ইমোজি
ইমোজি
স্কুলের বান্ধবীদের নিয়ে তৈরী ফোনের আড্ডায় তন্দ্রাকে, কে যে যুক্ত করেছিল, তন্দ্রা বুঝতে পারেনি।মাধ্যমিকের আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়া,স্বামী সংসার নিয়ে মেতে থাকা তন্দ্রা , হাতে 'স্মার্ট ফোন' থাকলেও,ফোনের দুনিয়াটা ঠিক বোঝে না।তবে পুরনো বান্ধবীদের দেখে আনন্দ হয়েছিল খুব,আরো খুশি হয়েছিল, ওকে সবাই মনে রেখেছে দেখে।
মেয়েকে বলে বলে, মেয়ের কাছ থেকে কিছু কৌশল শিখে নিয়েছিল,এই যেমন কোন ধরনের লেখা বা ছবিতে কি করে নিজের ভালোলাগা বা খারাপলাগা জানাতে হবে, যেমন কোথায় চোখের জল ফেলতে হবে আবার কোথায় হাততালি এই আর কি।এখন তো কিছু লেখার দরকার হয় না, এমনি এমনিই ফোনে সব লেখা চলে আসে,একটা ইচ্ছে মতন বেছে নিয়ে দিয়ে দিলেই হলো।
বর টোটো নিয়ে আর মেয়ে কলেজে বেড়িয়ে গেলেই ,সব হাতের কাজ সেরে তন্দ্রা ফোন হাতে নিয়ে বসে যেতো,টিভির সিরিয়ালের চেয়েও এর নেশা বেশি।এইখানা একবার নিয়ে বসলে তন্দ্রা দেখেছে সংসারের কোন অভাব অভিযোগ দুঃখ আর কিচ্ছুটি মনে থাকে না। সিরিয়ালে তো সব বানানো,আর এতে সব আসল,চেনা পরিচিতদের সব ঘর গেরস্থালীর কথা দিব্যি জানা যায়।তন্দ্রা সারাদিন অকাতরে হাসি কান্না ভালোবাসা বিলিয়ে যেতো।ফলে অল্প দিনেই তন্দ্রার কদর হু হু করে বেড়ে গেলো বন্ধুমহলে।
আর এই লকডাউনের বাজারে তো তন্দ্রার একটু বসার জো নেই, না না কাজকর্ম নিয়ে নয়,ওসব ও রোজই দিব্যি সামলে নেয়, আসলে এই সময় সবাই ঘরে বসে বসে এতো কিছু করছে, আর সেই সব টুক করে ফোনে দিয়েও দিচ্ছে,তন্দ্রাকেও সঙ্গে সঙ্গে ওই হাসি ভালোবাসা বিলোতে হচ্ছে দেদারে।সঙ্গে মাঝে মাঝে লিখেও দিচ্ছে 'আহা','অপূর্ব 'এই দুই একটা শব্দ।এই উন্নতিটা তন্দ্রা লকডাউনের বাজারে করেছে।
এবার দুই এক শব্দ থেকে দুই এক লাইনে পৌঁছাতে কতক্ষন ?ভাবতেই তন্দ্রার মনে পুলক আর হাতের গতি বেড়ে যায়।
এইতো অহনা গাইছে,তন্দ্রা লেখে 'আহা!'
সুষমা কবিতা লিখেছে,তন্দ্রা নীচে লিখে দেয় 'অপূর্ব!'
অনামিকা আজ আবার বিড়িয়ানী রেঁধেছে , 'ইয়াম্মী' না কি যেন লিখতে হয়,ঠিক করতে না পেরে তন্দ্রা একটা কাঁটাচামচের 'ইমোজি' বসিয়ে দেয়।
দীপা আবার দানধ্যানে ব্যস্ত, চালডালের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে...'লাভ ইমোজি' দিতে গিয়ে তন্দ্রার হাতটা কেঁপে যায়,লোকটার মুখটা একদম ওর ঘরের মানুষটার মতন না ? না কি ঘরের মানুষটাই ?
তন্দ্রা ঠিক করতে পারে না এখানে কোন ইমোজিটা দেবে, কোনটা ?