঁটার মতো লেগেছিল মৃগাঙ্কের।


মৃগাঙ্ক সব ছেড়ে কোলকাতা থেকে কোথায় একটা হারিয়ে গেলো। আশাবরী পাগলের মতো খুঁজলো কিন্তু মৃগাঙ্কে সে কোথাও পেলো না।



অনেক গুলো দিন পেরিয়েছে


সেদিন রাতে অবসন্নতায় ভুগতে থাকা আশাবরীর মাথায় হাত বুলিয়ে শৈলজা বললো, 

"দেখলে তো দিদিভাই একটা সস্তার ছেলে যে তোমায় ভুলে গেলো। কোথায় গেছে জানিয়ে অবধি যায়নি।"


আশাবরী কোনো উওর দিতে পারলো না।


আশাবরী হতাশ হয়ে পড়ছে দিন দিন।


এদিকে বাড়িতে আশাবরীর বিয়ে অঙ্কিতের সাথে হচ্ছে এমন তোড়জোড় শুরু করতে শৈলজা নির্দেশ দিলো।

আশাবরী ঘরে মুখ গুজে বসে থাকে। গান গাওয়া বন্ধ। একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। আশাবরীর অবস্থা দেখে বাড়িতে সবাই চিন্তিত। অশাবরীকে সকলেই একেকবার বুঝিয়ে আসছে ওর ঘরে গিয়ে।


আশাবরীর মা একদিন 

ঘরে ঢুকলো আর আশাবরীকে বললো, " --অঙ্কিত তোমার জন্য যোগ্য ঠাকুমা তোমার জ্যাঠুরা কি তোমার খারাপ চায় বলো? তাহলে 

দেখো অঙ্কিত কিন্তু সত্যি খুব ভালো ছেলে তাছাড়া ওদের সাথে আমাদের অনেক দিন এর পরিচয় তুই ভালো থাকবি। তুই রাজি হয়ে যা।"


কয়েকটা দিন পরে....

আকাশ টা মেঘলা বিশ্রী হাওয়া দিচ্ছে। 


এরকম সময় আশাবরী জানতে পারলো সে প্রেগন্যান্ট। সে দীপাকে জানায়। দীপা বলে" আশু তুই এটা কি বলছিস এই ঘটনাটা চাপা থাকবে না। এটা তো জানাজানি হবেই তুই এই বাচ্চাটা নষ্ট করে দে আমি সব জানি তোকে হেল্প করতে পারবো। " 

আশাবরী কান্নায় ভেঙে পড়লো বললো, "আমি জানি দীপা দি তুই এই বছর ফাইনাল পরীক্ষা দিবি তারপর তুই ডাক্তার কিন্তু তুই এটা জানিস না এটা অন্যায়।" দীপা আশাবরীর হাত ধরে বললো, "জানি সব জানি কিন্তু মৃগাঙ্ক তো কোথায় কেউ জানে না। আর বাড়িতে সবাই, ঠাকুমা । কি হবে ভেবে দেখেছিস?  

আশাবরী কাঁদতে কাঁদতে বললো, " দীপাদি আমার যে ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে ।আমি ওকে আনতে চাই। আমি মৃগাঙ্ক কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি মৃগাঙ্কের জন্য অপেক্ষা করবো।

দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আর দীপাকে জড়িয়ে আশাবরী কাঁদতে লাগলো।


কিছু দিনের মধ্যেই এই ঘটনা বাড়িতে সবাই জানলো। আশাবরীকে তার বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ খুব খারাপ ব্যবহার করলো। 


দীপা এই ঘটনাটা অঙ্কিত কে জানলো আর তাকে অনুরোধ করলো অঙ্কিত যদি তাকে বিয়ে করে তবে আশাবরীর সন্তানকে তারা মানুষ করবে। নিজের সন্তান হিসেবে আর তাহলে আশাবরী কে আর কেউ অপমান করতে পারবে না।

অঙ্কিত সবটা বুঝলো। অঙ্কিত এর বাবা মা বিষয়টা খুব একটা সায় না দিলেও তারা মেনে নিলো। দীপাকে তাদের ছেলের বউ করতে আপত্তি ছিলো না।


শৈলজাকে অঙ্কিত দীপা তাদের সিদ্ধান্ত জানালো। 

শৈলজা বিয়েতে মত দিলো।


দীপার কথাটা পরিবারের সবাই বুঝলো। এছাড়া আর অন্য উপায় তারা খুঁজে পেলো না। 


পরিবারের সম্মান বজায় রাখতে দীপার সাথে অঙ্কিত এর বিয়ে হলো। আর ওরা দুজনে আশাবরীকে নিয়ে মহারাষ্ট্র চলে গেলো। মহারাষ্ট্র এ আশাবরীর একটা কন্যা সন্তান জন্মাল। আশাবরী তাকে দীপা আর অঙ্কিত হাতে তুলে দিলো। 


তারপর কলকাতায় ফিরে এলো। 


আশাবরীর অবসন্নতায় ঢাকা জীবন। গানকরা সে ছেড়ে দিয়েছে। আশাবরীর বাবা মা খুব দুশ্চিন্তায় আছে। এমনটা হবে তা কেউ বোঝেনি।


একদিন আশাবরীর জ্যাঠিমা মানে দীপার মা বললো, "আচ্ছা আশু জীবন টাকে এভাবে নষ্ট কেন করছিস । যা হবার তা তো হয়েছে তাই বলে সর্ব ক্ষন সেই একি কথা কেন ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস। 

আশাবরীর মা-- "দিদি ওকে বোঝাও । আমি এভাবে আর পারছিনা ওকে দেখতে ।

দীপক এলো বললো, "গানটা আবার শুরু কর , আশু , তোর গান কতদিন শুনিনা ।" 


সেদিন সুদীপ্ত এলো আশাবরীর সাথে কথা বলতে।

আশাবরীর দাদা সুদীপ্ত বললো, "আশু আমি এই বাড়ি র কোনো ব্যাপারে থাকি না। তবে জানি না কেন মনে হয়। ঠাকুমাই এসবের জন্য দায়ী। তবে আমার বিশ্বাস তুই একদিন মৃগাঙ্কে ঠিক খুঁজে পাবি।"

আশাবরী তার দাদার কাছে কেঁদে ফেললো। সুদীপ্ত বললো, গানটা আবার শুরু কর। নিজেকে গুটিয়ে রাখিস না।"


শৈলজার বয়স বাড়ছে। মাঝেমধ্যে পুরোনো দিনের কথা ভাবতে থাকে আর

আশাবরীর জীবনের এই জটিলতা শৈলজার নিজের জীবন কে বেশি করে মনে করায়। শৈলজা যেনো নিজের জীবনের শূন্যতা কে আশাবরীকে দিয়েছে। 



শেষপর্যন্ত আশাবরী গানের অনুষ্ঠান করা আবার শুরু করলো। সেকথা শৈলজা জানতে পেরে মনে মনে শান্তি পেলো।



ওদিকে আশাবরীর মেয়ে তিতির বড় হচ্ছে। দীপা অঙ্কিত এখন শিলিগুড়িতে থাকে। তিতিরের খবর সবাই নেয়। দীপার সাথে বাড়ির সবার যোগাযোগ কিন্তু আশাবরী এই এতগুলো দিন এ তিতিরের সম্পর্কে কিছু জানতে চায় নি। 


কয়েকটা বছর পর...


শিলিগুড়ির একটা গানের অনুষ্ঠান আশাবরীকে যেতে হলো। তিতির কে সে দেখলো প্রথমবার, তিতিরের বয়স তখন ছয় । তিতির মাসিমনি বলে জড়িয়ে ধরলো আশাবরীকে। আশাবরী কান্নায় চোখ ভারী করে তিতির কে আদর করলো।


সেদিন বিকেলে দীপা , অঙ্কিত আর আশাবরী একসঙ্গে পুরোনো সব কথা বলছে।

হঠাৎ দীপা বললো, "তিতির টা ঠিক তোর মতন হয়েছে গান ভালোবাসে ওকে তুই শেখাবি এখন তো তুই এসেছিস। 

অঙ্কিত বললো, "আচ্ছা তিতিরের কথা এই এতগুলো বছর এ তুমি জানতে চাওনি। কেন?"


আশাবরী বলে উঠলো,  

"পুরনো স্মৃতি র বোঝা আমি আর পারছিনা বয়ে বেড়াতে ।"

ওকে দেখলে মৃগাঙ্কর কথা বেশি করে মনে পড়ে। তাই, তবে আমি জানি তোমরাই ওর সঠিক বাবা মা।"




যথাসময়ে গানের অনুষ্ঠান আশাবরী তৈরি হলো। দীপা বললো, " শরীরটা তেমন ভালো নেই। অঙ্কিত তুমি , তিতির কে নিয়ে যাও।"

ওরা বেরিয়ে গেলো।



ওইদিন ঘটে গেলো অদ্ভুত একটা ঘটনা। 


ওই গানের অনুষ্ঠান মৃগাঙ্ক এসছিলো। এত গুলো বছর পর মুখোমুখি মৃগাঙ্ক আর আশাবরী ।


মৃগাঙ্ক কলকাতা থেকে চলে এলেও গান ছাড়েনি। 


মৃগাঙ্কে হঠাৎ দেখে

আশাবরী অসুস্থ বোধ করলো আর মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। অঙ্কিত এসে তাকে ধরলো। গানটা আশাবরীর গাওয়া হলো। অনুষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ আশাবরীর অসুস্থতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলো।


ওরা বাড়িতে ফিরে এলো।



এদিকে মৃগাঙ্ক ভুল বুঝলো। ভাবলো অঙ্কিত আশাবরীকে বিয়ে করেছে।


আশাবরী কেন অসুস্থ হয়েছে দীপা জানতে চাইলে সব কিছু জানতে পারে।


অঙ্কিত তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠানের ওখানে যায় আর মৃগাঙ্কের ঠিকানা নেন। মৃগাঙ্কর কাছে যায়। 

সে আশাবরীকে এভাবে কষ্ট দিয়েছে কেন ?এ প্রশ্ন করলে মৃগাঙ্ক ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কথা বলে। অঙ্কিত কে অপমান করে আর বলে , "আশাবরী তো এখন আপনার স্ত্রী । আর আপনাদের মেয়েকেও দেখলাম তাও কেন আমাকে বিব্রত করছেন। । 

আপনি চলে যায় আশাবরীতো সুখেই আছে তবে কেন পুরনো কথা উঠছে। 


অঙ্কিত জানায় সে সব ভুল জানে আশাবরী নয় সে তার দিদিকে বিয়ে করছিল। 

আর তিতির মৃগাঙ্কর সন্তান। যাকে তারা মানুষ করছে নিজের সন্তান এর মতো করে। আশাবরী আজোও তার জন্য অপেক্ষা করছে।



মৃগাঙ্কর সব কিছু এখন এলোমেলো ভীষণ অস্থির লাগছে।

তার একটা মেয়ে আছে । সেটা কিভাবে। মৃগাঙ্ক ফিরে গেলো সেই পুরোনো দিনগুলোতে।

মনে পড়ে গেলো সবটা।আশাবরী আজোও তার জন্য অপেক্ষা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে মেঝেতে বসে পড়লো তারপর অঙ্কিত কে বললো --"আমায় নিয়ে চলো ওদের কাছে।"


মৃগাঙ্ক আশাবরীর কাছে যায়। 

আশাবরী কে দীপা জানায় মৃগাঙ্ক এসছে। আশাবরী অভিমানী চোখে মৃগাঙ্কর দিকে তাকিয়ে থাকে। 



দীপাদের বেডরুমে

অঙ্কিত দীপাকে ডাকে আর বলে সে মৃগাঙ্কে বলেছে তিতিরের কথা। 

দীপা অঙ্কিতকে বলে -" তিতির কে ছাড়া কেমন করে আমরা কাটাবো?"


অঙ্কিত বোঝায়, " দ্যাখো তিতির কে তার আসল বাবা মার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য ‌।" 


দীপার চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে চিবুকে। 




ওদিকে

আশাবরী মৃগাঙ্কর কাছ থেকে জানতে পারে তার ঠাকুমার জন্য মৃগাঙ্ক চলে গেছিলো। আশাবরী বলে-- "আচ্ছা তুমি আমাকে না জানিয়ে চলে গেলে। ভাবলে না আমার কথা।"

মৃগাঙ্ক সেদিনের সব কথাগুলো আশাবরীকে বলে, তার ঠাকুমা যা যা বলেছিলো সবটা।

ঠাকুমার এই সব কথা দীপা অঙ্কিত ও জানতে পারে।


তিতিরকে পেয়ে মৃগাঙ্ক জড়িয়ে ধরলো। তিতির জানলো মৃগাঙ্ক তাঁর মাসিমনির বন্ধু।

  



দীপা টেলিফোন করে সবটা তার কাকিমা কে জানায়।আশাবরীর মা সমস্ত কথা শুনে দীপাকে জিগ্যেস করে আশাবরী ঠিক আছে কি না , তার মনের অবস্থা কেমন.. 


দীপা বলে--" আমি এদিকে সবটা সামলাবো। তুমি বাড়িতে বলো।"


আশবরীর মা সবটা বাড়িতে বলে এবং শৈলজার ঘরে যায়। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে । 


শৈলজা ঘরে বসে ছিলো বললো, "কি হয়েছে? ছোট বউমা কিছু বলবে?" 


আশাবরীর মা বলতে যাবে তখন আশাবরীর জ্যাঠিমারা এসে তাকে বাঁধা দিতে থাকে বলে, "ছোট শোন ! এরকম করিস না। মার বয়েস হয়েছে।"


শৈলজা -- " তোমরা সবাই মিলে কি বলতে এসেছো

আশাবরীর মা-- "আপনি আশুর জীবনটা নিয়ে কেন এমন করলেন। আমরা জেনেছি মৃগাঙ্কে সেদিন আপনি অপমান করেছিলেন ।তাই সে অভিমানে চলে গেছিলো। আপনি এটা কেন করলেন আপনি নিজে সুখী ছিলেন না। আপনার জীবনের প্রেমকে সফল করতে পারেননি তাই নিজের শূন্যতাটা আশুকে দিয়ে দিলেন মা! কেন??

আমার মেয়ের জীবন টাকে এত জটিল করে দিলেন। 

আপনি যে রকম ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন ঠিক তেমনি আমার মেয়ের জীবনটা ভালোবাসা শূন্য করে দিতে চাইলেন মিথ্যে ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে। কি লাভ হলো বলুন মাঝখান থেকে আশুর জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো।"


দীপক এলো বললো," তুমি এবার চুপ করো। আশুর কপালে যা ছিলো তাই হয়েছে। থেমে যাও কিছুকি ফিরে আসবে।"


আশাবরীর মা কাঁদতে শুরু করলো। আর বললো, " জানি কিছু ফিরে আসবে না।  


শৈলজা কোনো কথা বলেন নি কিছুক্ষনের মধ্যেই সে 

অস্থির হয়ে পড়লো । শৈলজার চোখের সামনে ভাসতে থাকে তার পুরোনো প্রেমিকের মুখ আর সেই পুরোনো দিনের কথা । 


শৈলজার বাবা তাঁর প্রেমকে ভেঙে দিয়ে চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে দেয়। তারপর থেকে শৈলজা দাম্ভিক একটা মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। শৈলজা কারোর জীবনের প্রেম কেই মেনে নিতে পারতো না প্রথমে নীপা আর তারপর আশাবরী ,শৈলজার সবচেয়ে প্রিয় নাতনী। যার সাথে শৈলজার জীবনের মিল আছে।

শৈলজার প্রেমিক ঠিক ওই মৃগাঙ্কের মতো ছিলো সাদামাটা জীবন , সদা গায়ক ।



টেবিল থেকে শৈলজার

জলের গ্লাসটা নিতে গিয়ে পড়ে গেলো।

আশাবরীর বড় জ্যাঠিমা বললো, "মেজ এক গ্লাস জল নিয়ে আয়।

প্রীতম বলে উঠলো,  "মা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে। "


শৈলজা তারপর অজ্ঞান হয়ে গেলো। 

তাড়াতাড়ি করে সুদীপ্ত অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করলো। বাড়িতে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো।



হসপিটালে ভর্তি করা হলো শৈলজাকে। 



ওদিকে এতদিন বাদে মৃগাঙ্ককে আশাবরী ফিরে পেয়েছে। আজ ওরা দীপার বাড়ির কাছেই একটা জায়গায় দুজনে সময় কাটাচ্ছে। 

আশাবরী " এতগুলো বছর আমাকে ছাড়াই তুমি কাটালে একবারোও ভাবলেনা। আমার কথা। 

মৃগাঙ্ক---" আমি তো জানতামই না তিতিরের কথা। 

আশাবরী--" আমি তোমায় কত খুঁজেছি কিন্তু কোথাও ছিলেনা তুমি।


মৃগাঙ্ক ---"খুব শিগগিরই আমরা বিয়ে করবো। কিন্তু তিতির তো খুব ছোট ওকে এখন এভাবে বলাটা কি ঠিক হবে।

আশাবরী--- "হ্যাঁ আমিও ভেবেছি জানো.. তাছাড়া দীপাদি অঙ্কিতদা ওরাই ওর বাবা মা এখন। ওদের থেকে তিতির কে আলাদা করলে ওরাও কষ্ট পাবে ।

আশাবরী আবার বললো, আচ্ছা মৃগাঙ্ক তুমি তো কলকাতাকে ছেড়ে চলে এসেছিলে কিন্তু তোমার মা উনি কোথায়।



মৃগাঙ্ক বললো, মা মাসির বাড়ি হুগলী তে আছে । মা সবটা জানে। এবার তিতির কথা টা বলবো। জানি না কিভাবে ব্যপারটা নেবে।

আশাবরী মৃগাঙ্কর গায়ে মাথা ঠেকিয়ে কত জটিল হয়ে গেছে সবকিছু। 

মৃগাঙ্ক আশাবরীকে আশ্বাস দিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে এবার আমরা আবার এক হয়েছি না।


বিকেলে গড়িয়েছে তনুশ্রী ফোনে দীপা জানাচ্ছে শৈলজা অসুস্থ। কাকিমা যা যা বলেছিলো সবটা। 

দীপা - "কাকিমা র কষ্ট টা বুঝতে পারছি। ঠাকুমার ব্যবহারটাও মানা যায় না জানি। তবে আজ উনি অসুস্থ সেটা ভালো লাগছে না। বউদি বাড়িতে সবাইকে দেখে রেখো।"

তনুশ্রী -- "শোনো তোমার চলে এসো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ।জ্যাঠিমা , কাকিমা দুজনেই বলে দিয়েছে। আশাবরী আর মৃগাঙ্ক কে নিয়ে কলকাতায় চলে এসো সবাই।

দীপা -- "আর ঠাকুমা উনি ...

তনুশ্রী-- "জানি না কি হবে উনি কোনো কথা বলেননি এখনোও। 

দীপা ফোন শেষ করে অঙ্কিত কে জানায় তারপর পরে আশাবরী আর মৃগাঙ্কে। ওরা সবাই মিলে রওনা দেয় কোলকাতায় চলে আসে।


কয়েকটা দিন পর

হসপিটাল থেকে বাড়ি ফেরে শৈলজা।

সবার মনে নানান প্রশ্ন। 


শৈলজা অসুস্থ।এখন বাড়ি ফিরেছে। 

কিন্তু একটি কথাও বলেন নি।


শৈলজা ঘরে শুয়ে আছে।খেলতে খেলতে তিতির পর্দা ফাঁক করে দেখছে। শৈলজা বলে উঠলো, "ভিতরে এসো। তারপর তিতিরের সাথে বেশ অনেক কথা বললো।"


দীপা তিতির কে ডাকতে এলো, দীপা বললো, "তিতির ওনাকে বিরক্ত করো না।"

তিতির -- "না না আমি বিরক্ত করিনি। "

শৈলজা -- "দীপা দিদিভাই এদিকে এসো...।"

দীপা ----"কিছু বলবে ঠাকুমা? তুমি উঠছো কেন? জল খাবে ?

শৈলজা বললো, "না ...! তুমি এক বার মৃগাঙ্ক আর আশু দিদিভাই কে ডাকো আমি কথা বলবো। 


দীপা --- "ঠাকুমা থাক না তুমি তো অসুস্থ পরে বলবে।"


শৈলজা -- "না দিদিভাই এখন না বললে আরও দেরি হয়ে যাবে।

দীপা ডাকলো ওরা এলো। 

শৈলজা মৃগাঙ্কের কাছে ক্ষমা চাইলো। বললো" সত্যি আমি যে জটিলতা সৃষ্টি করেছি জানি তার কোনো ও ক্ষমা নেই। 

নিজের শূন্যতাকে তোমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। ছোট বউমা ঠিকিই বলেছে। সারাজীবন শুধু নিজের কথাই ভেবেছি

খুব বড়ো ভুল করেছি। 

আশু ঠাকুমা কে জড়িয়ে ধরলো ঠাকুমা কেঁদে ফেললো। আর বার বার বললো আমায় ক্ষমা করো দিদিভাই।


শৈলজার সেই গানের ডাইরি তার পুরোনো প্রেম সব কথা বললো। 


মৃগাঙ্ক বললো, ঠাকুমা যা চলে গেছে সেই সময় তো ফিরে আসবে না। কিন্তু আমরা নতুন করে আবার শুরু করতে চাই। আপনি আশীর্বাদ করুন।


শৈলজা পরিবারের সবাইকে বললো মৃগাঙ্ক আর আশাবরীর বিয়ের আয়োজন করতে। 


পরেরদিন সকালে

বসার ঘরে সবার সামনে।

দীপা চাইলো এবার তিতির কে তার আসল বাবা মা র হাতে তুলে দিতে। কিন্তু আশাবরী বললো, "দীপা দি তুই ওর সত্যি কারের মা ও পরে বড় হলে জানুক এখন ওকে জানানো মানে অনেক বেশি প্রশ্ন জাগবে তাছাড়া অঙ্কিত দা তোকে কে আমি চাই না কষ্ট দিতে। মৃগাঙ্কেরও তাই মত।

প্রীতম বলে উঠলো, "ব্যশতো তিতির না বড় হলেই জানবে।


সেদিন

আশাবরীর মা বসার ঘরে ঢুকলো বললো, "মৃগাঙ্কের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে । উনি আসবেন খুব তাড়াতাড়ি, মায়ের সাথে কথা হলো একটু আগেই।


সতীশ বলে উঠলো, "যাক এবার সবটা ভালো ভাবে মিটলে আর কোনো চিন্তা থাকবে না।"


সতীশের র স্ত্রী বললো," হুমম, বিয়ের আয়োজন করতে হবেতো। কত্ত কাজ। কিরে.. মেজো.. কিরে ছোটো ..কেনাকাটা করতে হবে ।

সতীশ আবার বললো, "দীপক, সুদীপ্ত, প্রীতম চল বিয়ের কাজের দায়িত্ব গুলো নিয়ে আলোচনা টা করে নেওয়া যাক। নেমন্তন্ন এর লিস্ট টাও তো বানাতে হবে।



চৌধুরী বাড়িতে সবাই আবার নতুন করে আনন্দে জেগে উঠলো।




তিতির খেলে চলে আপনমনে শৈলজার ঘরের মেঝেতে বসে । খেলতে খেলতে মাঝেমধ্যে তিতিরের সাথে শৈলজার কথা 

আর শৈলজা বিছানায় বসে দেখে তিতির কে। দুচোখে খুশির জল টলমল করে ওঠে।




বিয়ের দিন এগিয়ে এলো...

বাড়িতে চলছে বিয়ের আয়োজন, হৈচৈ।

আর মাত্র কয়েকটা দিন তখন বাকি।


সেদিন বিকেল নামার খানিকটা সময় আগেই 

মৃগাঙ্ক আর আশাবরী রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে সেই মাঠটার কাছে। এলোমেলো হাওয়া দিচ্ছে।

সেই আগের মতই ঘাস গুলো দুলছে।


আশাবরী মৃগাঙ্ক বসলো পাশাপশি।

মৃগাঙ্ক খুনসুটির ছলে বললো , "আচ্ছা বলোতো শেষ যেদিন এই মাঠে আমরা এসেছিলাম

সেদিন আমি কি রং এর পোশাক পরে ছিলাম ।"

আশাবরী -- কি রং এর ...কি জানি মনেই পড়ছে না।

অনেক ভেবে ও বলতে পারলো না।

শেষে মৃগাঙ্ক আবার বললো, জানতাম তোমার মেমারি খুব বাজে। আমার কিন্তু মনে আছে তুমি একটা ধূসর রং এর শাড়ি পরেছিলে।

আশাবরী ওমনি বলে উঠলো, "আচ্ছা বলতো আমরা সেদিন কি খেয়েছিলাম,"

মৃগাঙ্ক হেসে হেসে বললো, "ফুচকা...

আশাবরী--- "তাই এবার মেমারীটা কার খারাপ....!

মৃগাঙ্ক --- "কেন কেন..??. কি ভুল বললাম।"


বিকেলের রঙিন সুতো জড়িয়ে জড়িয়ে আরো রঙিন হচ্ছে আর মৃগাঙ্ক আশাবরীর খুনসুটি ভরা ভালোবাসায় ভরে উঠলো ফাঁকা মাঠটা ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama