Riya Roy

Romance

0.6  

Riya Roy

Romance

জীবন স্রোত আর ভালোবাসা

জীবন স্রোত আর ভালোবাসা

9 mins
1.1K


মঞ্জিরা আবেগ চঞ্চল মেয়ে। জীবনের সব রংকে তার গভীর ভাবে চেনার ছিল অদ্যম ইচ্ছে। সবার সাথে মন খুলে কথা বলা ছিল তার স্বভাবের বিশেষ গুন। মঞ্জিরার ছোটবেলা পাটনায় কেটেছে। হঠাৎ ওর বাবার চাকরির বদলি হলো কলকাতায়।

তারপর কোলকাতায় এলো বাবা মায়ের সাথে।

 ছোট থেকে মঞ্জিরার যেসব বন্ধু বান্ধব ছিল তাদের সাথে আর তার দেখা হতো না। মঞ্জিরার বেশ মন ভার হলো। মঞ্জিরার যেন কিছুই ভালো লাগে না।


কোলকাতায় এসে একটা গার্লস স্কুলে ভর্তি হলো । কিন্তু ঠিক অ্যাডজাস্ট করতেই পারছে না। বহুদিন পুরনো বন্ধু বান্ধবদেরকে মিস করতো মঞ্জিরা।

মঞ্জিরা পড়াশোনায় মেধাবী, এবং চমৎকার নাচতে পারতো। এখন সে স্কুলের , পাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেচে বেশ প্রশংসিত। স্কুলেও তার এই নাচের জন্য বেশ অনেক বন্ধু জুটেছে। সে আবার আগের মতোই প্রান চঞ্চল হয়ে উঠছে।


মঞ্জিরা ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে । জীবন এবং প্রেম সম্পর্কে তার এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হচ্ছে । যদিও বাস্তবে তখন ও তার জীবনে কোনো প্রেমের প্রবেশ ঘটেনি।


তার স্কুলের অন্য বান্ধবীদের জীবনে সেই অল্প বয়সেই ততদিনে প্রেম এসে গেছে। তারা যখন এসে গল্প করতো বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কোথায় কবে দেখা করছে , কোন কোচিং ক্লাসে তাদের আলাপ , কবে কবে সিনেমা দেখতে যাবে। তখন মঞ্জিরা তা শুনতো আর দু চারটে মন্তব্য এই অবধি ব্যাস্... ....

কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন ইন্টারেস্ট ছিলো না তার।


সাহিত্য , কবিতা পড়ার মধ্যে দিয়ে প্রেমকে মঞ্জিরা নতুন নতুন জায়গায় রাখতো । নতুন ভাবে আবিষ্কার ও করতো।

তার তীব্র বিশ্বাস ছিল, তার জীবনে প্রেম এক আশ্চর্য আলোর সন্ধান দেবে।


দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে গেলো।


পরীক্ষার পর ফাঁকা সময় মঞ্জিরা গিটার শিখতে গেলো। তারপর রেজাল্ট বেরলো আর মঞ্জিরা অন্য একটি স্কুলে কর্মাস নিয়ে ইলেভেনে ভর্তি হলো। যেটা ছিল কো- এডুকেশন ।

এই নতুন স্কুলে বেশ মজার কিছু ঘটনা মঞ্জিরার জীবনে ঘটলো। এখানে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের অদ্ভুত একটা কম্পিটিশান ছিলো সেটা পড়াশোনা এবং অন্যান্য সব রকমের বিষয়ে । আর এভাবেই  একটা মজার ঘটনা দিয়ে মঞ্জিরার এই নতুন স্কুলের ওরই ক্লাসের ছাএ সুনীত এর সাথে একটা বন্ধুত্ব হলো । সুনীত স্কুলে বেশ জনপ্রিয় ছেলে । সুনীতের বন্ধু এবং বান্ধবীর সংখ্যা ও অনেক। সুনীত মঞ্জিরার সাথে ভালোভাবেই মিশতে শুরু করলো আর তাকে প্রায় বুঝিয়ে দিলো সেই যেন তার সবচেয়ে ভালো বান্ধবী। মঞ্জিরা ও এই বন্ধুত্বে দূর্বল হতে থাকলো। সবকিছু সরলভাবে ভাবতে থাকা প্রান চঞ্চল মঞ্জিরা সুনীতকেই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ বলে ভাবতে থাকলো।

সেবার তখন স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে মঞ্জিরার নাচ উচ্চ প্রশংসিত হলো আর সুনীত ও তার ভালোলাগার কথা বিশেষভাবে প্রকাশ করলো। স্কুলে ছাড়াও একিই টিউটোরিয়াল, বাড়িতে এসে ফোনে অনেকটা সময় ধরে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা , গল্প সব মিলিয়ে সুনীতকে নিয়েও মঞ্জিরার একটা অদ্ভুত ভালোলাগা তৈরি হলো।

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর.......

একদিন স্কুলের বন্ধুরা মিলে ঠিক করলো কাছেই কোথাও একটা ঘুরতে যাবে।

পিয়ালী, শম্পা, দেবাঞ্জন, তুহিন, সঙ্গে সুনীত এবং মঞ্জিরা ও ।

মঞ্জিরার সঙ্গে সুনীতের অনেকটা সময় একসাথে কাটলো। ভালোলাগার পরিমাণ বাড়তে থাকলো।

ফাঁকা জায়গায় সবাই গোল হয়ে বসে আন্তাকসরি, মঞ্জিরার গীটারের সুর, আড় চোখে সুনীতের বারবার মঞ্জিরার দিকে তাকানো, সব মিলিয়ে সময় কেটে গেলো। সন্ধ্যে নেমে এলো বাড়ি ফিরে গেলো যে যার মতো।


কেটে গেলো কিছু বছর.....


এখনতো মঞ্জিরা কলেজে পড়ে আর বাকিরা সবাই ওরা কেউ একি কলেজ কেউ আবার আলাদা। সুনীতের কলেজ যদিও আলাদা ছিল ।

কিন্তু ওরা টিউশন এক জায়গায় পড়তো। ওদের সম্পর্কটা দিন দিন এগিয়ে চলেছে।


কলেজে ফাইনাল ইয়ার এক্সাম শেষ হলো....


সেদিন দুপুর বেলা গ্রীষ্মের রোদ

চারিদিকে বেশ ফাঁকা।

মঞ্জিরার সাথে সুনীতের দেখা হলো।

মঞ্জিরা বললো, " আমাদের এই সম্পর্ক টাকে নিয়ে এবার সিরিয়াসলি ভাবা উচিৎ।"

তখন সুনীত এই সম্পর্কটাকে সম্পূর্ন  অস্বীকার করলো বললো, "বন্ধুরা বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে কথা বলে কিন্তু সেটাকে প্রেম ভাবাই ভুল তাছাড়া তুই ছাড়াও পিয়ালি , শম্পার সাথেও আমার কত বন্ধুত্ব তা বলে কই ওরা তো এরকম বলেনি। তাছাড়া দেখ মঞ্জিরা তুই পড়াশোনায় ভালো বলে এই নয় যে সব কিছুই তোর ঠিকঠাক। আর নাচ করা , গীটার বাজানো এসব এখন সবাই পারে এ আর এমন কি...... আমার জন্য তুই ভীষণ বেমানান, তোর চেয়ে অনেক বেশি ভালো দেখতে মেয়ে আমার কলেজে পড়ে আমি তাদের কেই কখন..... আর আজ তুই এসব বলছিস....

সত্যি ভীষণ হাস্যকর লাগছে তোর কথা গুলো।

তুই আমার স্কুলে পরতিস ভালোভাবে কথা বলাটা যদি প্রেম বলিস তাহলে বলবো তোর বোধ বুদ্ধির বিকাশ ঘটেনি। ভীষণ আনস্মার্ট কথাগুলো শোনালো।"

 

এসব শুনে মঞ্জিরা অবাক হয়ে উঠে।

তার নিজেকে অসহায় লাগছে তখন।

সে বলে উঠে, " সুনীত এসব কি বলছিস ? তোর কি কিছুই মনে নেই আমাদের এতদিনের এত কথা। তাহলে কি তোর আমার মাঝখানে অন্য কেউ এসেছে। তুই সত্যিটা বলছিস না ।

এতদিন ধরে আমাদের মধ্যে কার যা কিছু তার সবটাকে তুই অস্বীকার করতে পারিস না এভাবে আর তুই আমার বোধ বুদ্ধি কম বলছিস  ...

তথচ এই কম বুদ্ধির মেয়েটার সঙ্গে সময় কাটানোর কথা গুলো সব... ভুলে গেলি তুই । "

কথার পিঠে কথা বাড়লো দুজনের.....

সুনীত মঞ্জিরা কে নানা ভাবে হার্ট করলো।

বিকেল হয়েছে, রোদ নেমে গেছে...

মঞ্জিরা একা রাস্তা দিয়ে অবসন্ন হয়ে ফিরছে। ফুটপাতের ধারে এক শালিক এর লাফালাফি , মঞ্জিরার চোখের কোন জলে ভিজে, ওর পা যেন চলছেই না। সুনীতকে সে এভাবে কোনোদিন আশা করেনি। বিশ্বাসভঙ্গতা আর এক রাশ ব্যর্থতা নিয়ে সে বাড়ি ফিরলো।


মঞ্জিরার মন জুড়ে কালো মেঘ। তার নিত্যদিনের সঙ্গী এখন চোখের জল। ভালোবাসা আর বিশ্বাস দুটো সম্পর্কে তার ধারণা বদলে গেলো , তার মনে এসব সম্পর্কে অঙ্কিত যা কিছু সবটা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো। একদিন যে আলো সে পাবে ভেবেছিলো তা পাওয়া তো দূরে এখন সবটা অন্ধকার।


কয়েক মাস পর.....

কলেজের রেজাল্ট বেরোলো মঞ্জিরা এমবিএ তে ভর্তি হলো।


পুরোনো সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করলো। সুনীতের করা অপমান গুলো তীরের মতো ছিলো, তা ভোলার চেষ্টা দিন রাত করে চলেছে মঞ্জিরার।

যদিও মাঝে এক দুবার সে সুনীতকে ফোন করেছিল নতুন আশা নিয়ে হয়তো সব ঠিকঠাক হবে কিন্তু তা হয়নি উল্টে আরো বেশি অপমান পেয়েছে মঞ্জিরা।

এবার নতুন কিছু ছেলে মেয়ের সাথে এমবিএ ক্লাস এ আলাপ হলো মঞ্জিরার।

কিন্তু মঞ্জিরার যেন কিছুই ভালো লাগে না পুরনো স্মৃতি , সুনীতের কথা মনে করা সব মিলিয়ে মনের আঁধার।

মঞ্জিরার চারিদিকে সব চলছে আর ও যেন দাঁড়িয়ে গেছে।

আঘাত যত তীব্রই হোক জীবন চলে তার আপন নিয়মে।

রোজ এমবিএ ক্লাস , তারপর বাড়িতে ফিরে চুপচাপ বসে বসে মঞ্জিরার জীবন চলেছে। নাচ , গিটার সব কিছু স্তব্ধতায় ঢাকা। এক নিরস জীবন কে বয়ে নিয়ে চলেছে সে।

মঞ্জিরার বাবা , মাও খেয়াল করেছে তাদের মেয়ে দিন দিন কেমন নীরব হয়ে উঠছে। মঞ্জিরা কথা, নাচে গোটা বাড়ি জেগে থাকতো একদিন আর আজ বোঝাও যায় না এক এক সময়, সে আছে না নেই। দিন দিন নিজেকে অবহেলায় প্রায়ই সে অসুস্থ হয়। মঞ্জিরার বাবা, মা দুজনেই বলে তারা সুনীতের সাথে কথা বলবে কিন্তু মঞ্জিরা আপত্তি জানায়। মঞ্জিরার মনে হয় যে সুনীতকে তার ভালো লেগেছিল তার সঙ্গে আজকের সুনীতের কোনো মিল নেই, তাই সে কথা বলতে বারণ করে তার বাবা মা কে।


দেখতে দেখতে দেড়বছর কেটে গেলো......।


সেদিন বর্ষা চলছে। সারাদিন বৃষ্টি ঝড়ছে। মাঝেমধ্যে হাওয়ায় দাপট।

মঞ্জিরা ভেজা ছাতাটা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ক্লাস এ ঢুকবে আর সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে মঞ্জিরার পা ফসকে পড়ে গেলো।

অভিযান  তার ক্লাসেই পড়ে , এগিয়ে এসে হাত বাড়ালো। মঞ্জিরা কে সাহায্য করলো। ক্লাসে বসালো। ওর কোথায় লেগেছে , কি অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা যত্নের সঙ্গে অভিযান সবটা দেখলো ।

অভিযানের এই যত্নশীল মনোভাব মঞ্জিরার মনকে নাড়া দিলো। 

মঞ্জিরার মনে পড়ে গেলো সেই পুরনো স্কুলের স্মৃতি যেখানে সে স্কুলের সিড়িতেও একবার হোঁচট খেয়েছিল সুনীত তার এত কাছের বন্ধু হয়েও সেদিন তাকে এতটা হেল্প করেনি । 

অথচ অভিযান যার সাথে শুধু আলাপ মাএ । সেভাবে ভালো তেমন কথাও হয় না । আর হোটাস অ্যাপে একটা এবিএম স্টুডেন্ট এর গ্রূপে আছে ঠিকিই তাতে ও কখনো অভিযানের সাথে তার কথা হয়নি।

এতদিন মঞ্জিরা কখনোই কারোর সাথে সুনীতের তুলনা আনেনি কিন্তু আজ তার মন থেকেই এই তুলনা চলে এলো।

মঞ্জিরার সারাটা দিন নানানরকম এসব কথা ভেবে কেটে গেলো।

রাত প্রায় তখন সাড়ে নটা হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ।

মঞ্জিরা ফোনটা ধরলো দেখলো অভিযান ।

অভিযান তার খোঁজ নিচ্ছে সে কেমন আছে ....

ডাক্তার দেখিয়েছে কিনা সবটা ।

আর এই ভাবেই অভিযানের সঙ্গে মঞ্জিরার একটা ভালো বন্ধুত্ব স্থাপন হলো।

এই দেড়বছর এ মঞ্জিরা কখনো অভিযানের দিকে সেভাবে তাকিয়ে ও দেখেনি হঠাৎ একটা দিনের এই ঘটনা থেকে দুজনের বন্ধুত্ব তৈরি হলো।

যতদিন এগোচ্ছে অভিযান আর মঞ্জিরার মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতির জায়গা তৈরি হচ্ছে। পড়ন্ত আলো যেমন করে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বনভূমির মধ্যে ঠিক তেমনি ভাবেই ওদের অনুভূতিও ছড়াচ্ছে ওদের দুজনের একে অপরের মনের মাঝখানে। 

একদিন মঞ্জিরা আর অভিযান কলেজ থেকে একটু দূরে একটা মাঠের ধারে বসে।

কোলাহল নেই , বেশ নির্জন সূর্য এর হলদে আভা কমলায় মিশে মাঠের পাশের পুকুর টা রঙিন হয়েছে। মৃদু হাওয়ায় মাঠের ঘাস গুলো দুলছে।

মঞ্জিরা অভিযানের মধ্যে কথোপকথন চলছে....

অভিযান বলে উঠলো, "আচ্ছা তুমি এত ভালো ডান্স করো , গিটার বাজাও তোমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও চমৎকার তাও মাঝেমধ্যে মনে হয় তুমি আনহ্যাপি,

আগে তো তোমাকে আরো বেশি মনমরা লাগতো। তুমি তো ভালো রেজাল্ট ও করো তবে কি সমস্যা...?"

মঞ্জিরা একটু অবাক হয়ে মনে মনে ভাবলো , অভিযান তাকে এত ভালো করে অবজার্ভ করছে।

মঞ্জিরা বললো, "আচ্ছা ধরো যদি কোনো খুব কাছের বন্ধু অপমান করে, ঠকায় । তখন কি করা উচিৎ? "

অভিযান বলে উঠলো, "তোমাকে অপমান করেছে যে সে তোমার বন্ধু ছিলই না যদি বন্ধু হতো তবে এটা করতে পারতো না। আর তুমি এসবদের সাথে মিশবেই না যারা এরকম ।"

অভিযান একটু রিয়েক্ট করেই সব কথা গুলো বলছিলো।

মঞ্জিরা তাকিয়ে রইল অভিযানের দিকে। আর সেদিন যেন মঞ্জিরার মনের বন্ধ জানালাটা খুলে গেলো,

ঢুকলো একরাশ দক্ষিণ হাওয়া ।

মঞ্জিরা অভিযানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, "তোমার কখনো ও এমন হয়েছে ...?"

অভিযান উওরে বললো, "আমি তোমার মতো এত দুঃখ বিলাসী নই, ভুল সময়ের কথা ভেবে সময় ও নষ্ট করতে চাই না।"

অভিযান আবার বললো, "আচ্ছা মঞ্জিরা তুমি তোমার পুরোনো সব বিরক্তি গুলো কে দূরে সরিয়ে দিতে পারো না..? জীবন কে এত অন্ধকার করে রেখো না। তোমার মনকে যে বোঝেনি সে আর যাই হোক তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না।"

মঞ্জিরা অভিযানের দিকে তাকিয়ে বহুক্ষণ আর জীবনের হারিয়ে যাওয়া পুরনো সব রং সে আবার নতুনভাবে খুঁজে পাচ্ছে অনুভব করলো।


বিকেলের সূর্য ডুবছে , এক ঝাঁক পাখি ওদের মাথার ওপর দিয়ে চলেছে। পাখির ডানার ঝাপটানোর শব্দে কিছুটা চমকে মঞ্জিরা চোখ বন্ধ করে অভিযান কে শক্ত করে ধরলো আর অভিযান ও মঞ্জিরার দিকে তাকলো ওকে আশ্বস্ত করলো।

তারপর সন্ধ্যে নেমে গেলো।

কেটেছে বেশ কয়েকটা বছর .....

এখন অভিযান এবং মঞ্জিরা দুজনেই চাকরি করে ভিন্ন কম্পানিতে।

সেদিন তখন মঞ্জিরার অফিস ছুটি বাড়িতে জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে, মাঝেমধ্যে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ চেক করছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, অচেনা নম্বর দেখে প্রথমে ও ফোনটা ধরলো না। আবার বাজলো তখন মঞ্জিরা ফোনটা ধরলো , ওপাসের গলাটা ছিলো সুনীতের । মঞ্জিরা বেশ বিরক্ত হলো তাও কথা বললো। মনে মনে ভাবলো এত বছর বাদে ...

সুনীত তার পুরনো ব্যবহার এর জন্য ক্ষমা চাইলো আর সম্পর্ক টা আবার জোড়ার চেষ্টা করলো । মঞ্জিরা সুনীতকে পাত্তা দিলো না। সুনীত বলে উঠলো, "তোকে দেখলাম ফেসবুক এ তোর কোন বন্ধুর অ্যানির্ভারসরিতে ডান্স করেছিলিস আমি ভিডিও টা দেখলাম ভীষণ ভালো লাগলো । তুই তো জানিস আমার তোর নাচ দারুন লাগে। আমরা একদিন দেখা করতে পারি না মঞ্জিরা।"

মঞ্জিরা বলে," আমার এখন সময় নেই।" সুনীত আবার বলে, " তুই আমার সঙ্গে এভাবে প্লিজ কথা বলিস না। আমি তো বলছি আমি ভুল করেছিলাম। " মঞ্জিরা তখন বলে উঠে, " এতদিন বাদে কোনটা ভুল কোনটা ঠিক এসব নিয়ে আর ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না আমি।"

সুনীত বললো," আমি জানি তুই ভীষণ রাগ করেছিস তাই এভাবে বলছিস কিন্তু এটাও তো ঠিক তুই আমাকে ছাড়া আর কাউকে কি পেরেছিস ভালোবাসতে , আমি নিশ্চিত তুই আজোও আমাকেই ভালোবাসিস। "

মঞ্জিরা আবার বলে উঠে," আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে তুই ভীষণই আবছা সুনীত, তোর শেষ কথাগুলো সব মনে আছে আমার। । তুই এত কনফিডেন্ট তাই একটা কথা বলি, কারোর জন্য কিছু থেমে যায় না, আর ওটা তোর ভুল নয় অন্যায় ছিলো, আর আমি এত মহান নই , যে আমাকে অপমান করেছে তাকে ভেবেই কাটিয়ে দেবো বাকি জীবনটা।"

মঞ্জিরা এরপর ফোন ছেড়ে দেয়।

মঞ্জিরার মন থেকে সুনীত অনেক দিন আগেই আবছা হয়েছিল আজ সবটা সে নিজে হাতে মুছতে পেরেছে।


রোজ এখন অভিযান এর সঙ্গে দেখা হয় না কিন্তু কথা হয় ফোনে । এক অদ্ভুত চৌম্বক টানে দুজনে একে অপরের খোঁজ নেন। প্রতিদিন তাদের ভালোলাগা মন্দলাগা গুলো শেয়ার ও করে।


যদিও ভালোবাসি .....কথাটা আজোও ওরা নিজেদের বলে উঠতে পারেনি।


তবু অভিযান আর মঞ্জিরা জীবন স্রোতের রঙিন নৌকাটায় দুজনে এক অদ্ভুত জোয়ারে ভেসে চলছে দীর্ঘ সময় ধরে সেই অন্তহীন ভালবাসার পথে.....।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance